সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারি এবং হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় দেশের শীর্ষ আইনজীবী নেতৃবৃন্দের ঘোষনা /////আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে

 ১৫/১০/২০১২
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা এবং হয়রারিন বিরুদ্ধে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় দেশের শীর্ষ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেছেন, আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে । ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর  গোয়েন্দা নজরদারি এবং হয়রানির তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন,  অবিলম্বে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর থেকে সকল ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি তুলে নিতে হবে এবং হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচী প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশর সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বাসার সামনে  এবং গাড়ির পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  অনুসরন করছেন।   ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে তার পেশাগত  দায়িত্ব পালনে  হয়রানি এবং বাঁধার প্রতিবাদে সুপ্রীম কোর্টের  আইনজীবীবৃন্দ আজ সুপ্রীম কোর্ট বারের  দণি হলে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন    দেশের প্রবীণ আইনজীবী  বিচারপতি  টিএইচ খান।
সভায় বক্তব্য রাখেন খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের  ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি  সিনিয়র অ্যাডভোকেট যাইনুল আবেদীন,  সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মো¤ম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবু হোসেন এমপি, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, গোলাম মো: চৌধুরী আলাল, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত হন।


টিএইচ খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আপনারা গোয়েবলসের নাম শুনেছেন কিন্তু হ্যান্সিয়ানির নাম শোনেননাই। হিটলারের সময় আইনমন্ত্রী ছিলেন হ্যান্সিয়ানি। সে সময়ও আইনজীবীদের এরকম নজরদারি করা হত। পরে ওই আইনমন্ত্রীর ফাঁসি হয়েছিল। এখন যা কিছু হয়, তাই বলা হয় যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, আজ আমরা যে উদ্দেশ্যে এখানে সমেবেত হয়েছি তা সত্যিই হৃদয় বিদারক। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একজন বিজ্ঞ আইনজীবী।  তিনি তার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারবে না। তার কোনো ক্রিটিক নেই।  আজ তার পেছনে সরকারের  গোয়েন্দা নজরদারি ও তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।’

তিনি   বলেন, ‘আমরা কথায় কথায় বলি পবিত্র সংবিধান, পবিত্র সংবিধান।  আপনারা সংবিধান খুললে দেখতে পাবেন তিনি (ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন। আর সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ মতে, একজন আসামীরও অধিকার আছে তিনি কাকে আইনজীবী হিসাবে পছন্দ করবেন। সাংবিধানিক এই দায়িত্ব পালনকালে তার পিছু নেয়া হচ্ছে- এমন কথা শুনতে অত্যন্ত কষ্ঠ লাগে। এটি করা হচ্ছে তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘দেশে যা কিছুই ঘটে সরকার বলে যে, এটি যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে করা হচ্ছে। আপনারা জানেন দেশে ঠাডা পইরা (বজ্রপাতে) মানুষ মরতেছে।  বলা হবে যে, এটি  যুদ্ধাপরাধ বিচারকে বানচাল করার জন্যই হচ্ছে। এখন বন্যার সময় নয়। কিন্তু অকাল বন্যা হতে পারে। তখন সরকার বলবে যে, এটিও বিচারকে বানচাল করার জন্য করা হয়েছে। এই ধরনের আর্গুমেন্ট হিটলারের সময় করা হতো।’


ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদ বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অপরাধ তিনি তার  পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা বিচারের বিরুদ্ধে নই। ব্যারিস্টার রাজ্জাকও বিচারের বিরুদ্ধে নন। বিচারের বিরুদ্ধে হলে তিনি তো ট্রাইব্যুনালে যেতেননা। তিনি তো ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিচারকে সহায়তা করছেন। আমরা সবাই স্বচ্ছ বিচার চাই। তিনিও স্বচ্ছ বিচারের জন্য কাজ করছেন। সেটাই তো সবার উদ্দেশ্য। কিন্তু আজ তাকে হয়রানি করে মূলত আইনের শাসন, আইনজীবীদের মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত করা হয়েছে। একজনকে তার পেশায় বাঁধা দেয়ার মত হীন কাজ আর কিছু  হতে পারেনা।  এ  ধরনের হয়রানি বন্ধ করা  হোক। তা না হলে সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আইনের শাসন না থাকলে গনতন্ত্র  এবং মানবসভ্যতা থাকতে পারেনা। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মত লোকের পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি করা আইনের শাসন এবং সংবিধানের লঙ্ঘন।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অপরাধ সমর্থন করা কোন আনজীবীর দায়িত্ব নয়। কোন আসামীকে আদালতেক হাজির করা হলে  সে দোষী না নির্দোষ সেটা প্রমানে কোর্টকে সহায়তা করা আইনজীবীর দায়িত্ব।  শুধু ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নয় বাংলাদেশের যেকোন আইনজীবীর ওপর তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোন ধরনের বাঁধা আসলে আমরা তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব। আইনজীবীকে তার পেশাগত কাজে বাঁধা দেয়া, হয়রানির পরিমনা অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীদের  বিজয়ের পর সরকার এখন বার কাউন্সিলকে পঙ্গু করার জন্য একটি আইন করছে। আমরা ৪৬ হাজার আইনজীবীর প্রতিনিধি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোন অপরাধকে সমর্থন করতে ট্রাইব্যুনালে যাননি।  ট্রাইব্যুনালে  যাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে তাদের আইনগত সহায়তা করছেন এবং তিনি কোর্টকে সহায়তা করছেন। এর আগে আসামী পক্ষের আরেক  গুরুত্বপূণূ আইনজীবী তাজুল ইসলামের চেম্বারে সশস্ত্র   গোয়েন্দারা হানা দিয়েছে। সরকারের মনে রাখা উচিত কালো পোশাকধারীরা রাস্তায় নামলে তাদের  পতন অনিবার্য ।

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা  বলেন, এটর্নি জেনারেল শুধু সরকারের এটর্নি জেনারেল নন। তিনি সারা বাংলাদেশের   এটর্নি জেনারেল। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানির বিষয় জানার সাথে সাথে তার উচিত ছিল এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করা। প্রয়োজনে কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করতে পারতেন। এটি তার দায়িত্ব ছিল। তিনি তা না করায়   আইনজীবী সমাজ ুব্ধ এবং ব্যথিত। এ অবস্থা  উত্তোরনের জন্য আমি তাকে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, যারা আইনের শাসন মানেনা, গণতন্ত্র মানেনা তারাই কেবল এ কাজ করতে পারে।

ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানির প্রতিবাদ করে তিনি বলেন এ আঘাত সমস্ত আইনজীবীদের ওপর আঘাত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল। যদি এ হয়রানি বন্ধ না করা হয় প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।

অ্যাডভোকেট যাইনুল আবেদন বলেন, গনতান্ত্রিক নামের এ সরকারের আমলে কেউ তার  পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেননা। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মত একজন আইনজীবীকে গোয়েন্দা  নজরদারিতে রাখা এবং হয়রানি করা  অত্যন্ত লজ্জার কথা। তিনি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র আইনজীবী। অনেক আগে তাকে   সিনিয়র আইনজীবী করা হয়েছে। তিনি ডাবল স্টারধারী । আপীল বিভাগ  এ মর্যাদা দিয়ে থাকে।
যাইনুল আবেদীন বলেন, সরকার যদি অবিলম্বে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর থেকে হয়রানি এবং গোয়েন্দা নজরদারি তুলে না নেয় তাহলে ব্যাপক কর্মসূচী দেয়া হবে।

মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি বলেন, ওয়ান ইলেভেন সরকারের সাথে এ সরকারের পার্থক্য কোথায়? তখনো  মানুষের পেছনে এভাবে গোয়েন্দা লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমার পেছনে সব সময় কিছু হোন্ডা ঘুরত। বর্তমান সরকার ওয়ান ইলেভেনের প্রাডাক্ট। তাই দুই সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যখন কোন বিচার হয় তখন যদি তার আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য না থাকে তাহলে রাষ্ট্র  তার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়। আইনজীবী ছাড়া কারো বিচার হয়না। সংবিধানে এ অধিকার দিয়েছে নাগরিকদের। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আসামীর পক্ষে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন। আইনজীবীদের নিয়ে ছিনিমিন খেলবেননা। এ হয়রানি বন্ধ না হলে বিচার প্রশাসন বন্ধ হয়ে যাবে। কারন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কোন একজন মাত্র ব্যক্তি নন।

আফজাল এইচ খান বলেন, আজ অত্যন্ত একটি পরিতাপের বিষয় নিয়ে এখানে সমবেত হয়েছি। জনগন আজ পীড়িত। কিছু হলেই বলা হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য এটি করা হচ্ছে।
ফাহিমা নাসরিন মুন্নি বলেন, পুরো দেশ আজ কারাগার, ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের মত দেশে আজ গুম সংস্কৃতি চালু হয়েছে।  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর হেনস্থার আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
গোলাম মো: চৌধুরী আলাল বলেন,  বাংলাদেশ আজ পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আইনজীবীদের পেশা পালনে বাঁধা এবং মৌলিক অধিকার হরনের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তার সর্বশেষ নজীর  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির ঘটনা।

প্রতিবাদ সভাপর শুরুতে ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে  তিনি ১০ জন আসামীর পক্ষে  প্রধান আইনজীবী। তিনি তার মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ এ পর্যায়ে  উপনীত হয়েছেন। আজ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বাসার সামনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবস্থান করছেন। তার গাড়ির পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন  অনুসরন করছেন।  তিনি যাতে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন সেজন্য তাকে মানসিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন