রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩

ভারতের সুপ্রীম কোর্টে সুখরঞ্জন বালী : আমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবেননা

৪/৮/২০১৩ 
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে অপহনের শিকার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী  ভারতের সুপ্রীম কোর্টে হাজির হয়ে অনুরোধ করেছেন তাকে যেন বাংলাদেশে ফেরত  পাঠানো না হয়। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে বর্তমান সরকার তাকে গায়েব করে ফেববে  বলে তিনি আশঙ্কার কথা জানিছেন কোর্টকে।

গত শুক্রকার ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে সুখরঞ্জন বালীকে হাজির করা হলে তিনি এ অনুরোধ করেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফে এ মর্মে প্রতিবেদন  প্রকাশিত হয়েছে।
ভারতের সুপ্রীম কোর্ট তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি স্থগিত করেছে।

সুখরঞ্জন বালী ছিলেন মাওলানা সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসলে গত বছর ৫ নভেম্বর তাকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরন করে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

গত ১৬ মে ঢাকার ইংরেজি দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় সুখরঞ্জন বালী ভারতের কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের সীমান্তে ঠেলে দেয়ার পর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা তাকে গ্রেফতার করে। নিউএজ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয় সুখরঞ্জন বালীকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরনের পর ছয় সপ্তাহ আটক রাখা হয়। এরপর ডিসেম্বরে তাকে ভারতে পাঠানো হয়। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে উত্তর চব্বিশ পরগনার বশিরহাটের একটি আদালত তাকে ১১০ দিনের জেল দেয়। এরপর বিভিন্ন জেলে সাড়ে চার মাস কারাভোগের পর তাকে কলকাতার দমদম সংশোধন কেন্দ্রে  আনা হয়।
সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে এ  প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশে এবং বিদেশে এ নিয়ে আরেকবার আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ভারতে তার পাশে এসে দাড়ায় বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আইনজীবী । গত বছর ৫ নভেম্বর সুখরঞ্জন বালীকে অপহরন করা হলে তখনো সারা বিশ্বে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সুখরঞ্জন বালীর কারাভোগের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা তৈরি হয়। সেজন্য তিনি ভারতের সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।

সুখরঞ্জন বালীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অন্তত দুই সপ্তাহের মধ্যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবেনা এ মর্মে এডিশনাল সিলসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিং  নিশ্চয়তা প্রদানের পর ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে আদেশ পাশ করে।

সুখরঞ্জন বালীর ভারতে অবস্থান বর্ধিতকরন বিষয়ে আগামী সাত আগস্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্ট সুখরঞ্জন বালীর বিষয়টি সাত আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত ঘোষনার পর তার বিষয়টি ভারতের সুপ্রীম কোর্টে আনা হয়। তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী কলিন গঞ্জালভস  আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন বালীকে ভারত সরকার যেকোন সময় বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে।

ভারতের সুপ্রীম কোর্টে বালীর পক্ষে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়-  বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ মামলায় তিনি রাষ্ট্রপক্ষে একজন সাক্ষী ছিলেন। তিনি  রাষ্ট্রপক্ষ ত্যাগ করে আসামী পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসার পর তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন অপহরন করে ট্রাইব্যুনালের  গেট থেকে। অনেক দিন তাকে আটকে রাখার পর সীমান্ত দিয়ে তাকে ভারতে ঠেলে দেয়া হয় এবং এরপর তাকে বিএসফ গ্রেফতার করে।
উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি আদালত গত এপ্রিল মাসে তাকে ১১০ দিনের জন্য কারাদন্ড প্রদান করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে। তার সাজাভোগের মেয়াদ ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে এবং তার আশঙ্কা তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন