শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

হুমায়ুন আহমেদের পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান হত্যার অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন

২৬/১১/২০১২ সোমবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আজ আসামী পক্ষ  পিরোজপুরের তকালীন এসডিপিও শহীদ ফয়জুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত এসডিও  শহীদ আব্দুর রাজ্জাক এবং  মেজিস্ট্রেট শহীদ সাইফ মিজানুর রহমান হত্যাকান্ড বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ একজন মাত্র সাক্ষী হাজির করেছে ট্রাইব্যুনালে এবং তিনিও কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নন। তিনি এ ঘটনা মন্নাফ রাজাকার এবং শান্তি কমিটির নেতা  আফজালের কাছে শুনেছেন।  রাষ্ট্রপক্ষের এ সাক্ষীর নাম হল সাঈফ হাফিজুর রহমান। তিনি শহীদ সাঈফ মিজানুর রহমানের ভাই। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ  দৈনিক জনকণ্ঠ এবং দৈনিক ভোরের কাগজের ২০১১ ও ২০১০ সালের কিছু রিপোর্টে   দাখিল করেছে অভিযোগের পক্ষে।
আসামী পক্ষের এ বিষয়ে যেসব ডকুমেন্ট রয়েছে তা হল শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী জনপ্রিয় কথাসাহিত্যক  হুমায়ুন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ লিখিত ‘জীবন যেকরম’ বই। এছাড়া  স্বাধীনতা যুদ্ধের  দলিলপত্র (অষ্টম খন্ড), পিরোজপুর জেলার ইতিহাস এবং  হুমায়ূন আহমেদ লিখিত জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাস।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আয়েশা ফয়েজ তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন তার স্বামী হত্যা বিষয়ে  একটি মামলা করেছিলেন। অনেক কষ্ট করে সাক্ষী প্রমান সংগ্রহ করা হয়েছিল। বইয়ে তিনি তিনি উল্লেখ করেছেন এদেশে পাকিস্তান মিলিটারি ল ল মানুষ মেরেছে। কিন্তু হত্যাকান্ডের জন্য প্রত্যভাবে দায়ী করা যায় সেরকম স্যা প্রমান কারো বিরুদ্ধে নেই। কাজলের (হুমায়ূন আহমেদ) বাবার হত্যাকান্ডের সাী প্রমান রয়েছে। কে মেরেছে, কারা মেরেছে, কিভাবে মেরেছে তাও জানা আছে।
এসমময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক প্রশ্ন করেন  সেসব সাক্ষী কারা। মিজানুল ইসলাম বলেন,
আয়েশ ফয়েজ সে মামলায় তার স্বামী ফয়জুর রহমান হত্যা বিষয়ে প্রধান আসামী হিসেবে তার বইয়ে দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হল পাকিস্তানী সেনা  অফিসার ব্রিগেডিয়ার আতিক রশিদ  এবং ক্যাপ্টেন এজাজ। বইয়ে তিনি লিখেছেন তার দেহাবশেষ তুলে এনে ময়না তদন্ত করা যাবে এবং হত্যাকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি পূর্নাঙ্গ খুনের মামলা দায়ের করা যাবে। খুনী আসামীর প্রধান নায়ক বিগ্রেডিয়ার আতিক রশীদ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ধরা পড়েছে। এখন যুদ্ধবন্দী হিসেবে আছে। সাধারন যুদ্ধবন্দীরা মুক্তি পেয়ে দেশে যেতে পারে কিন্তু যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাকে বিচার করে শাস্তি দেয়া যাবে।
মিজানুল ইসলঅম বলেন, আয়েশা ফয়েজ তার স্বামী হত্যার  জন্য বারবার পাকিস্তানী সৈন্যদের দায়ী করেছেন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বলেছেন পাকিস্তানী সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিচারের দাবি তিনি সব সরকারের কাছে করেই যাবেন। তিনি কোনদিন বলেননি যে তার স্বামী হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেন সহযোগী হিসেবে।
মিজানুল ইসলাম বলেন তাদের গ্রেফতারের পর পিরোজপুর শহরে   অনুমান ৫ কিলোমিটার পথ ঘোরানো হল। শহ শত মানুষ এর সাক্ষী থাকার কথা । তাদের নিয়ে যাবার সময়, বলেশ্বর নদীর তীরে হত্যার সময় যুদি সাঈদী সাহেব উপস্থিত থাকতেন তবে তা মানুষের মুখে মুখে থাকার কথা ।  শহীদ ফয়জুর রহমানের জানাজায় ৫০ হাজারের মত লোক হয়েছিল। শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী  স্বাধীনতার পরও  পিরোজপুর গিয়েছিলেন। এতবড় একটি ঘটনায় আল্লামা সাঈদী জড়িত  আর এত বছরেও কেউ তাকে এ কথাটি বললনা এটা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে?

আয়েশা ফয়েজ তার বইয়ে লিখেছেন  ফয়জুর রহমানের দেহাবশেষ তুলে পুনরায় দাফনের সময়  পিরোজপুর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজালকে  গ্রেফতার করে থানায় আনা   হয়েছিল। আমি তার কাছ থেকে একদিন কাজলের বাবার কথা জানতে চেয়েছিলাম। উত্তর না দিয়ে দেশ সম্পর্কে আমাকে জ্ঞান দান করেছিলেন। আমাকে দেখে তিনি শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। চিনতে পারলেন সেরকম ভাব করলেননা।

এছাড়া আজ মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ এবং এবং গৌরাঙ্গ সাহার তিনবোনকে  ধর্ষনের উদ্দেশে পাকিস্তানী সেনাদের হাতে  তুলে দেয়ার অভিযোগ বিষয়ে মিজানুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করেন।
শেফালী ঘরামীর স্বামী  মধুসূদন ঘরামী ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন।  তিনি তখন অসুস্থ ছিলেন।  সিক বেডে শুয়ে  সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।  তিনি তার সাক্ষ্যে বলেছিলেন দেলোয়ার শিকদার  তাকে মুসলমান বানিয়েছিল।  দেলোয়ার শিকদার এবং অন্যান্যরা মিলে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। তার স্ত্রীকে কে ধর্ষণ করেছিল  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এ প্রশ্নের উত্তরে মধুসূদন ঘরামী বলেছিলেন  “আমি বাড়িতে ছিলামনা। কারা এসেছিল জানিনা। আমার স্ত্রী  আমাকে পরে বলেছে যে, আমাকে যে মুসলমান বানিয়েছিল সে এসেছিল। তুমি পালাও। ”

মিজানুল ইসলাম জেরার সময় দেলোয়ার শিকদার বিষয় প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে  দেলোয়ার শিকদার, পিতা রসুল শিকদার এভাবে উল্লেখ করেন। গতকাল যুক্তি উপস্থাপনের সময় এ বিষয়টি সামনে আসলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমার মনে আছে সাক্ষী অসুস্থ থাকা অবস্থায় শুয়ে শুয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তখন আপনি অসুস্থ অবস্থায় তাকে সাজেশন আকারে প্রশ্ন করার সময় দেলোয়ার শিকদার   নামের সাথে তার পিতার নাম রসুল শিকদার উল্লেখ করেছিলেন এবং সাক্ষীও তালে তালে অসুস্থ থাকার কারনে  উত্তর দিয়েছেন ‘হ্যা’ বলে।  আমরা  আপনার প্রশ্ন থেকে ‘সান অব রসুল শিকদার’ এ কথাটা বাদ দিতে চাই। ওটা বাদ দিয়ে বাকী সব ঠিক থাকবে।

অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম  বলেন, এই যদি হয়  আমাদের প্রতি আপনাদের ধারণা যে, সাক্ষীকে অসুস্থ অবস্থায় পাজল করে বা কনফিউজড করে একটা উত্তর বের করে নেয়া তাহলে তা আমাদের জন্য  অত্যন্ত বেদনার। তিনি বলেন, আপনারা যদি এটা মনে করতেন তাহলে সাথে সাথে তখন আমাদের বাঁধা দিতে পারতেন বা এ প্রশ্ন এবং উত্তর তখনই বাদ দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। কাজেই আমরা আইন অনুযায়ী এ প্রশ্ন করেছি। সে অধিকার আমাদের ছিল বলেই এ প্রশ্ন করেছি এবং  দেলোয়ার শিকদার নামের সাথে তার পিতার নাম উল্লেখ করেছি।
বিচারপতি নিজামুল হক প্রশ্ন করেন মধুসূদন বলেছেন মধুসূদন ঘরামী বলেছেন  তাকে যে মুসলমান বানিয়েছিল সে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। কে তাতে মুসলমান বানিয়েছিল সেকথা সে বলেছিল কি-না।
এসময় মিজানুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী উভয়ে বলেন ‘বলেছিল’। সে হল দেলোয়ার শিকদার।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আসামী  পক্ষের দাবি  এই দেলোয়ার শিকদার  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী  নন। এর পক্ষে আনপাদের কি প্রমান  বা ব্যাখ্যা আছে তা বলতে হবে। এরপর তিনি রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের  প্রমান করতে হবে সেই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সেই দেলোয়ার  শিকদার  এক ব্যক্তি  কি-না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন