রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা ও ইব্রাহীম কুট্টি ইস্যু// অবশেষে মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিটও দাখিল করল আসামী পক্ষ

মেহেদী হাসান,১৩/৪/২০১৪
ইব্রাহিম কৃট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের ১৯৭২ সালে দায়ের করা মামলার চার্জশিট ( চার্জশিট নং ২৬, তারিখ ২৯/৯/৭২) আপিল বিভাগে জমা দিয়েছে আসামী পক্ষ। আজ শুনানী শেষে আপিল বিভাগে একটি দরখাস্তের সাথে এ মামলার মূল সার্টিফাইড কপি জমা দেয়া হয়। মমতাজ বেগমের মামলার সেই চার্জশিটেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

এর আগে আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর কপি জমা দেয় ট্রাইব্যুনালে যেখানে ১৩ জন আসামীর মধ্যে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত অভিযোগ হল ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা। এ অভিযোগে  ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে তার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে পিরোজরে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি মোট ১৩ জনকে আসামী করেন। কিন্তু আসামীর সেই তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের দায়ের করা সেই মামলার এফআইআর নর্থির একটি সার্টিফাইড কপি ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। মামলার আপিল শুনানীর শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পিরোজপুর এবং বরিশাল সফর করেছেন। সফর শেষে গত ৯ এপ্রিল আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, পিরোজপুর এবং বরিশালের জেলাজজ আদালতে কোথাও এ মামলার কাগজ পাওয়া যায়নি। আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার নথি মর্মে যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তা জাল, মিথ্যা এবং মামলার প্রয়োজনে সৃজনকৃত। তাই এ কাগজ বিবেচনায় না নেয়ার লিখিত আবেদন করেন তিনি।

আসামী পক্ষের দায়ের করা এফআইআর কপিটিকে জাল আখ্যায়িত করা এবং এটি বিবেচনায় না নেয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল এর পক্ষ থেকে যেসব যুক্তি আদালতে তুলে ধরা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলার চার্জশিট বিষয়ক। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আসামী পক্ষ দাবি করেছে এ মামলায় চাজশিট হয়েছিল কিন্তু তারা সেই চার্জশিট জমা দেয়নি। একটি মামলার প্রাথমিক অভিযোগে সব বা মূল আসামীর নাম নাও থাকতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে চার্জশিটে মূল আসামীর নাম আসতে পারে বা অন্য আসামীর নাম যোগ হতে পারে। আসামী পক্ষ মামলার এফআইআর কপি যোগাড় করতে পারল আর চার্জশিট তারা জোগাড় করতে পারলনা? তারা কেন চার্জশিট তুলতে পারলনা?

এ প্রেক্ষিতে আসামী পক্ষ আজ মমতাজ বেগমের মামলর চার্জশিট দাখিল করল আদালতে। ১৯৭২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ এ মামলর চার্জশিট দাখিল করে। মমতাজ বেগমের মামলার প্রাথমিক অভিযোগ বা  এফআইআরে ঘটনার  বিবরন, তারিখ এবং  ঘটনাস্থলের যে বিবরন রয়েছে তার সাথে মিল রয়েছে চার্জশিটে বর্নিত ঘটনা, ঘটনার তারিখ এবং ঘটনাস্থলের।  তবে এফঅইআরে যে ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছে তা থেকে চারজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে মাওলানা সাঈদী বা অন্য কোন নতুন আসামীর নাম এ ঘটনায় আর যুক্ত হয়নি চাজশিটে।

মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিটে ঘটনার বিবরন :
২ নং কলামে বর্নিত পলাতক  (১. দানেশ আলী মোল্লা ২. আশরাফ আলী ৩. আব্দুল মমিন হাওলাদার ৪. আব্দুল কালাম চৌকিদার, ৫. আবদুল হাকিম মুন্সি, ৬. মমিন উদ্দিন ৭. মোসলেম মাওলানা) এবং ৩ নং কলামে বর্নিত গ্রেফতারকৃত ( আইউব আলী ও  সুন্দর আলী) আসামীরা ১/১০/৭১ তারিখ রাইফেলসহ মমতাজ বেগমের ঘরে প্রবেশ করে তার স্বামী ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে, রাইফেলের গুলিতে মমতাজ বেগমের হাতে জখম হয়, তাদের বাড়ির জিনিসপত্র লুট করে, তার (মমতাজ বেগম) ভাই সাহেব আলী ওরফে সিরাজকে অপহরন করে পাকিস্তান আর্মির কাছে তুলে দেয় যারা তাকে পরে হত্যা করে। আসামীদের সবাই রাজাকার এবং দালাল। তদন্তে প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১ নং কলামে বর্নিত চারজনকে (আতাহার আলী হাওলাদার, রুহুল আমিন, সেকেন্দার আলী সিকদার এবং শামসুর রহমান) অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে।

গত বৃহষ্পতিবার শুনানীর সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বরিশাল থেকে ১৯৭২ সালে  গঠিত স্পেশাল ট্রাইবুনালের রেজিস্ট্রার বই তলবের আবেদন করেন আদালতে। তখন আসামী পক্ষ থেকে মৌখিক আবেদন করে বলা হয় ১৯৭২ সালে পিরোজপুর থেকে মমতাজ বেগমের মামলার জিআর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) বইও তলব করা হোক। আদালত তখন আসামী পক্ষকে লিখিত আবেদন করতে বলেন। আজ আসামী পক্ষ পিরোজপুর থেকে জিআর বই তলব এবং মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট জমা দিয়ে তা বিবেচনায় নেয়ার জন্য একটি দরখাস্ত জমা দেয়।


পূর্বসূত্র :
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে ইব্রাহীম কুট্টিকে পাড়েরহাট বাজারে  পাকিস্তানী সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে যে মামলা করেন তাতে আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। সেই মামলার ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তখন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে আসামী পক্ষ মামলার প্রয়োজনে এ জাল দলিল তৈরি করেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তবে আসামী পক্ষের এ ডকুমেন্ট বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি রায়ে।

গত ৩ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নতেৃত্বে আপিল শুনানীর  সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট বিষয়ে একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়েন।
আদালত তখন তাকে প্রশ্ন করেন, আসামী পক্ষ মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে পারল আর আপনারা পারলেননা কেন? ১৯৭২ সালে আদৌ এ ধরনের কোন এফআইআর হয়েছিল কি-না? পিরোজপুরে অবশ্যই জিআর রেজিস্ট্রেশন বই আছে। আপনারা এটা চাইতে পারতেননা? আপনাদের অনেক বড় মেশিনারীজ আছে। তার মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন? আমরা যদি আসামী পক্ষের দায়ের করা এ ডকুমেন্ট গ্রহণ করি তাহলে অ্যাটলিস্ট আমরা বলতে পারি সাঈদী এ ঘটনায় জড়িত নয়।
আদালত আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ মামলার শুনানী চলছে। আসামী পক্ষ অনেক আগে এ বিষয়ে যুক্তি পেশ করেছে। আপনারা অনেক সময় পেয়েছেন। এ দীর্ঘ সময়ে আপনারা চাইলে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।

এরপর গত ১১ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেল আসামী পক্ষের জমা দেয়া মমতাজ বেগমের মামলার মূল সার্টিফাইড কপি আপিল বিভাগের রেকর্ড রুম থেকে দেখার আবেদন করেন। গত ১ এপ্রিল শুনানীর পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ মামলার বিচার ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি চান। এরপর খবর বের হল মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথির খোঁজে অ্যাটর্নি জেনারেল বরিশাল সফর করছেন।

ইব্রাীহম কুট্টি হত্যার অভিযোগ : পাড়েরহাট বাজারের নিকটে সইজুদ্দিন পসারীদের  বাড়িতে কাজ করত ইব্রাহীম কুট্টি। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৮ মে মাওলানা সাঈদীসহ শান্তি কমিটির অন্যান্য লোকজনের নেতৃত্বে পাকিস্তান সৈন্যরা ওই বাড়িতে আক্রমন করে। এসময় ইব্রাহীম কুট্টি ও অপর আরেকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পাড়েরহাট বাজারে। পরে মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে পাকিস্তান সৈন্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে পাড়েরহাট বাজারে।

আসামী পক্ষের দাবি : আসামী পক্ষের দাবি ইব্রাহীম কুট্টিকে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়ি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত নন। এ দাবির পক্ষে তারা ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার নথি জমা দিয়েছে আদালতে। মমতাজ বেগমের মামলায় ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মোট ১৩ জন আসামী করা হয়। আসামীর তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। আসামী পক্ষের দাবি তিনি যদি এর সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে অন্তত মমতাজ বেগমের মামলায় তাকে তখন আসামী করা হত।

মমতাজ বেগমের মামলার এফআইর-এ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরন : স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেন। সে মামলার বিবরনে মমতাজ বেগম উল্লেখ করেছেন   তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় শান্তি কমিটির লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি গুলি করে  হত্যা করেছে। ঘটনার সময়কাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১  অক্টোবর ।
মমতাজ বেগমের মামলায় আরো উল্লেখ আছে যে, ওই ঘটনার সময় তাদের বাড়ি থেকে তার ভাই সাহেব  আলী ওরফে সিরাজ এবং তার মা সিতারা বেগমকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর। পরে তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার ভাই সাহেব আলীকে আর ছাড়া হয়নি। তাকে পাকিস্তান পিরোজপুরে আর্মি গুলি করে হত্যা করে।

মমতাজ বেগমের মামলার বিবরনে বলা হয়েছে ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবার নলবুনিয়া তার শশুর বাড়ি থাকা অবস্থায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের দাবির্  ৮ মে তাকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যের স¤পূর্ণ বিপরীত তথ্য রয়েছে মমতাজ বেগমের মামলার নথিতে।

মমতাজ বেগমের মামলায় ঘটনার বিবরন নিম্নরূপ :

“ঘটনার বিবরন এই যে, বিবাদীগন পরষ্পর যোগাযোগে রাইফেল পিস্তল ছোরা লাঠি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার পিতার ঘর বেড়দিয়া আমার স্বামীর উপর গুলি করিয়া হত্যা করিয়া আমার শরীরে জখম করিয়া আমার মাতা ও ভ্রাতাকে ধরিয়া পিরোজপুর আনিয়া আমার মাতাকে ছাড়িয়া দিয়া আমার ভ্রাতা সিরাজুলকে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে। আক্রোশের কারণ এই যে, আমি ও আমার স্বামী আমার স্বামীর বারিতে বাদুরা গ্রামে বাসবাস করিতেছিলাম। গত মে মাসে পাক সৈন্য এদেশে আসিয়া যখন অকারনে গুলি করিয়া মানুষ হত্যা করিতে থাকে তখন কতিপয় হিন্দু আমাদের সরনাপন্ন হওয়ায় আমরা তাহাদের আশ্রয় দেওয়ায় পাক সৈন্য ও তাহাদের দালালরা আমার স্বামীকে হত্যা করিতে খোঁজ করিতে থাকায় আমরা ভয়ে ভীত হইয়া আমরা পিত্রালয়ে বসবাস করিতেছিলাম। তথায় বিবাদীগন ক্রোধ করিয়া উক্তরুপ অত্যাচার করিয়াছে।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে আমি গর্ভবতী থাকায় আমার পিতা পারোরহাট আওমীলীগ অফিসে জানাইয়া কোন প্রতিকার পাইনাই। তাই এই দরখাস্ত করিতে বিলম্ব হইল।
সে মতে প্রার্থনা, আদালত দয়া করিয়া উক্ত ধারামতে উক্ত বিবাদীগনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট দিয়া ধৃত করাইয়া সুবিচার করিতে আজ্ঞা হয়। ইতি মমতাজ বেগম”

মামলঅর নথি থেকে ঘটনার এ ব্বিরন আসামী পক্ষ থেকে আদালতে পড়ে শোনানো হয়েছে শুনানীর সময়।

মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর এ   আসামীর তালিকা :
মমতাজ বেগম  সে মামলায় মোট ১৩ জনকে আসামী করেছেন।  এরা হল  দানেশ মোল্লা,  আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌকিদার, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়। কিন্তু মমতাজ বেগমের মামলায় আসামীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।

আপিল শুনানীর সময় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম  শাহজাহান আদালতে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আমাদের এ ডকুমেন্টকে অসত্য এবং জাল আখ্যায়িত করেছে।  তাদের উচিত ছিল পিরোজপুর থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ডাকার ব্যবস্থা করে তাদের দাবি প্রমান করা। কিন্তু তারা তা করেনি। বরং  আমরা থানা থেকে এ মামলার নথিপত্র তলবের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

আসামী পক্ষ যেভাবে সংগ্রহ করল মমতাজ বেগমের মামলার নথি : মাওলানা সাঈদীর ছেলে   ও ১৩ তম সাফাই সাক্ষী মাসুদ সাঈদী ট্রাইব্যুনালে জেরায় বলেছেন, ‘তার বড় ভাই মরহুম রাফিক বিন সাঈদীকে মমতাজ বেগমের মা সিতারা বেগম মামলার মূল সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করেন।’
মামলার বাদী মমতাজ বেগমের মা সিতারা বেগম ১৯৭২ সালে এ মামলার সার্টিফাইড কপি পিরোজপুর থেকে ইস্যু করান এবং সিতারা বেগম দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ মামলার কপি সংরক্ষন করেছেন।

মমতাজ বেগমের মামলার ঘটনাপ্রবাহ :
মামলার নথি  ঘেটে দেখা যায় ১৯৭২ সালের ৮ মার্চ মমতাজ বেগম পিরোজপুর এসডিও কোর্টে প্রথম এ মামলা করেন। তখন এসডিও ছিলেন একে আজাদ। ওই তারিখে এসডিও মামলাটি পিরোজপুর থানায় পাঠান।

বাদী মমতাজ বেগমের লিখিত অভিযোগ এসডিওর কাছ থেকে পাবার পর পিরোজপুর থানা ১৬/৭/১৯৭২ তারিখ বেলা ১টা ৩০ মিনিটের সময় অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে। মামলা নং ৯। জিআর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) নং ৩৭৮/৭২।

১৭/৭/১৯৭২ তারিখ সকাল ৮টায় থানা থেকে মামলাটি পিরোজপুর কোর্টে পাঠানো হয়। তখন থানার ওসি ছিলেন মেফতাউদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজে মামলার তদন্ত শুরু করেন। মামলার এজাহারে ঘটনার তারিখ লেখা আছে ১/১০/১৯৭১। বাংলা ১৩ আশ্নিন ১৩৭৮।
২২ জুলাই ১৯৭২ এসডিও কোর্টে মামলাটি উত্থাপন করা হয়।

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ পুলিশ এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে।

৩ অক্টোবর ১৯৭২ এসডিও বরাবর চার্জশিট উপস্থাপন করা হয়।
মমতাজ বেগমের অভিযোগ অনুসারে  এ মামলার তদন্তকালে আসামীদের মধ্য থেকে ২ জনকে আটক করা হয়। এরা হল আইউব আলী চৌকিদার ও সুন্দর আলী দফাদার।

পুলিশের প্রতিবেদনে আসামীদের মধ্য থেকে যাদেরকে পলাতক দেখানো হয় তারা হল
১.    দানেশ মোল্লা
২.    আশরাফ আলী
৩.     আব্দুল মান্নান
৪.    কালাম চৌকিদার
৫.    আব্দুল হাকিম মুন্সি
৬.    মমিন উদ্দিন
৭.    মোসমেল মওলানা।

মামলা চলাকালে পলাতক আসামীদের মধ্য থেকে আরো ২ জনকে আটক করা হয়। ১৯৭২ সালের ৭ অক্টোবর আব্দুল মান্নান এবং ১৯৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মমিন উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয় যা মেজিস্ট্রেট কোর্টে সংরক্ষিত জিআর বইতে ৩৭৮/৭২ জিআর কপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়।
জিআর কপি পর্যালোচনা করে আরো দেখা যায় মমতাজ বেগমের দায়ের করা ওই মামলা থেকে আসামী আতাহার আল হাওলাদার, রুহুল আমিন সেকেন্দার শিকদার, শামসুর রহমান (তৎকালীন পিরোজপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই) কে অব্যাহতি দেয় কোর্ট।

মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলাটি ২৭/১১/১৯৭২ সালে তৎকালীন এসডিও এমএ হাশেম মিয়া স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জাজ বরিশাল প্রেরন করেন।
মামলার জিআর বইয়ে দেখা যায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে মামলার কার্যক্রমের জন্য মামলাটি বাকেরগঞ্জ ডিসির কাছে পাঠানো হয়েছিল। জিআর বইয়ের ১৭ নং কলামে লেখা আছে-
ঔঁফরপরধষ ৎবপড়ৎফ ংবহঃ ঃড় উঈ ইধশবৎমড়হম ঢ়ৎড়ারফব ঃযরং সবসড় ঘড় ২৫৫ ঔঁফরপরধষ, ফধঃবফ ১৭/২/১৯৮১ ারফব ঃযরং পড়সঢ়ষঃ সপপ ঘড় ১৮৯/৮১.




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন