মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চতুর্থ ও পঞ্চম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ

১৮/২/২০১৪
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান (এমসি) মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ ও পঞ্চম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ চতুর্থ সাক্ষী সুনীল কান্তি বর্ধনকে আসামীপক্ষের জেরা শেষে পঞ্চম সাক্ষীর শিবু দাশের সাক্ষ্যগ্রহণ করা করা হয়। দুই সাক্ষীকেই জেরা করেন মীর কাসেম আলীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরা শেষে আগামীকাল বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

আজ জেরার সময় মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম এবং অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সাইফুল ইসলাম ও নুরজাহান মুক্তা।

চতুর্থ সাক্ষী সুনীল কান্তি বর্ধনের জেরা গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয় । আজ তার জেরা সম্পন্ন হয়।

আজকের  জেরা
প্র্রশ্ন: ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ডালিম হোটেলে যে কক্ষে আপনাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সেখানে পূর্ব থেকে আটককৃত বন্দিদের আপনি চিনতেন?
উত্তর: না, চিনতাম না। তবে তাদের দেখলে চিনব।
প্রশ্ন: সৈয়দ মোহাম্মদ এমরান, ডিসি অফিসের কর্মচারী সানাউল্লাহ চৌধুরী, তার ভগ্নিপতি হাবিবুর রহমান ও এসকান্দার আলীকে চিনতেন?
উত্তর: চিনতাম না।
প্রশ্ন: আপনারা চট্টগ্রামের হাজারী লেনের গলিতে আসার আগে না পরে ডালিম হোটেল তৈরি হয়েছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ডালিম হোটেলের বর্তমান মালিক কে এবং সেখানে এখন কারা বসবাস করে বলতে পারবেন?
উত্তর: বলতে পারব না এবং এখন ওই হোটেলে কারা বসবাস করে তাও বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আপনি মীর কাসেম আলীকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গতকাল প্রথম দেখলেন।
উত্তর: সত্য।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে রনজিত দাশের পেশা কি ছিল?
উত্তর: ভাঙ্গা বোতল কেনা বেচা করতেন এবং চায়ের দোকান ছিল।
প্রশ্ন: টুনটু সেন ও রনজিত দাশের পিতার নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: বলতে পারব না। তবে রনজিত দাশের পিতার নাম ছিল রবীন্দ্র দাশ।
প্রশ্ন: আপনি কি মুক্তিযোদ্ধা?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম।
প্রশ্ন: আপনি কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন?
উত্তর: আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সহযোগীতা করেছি।
প্রশ্ন: আল-বদর পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি গোপন সংগঠন ছিল।
উত্তর: জানা নেই।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর আপনার উপর নির্যাতনের বিষয়টি আপনি পুলিশ, জেলা প্রশাসন বা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে জানাননি।
উত্তর: সত্য।
প্রশ্ন: টুনটু সেন ও রনজিত দাশকে হত্যার তাদের স্ত্রীদের সাথে কথপোকথনের বিষয়টি গতকালই প্রথম ট্রাইব্যুনালে বলেছেন।
উত্তর: সত্য।
প্রশ্ন : দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিংয়ের মালিক কে ছিল?
উত্তর: বলতে পারব না।
প্রশ্ন : বর্তমান মালিক কে বলতে পারবেন?
উত্তর :  বর্তমান মালিককে তাও বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে আপনাকে চাকতাই খালের নিকট থেকে আটক করা হয়নি বা দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়া বা ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়নি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি শেখানো মতে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: টুনটু সেন ও রনজিত দাশ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আপনার জ্ঞান নেই।
উত্তর: জ্ঞান নেই, তবে শুনেছি।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে মীর কাসেম আলী কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন না।
উত্তর: সত্য নয়।

পঞ্চম সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা :
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষীর জেরা শেষে পঞ্চম সাক্ষী শিবু দাশের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দীতে শিবু দাশ বলেন, আমার নাম শিবু দাশ। পিতা শহীদ রনজিত দাশ। মার নাম প্রভা রানী দাশ। বর্তমান বয়স ৪৬ বছর। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আনুমানিক বয়স ছিল তিন বছর। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে আমার বাবা শহীদ হন। আমরা তিন ভাই বোন। ভাই বোনদের মধ্যে আমি তৃতীয়। ছোট বেলায় বাবার স্মৃতি মনে নেই। বড় হয়ে মার কাছ থেকে শুনেছি- আল-বদর বাহিনী বাবাকে হত্যা করেছে। ’৭১ সালে বাবা শিশি বোতল বিক্রি করত ও তার একটি চায়ের দোকান ছিল। ’৭১ সালের নভেম্বর মাসে মীর কাসেমের নির্দেশে বাবাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে আটক রেখে হত্যা করা হয়। এছাড়া টুনটু সেনকেও ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। ডালিম হোটেলে ’৭১ সালে বদর বাহিনীর আড্ডাখানা ছিল। সেখান থেকে অনেক লোকদেরকে নিয়ে মেরে ফেলত।  

জবানবন্দী শেষে আসামীপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন।

জেরা:
প্রশ্ন: আপনার বড় বোনের নাম ও বয়স কত?
উত্তর: কৃষ্ণা দাশ। বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর।
প্রশ্ন: টুনটু সেন ’৭১ সালে কোথায় থাকত?
উত্তর: হাজারী লেনে আমাদের প্রতিবেশি (ভাড়াটে) ছিল। 
প্রশ্ন: আপনাদের হাজারী লেনের বাড়ি থেকে ডালিম হোটেলের দূরত্ব কত?
উত্তর: প্রায় ১০০ গজ।
প্রশ্ন: ডালিম হোটেলে এখন কে থাকে?
উত্তর: বলতে পারব না। আমি এখন হাজারী লেনে থাকি না।
প্রশ্ন: আপনার মা কি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান?
উত্তর: না।
প্রশ্ন: হাজারী লেন এলাকায় ’৭১ সালে যাদের বয়েস ১৫ বা ১৬ বছর ছিল বর্তমানে এমন ৩০ থেকে ৪০ জন এখনও বেঁচে আছেন?
উত্তর: আমার জানা নেই।
প্রশ্ন: টুনটু সেনের ছেলে মেয়ে আছে কি?
উত্তর: টুনটু সেনের কোন ছেলে মেয়ে নেই এবং স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করেছেন।
প্রশ্ন: ’৭১ সাল থেকে আপনার হাজারী লেন এলাকা ত্যাগ করা পর্যন্ত ডালিম হোটেলে কারা বসবাস করত জানেন?
উত্তর: কারা বসবাস করত আমি তাদের চিনি না এবং কে বসবাস করত তাও জানিনা।
প্রশ্ন: হাজারী লেন এলাকার কোন আল-বদর সদস্যর নাম বলতে পারবেন?
উত্তর: না পারব না।
প্রশ্ন: আপনার বাবাকে ধরে নেয়ার সময় অনেক লোক দেখেছে?
উত্তর: অনেক লোক দেখেছে কি না বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আপনার মাও অপনার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখেনি?
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: হাজারী লেনের অজিত কুমার বনিক নামে কোন স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে চেনেন?
উত্তর: চিনি না।
প্রশ্ন: ’৭১ সালে হাজারী লেনে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্বাধীনতার পর কোন মামলা হয়েছিল কি না?
উত্তর: জানি না।
জেরার গ্রহণের এক পর্যায়ে সাক্ষী বলেন, মাথা ঠিক নেই। অতীতের কথা ভুলে যাই।
এরপর আইনজীবী প্রশ্ন করেন, আপনার মস্তিস্কের সমস্যার কারণে আপনার স্মরণশক্তি লোপ পেয়েছে। জবাবে সাক্ষী বলেন, সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনার পিতা ও টুনটু সেন হত্যার বিষয়ে আপনার মায়ের উদ্বৃতি তিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অসত্য এবং আপনার মা এধরণের কোন কথা বলেননি।
উত্তর: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনি শেখানো মতে টুনটু সেন ও আপনার পিতা হত্যার ঘটনায় মীর কাসেম আলীকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য দিলেন।
উত্তর: সত্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন