বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১২

১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী :

১৪ তম সাক্ষীর জবানবন্দী : ১৭/১০/২০১২
আমার নাম  এমরান হোসাইন,  বয়স- ৫৯ বছর।  গ্রাম- মহিরন, থানা- বাঘারপাড়া, জেলা যশোর ।
আমার পেশা শিক্ষকতা। বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
১৯৭১ সালে  আমি ছাত্র ছিলাম। ১৯৬৯-৭০ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যশোরে নিউ টাউনে বাসা ভাড়া থাকতেন। ওই সময় ধর্ম সভা করেন। ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে শেল মারা শুরু করলো শহরের ওপরে। শহরের বসবাসকারী লোকজন ভয়ে ভীত হয়ে গ্রামে চলে যেতে লাগল। ওই সময় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মে মাসের মাঝামাঝি সময় আমাদের মহিরন গ্রামে মরহুম সদরুদ্দিন পীর সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৫ দিন থাকার পরে দোহারকোলো গ্রামের রওশন আলী সাহেবকে পীর সাহেব ডেকে বললেন, আমার বাড়িতে লোকজনের ভিড় হয়েছে, থাকার সমস্যা । আপনি আপনার বাড়িতে সাঈদী সাহেবকে নিয়ে যান। উনার বাড়িতে আড়াই মাস থাকার পর সাঈদী সাহেবকে তার ভাই এসে তাকে দেশের বাড়িতে পিরোজপুর  নিয়ে গেলেন।

জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীকে জেরা করেন।
জেরা :
প্রশ্ন : আপনি কোন বিষয় পড়ান?
উত্তর : ইসলাম  ধর্ম।
প্রশ্ন : স্কুলটি স্বাধীনতার আগে হয়েছিল না পরে ?
উত্তর : ১ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন : যে পীর সাহেবের কথা বলেছেন তার ছেলে মেয়ে আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে প্রথম কবে সাঈদী সাহেবের দেখা হয়?
                   উত্তর : তিনি যেদিন পীর সাহেবের বাড়িতে যান সেদিন।  মাগরিবের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে পরিচয়হয়। পীর      সাহেবের বাড়ি আমার বাড়ির মধ্যে ১০০/১৫০ গজ ব্যবধান।
প্রশ্ন : আপনি সাঈদী সাহেবের সঙ্গে রওশন আলীর বাড়িতে গেছেন?
উত্তর : না ।
প্রশ্ন : আপনি কোথায় পড়শোনা করেছেন?
উত্তর : আমি পদ্মবেলা সিনিয়র আমীর মাদরাসা খুলনায় পড়েছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদরাসা খোলা ছিল না বন্ধ ছিল?
উত্তর : বন্ধ ছিল।
প্রশ্ন : পুরো সময় বন্ধ ছিল?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে পীর সাহেব ছাড়া আরো অবস্থাসম্পন্ন পরিবার  পরিবার ছিল।
উত্তর : ছিল।
প্রশ্ন : আপনাদের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর : আমরা মধ্যবিত্ত  শ্রেণীল ছিলাম। গরিবও না  বেশি  ধনিও না।
প্রশ্ন : মাদরাসার ছাত্ররা অনেকে রাজাকার, আলবদর, বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো জানেন?
উত্তর : আমি শুনেছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালে আপনি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথায়ও যাননি ।
উত্তর : যাইনি।
প্রশ্ন : আপনাদের গ্রামে  পাকিস্তান বাহিনী বা রাজাকার বাহিনী দ্বারা কোন কান তি হয়েছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে পাকিস্তান বাহিনী, আলবদর, রাজাকার ও শান্তিবাহিনী মানুষকে খুন করতো
অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ করতো তা শুনেছেন?
উত্তর : তখন শুনিনি, পরে শুনেছি।
প্রশ্ন : কোন ধরনের লোকজনের ওপর তারা  অত্যাচার  করতো, তারা কাদেরকে মারতো?
উত্তর : বলতে পারবো না।
প্রশ্ন : আপনি যে মামলায় সাী দিতে এসেছেন সেটা কিসের মামলা?
উত্তর : কাগজপত্রে দেখেছি দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে।
যে সময়ের কথা পত্রিকায় উলেখ করা হয়েছে সে সময় তিনি আমাদের গ্রামে ছিলেন। এজন্য সত্য কথা
বলতে আমি সাী দিতে এসেছি।
প্রশ্ন : কবে কিভাবে এটা জানলেন?
উত্তর : এক বছর কয়েক মাস আগে এটা জেনেছি।
প্রশ্ন : পত্র-পত্রিকা কি আগেও পড়তেন না একবছর কয়েক মাস আগে থেকে পড়েন?
উত্তর : আগে পড়তাম।  তবে মাঝে মাঝে । এখনো মাঝে মাঝে পড়ি।
প্রশ্ন : আগে যখন  পড়েছেন তখন এই অভিযোগ দেখেননি?
উত্তর :না।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।
উত্তর : আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই।
প্রশ্ন : এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার বিষয়ে আপনাকে কে বলেছে?
উত্তর : এক বছর আগে সাঈদী সাহেবের বড় ছেলে রাফিক  আমাদের বাড়িতে যান। তিনি আমাদের পাড়ার
অনেক লোকজন ডাকলেন। তিনি তার  আব্বার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা আমাদের বললেন। তিনি
আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পিতা  সাঈদী সাহেব  যুদ্ধের সময় এখানে ছিলেন কি-না। আমরা বলি 
হ্যা তিনি এখানে ছিলেন। তখন তিনি আমদের এ বিসয়ে সাক্ষ্য দেয়ার অনুরোধ করলে আমি রাজি হই ।
প্রশ্ন : এভাবে অনুরোধ করলে আপনি স্যা দেন।
উত্তর : আমি অন্য কোনো মামলায় সাী দেইনি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আপনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন?
উত্তর : এ কথা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত এবং আপনার দলের নেতার বিরুদ্ধে মামলা
চলছে তাই আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে  সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন।

উত্তর : আপনার এ কথা সত্য নয়।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজরু আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির
আহমেদ আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন