মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯ তম সাক্ষীর জবানবন্দী

২/৯/২০১৩
আজ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ আবু সামা ফকির। আমার বয়স আনুমানিক ৭০/৭১ বৎসর। আমার ঠিকানা- গ্রাম- তলট, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা।
১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর আমি পাবনাতে মোজাহিদ বাহিনীর ট্রেনিং নেই। ১৯৭১ সালে আমি কৃষি কাজ করতাম এবং টুকটাক ব্যবসা করতাম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর আমি আমার গ্রামের মতিন, মোহাম্মদ আলী, গাজীউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলী ওরফে বাচ্চু, সুমান্ত কর্মকার, বাক্কু, অরুন চন্দ্র হাওয়ালাদার, ঝড়– সূত্রধরসহ আরো অনেককে আমি মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংঘটিত করতে থাকি। ১৯৭১ সালের ২৮শে এপ্রিল বেড়া বনগ্রামের ইপিআর নজরুল, আনসার শুকুর আলী ও জয়নালদের সঙ্গে আমি মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে পরামর্শ করে সকাল অনুমান নয়টা দশটার দিকে বাড়ি ফিরছিলাম, আমি যখন করমজার নিশিপাড়া কালীবাড়ির পূর্ব দিক দিয়ে সাথিয়া রাস্তার পাশে এসে দাড়াই তখন দেখতে পাই যে, পূর্ব দিক থেকে সাথিয়ার দিকে আর্মির একটি গাড়ি আসতেছে। আর্মির গাড়ি দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমি রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্যে পালাই। সেই ঝোপের মধ্য থেকে আমি দেখতে পাই যে, ঐ গাড়িতে আর্মি অফিসারের পাশে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বসা। আরো কয়েকজন বাঙ্গালীকে ঐ গাড়ির পিছনে আর্মিদের সঙ্গে বসা দেখি। এই সময় আরো দেখি যে, পশ্চিম দিক থেকে হাবিবুর রহমান ও আক্কাস পূর্ব দিকে যাচ্ছিল। ঐ দুইজন আর্মির গাড়ি দেখেই দৌড়িয়ে রাস্তার দক্ষিণ পাশে তেতুল গাছের আড়ালে লুকায়। তখন ঐ আর্মির গাটিটি তেতুল গাছের পাশে এসে থামে। তখন আরো দেখি যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেব তার পাশের আর্মি অফিসারকে ইশারা দিয়ে কি যেন বলে। তখন গাড়ি থেকে দুইজন আর্মি নেমে তেতুল গাছের পাশে লুকিয়ে থাকা হাবিবুর ও আক্কাসকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পর আর্মির গাড়ি পশ্চিম দিকে না গিয়ে পূর্বে দিকে ফিরে যায়। গাড়ি চলে যাওয়ার কিছু সময় পর তেতুল গাছের পাশে গিয়ে হাবিবুর রহমান ও আক্কাসকে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখি। তারপর আমি হাবিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তার ভাই এবং আত্মীয় স্বজনকে এই খবর দিয়ে বাড়ি চলে যাই।
১৯৭১ সালের ৮ই মে ফজরের নামাজের পর করমজা গ্রামের দিক থেকে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। এই শব্দ শুনার পর আমি ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে গিয়ে পালাই। অনুমান ঘন্টা খানেক পর গোলাগুলির শব্দ থেমে যায়। তখন আমি আস্তে আস্তে করমজার দিকে যাচ্ছিলাম। করমজা গ্রামে গিয়ে আমি দেখলাম মেগা ঠাকুরের বাড়ির পূজার ঘরের পাশে মেঘা ঠাকুর, দ্বিজু ঠাকুর, করু ঠাকুর, ষষ্ঠী হালদার, কার্তিক হালদার, শান্ত হালদার, মুরালী মালি ও ফকির চাঁদ মোট নয়জনকে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। এদের পেটে বুকে অজ¯্র গুলির ফোটা এবং কারো কারো মাথার খুলি উড়ে গেছে। তখন মুরালী মালিকে গর্তের মধ্যে মাটি চাপা দেওয়া হয় এবং মেগা ঠাকুরসহ অন্যান্যদের একটি কুপের মধ্যে মাটি চাপা দেওয়া হয়। ফকির চাঁদকে গোরস্থানে কবর দেওয়া হয়। আরো দেখলাম বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরো শুনলাম মেগা ঠাকুরের মেয়ে এবং ছেলের বউকে পাক আর্মি ও রাজাকাররা ধর্ষণ করেছে। উপস্থিত লোকজনদের মধ্যে আনছার আলী ও শফিজসহ অন্যান্য লোকজনের নিকট থেকে জানতে পারি যে, মতিউর রহমান নিজামী, রফিকুন্নবী বাবলু, আফজাল, আসাদ, শুকুর খান গংরা আর্মিদের দেখিয়ে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আজ থেকে অনুমান ৪/৫ মাস আগে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট আমি জবানবন্দি প্রদান করেছি। অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।

জেরা :
আমার বিয়ে ইংরেজী সনের কোন মাসের কত তারিখে হয়েছিল তাহা আমার স্মরন নাই। (চলবে)
 তারিখ ঃ ০৮-০৯-২০১৩ ইং
পূনরায় জেরা শুরু ঃ
১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন কত তারিখে হয়েছিল তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭১ সালের ঈদ-উল-আযহা ও ঈদ-উল-ফিতর ইংরেজী সনের কোন মাসের কত তারিখে হয়েছিল তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালের দিকে গ্রামাঞ্চলে বাংলা ও ইংরেজী উভয় তারিখ ব্যবহার হত। আমি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পর আমাদের এলাকায় যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল তার নেতৃত্ব দিতেন অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব এবং এ্যাডভোকেট আমজাদ সাহেব, আহমেদ রফিক সাহেব তখন মারা গিয়েছিলেন। এ্যাডভোকেট আমজাদ সাহেব আমাদের এলাকার এম,পি,এ ছিলেন না, তাকে পাবনায় দেখতাম। বাড়ি কোথায় বলতে পারব না। আমি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক ছিলাম। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলের সভা ও মিটিংয়ে কোন দিন যাই নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের প্রতিদ্বন্দি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক এবং মুসলিম লীগের ছিলেন শুকুর খান। নাজিম উদ্দিন খাত্তাবকে আমি স্বাধীনতার আগে থেকেই চিনি। ১৯৭১ সালের ১৫ই এপ্রিলের পর পাকিস্তান আর্মিরা প্রথমে পাবনা থেকে বেড়ায় আসে এবং তারপর সাথিয়ায় আসে। ১৯৭১ সালের নগরবাড়ি ও বাঘাবাড়িতে আর্মিদের ক্যাম্প ছিল, সাথিয়ায় ক্যাম্প ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে আর্মিরা সাথিয়ায় আসতো। আমি সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলাম না। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবকে আমি বেড়ার বনগ্রাম এলাকায় দেখেছিলাম মে মাসে। ১৯৭১ সালের ৮ই মে করমজা ঘটনার আগেই মনে হয় দেখেছিলাম। বনগ্রামের পশ্চিম দিকে হচ্ছে বগুড়া-নগরবাড়ি রোড। ১৯৭১ সালের ২৮শে এপ্রিল বনগ্রামে জয়নালের বাড়ির পাশে আমরা ফজরের নামাজের পর থেকে সকাল ৮.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত মিটিং করে ৯.০০ ঘটিকার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলাম। মূল রাস্তা দিয়ে পাকিস্তান আর্মি ও তাদের সহযোগিরা যাতায়াত করতো বিধায় আমরা মূল রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতাম না। জয়নালের বাড়ি থেকে বগুড়া নগরবাড়ি যাওয়ার পথে সিএনবি বাসস্ট্যান্ড অনুমান ১ কিলোমিটার দূরে হবে। চতুর বাজার করমজা এলাকার মধ্যে এবং সাথিয়া রাস্তার পাশে। নিশিপাড়া কালিবাড়ি থেকে আমার বাড়ি অুনামন ১ মাইলের কিছু বেশী পশ্চিম দিকে। আমার বাড়ি থেকে বনগ্রাম যাই ইছামতি নদীর পাড় দিয়ে পায়ে চলার পথে। সিএনবি বাসস্ট্যান্ড থেকে সাথিয়ার যে রাস্তা সেই রাস্তা থেকে ইছামতি নদীর দুরত্ব আনুমানিক ১০ থেকে ২০ গজ। সিএনবি বাসস্ট্যান্ড থেকে ইছামতি নদীর দুরত্ব ছিল ১০০ গজ উত্তরে। ইছামতি নদী এবং বাসস্ট্যান্ডের মাঝখানে বনগ্রাম অবস্থিত নয়। বনগ্রাম নদীর দক্ষিন পাড়ে লাগালাগি অবস্থিত। আমি আমার জবানবন্দীতে যে তেতুল গাছের কথা বলেছিলাম সে তেতুল গাছটি নিশিপাড়া কালিবাড়ি থেকে আনুমানিক ৫০ গজ পূর্ব দিকে অবস্থিত। আমি যে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম তার বাহির থেকে ঝোপের ভিতর দেখা যেত না, তবে ঝোপের ভিতর থেকে বাহিরের সব দেখা যেত। আমাদের গ্রাম থেকে যে পথে বনগ্রাম গিয়েছিলাম সেই পথে ফেরত আসি নাই। আমি বনগ্রাম থেকে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে সাথিয়া রাস্তার পাশে এসে রাস্তা পাড় হওয়ার জন্য দাড়াই। আর্মির গাড়ি চলে যাওয়ার পর তেতুল গাছের নিচে লাশের কাছে আনুমানিক ১০ মিনিট পরে আমি যাই। লাশ দেখার পর পরই আমি হাবিবুর রহমানের বাড়িতে চলে যাই। আমি সকাল আনুমানিক ১০.০০টা/১০.৩০ টার দিকে আমি হাবিবুর রহমানের বাড়িতে যাই। তারপর আমি গ্রামের ভিতর দিয়ে বাড়ি চলে যাই। ঐদিন আমি হাবিবুর রহমান সাহেবের বাড়ি বা ঘটনাস্থল তেতুল গাছের নিচে আর যাই নাই। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের ২৯ ও ৩০ তারিখে নাজিম উদ্দিন খাত্তাব সাহেবের সাথে আমার দেখা হয়েছিল কিনা তাহা স্মরন নাই। ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে নাজিম উদ্দিন খাত্তাব সাহেব আমার সাথেই ছিল। ১৯৭১ সালের ৮ই মে গোলাগুলির শব্দ শুনে আমি আমার বাড়ির পাশের বাশের ঝাড়ে লুকিয়ে ছিলাম। সেপ্টেম্বর মাসে তলট গ্রামে আর্মি ও তাদের সহযোগিরা গিয়েছিল তখন আমি গ্রামে ছিলাম না। ১৯৭১ সালের ৮ই মে করমজা গ্রামে আনুমানিক সকাল ০৭.০০ টায় গিয়েছিলাম। ফজরের নামাজ ঐ সময় আনুমানিক ০৫.০০/০৫.৩০ ঘটিকায় হতো। গোলাগুলি থেকে যাওয়ার আনুমানিক ঘন্টাখানেক পর আমি করমজা গ্রামে গিয়েছিলাম। ঐ সময় শংকর চরণ হালদার, পরেশ চন্দ্র হালদার, দুলালী, রহমত, মোমেনা, বিশে, গোপালদের মধ্যে গোপালকে দেখেছিলাম, তবে অন্যদের দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। গোপাল মুরালী দাসের ভাই কিনা তাহা আমার জানা নাই। করমজা গ্রামে গোপাল দাস নামে কোন লোক ছিল না, গোপাল মালী নামে একজনকে আমি চিনি। গোপাল মালী বর্তমানে জীবিত না মৃত তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ৮ই মে মেগা ঠাকুরের বাড়িতে সংঘটিত হত্যাকান্ড ছাড়া ঐ করমজা গ্রামে কোন হত্যাকান্ড ঘটে নাই। করমজা গ্রামে বর্তমানে আমি খুব কম যাতায়াত করি। ঐ গ্রামে পাগলি আশা রানী নামে আমি কোন মহিলাকে চিনি না। ৮ই মে তারিখের পরে করমজা গ্রামে কোন হত্যাকান্ড ঘটে নাই। ৮ই মে করমজা গ্রামে হাবিবুর রহমান নামে কোন ব্যক্তি নিহত হয় নাই। ৮ই মে তারিখে মেগা ঠাকুরদেরকে মাটি চাপা দেওয়া পর্যন্ত আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মেগা ঠাকুরের ছেলে প্রনব এবং নাতি দুলালকে আমি চিনি। আমি যাওয়ার কতক্ষন পর প্রনব এবং দুলাল ঘটনাস্থলে এসেছিল তাহা আমার স্মরন নাই। মাটি চাপা দেওয়ার সময় তারা উপস্থিত ছিল। দুপুরের আগেই মাটি চাপা দেওয়ার কাজ হয়ে যায়। মেগা ঠাকুরের বাড়ির পুজার ঘরের পাশে দুই জায়গায় মাটি চাপা দেওয়া হয় এবং ফকির চানকে গোরস্থানে কবর দেওয়া হয়। ঐদিন প্রনব এবং দুলালের সাথে আমার কোন কথা হয় নাই। ঐ দিন মাটি চাপা দেওয়ার সময় নাজিম উদ্দিন খাত্তাব ঘটনাস্থলে এসেছিল, তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। সে আমি যাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে এসেছিল। তেতুল গাছের নিচে যে আক্কাসকে হত্যা করা হয়েছিল তার বাড়ি পাবনায় সে তার শ্বশুর বাড়ি সানিলা গ্রামে থাকতো, তার শ্বশুরের নাম আমার স্মরন নাই। তেতুল গাছের নিচে হত্যাকান্ড আমি একাই দেখেছি, অন্য কেউ দেখেছে কিনা তাহা আমার জানা নাই। চার/পাঁচ মাস আগে হাবিব এবং তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে পাবনা সার্কিট হাউজে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আমি কি জানি তখন আমি ঘটনা সম্পর্কে জবানবন্দী প্রদান করি। এই ট্রাইব্যুনালে আমি প্রথম যেদিন সাক্ষ্য দিতে আসি তার দুই দিন আগে কমান্ডার হাবিবুর রহমান সাহেব আমাকে বলেছিল আমাকে সাক্ষ্য দিতে হবে। হাবিবুর রহমান এবং আক্কাস লাঠি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। আনসার কমান্ডার মোস্তফা তাদেরকে বেড়ার সিএনবি অফিসের সামনে ট্রেনিং দিয়েছিল। শহিদ হাবিবুর রহমান কৃষি কাজ করতো এবং শহীদ আক্কাস স’মিলে করাতির কাজ করতো। আমি ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তিযুদ্ধের ভারী অস্ত্রের ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতে গিয়েছিলাম এবং নভেম্বরের শেষের দিকে বা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে বাংলাদেশে ফেরত আসি। নাজিম উদ্দিন খাত্তাব সাহেব কোন দিন ভারতে যান নাই। আমি মুজাহিদ বাহিনীর ট্রেনিং নিয়ে কৃষিকাজ করতাম আর টুকটাক ব্যবসা করতাম, আমি কখনো মুজাহিদ বাহিনীতে চাকুরী করি নাই।
আমি আমার জবানবন্দীতে ২৮শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে যে হত্যাকান্ডের ঘটনার কথা বলেছি সেই ঘটনা ঘটে নাই, ইহা সত্য নহে। আমার জবানবন্দীতে উল্লেখিত তেতুল তাছের দক্ষিন পাশে ২০ গজের মধ্যে বাড়ি ঘর ছিল কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কোন বাড়ি ঘর ছিল না, উত্তর দিকে সাথিয়াগামী রাস্তা, ঘটনার সময় ঐ রাস্তার আশে পাশে বাড়ি ঘর ছিল না। তেতুল গাছ থেকে ১০০/১৫০ গজ পূর্ব দিকে বাস স্ট্যান্ড ছিল। সেখানে এখনো বাস স্ট্যান্ড আছে। ঐ সময় বাস স্ট্যান্ডের পাশে চার/পাঁচটি দোকান ছিল। তেতুল গাছ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ১০০ গজের মধ্যে কোন হাট ছিল না, খোলা মাঠ ছিল। ঘটনার সময় চতুর হাট ছিল না, বর্তমানে আছে। বর্তমানে তেতুল গাছের উত্তরে রাস্তার পাশে ১০/১৫ গজ দূরে দোকান পাট আছে তার পরেই চতুর হাট। তলট গ্রামের মধ্য দিয়ে সাথিয়া রাস্তা গিয়েছে। আমার বাড়ি সাথিয়া রাস্তার পাশেই উত্তর দিকে অবস্থিত।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি পাকিস্তান আমল থেকেই চিনি। মনমথপুর গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বাড়িতে আমি কখনো যাই নাই। তিনিও কখনো আমাদের বাড়িতে আসেন নাই। তিনি প্রাথমিক লেখাপড়া কোন স্কুলে করেছেন তাহা আমি বলতে পারব না। তিনি সাথিয়ার কোন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন তাহাও আমি বলতে পারব না। তিনি কতদূর লেখাপড়া করেছেন তাহাও আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ২৮শে এপ্রিলের আগে শহীদ হাবিবুর রহমান ও শহীদ আক্কাসের মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছে কিনা তাহা আমি দেখি নাই। ১৯৭১ সালের ৮ই মে করমজা হত্যাকান্ডের ঘটনার পূর্বে মতিউর রহমান নিহামী সাহেবকে মেগা ঠাকুরের সাথে কথাবার্তা বলতে দেখি নাই এবং শুনিও নাই। করমজা গ্রামের ৮ই মে এর ঘটনা যারা দেখেছিল তাদের অনেকে জীবিত থাকতেও পারে তবে তাহা আমার জানা নাই। মেগা ঠাকুরের বাড়ির আশে পাশে ঐ সময় হাছেন মৈত্রী, আহমেদ প্রামানিক বর্তমানে আহেদ হাজী, আছের আলী প্রামানিক, মুমিন প্রামানিক গংদের বাড়ি ঘর ছিল। মেগা ঠাকুরের বাড়িতে মুসা প্রামানিক এবং দারোগ আলী বসবাস করে। তবে তারা জবর দখল করে বসবাস করে কিনা তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালে করমজা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান খোদাবক্স করমজা গ্রামে জমিদার বাড়িতে থাকতেন, বোর্ড অফিস ঐ বাড়িতেই ছিল। মেগা ঠাকুর করমজা এলাকার একজন জমিদার ছিলেন। করমজা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান খোদাবক্স যে জমিদার বাড়িতে থাকতো সেই জমিদারের নাম আমার স্মরন নাই। ঐ বাড়ির মালিক করমজারই জমিদার ছিলেন। তারিনী চৌধুরী এভং যতিন মৈত্রী করমজা এলাকার জমিদার ছিলেন। জমিদার প্রথা উচ্ছেদ হওয়া পর্যন্তই ঐ দুইজন করমজা এলাকার জমিদার ছিলেন। মেগা ঠাকুরের ছোট ছেলে জীবিত আছেন, তবে কোথায় থাকে তাহা আমি বলতে পারব না। মেগা ঠাকুরের মেয়ে বানী পাবনায় থাকেন কিনা তাহা আমি বলতে পারব না।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি সর্বপ্রথম ১৯৮৬ সালে নির্বাচনের সময় দেখেছি, ইহা সত্য নহে। ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালের ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং সেক্রেটারী কে ছিলেন তাদের নাম আমার স্মরন নাই। পাবনা জেলার ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারী কে ছিলেন তাদের নাম আমার স্মরন নাই।
নাজিম উদ্দিন খাত্তাবের সাথে সর্বশেষ মাসখানেক আগে দেখা হয়েছিল, তারপর আর দেখা হয় নাই। সাথিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার জহরুল হক আমাকে জানান যে, পাবনার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান সাহেবের সাথে দেখা করতে বলেছে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে যখন এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় তখনই আমি তাহা শুনেছি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের এলাকা তলট, সাথিয়া, পাবনা, বাউশগাড়ি, করমজা এলাকায় তদন্তে গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না। আমি প্রথম পাবনায় তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে ৪/৫ মাস আগে দেখা করার দিন জানতে পারলাম এই মামলার তদন্ত হচ্ছে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে গ্রেফতারের পর থেকে চার/পাঁচ মাস পূর্বে পাবনায় তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দেওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালের মধ্যে সাথিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জহরুল হক এবং পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাবিবুর রহমান সাহেবের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। পাবনা সার্কিট হাউজে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করি তখন বিজ্ঞ প্রসিকিউটরদের মধ্যে কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
আমি ১৯৭১ সালে ২৮শে এপ্রিল বা ৮ই মে কোন ঘটনা দেখি নাই, ইহা সত্য নহে। আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের দলের প্রতিদ্বন্দী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন