শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

সাঈদীর আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ // ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে// সরে দাড়ানোর দাবি সুপ্রিমকোর্ট বারের

 ১৬/১১/১১
মাওলানা দেলাওয়ার  হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীরা  ট্রাইব্যুনাল থেকে ওয়াক আউট করেছেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক কোন বিবেচনায় আাদালতে বসেছেন তার ব্যাখ্যা না দেয়া পর্যন্ত আজ শুনানির জন্য নির্ধারিত বিষয়বস্তু মুলতবী রাখার আবেদন করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম। কিন্তু মুলতবীর আবেদন গ্রহণ না করায় উপস্থিত সাঈদীর আইনজীবীরা একযোগে এজলাস থেকে বের হয়ে আসেন।

এদিকে মাওলনা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালত কক্ষ ত্যাগ করার পর  সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন
দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হককে অবিলম্বে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছে।
আজ   মাওলানা সাঈদীর  চার্জসীটের ওপর রিভিউ পিটিশনের শুনানী নির্ধারিত ছিল।  কিন্তু  সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম
২ টি আবেদন দাখিল করেন। প্রথম আবেদনে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক কোন বিবেচনায় পুনরায় আদালতে বসেছেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।  এবং অপরটি গতকালের নির্ধারিত রিভিউ পিটিশনের শুনানী মুলতবীর আবেদন জানান। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা না দেয়া পর্যন্ত নির্ধারিত রিভিউ পিটিশনের শুনানী মুলতবী রাখার প্রার্থনা করেন।

আদালত তখন বলেন,  বিষয়টি আপনারা গতকাল  উপস্থাপন করেননি। আজকে মাত্র করেছেন। আমরা আমরা আবেদনটি পাইনি। এ আবেদনে কী আছে আদালত তা অবহিত নয়। এ অবস্তায় আমরা কিভাবে ওই আবেদনের শুনানী করতে পারি। তখন তাজুল ইমলাম বলেন, ১৪ তারিখের আদেশে বিষয়টি আপনার সুভ বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আজকে পর্যন্ত আমাদের আশা ছিল আপনি আদালতে বসবেননা। যেহেতু বসছেন তাই শেষ মুহূর্তে আমরা এই আবেদন দাখিল করেছি। গতকাল দাখিল করলে ওই আবেদনের পূর্ণতা পেতো না।  কারণ আমরা জানতাম না আপনি আজকে আদালতে বসবেন। এপর্যায়ে আদালত তাজুলের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকের নির্ধারিত রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানী করেন। ওই আবেদনের শুনানী হবে ২০ নভেম্বর। 
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আবেদন করার সময়  রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবী সৈয়দ হাযদার আলী অভিযোগ করেন বিচারকাজকে বিলম্বিত করার জন্যই মুলতবী আবেদন দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ১৪ নভেম্বর নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তাই মুলতবী আবেদনের শুনানীর প্রশ্নই আসে না।
তখন উভয় পক্ষের  আইনজীবীদের মধ্যে  বিতর্ক শুরু হয়। এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা কোন আবেদন করলেই রাষ্ট্র পক্ষের  প্রসিকিউটরদের পক্ষ থেকে বিচার কাজে বাঁধাদানের অভিযোগ করা হয়। তাজুল ইসলাম  আদালতকে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে  অভিযোগ আনা হয়েছে, আপনি অতীতে  ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির  গণতদন্ত কমিশনের সাথে জড়িত ছিলেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগে কেন আদালতে বসেছেন ? নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালতে বসতে পারেন না। আপনি এখানে তাকলে আপনার নিজের জন্য যেমন বিব্রতকর; তেমনি আমাদের জন্যও বিব্রতকর।
তাজুল ইসলামের মুলতবী আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আবারো আদালত দিনের  নির্ধারিত বিষয়ে শুনানীর জন্য নির্দেশ দেন। তখন তাজুল ইসলাম অন্যান্য আইনজীবীদের নিয়ে আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালত থেকে একযোগে বেরিয়ে  যাবার পর আদালত মাওলানা সাঈদীল চার্জসীটের  রিভিউ পিটিশনটিও আদালতে উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৪ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারপতি এ.টি.এম. ফজলে কবির এবং এ. কে. এম জহির আহমেদ আদেশ দেন যে, টুাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে  অপসারন বিষয়ে রায় দেয়ার আইনগত এখতিয়ার তাদের  নেই। বিষয়টি তারা সংশ্লিষ্ট বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সুবিবেবচনার ওপর  ছেড়ে দেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, যেহেতু  আদালতের রায়ে বিচারপতি নিজামুল হকের বিবেকের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন সে বিষয়ে আমরা ব্যাখ্যা চাচ্ছি কোন বিবেচনায় তিনি  আবার আদালতে বসেছেন। এর ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আজকের রিভিউ পিটিশন মুলতবীর আবেদন জানিয়েছিলাম।  কিন্তু তা গ্রহণ না করায় আমরা বেরিয়ে এসেছি।
পরে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, অনুমতি না নিয়ে আদালত থেকে ওয়াক আউট করায় সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালের নিয়ম সুপ্রিম কোর্টের বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এর মাধ্যমে আদালতের মান মর্যদা ুন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়কে টেনে এনে ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন তারা। আদালত বা এজলাসের অনুমতি না নিয়ে কোন আইনজীবীর আদালত থেকে ওয়াক আউট করার কোন বিধান নেই। তিনি বলেন, এটা সংসদ নয়, আদালত। আদালত ত্যাগ করার আগে অনুমতি নিতে হয়। তাজুল ইসলাম সহ সাঈদীর আইনজীবীরা এর মাধ্য আদালতের মান মর্যাদাকে ুন্ন করেছেন। ডিফেন্স কাইন্সিলের আচার আচরণ অগ্রহণযোগ্য ও অসৌজন্য। তাই তাজুল ইসলাম এর মাধ্যমে আদালত অবমাননা করেছেন। তার বিরুদ্ধে আলাপ আলোচনা করে প্রসিকিউশনের পক্ষ তেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান।

নিজামুল হককে অবিলম্বে সরে দাঁড়ানোর
দাবি সুপ্রীম কোর্ট বারের


সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের পদত্যাগ দাবি জানানো হয়।  মাওলনা সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনাল কক্ষ ত্যাগ করার পর   আজ দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান  বিচারপতি নিজামুল হককে সরে দাঁড়ানোর এ দাবি জানিয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বারের সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যরিষ্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, সুপ্রীম কোট এবং বিচারপতিদের মর্যদা ও স্বাধীনতার স্বার্থে তাকে অবিলম্বে সরে দাড়ানোর আহবান জানান সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ।
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এসময় সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ তারিখের আদেশের পর বিচারপতি নিজামুল হকের আবার আদালতে বসা সুবিবেচনার কাজ হয়নি। এটা সুপ্রিম কোর্টের  জন্য মর্যাদাহানিকর বিষয়।
ব্রিফিংয়ে  লিখিত  বক্তব্যে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৪ তারিখের আদালতের আদেশের পর সকল আইনজীবীরা আশা করেছিল বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম সুবিচেবনার পরিচয় দিয়ে সরে দড়াবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। আজকে আমরা তাকে আদালতে  বসতে দেখে বিস্মিত হয়েছি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  বিচারপতি নিজামুল হক ঘাতক দালাল নিমুল কমিটি গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সেক্রেটারিয়েটের  একজন সদস্য ছিলেন। বিএনপি  এবং জামায়াতের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে  তদন্তের  জন্য ১৯৯৩ সালে ঐ  কমিশন গঠন করা হয়। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ বর্তমানে আটক বিএনপির ২ জন  এবং জামায়াতের সাবেক পাঁচ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে তদন্ত কমিশন রিপোর্ট জমা দেয়।
আমরা গত ২৭ অক্টোবর বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে গণতদন্ত কমিশনের সাথে জড়িত থাকার  অভিযোগ এনে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আবেদন জমা দেই। বাংলাদেশের সংবিধান, বিচারপতিদের আচরণ বিধি,  সুপ্রীম কোর্ট বিচারপতিদের শপথ,  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টসহ বিভিন্ন চুক্তি, যুদ্ধাপরাধ বিচারের লক্ষ্যে প্রণীত আইনের ৬ ধারা  এবং সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার আলোকে আমরা এ  আবেদন করেছি। গত ১৩ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়।  বিচারপতি নিজামুল হকের গণতদন্ত কমিশনের সাথে  সংশ্লিষ্টতা  এবং তার মাধ্যমে যে নিরপেক্ষ বিচার সম্ভব নয় সে বিষয়ে যুক্তিতর্ক  এবং  বিশ্বের দুটি উদাহরণ পেশ করা হয়েছে।  ১৩ তারিখ শুনানী শেষে ১৪ তারিখ এ বিষয়ে আদালত  বলেন,  তাদের পক্ষে   বিচারপতি নিজামুলক হককে সরে দাড়ানো বিষয়ে  রায় দেয়ার কোন আইনগত এখতিয়ার নেই। বিষয়টি  ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের  সুবিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এখন কোন বিবেচনায় তিনি আবার আদালতে বসলেন সে বিষয়ে আমরা ব্যাখ্যা চাই তার কাছ থেকে। কারণ ১৪ তারিখের আদেশে আদালত আমাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেননি। ১৩ তারিখের শুনানীতে যেসব যুক্তি এবং উদাহরণ উপস্থাপন করা হয়েছে তার একটিও  আদালত অস্বীকার করেনি রায়ে। তিনি যে গণতদন্ত কমিশনের সাথে জড়িত ছিলেননা তাও বলেনি আদালত। আমাদের সব অভিযোগ এবং যুক্তি আদালতে গৃহীত হয়েছে। এরপর আমরা আমরা আশা করেছিলাম তিনি নিজ থেকে সরে  দাঁড়াবেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা  আজ এখনই তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাড়ানোর অনুরোধ করছি। তানাহলে বিচার ব্যবস্থায় দু:খজনক ঘটনার অবতারণা ঘটতে পারে।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে চান তার এ বক্তব্য সুপ্রীম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে কিনা।  এসময় বার সভাপতিসহ উপস্থিত অন্যান্যরা জানান, সুপ্রীম কোর্টের মর্যাদা, দেশের বিচার বিভাগের মর্যাদা  এবং স্বাধীনতা রক্ষায় বারের পক্ষ থেকে এ ঘোষনা দেয়া হচ্ছে  এবং বিচারপতি নিজামুল হককে অবিলম্বে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য দাবি জানানো যাচ্ছে।
দু:খজনক ঘটনার অবতারনা বলতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কি বুঝিয়েছেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে  বার সভাপতি  খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সুপ্রীম জুড়িশিয়াল কাউন্সিলে আমাদের যেতে হতে পারে। সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।
ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনারা আগামী রোববার আদালতে যাবেন কিনা ? জবাবে তিনি বলেন, ওইদিন আমাদের আইনজীবীরা আদালতে যাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন