শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

সাক্ষী বলেন মুক্তিযুদ্ধ করিনাই, এমপি সার্টিফিকেট দিলেন সম্মুখ যুদ্ধের

 ২৩/১২/১১

মেহেদী হাসান
“মো: সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার, পিতা মৃত হোচেন আলী হাওলাদার, গ্রাম চিথলিয়া, ৭ নং শঙ্করপাশা ইউনিয়ন, ডাকঘর পাড়েরহাট, উপজেলা ও জেলা পিরোজপুর। সে একজন  প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়া আমার সাথে থাকিয়া সুন্দরবন এলাকায় বীরত্বের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে  সম্মুখ যুদ্ধ করিয়াছে। ”

এটি একটি প্রত্যয়নপত্র । পত্রটি দিয়েছেন পিরোজপুর সদর আসনের  এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা  আলহাজ্ব এ. কে. এম. এ. আউয়াল।  চিঠি ইস্যুর তারিখ ১৩/৯/২০১০।  প্রত্যয়ন পত্রটি যাকে দেয়া হয়েছে সেই সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার গত বুধবার ২১ নভেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।  পরের দিন গত বৃহষ্পতিবার  জেরার সময়  সুলতান আহম্মেদ আদালতে বলেছেন, তিনি কোন মুক্তিযোদ্ধা নন।  তিনি বা তার পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা বৃহষ্পতিবার দিনব্যাপী তাকে জেরা করেন। জেরার সময় বেরিয়ে এসেছে তিনি কোন  মুক্তিযোদ্ধা নন বরং কলা চুরিসহ তিনটি চুরির মামলার আসামী।
এমপি এ. কে. এম. এ. আউয়ালের কাছে  গতকাল দৈনিক নয়া দিগন্ত’র পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় এ প্রত্যয়নপত্র বিষয়ে। তিনি বলেন, কাকে কখন কোন চিঠি  দিয়েছি তা এই মুহুর্তে   মনে নেই। সুলতান আহম্মেদ কে তাও আমি চিনিনা।
জেরার সময় সুলতান আহমদকে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “আপনি তালিকাভুক্ত কোন মুক্তিযোদ্ধা কি-না।”  তখন সুলতান আহমদ বলেন, “আমি মুক্তিযোদ্ধাই নই।” মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তখন প্রশ্ন করেন “আপনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে  তালিকাভুক্ত হবার জন্য পিরোজপুর সদর এমপি এ.  কে. এম. এ. আউয়ালের কাছে দরখাস্ত  করেছেন  এবং এমপি আপনাকে ডিও লেটার দিয়েছেন। তখন সুলতান আহমদ বলেন,  “ সহায়ক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে  অন্তভুক্তির জন্য দরখাস্ত  করেছি। মুক্তিযোদ্ধার সমর্থনকারী হবার জন্য।” এরপর  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী স্পষ্ট করে জানতে চান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার জন্য দরখাস্ত দিয়েছেন কিনা। তখন তিনি   বলেন, না।

সাক্ষী সুলতান আহম্মেদকে কলা চুরির মামলায় পিরোজপুর মেজিস্ট্রেট আদালত জেল দেন সুলতান আহমদকে। পিরোজপুর জজ কোর্ট সে সাজা বহাল রাখেন। বর্তমান হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি। এছাড়া সুলতান আহমদের বিরুদ্ধে  ট্রলার চুরির দায়ে অপর দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বরিশালে। জেরার সময় এসব মামলার কথা স্বীকার করেছেন সুলতান আহম্মেদ। তার বিরুদ্ধে  জোর করে চরের জমি দখলে রাখারও অভিযোগ রয়েছে।

সুলতান আহম্মেদ সম্পর্কে এসব তথ্য প্রকাশ করে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তি হয়ে ভাতা  গ্রহণ,  চুরির মামলা থেকে খালাস পাওয়া,  চিথলিয়া চরে ১০ বিঘার মত জমি দখল   অব্যাহত রাখা, সরকারি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ এবং আরো সরকারি সুবিধা গ্রহনের আশায় সুলতান আহম্মেদ আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদ দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।  সাক্ষী সুলতান আহম্মেদ এ অভিযোগ সত্য নয় বলে জবাব দেন।

গত বুধবার সুলতান আহমদ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত  চারজন সাক্ষী স্যা দিলেন । এর মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায়। এছাড়া অন্য মামলাও রয়েছে   এ তিন সাক্ষীর বিরদ্ধে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার চুরির মামলায় জেল খেটেছেন। পরে তিনি এ সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন বলে আদালতে বলেছেন। এছাড়া স্ত্রীর যৌতুক মামলায় তার সাজা বহাল রয়েছে  এবং বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিনের বিরুদ্ধেও  বিদ্যুৎ চুরির মামলা হয়েছে বলে আদালতে তথ্য প্রকাশ করেন মওলানা সাঈদীর  আইনজীবীরা। গত বৃহষ্পতিবার   চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদের  বিরুদ্ধে  তিনটি চুরির মামলার তথ্য প্রকাশ পেল।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন রুহুল আমিন নবিন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা সাক্ষী রুহুল আমিনের  বিরুদ্ধে বিদ্যুতের মিটার টেম্পারিংয়ের কারনে  বিদ্যুৎ চুরির মামলায় জেল খাটার অভিযোগ আনেন। এছাড়া তিনি  পূবালী ব্যাংক থেকে  লোন নিয়ে বরফ কল স্থাপন  করেন এবং ব্যাংক লোন শোধ না করার কারনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।  তার বরফ কল নিলামে  তুলে পারের হাট বাজারে ঢোল পেটানো হয়।  বর্তমান মামলায় সাক্ষী দেয়ার বিনিময়ে  সাক্ষী রুহুল আমিনের  বিপুল অংকের সুদ মওকুফ করা হয়েছে  এবং সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা  পেয়ে চলতি মাসেই তিনি ব্যাংকের আসল লোন শোধ করেছেন বলে আদালতকে জানান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এছাড়া  বিদ্যুৎ বিলের মামলায় অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দিয়ে তিনি  মুক্তি পান বলেও জানানো হয়। 
মামলার বাদী  এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বিরুদ্ধেও   রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের  অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন