বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত///২ সেপ্টেম্বর আদেশ/// শুনানীতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা

মেহেদী হাসান, ২২/৮/২০১৩
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি করা  হবে কি-না সে বিষয়ে আগামী ২ সেপ্টেম্বর আদেশ দেয়া হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে বিচার প্রকৃয়া শুরুর জন্য রুল জারি এবং ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দায়েরকৃত মামলার ওপর আজ  রাষ্ট্রপক্ষ দীর্ঘ শুনানী পেশ করে। তিন ঘন্টার শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনাসহ অনেক নেতিবাচক কর্মকান্ডের বিবরন তুলে ধরে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে অনৈতিক উপায়ে ফান্ড সংগ্রহ, যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার বিষয়ে তদেন্তর জন্য নাজিপন্থীদের নিয়োগ, সন্ত্রাসী নিয়োগের অভিযোগ করা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ এবং সংস্থার যেসব সমালোচনা রয়েছে তার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু  সমালোচনা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে বাঁধাই করে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে গত ১৬ আগস্ট অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার প্রকৃয়াকে মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে বিবৃতি প্রদানের পর  রাষ্ট্রপক্ষ  ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা দায়ের করে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল আজ শুনানী পেশ করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা অভিযোগের ওপর প্রথমে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু কিছু কথা বলেন। এরপর সুলতান মাহমুদ সিমন শুনানী পেশ শুরু করেন। তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কোন প্রতিনিধিকে আমরা কখনো ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ চলাকালে দেখিনি। তারা আমাদের বিচার নিয়ে যে মত প্রকাশ করেছে তার মাধ্যমে আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর আঘাত করা হয়েছে। আমাদের বিচার, আইন, এবং সংহতিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আমাদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর একটা সীমা থাকা দরকার। এর রশি টেনে ধরা দরকার। তা না হলে আমাদের বিচার ব্যবস্থা ভূলুন্ঠিত হবে। আমাদের সংহতি, সম্মান নস্যাত হবে। আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের ট্রাইব্যুনালের বিচারকে রেফারেন্স আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। সেখানে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আমাদের এ বিচারকে চ্যালেঞ্জ করছে।
তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ বেআইনী।
এসময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে পাঁচটি অভিযোগ করেছে তা দেখে মনে হয় কেউ তাদের গাউড করেছে। আমি এ ট্রাইব্যুনালে যোগ দেয়ার পর একদিনও প্রসিকিউশনকে শান্তিকে থাকতে দেইনি। কারো সাথে চেম্বারে দেখা করার অনুমতি দেইনি। মাঝে মাঝে দুয়েকটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি। তাও কারো বিয়ের দাওয়াতেই আজ পর্যন্ত যাইনি যদিও যাওয়া উচিত। তারপরও আমাদের সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ দেখলে কষ্ট লাগে।
এরপর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল শুনানী পেশ করেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বিশ্বে যত সমালোচনা হয়েছে তা থেকে উল্লেখযোগ কিছু সমালোচনার একটি সংকলন ট্রাইব্যুনালে পেশ করা হয়। ব্যারিস্টার তাপস কান্তি তার শুনানীতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে মারাত্মক কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে অনৈতিক ফান্ড সংগ্রহের অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা ফান্ড সংগ্রহের জন্য সৌদি আরব গেছে এবং সৌদি শাসকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে তারা কখনো কোন কথা বলেনা।
এসময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মৃদু হেসে  বলেন, আল্লাহ তায়ালা সৌদি আরবকে সম্পদ দিয়েছেন। তারা সৌদি আরবের কাছে যাবেনা কি বাংলাদেশে আসবে ফান্ড সংগ্রহের জন্য।
ব্যারিস্টার তাপস বলেন, তারা অর্থনৈতিকভাবে কোন স্বালম্বী প্রতিষ্ঠান নয় । তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ফান্ড সংগ্রহ করে এবং তার উৎস কখনো প্রকাশ করেনা।
এরপর তাপস কান্তি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য একজন নাজিপন্থীকে নিয়োগ দিয়েছে।
এসময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মৃদু হেসে বলেন, সে তো অভিজ্ঞ লোক।
তাপস কান্তি এরপর বলেন, তাদের উপদেষ্টা পরিষদে সন্ত্রাসীও রয়েছে। তখন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন আবারো মৃদু হেসে বলেন, তা না হলে তাদের রক্ষা করবে কে?

তাপস কান্তি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশ্যে সিআইএ কে সমর্থন করে। তাদের বিরুদ্ধে ৯৫ জন একাডেমিশিয়ান বিবৃতি দিয়েছে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এসময় বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কি বাংলাদেশের ছেলে নাফিসের ৩০ বছর জেল দেয়া বিষয়ে কোন কমেন্ট করেছে?
ব্যারিস্টার তাপস বলে,  হিউম্যান রাইটস এর প্রতিষ্ঠাতা ও ২০ বছরের সভাপতি রবার্ট এল বার্নস্টাইন সংগঠনটির কার্যক্রম সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কোন কর্মী গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলনা, আর্মির সাথেও  ছিলনা। কাজেই গাজায় যুদ্ধাপরাধ হয়েছে এ কথা বলা কঠিন।
তাপস কান্তি বলেন, আমাদের এ ট্রাইব্যুনালেও তাদের কোন প্রতিনিধি ছিলনা। কাজেই এখানে আইন ভঙ্গ হয়েছে তা তারা জানল কি করে?

এরপর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজও হিউম্যান রাইটস ওয়াচর এর তীব্র সমালোচনা করে শুনানী পেশ করেন। তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কোন সরল বিশ্বাসে, ভাল উদ্দেশে  ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করেনি। তারা মানবাধিকার রক্ষা না করে উল্টো মানবাধিকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা হিউম্যান রাইটস রক্ষার নামে হিউম্যান রাইটস লঙ্ঘন করেছে। যেটা করার সেটা না করে উল্টোটা করেছে। তারা হিউম্যান রাইটস এর জায়গা থেকে সরে গিয়ে বিপরীতে অবস্থানে চলে গেছে যেন এ বিচারই না হয়। ট্রাইব্যুনালে তাদের কোন পর্যবেক্ষক ছিলনা। কোন সোর্স থেকে তারা কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে, কিভাবে তারা এ বিচার বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়েছে তার কোন সূত্র উল্লেখ করেনি তাদের রিপোর্টে। তারা প্রথম থেকেই এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিতর্ক  শুরু করেছে। তারা পক্ষপাতদুষ্ট, তারা স্বাধীন কোন পর্যবেক্ষক নয় এবং তাদের গোপন এজেন্ড রয়েছে।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজও তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক পন্থায় ফান্ড সংগ্রহসহ বিভিন্ন বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।

ব্যারিস্টার তাপস কান্তি যখন তার শুনানী পেশ শেষ করেন তখন দুপুর একটা বেজে যায় । এরপর তুরিন আফরোজ শুনানী পেশ করার জন্য দাড়ালে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনার কলিগতো অনেক বিস্তারিত বলেছেন। আপনি আর কি বলবেন। তখন ব্যারিস্টর তুরিন আফরোজ বলেন, ৪৫ মিনিট সময় চান শুনানী পেশ করার জন্য।
এসময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন হেসে বলেন, বেশি বলিয়েননা। তারা আবার সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে দিতে পারে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক শুনানী গ্রহণ করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন