বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জেরায় শাহরিয়ার কবির//স্বাধীনতার পর যে কয়টি সরকার পেয়েছি তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে চায়নি। বরং তারা চেয়েছে এই চেতনা জাতির স্মৃতি থেকে অবলুপ্ত হোক।

১৩/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির আসামী পক্ষের জেরায় শিকার করেছেন তার সম্পাদিত একাত্তরের ঘাতকেরা কে কোথায় বইয়ের ভূমিকায় লেখা আছে শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতক ও দালালদের বিচার না করে ক্ষমা করেছিলেন। ওই বইয়ের মুখবন্ধে উল্লেখ আছে স্বাধীনতার পর যে কয়টি সরকার পেয়েছি তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে চায়নি। বরং তারা চেয়েছে এই চেতনা জাতির স্মৃতি থেকে অবলুপ্ত  হোক। তিনি আরো শিকার করেন, বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী ’৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, প্রাণ বাঁচানোর জন্য তখন অনেকেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুরাল-২ আজ  মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন। এসময় মুজাহিদের আইনজীবী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবির প্রমুখ। আজ  শাহরিয়ার কবিরের জেরা শেষ না হওয়ায় তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ট্রাইব্যুনাল জেরা অসমাপ্ত রেখে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

জেরা:
প্রশ্ন: একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা  কে কোথায় বইটি সম্পাদক মন্ডলী ছিলেন ড. আহমেদ শরীফ, কাজী নুরুজ্জামান ও আপনি শাহরিয়ার কবির।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই বইয়ের মুখবন্ধে উল্লেখ আছে স্বাধীনতার পর যে কয়টি সরকার পেয়েছি তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে চায়নি। বরং তারা চেয়েছে এই চেতনা জাতির স্মৃতি থেকে অবলুপবত হোক।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায় বই এর ভূমিকায় লেখা আছে, শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতক ও দালালদের বিচার না করে ক্ষমা করেছিলেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তথ্য উদঘাটনের জন্য স্বাধীনতার পর দুটি কমিটি হয়। একটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ও অপরটি নাগরিক সমাজের উদ্যোগে যার নেতৃত্বে ছিলেন জহির রায়হান?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: জহির রায়হান যেসব তথ্য উদঘাটন করেছিলেন কলকাতার একটি পত্রিকার সাংবাদিক তা নিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন মর্মে বক্তব্য আপনাদের প্রকাশিত বইয়ে উল্লেখ আছে, এটা সত্য কি না?
উত্তর: জহির রায়হানের বোন ডা. সুরাইয়া বেগম এই তথ্য দিয়েছিলেন। পরে বলেন, সৈয়দ হাসান ইমাম বলেছেন ওই তদন্তের সব কাগজপত্র তারা এনএসআইকে হস্তান্তর করেছিল।
প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবী হত্যার বিরুদ্ধে ওই সময় ৪০টির বেশি মামলা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ওই মামলার তদন্তে ছিল একজন ডিআইজির নেতৃত্বে গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। 
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: আপনার বইতে এই মর্মে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে এ মামলার বেশিরভাগ ছিল সাজানো?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মামলা দায়ের প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদেরকে গবেষণার মাধ্যমে শনাক্ত করেছেন কি না?
উত্তর: আমি এ বিষয়ে কোন গবেষণা করিনি। পরে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের অনেকেই এমামলা দায়ের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রশ্ন: দালাল আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলাসমূহ পরিচালনার মৃখ্য দায়িত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক। তার পদের নাম ছিল চিফ প্রসিকিউটর।
উত্তর: হ্যাঁ। তবে মামলার তদন্ত করেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাক সামরিক জান্তার অধীনে চাকরি করেছে।
প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী ’৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন কি না।
উত্তর: হ্যাঁ, দিয়ে ছিলেন। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তখন অনেকেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রশ্ন: মুনির চৌধুরীর এক ভাই এখনো পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানে বসবাস করছেন।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যতদিন দেশে ছিলেন সে সময়ে মুনির চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: মুনির চৌধুরীর সঙ্গে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার কোন যোগাযোগ হয়নি।
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: আপনি জবানবন্দীতে বলেছেন ৭১ সালেল ৮ নভেম্বর দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছেন এই মামলার আসামী আল বদর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, যেখানে অল বদর শব্দের উল্লেখ নেই। ঐতিহাসিক বদর দিবসের কথঅ উল্লেখ আছে।
উত্তর: খবরে বদর দিবস উল্লেখ আছে। আল বদর উল্লেখ নেই। তবে সমাবেশটি ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের।
প্রশ্ন: মুজাহিদ আল বদর বাহিনীর নেতা, সদস্য, কমান্ডার বা সংগঠক এ মর্মে কোন সংবাদ ৭১ সালে এবং ’৭২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল কি?
উত্তর: হাইকমান্ডের নাম সংবাদপত্রে প্রকাশিত হত না। কারণ আল বদর একটি আধা গোপন সংগঠন।
প্রশ্ন: ’৭১ সাল থেকে ’৭৮ সাল পর্যন্ত মুজাহিদ আল বদর বাহিনীর প্রধান বা আল বদর সদস্য উল্লেখ করে কোন সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি।
উত্তর: এটা সত্য না।
প্রশ্ন: ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন পাস হয়। সেই সংসদে অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সদস্য ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: দালাল আইন পাস হওয়ার সময় পার্লামেন্টের কার্যধারায় দালাল আইনের অকার্যকারিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না?
উত্তর: সংসদের কার্যধারার বিবরণী না দেখে বলতে পারব না।
প্রশ্ন: যেসব ব্যক্তির বিচার দালাল আইনে হয়েছিল সেই দালাল আইন বাতিল করে তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ এর অধীনে বিচার করার জন্য দাবি করেছেন কি?
উত্তর: শহীদ পরিবারের পক্ষে দাবি করেছি।
প্রশ্ন: এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পত্রিকার কাটিং দিয়েছেন কি না?
উত্তর: প্রয়োজন মনে করিনি।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ এর অধীনে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দাবি করে কোন বিবৃতি দিয়েছেন কি?
উত্তর: পত্রিকায় বিবৃতি দেয়ার জন্য সে সময় আমার সাংগঠনিক যোগ্যতা ছিল না।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ এর অধীনে বিচারের জন্য কোন বিবৃতি দিয়েছিল কি না?
উত্তর: এ মুহুর্তে মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন: ১৯৭৩ সালে তৎকালিন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন পকিস্তান সশস্ত্র  বাহিনীর যে সকল সদস্যরা গণহত্যার বা স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অন্যান্য অপরাধ করেছে তাদের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ’৭৩ করা হয়েছে। এটি আপনি জানেন কি না?
উত্তর: জানা নেই।
রিপোর্টার :  হাবিবুর রহমান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন