শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

বিদ্যমান আইন ন্যায় বিচারের মানদণ্ড পূরন করেনা-আইসিটিজে


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রানজিশনাল জাস্টিস (আইসিটিজে) এর পক্ষ থেকে  বলা হয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার  আইন ন্যায় বিচারের মানদণ্ড পূরণ করেনা। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে  আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত  যেসব  মৌলিক অধিকার  রয়েছে তার অনেক কিছুই অনুপস্থিতি বাংলাদেশের আইনে।

গত ১৫ মার্চ ২০১১ আইসটিজে’র সভাপতি ডেভিড টোলবার কর্তক আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক   মন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বরাবার  লিখিত এক চিঠিতে একথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে বিদ্যমান আইনী কাঠামোতে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য যেসব অধিকার রয়েছে তা পাওয়া সম্ভব নয়। বিদ্যমান  আদালতে  যেসব অপরাধের বিচার করা হবে সে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়নি। অপরাধকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। অথচ আদালতের বিচারিক ক্ষমতা, এখতিয়ার  এবং আওতা নিভর  করে এসবের ওপর।  চিঠিতে বলা হয়েছে, নাগরিকদের নির্বিচারে গ্রেপতার  করার অধিকার রাষ্ট্রকে দেয়া হয়নি। কেবলমাত্র  যৌক্তিক এবং সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগেই আদালত কাউকে গ্রেফতারের আদেশ দিতে পারে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে  অভিযুক্ত ব্যক্তির যেসব ন্যূনতম মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা রয়েছে তার তুলনায় বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনটিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়টি  উপেক্ষিত  রয়ে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে।

যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন তথা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এর সংশোধনের  দাবি জানিয়েছেন ডেভিড টোলবার। সেইসাথে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার রক্ষা এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু সনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে তার চিঠিতে।

আইনের শাসন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অভিযুক্তদের অধিকার রক্ষায় এ্যডভোকেসি হিসেবে কাজ করে আসছে আইসিটিজে। গত ১৫ মার্চ ২০১১ এ সংস্থা  বাংলাদেশের আইনমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েয়েছে যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে তাদের অভিমত ব্যক্ত করে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে ন্যায় বিচার পায় তার সকল নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা করতে হবে বাংলাদেশকে।  যুদ্ধাপরাধ আইনের ইতোমধ্যে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে অভিযুক্তদের জন্য কিছু কিছু সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  কিন্তু তারপরও   আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে  অভিযুক্ত ব্যক্তির যেসব ন্যূনতম মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা রয়েছে তার তুলনায় বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনটিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়টি  উপেক্ষিত  রয়ে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের বিচার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন ুন্ন হবে তেমনি বিচার  প্রকৃয়ারও বৈধতা  এবং আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে।  এতে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকবেনা বিচারের প্রতি।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন  অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস এ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।  আন্তর্জাতিক এ চুক্তির ১৪ ধারা মোতাবেক  যেকোন ফেজাদরী বিচাররের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায় বিচার প্রাাপ্তির লক্ষ্যে  তার সকল অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  কিন্তু ঘটনা  হল  যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের  কিছু কিছু অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে রহিত করা হয়েছে বলে  দেখা যাচ্ছে।  বিদ্যমান যুদ্ধাপরাধ আইন এবং আইনী কাঠামো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে আইসিটিজে’র পক্ষ থেকে। সে আলোকে ১০৭১ সালে  পরিচালিত বর্বরতার  শাস্তি বিধানের  ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, বিচারকে আন্তর্জাতকিভাবে গ্রহনযোগ্য এবং  এটি যাতে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ   করে সেজন্য আইসিটিজে’র পক্ষ থেকে কতিপয় প্রস্তাব করা হয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো নিন্মরূপ

বৈধতার মূলনীতি: যে আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ চলছে সে আইনে অপরাধসমূহকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। আদালতের আওতা বা বিচারিক  ক্ষমতা  নির্দিষ্ট করতে হলে অপরাধকেও সঠিকভাবে বর্ণনা করা এবং নির্দিষ্ট করা দরকার। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ আনা হয়েছে  সে বিষয়ে যাতে সে  ভাল করে বুঝতে পারে এবং নিজেকে অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রস্তুত করতে যথেষ্ট সময় পান সেজন্য আদালতের আওতা  বা বিচারিক ক্ষমতা অবশ্যই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। ঐ অআদালত কি কি অপরাধের বিচার করতে পারবে সে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা থাকতে হবে। অপরাধের উপাদান কি কি, ব্যক্তিগত অপরাধের দায়দায়িত্ব এবং যে সময়ে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেই সময়ে  অভিযুক্ত’র পক্ষে কি কি গ্রহণযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল  সেসব বিষয় স্পষ্ট  করে উল্লেখ থাকতে  হবে। আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানদণ্ড অনুযায়ী  বিচার সংক্রান্ত  যেকোন বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আপত্তি উত্থাপনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে এবং  রায়ের বিরুদ্ধে জুড়িশিয়াল রিভিউর সুযোগ থাকতে হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন