বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১২

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ///প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা এবং ৩৮ জন বন্দী হত্যার বিবরনে চোখ ছলছল ..


মেহেদী হাসান, ৪/১০/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম  আযমের বিরুদ্ধে আজ  সাক্ষ্য দিয়েছেন   গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।  মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রান নিয়ে পালিয়ে আসা এবং ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলাখানায় ঈদের দিন ৩৮ জনকে হত্যার বিবরনে আজ ট্রাইব্যুনালে অনেকের চোখ ছলছল করে  ওঠে।  তবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি এবং দেড়ঘন্টার জবানবন্দীতে একবারও তার নাম উচ্চারন করেননি।

জবানবন্দী :
আমার নাম আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বয়স ৫৭ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ১৫ বছরের একটু বেশি ছিল । ১৯৭১ সালে আমি ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়তাম। বর্তমানে আমি একজন গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। ছোটবেলায় আমি খুব দুরন্ত  এবং নির্ভিক ছিলাম। আপনারা যারা ২৫ এবং ২৬ মার্চ অবলোকন করেছেন তারাই শুধু অনুধাবন করতে পারবেন আমার বিষয়টা। আমার মনে পড়ে ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হয়েছিল কয়েক ঘন্টার জন্য। কারফিউ যখনই শিথিল করা হয়েছে তখন আমি আমার বাইসাইকেল নিয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, পরে পলাশী ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ, রোকেয়া হল, ব্রিটিশ কাউন্সিল এর চতুর্দিক  ঘুরে দেখেছি এবং লাশের পর লাশ দেখেছি । যা আপনারা ছবিতে দেখেছেন  তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেব। আমি ২৭ মার্চ বিকাল বেলা একজন বিহারীর বাসায় জোরপূর্বক ঢুকে তাদের বন্দুক ছিনতাই করি। একটি ুদ্র দল গঠন করি। তাদেরকে  শেখাই আরো অনেক অস্ত্র দরকার। এর মধ্যে আমার এক বন্ধু যার নাম সজিব তাকে প্রধান করে  আমরা বেশ কয়েকটি বিহারীর বাসা থেকে অস্ত্র ছিনতাই করি। জিনজিরায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ঘাটি  প্রতিষ্ঠা করি। আপনারা হয়ত শুনে থাকতে পারেন জিনজিরায় পাকিস্ত্না আর্মি আক্রন পরিচালনা করেছিল। সেটা আমাদের  কারনে।  আমরা সে আক্রমনের মুখে টিকতে  পারিনি। আমরা সমস্ত অস্ত্র বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি। সেখানে আমরা  সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাদের অনেক ভারী অস্ত্রের দরকার।  তা নাহলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা যাবেনা। এরপর আমরা বিভিন্ন স্থানে কিছুদিন পালিয়ে বেড়িয়েছি। যখন বাসায় ফিরলাম তখন  মায়ের কাছে শুনলাম আমার বড় ভাই ইফতেখার উদ্দিন টুটুল (মৃত) সে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে ২৭ মার্চ রাতেই। সেই থেকে আমার মনে স্বপ্ন ছিল  আমার ভাই যখন ফেরত আসবে তখন আমি তার কাছে অস্ত্র চালনা শিখব। মে মাসে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। তাকে আমি বিনীত অনুরোধ করি তার সাথে আমাকে রাখার জন্য। আমার ভাই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন।  তাদের কমান্ডার ছিলেন মোফাজ্জাল হোসেন মায়া। আমার বড় ভাই’র সাথে আমি প্রথম একটি অপারেশনে যোগ দেই। সে অপারেশনে শুধু আমি এবং আমার বড় ভাই ছিলেন।  আমরা চেয়েছিলাম আজিমপুর গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার অফিস উড়িয়ে দিতে। আমি নিজে ডিনামাইট বসাই। কিন্তু দু:খের বিষয় হল সেটা আমি চার্জ করতে পারিনি কারণ কয়েকজন ছাত্র সেখানে এসে গিয়েছিল তখন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি  আমি এবং  সরোয়ার (মৃত) দুইট গ্রেনেড নিউমার্কেটের এক নং গেটের সামনে মাত্র ২০ ফিট দুরত্ব থেকে তিনটি পাকিস্তান আর্মির লরির ওপর আক্রমন  চালাই।

আগস্ট মাসের প্রথম দিকে আমি মহবুব, খোকা এবং মানিক ভারতে যাই। আগরতলা  হয়ে মেলাঘর ট্রেনিং নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি। সজিব বাহিনীতে যোগ দিয়ে লালবাগে কাজ করতে থাকি। এরপর অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ আবার ভারতে যাবার সময় আমি, মানিক, মাহবুবু  এবং খোকা ভারতে যাবার সময়  পাকিস্তান আর্মি এবং রাজাকারদের হাতে বন্দী হই কুমিল্লা এবং বি বাড়িয়ার মাঝামাঝি
তন্তর চেকপোস্টে। জিজ্ঞাসাবাদ করার পর যখন আমরা বারবার বলি যে, আমরা মুক্তিযোদ্ধা নই তখন পাশবিক নির্যাতন শুরু হয়। একটানা আড়াই ঘন্টা নির্যতানের পর আমাদের চারজনকে উলঙ্গ করে ।
পরনে শুধু জাঙ্গিয়া ছিল। নাম জানিনা, পাকিস্তান আর্মির  একজন সুবেদার মেজর আমাদের হত্যার নির্দেশ দেয়। সেই মোতাবেক পাশের এক মসজিদের ইমাম ডেকে আনা হয়। আমাদের গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে সুরা পরানো হল। চোখে কাল কাপড় বাঁধা হয়।  তবে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আমাদের সামনে তিনজন মিলিটারি  বন্দুক/মেশিনগান তাক করে ।  আমি  বিচলিত হইনি।     মৃত্যর প্রহর গুনি। হঠাৎ করে নিস্তব্ধতার ভেতর থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম ওয়াইরলেসের। জোরে ওয়াইরলেস বেজে উঠল। তাতে শুনতে পেলাম মুক্তিকো হেডকোয়ার্টারে লে আও। তারপর  বি বাড়িয়া আর্মি হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যায়। আমাদের চারজনকে ভিন্ন করে ফেলা হয়। আমাকে একটা ঘরের মধ্যে  ঢুকিয়ে দেয়া হল। সেখানে দেখতে পেলাম চেয়ারে বসে আছে এক ক্যাপ্টেন। তার নাম ছিল আলী রেজা।  তার মাথায়  চুল এবং সামনের দাত ছিলনা।  সে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করে। আমার নাম জিজ্ঞেস করায় আমি ইংরেজিতে বললাম মাই নেম ইজ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।  সে জানতে চাইল আমি লেখাপড়া করি কিনা। আমি বললাম করি। সে প্রশ্ন করল   একজন শিক্ষিত লোক হয়ে কি করে পাকিস্তান সৈন্যদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করার কথা ভাবতে পার? আমি বললাম আপনাদের এখন কোন র‌্যাংক নেই। আমরা যে র‌্যাংকিং দেব সেটাই আপনাদের র‌্যাংকিং। সে আমাকে বলল তোমার মৃত্যুর ভয় নেই? তারপর বাস্টার্ড বলে গালি দিল। আমিও তাকে পাল্টা বাস্টার্ড গালি দিলাম। সে আমাকে  হুমকি দিয়ে বলল তোমাকে পরের দিন দেখে নেব। 
তারপর আমাদের চারজনকে একত্র করে বি বাড়িয়া জেলখানায় সোপর্দ করে। জেলখানায় ঢুকে আমাদের মত অসংখ্য ছাত্র যুদ্ধবন্দী দেখলাম। ধীরে ধীরে তাদের অনেকের সাথে পরিচয় হয়। যাদের সাথে বেশি পরিচয় হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল শহীদ নজরুল, আমার বয়সী শহীদ কামাল, তার বাবা শহীদ সিরু মিয়া, কুমিল্লার বাতেন ভাই, শফিউদ্দিনসহ অনেকে। সেসময় জেলখানায় সম্ভবত ৫০ জন বন্দী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নজরুল সিরু মিয়া, কামাল আমার দুইদিন আগে  ধরা পড়ে তন্তর চেকপোস্টে। পরের দিন আমাকে পিস কমিটির অফিসে হাজির করা হয়। এটা দানা মিয়ার বাড়ি নামে পরিচিত।
সেখানে গিয়ে প্রথমে যাকে দেখি সে হল কুখ্যাত পেয়ারা মেয়া। তার অশ্রাব্য উক্তি এবং নির্যাতনের কথা আমি কোনদিন ভুলবনা। ওখানে সে আমাকে  অনেকক্ষন নির্যাতনের পরও আমি কিছু না বলায় তখন এক ঘন্টা পরে আমাকে আবার আর্মি সেলে পাঠানো হল। লে. ইফতেখার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। সেখানেও আমার ওপর আবার  একই ধরনের নির্যাতন  চলল। এভাবে আমাদের ৫০ জনকে দিনে দুবার করে  দানা মেয়ার বাড়িতে এবং আর্মি সেলে নির্যাতন করা হত পর্যায়ক্রমে। আমাদের শরীরের রক্ত শুকাতে পারতনা।

শহীদ নজরুল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। তাকে বলেছিল এখান থেকে পালিয়ে যাই। সে আমাকে বলেছিল মুক্তিযোদ্ধারা পালাতে শেখেনি। একদিন মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গলায় মালা দিয়ে মুক্ত করবে।  নজরুলের পেছনে আমরা নামাজ পড়তাম।  সে ইফতার বন্টন করত আমাদের মাঝে। জেলখানায় সে ছিল আমাদের নেতা।
রোজার ঈদের দিন সন্ধ্যার একটু পরে জেলখানার দরজা খুব শব্দ করে খুলে গেল। আমরা সবাই চমকে উঠি। জেলের মধ্যে পাক আর্মি প্রবেশ করে। উচ্চস্বরে বলতে থাকে লাইন আপ লাইন আপ। শব্দটির সাথৈ আমরা আগে থেকে পরিচিত থাকায় আমরা  গারদ থেকে বের  হয়ে কংক্রিটের মেঝেতে লাইন করে বসলাম।   বসে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন আলী রেজা এবং লে. ইফতেখারকে দেখতে পাই। একটু পরে দেখতে পাই ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লাহকে। তারপর অনেক রাজাকার এবং পেয়ারা মেয়াকেও দেখতে পাই। ক্যাপ্টেন আলী রেজা আঙ্গুলের ইশারায় একেকজনকে ডাকতে থাকে। এভায়ে  ৪৩ জনকে আলাদা করা হয়। আমাকে একা রাখা হয়। তখন আমি মনে করলাম আমাকে একাই বুঝি হত্যা করা হবে। আমি সাহস করে ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহকে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কি আমাকে না তাদেরকে মারবেন?
তখন সাদ উল্লাহ আমার হাতটা তার হাতে নিয়ে বলল আজকের দিনটা কত পবিত্র তা তুমি জান? আমি বললাম জানি। সে আমাকে বলল ভয়ের কোন কারণ নেই। আজ এই দিনে যদি কোন মানুষকে হত্যা করা হয় তাহলে সে সরাসরি আল্লাহর কাছে চলে যাবে। আমি বললাম তাহলে কি ৪৩ জনকে হত্যা করা হবে? তিনি হাসি মুখে বললেন হ্যা। তোমাকেও ২ দিন পর হত্যা করা হবে। কারণ তুমি ২ দিন পর ধরা পড়েছে। আমি তাকে বললাম আমার সাথে মানিক, মাহবুব, খোকা ছিল। তাদেরকেও আমার সাথে রাখেন তাহলে কারণ তারাও আমার সাথে ২ দিন পর ধরা পড়েছে। তখন তাদেরও আমার সাথে রাখা হল।
এরপর আমি নজরুল ভাইর সাথে কথা বললাম।  তাকে বললাম আমাকে তো পালাতে দিলেননা। নজরুল ভাই আমার  দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার কিছু বলার নাইরে। একটি লুঙ্গি   আমাকে দিয়ে
বললেন এটা তদার মায়ের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য। সাথে সিগারেটের একটি টুকরাও দিলেন। সেটাও পৌছে দিতে বললেন। কামালের বাবা সিরু মিয়া কান্নাকাটি করছিল। সে  তার ছেলেকে বলছিল তোর মায়ের তো আর কেই রইলনারে। কামাল তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়  এবং বলে,  কোনদিন যদি রাস্তায় কোন পাগলিনি দেখিস তাহলে মনে করবি এটা আমার মা।  এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হল।

আমাদের গারদে ঢোকানো হল। তারপরদিন জানতে পারি স্টেশনের নিকট কৈলাতলায় তাদের একনাগারেড় হত্যা করা হয়। এর ২ দিন পর আমাকে, মানিক, খোকা এবং মাহবুবকে দানা মেয়ার বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে টরচার করা হয় আমাদের ওপর। সেইরাতে আমরা  প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হই। আমার বন্ধু মালুমের বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেই। প্রাণ নিয়ে পালাতে পারায় আমাদের সেখানে দুধ দিয়ে গোসল করানো হল। তারপর লুঙ্গি গেঞ্জি পরে নৌকাযোগে ঢাকায় আসি। মায়ের সাথে দেখা করি। সেই রাতে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমাদের   ধরে ফেলে পাকিস্তান আর্মি। আমাকে তেজগাও এমপি হোস্টেলে সাত দিন রেখে নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে আমি  জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। হুশ হলে দেখি আমি রমনা থানায়। আমার পিঠে এবং পায়ের পেছনে কোন চামড়া ছিলনা নির্যাতনের কারনে। রমনা থানায় মোট ৮৪ টি বন্দী ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন কোলভল্টার মেরাজ উদ্দিন। মেরাজ উদ্দিন আমাকে অর্ধেক সুস্থ করে  তুলেছিল। মেরাজ উদ্দিনকে দিয়ে পাকিস্তান আর্মি একটি ইন্টারভিউ করিয়েছিল। মেরাজ বলেছিল মুক্তিবাহিনীকে ভারত জেরা করে প্রশিক্ষন দিচ্ছে। আসলে মুক্তিবাহিনী বলতে কিছু নেই। সেই ইন্টারভিউ প্রচারিত হয়েছিল। ইন্টারভিউর বিনিময়ে মেরাজ উদ্দিনকে মুক্তির আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। পরে তাকে রায়োরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে চিরতরে মুক্তি দেয়া হয়।
রমনা  থানা থেকে প্রতিদিন সাত জন করে নিয়ে হত্যা করা হত। একটি গাড়িতে করে সাতজন করে নিয়ে যাওয়া হত। তারা আর ফেরত আসতনা। এভাবে ৮৪ জন থেকে বন্দীর সংখ্যা  ১৪ জনে নেমে এল। এর মধ্যে যৌথ বাহিনীর আক্রমন শুরু হল। আক্রমন শুরু হলে সেই গাড়িটি আর দেখিনি। ১৭ ডিসেম্বর আমি মুক্ত হই।

এরপর তাকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন স্বাধীনতার পর সিরু মিয়ার স্ত্রী, আনোয়ার কামালের মায়ের সাথে কোন যোগাযোগ করেছিলেন কি-না।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন,  যারা শহীদ হয়েছে তাদের পরিবারের অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল ।  পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আমি একটি টিভি অনুষ্ঠানে আমার এ ঘটনা  বললে সিরু মিয়ার স্ত্রী এবং আনোয়ারের মা  আমার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তার নাম আনোয়ারা বেগম।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম তাকে প্রশ্ন করেন এ ঘটনা তাকে বলেছিলেন কি-না।
সাক্ষী বলেন, একজন মায়ের কাছে তার শহীদ সন্তানের কথা এবং একজন  স্ত্রীর কাছে তার শহীদ স্বামীর কথা যেভাবে জানানো উচিত সেভাবে বলেছি।
জবানবন্দী শেষে তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। চার থেকে পাঁচটি  প্রশ্নে জেরা শেষ করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল কণ্ট্রাডিকশন।
সেটি হল “২০০৮ সালে আমি একটি টিভি অনুষ্ঠানে আমার এ ঘটনা  বললে সিরু মিয়ার স্ত্রী এবং আনোয়ারের মা  আমার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তার নামস আনোয়ারা বেগম।” একথাগুলো আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেননি।
জবাবে সাক্ষী বলেন, বলিনি।
এছাড়া গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আজ  আরো একজন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।

জবানবন্দী : আমার নাম শেখ ফরিদ আলম। বয়স ৬০ চলছে। আমার বাসার ঠিকানা হল ১৪১ পশ্চিম নাখাল পাড়া। আমার বাসার পশে ১৪২ ঠিকানায় ২ দমমিক ১০ কাঠার এক খন্ড জমি আমার  বাবা আমার নামে ক্রয় করেন। আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে  সিগনাল কোরে চাকরি করতাম। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আসি। স্বাধীনতার আগে ১৪২ ঠিকানায় মাদ্রাসা এবং জামায়াতের অফিস ছিল। দেশে ফিরে দেখি সেখানে   ছাত্রলীগের ছেলেরা কাব খুলেছে। তাদেরকে বুঝিয়ে বলায় তারা চলে যায়। তারপর সেখানে আবার মসজিদ এবং পরে মাদ্রাসা বানাই। যখন সেখানে জামায়াতের অফিস ছিল সেটা আমার বাবা তাদের ভাড়া দিয়েছিল।
জবানবন্দী শেষে গোলাম আযমের আইনজীবী তাকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানান।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন