শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

অধ্যাপক আযমের জানাজা কাল // বাসায় হাজারো মানুষের ভিড়

মেহেদী হাসান  ২৪/১০/২০১৪
কাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জোহরের নামাজের পর জানাজা হবে। অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী জানাজা নামাজের ইমামতি করবেন।
জানাজা শেষে বড়মগবাজার কাজী অফিস লেনের পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হবে। আজ সন্ধ্যার পর আব্দুল্লাহিল আমান আযমী এ ঘোষনা দেন।   জানিয়েছেন।

আমান আযমী বলেন, তিনি ছাড়া তার অপর পাঁচভাই সপরিবারে বিদেশে বাস করেন। তাছাড়া তাদের আরো অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে। তার আব্বার অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী আছেন দেশে বিদেশে। তারা সবাই আব্বার জানাজা এবং দাফনে অংশ নিতে চেয়েছেন। সেজন্য জানাজা এবং দাফনের জন্য অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু তার ভাইয়েরা স্বল্প সময়ের নোটিশে ভিসা সংগ্রহ করে দেশে আসতে পারছেননা। তাই আর অপেক্ষা না করে আজ জানাজার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।

নিজ বাসায় গোলাম আযম
অধ্যাপক গোলাম আযম নিজ বাসায় ফিরলেন। তবে লাশ হয়ে। পৌনে তিনবছর প্রিজন সেলে বন্দী থাকার পর আজ সকাল সাতটা ৫০ মিনিটে তার লাশ  বড়মগবাজারের কাজী অফিস লেনের নিজ বাসায় আনা হয়।

গত বৃহষ্পতিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল  করেন অধ্যাপক গোলাম আযম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি অধ্যাপক গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা হয়।  গ্রেফতারের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত  নব্বয়োর্ধ অসুস্থ অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলেই বন্দী ছিলেন। 

রাত দুইটা ৪৫ মিনিটের সময় অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ বিএসএমএমইউ থেকে পোস্ট মর্টেমের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পোস্ট মর্টেম সম্পন্ন করার পর সকাল সাতটা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয় অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর কাছে। এরপর সাতটা ৫০ মিনিটে তার লাশ বাসায় এসে পৌছে।
বাসায় আনার পর সর্বপ্রথম অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ গোসল করানো হয়। গোসল শেষে সকাল পৌনে ১১টায় তার লাশ বাসার সামনে নেয়া হয় এবং সেখানে বিপুল সংখ্যক ভক্ত অনুসারী তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভ্রাম্যমান মরচুয়ারিতে করে ২০ মিনিটের মত বাড়ির সামনে রাখা হয় লাশ । এরপর লাশ আবার ভবনের নিচে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাজারো মানুষের ভিড়
অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ নিজ বাসায় আনার পর বিশ্ববরেণ্য এ রাজনীতিবিদের প্রতি  শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে হাজারো মানুষ।
তাকে শেষবারের মত দেখা এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সারাদিন অগনতি মানুষ ভিড় জমাতে থাকে কাজি অফিস লেনের বাসভবনের সামনে। জুমার নামাজের পর আবার তার লাশ বাসার সামনে আনা হয় ।  এসময় পুরো কাজী অফিস লেন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় তাকে শেষবারের মত দেখার জন্য। হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেন তাকে দেখার জন্য। জুমার নামাজের পর অধ্যাপক গোলাম আযমের জন্য মুনাজাত করেন বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের খতিব। এসময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। অনেকের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। এরপর ৯২ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘ বন্দী জীবন এবং বন্দীত্ব অবস্থায় মৃত্যুর পর লাশ হয়ে বাসার ফেরার প্রসঙ্গ তুলে ধরে একজন বক্তব্য রাখার পর অনেকে হুহু করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এরপর সারাদিনব্যাপী চলতে থাকে অগনিত মানুষের ভিড়।
নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. আব্দুল্লাহ মো : তাহের, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান  আযাদ. কর্মপরিষদ সদস্য ডা. অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কর্মপরিষদ সদস্য ডা. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মনজুরুল ইসলাম ভুইয়া, সেলিম উদ্দিন, ড. রেজাউল করিম, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমানসহ বিপুলসংখ্যক রাজনীতিবিদ নেতাকর্মী অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসেন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বাসার সামনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন।

পোষ্টমর্টেম :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান  মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাত ২টায় অধ্যাপক গোলাম আযমের সুরতহাল প্রস্তুত করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারেক হাসান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন শাহবাগ থানার এসআই ফেরদৌস আলম।
পরে রাত  ৩টার দিকে এম্বুলেন্সে করে গোলাম আযমের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল পৌনে ৬টার দিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ পোষ্টমর্টেম কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সোয়া ৬টার দিকে লাশের পোষ্টমর্টেম শুরু হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শফিউজ্জামান খায়ের এবং প্রভাষক ডা: প্রদীপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে পোষ্টমর্টেম সম্পন্ন হয়। প্রায় ৩০ মিনিটে পোষ্টমর্টেম সম্পন্ন হয়।
মর্গ সূত্র জানায়, পোষ্টমর্টেমের সময় অধ্যাপক গোলাম আযমের লাং, হার্ট ও পাকস্থলির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য।
পোষ্টমর্টেম শেষে ৭-৪০ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী পিতার লাশ গ্রহণ করেন। এসময় কারাগারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষি মো: জাকারিয়া ।
এদিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেয়ার পর সেখানে আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা ভিড় করেন। সকাল হলে ভিড় আরো বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 



মৃত্যুর ঘোষনা
গ্রেফতারের পর থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। গত দুই সেপ্টম্বর থেকে  ৯২ বছর বয়সী অধ্যাপক গোলাম আযমের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এরপর থেকে তাকে বেশ কয়েকবার সিসিইউ, আইসিইউতে নেয়া হয়। গত বৃহষ্পতিবার অধ্যাপক গোলাম আযমের রক্তচাপ একেবারেই কমে যায় সকালে এক পর্যায়ে তার রক্তচাপ ৬০/৪০ এ নেমে আসে এবং সহজে কারো ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেননা। অনেকক্ষন ডাকাডাকির পর মাঝে মাঝে তিনি চোখ তুলে তাকাতেন। এ পর্যায়ে চিকিৎসকরা ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তার রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে কৃত্রিম শ্বাসপ্রসাসের ব্যবস্থা করা হয়। বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে সংবাদ মাধ্যমে। ১০টার দিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী জানান তার বাবা আর বেচে নেই। এরপর ডাক্তারা প্রথমে তাকে কিনিক্যালী ডেড ঘোষনা করে। রাত ১১টা ৫২ মিনিটের মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল মজিদ ভূইয়া তার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাকের কারণে রাত ১০টা ১০ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে  ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন