বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শুরু : পিরোজপুরের দুটি মামলায় সাঈদীর নামের শেষে ‘শিকদার’ ‘দেলু’ ‘দেইল্লা’ নেই

মেহেদী হাসান, ২৫/৪/১২, বুধবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জেরা আজ শুরু হয়।  জেরায় বের হয়ে এসেছে পিরোজপুরে একই অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার অভিযোগে কোথাও মাওলানা সাঈদীর নামের শেষে “শিকদার”, “দেলু”  এবং “দেইল্লা” লেখা হয়নি। 
বর্তমান মামলায় একটি অন্যতম আলোচিত বিষয়  হল মাওলানা সাঈদীর  নাম  পূর্বে দেলাওয়ার হোসাইন শিকদার  ছিল। স্বাধীনতার পরে শিকদার বাদ দিয়ে নামের সাথে সাঈদী যোগ করেছেন তিনি।

তদন্ত  কর্মকর্তা হেলালউদ্দিনের জেরা শুরু বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের মুলতবি প্রস্তাব বাতিল করে বেলা তিনটার দিকে তার জেরা  শুরু হয়। সংক্ষিপ্ত জেরায় আরো বের হয়ে এসেছে একই অভিযোগে পিরোজপুরে দায়ের করা দুটি মামলা  অনিষ্পন্ন থাকা অবস্থায় বর্তমান মামলা চলছে ট্রাইব্যুনালে।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে পিরোজপুরে দুটি মামলা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে। সে মামলা দুটি করেছিলেন  মাহবুবুল আলম হাওলাদার এবং মানকি পসারী নামে দুজন ব্যক্তি।  জেরায় বের হয়ে এসেছে উক্ত দুই বাদী তাদের মামলায় ‘মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’ এভাবে নামটি  লিখেছেন । ঐ মামলার অভিযোগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসান সাঈদীর নামের শেষে “শিকদার”, “দেলু” “দেইল্লা” এ জাতীয় কোন শব্দ লেখা নেই।

পিরোজপুরে যে   দুজন ব্যক্তি মামলা করেছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে তাদেরই  একজন মাহবুবুল আলম হাওলাদার বর্তমান ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।   সে অভিযোগের  ভিত্তিতেই বর্তমানে মাওলানা সাঈদীর বিচার চলছে। কিন্তু যে মাহবুবুল আলম  হাওলাদার  কর্তৃক পিরোজপুরে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় কোথাও মাওলানা সাঈদীর নামের শেষে শিকদার, দেলু বা দেইল্লা শব্দ  লেখা নেই  সেই একই ব্যক্তির দায়ের করা  অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা চার্জশিটে  এ তিনটি শব্দ লেখা রয়েছে। শুধু তাই নয় পিরোজপুরে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অপর মামলার বাদী মানিক পসারী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সে সাক্ষ্যে তিনি মাওলানা সাঈদীকে শিকদার, দেলু দেইল্লা নামে অভিহিত করেন।


অপর দিকে মামলার বাদী মাহবুবুল আলম মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার সময় “মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন  বর্তমানে সাঈদী” এভাবে নামটি উচ্চারন করেছেন।
আজ তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিনকে জেরা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন মনজুর আহমেদ আনছারী, কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

জেরা:
আইনজীবী : বর্তমান মামলার অভিযোগকারী মোঃ মাহবুবুল আলম হাওলাদার  দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ও অন্য তিন জনের নামে পিরোজপুরে নালিশী আদালতে ০১/০৮/২০০৯ইং তারিখে একটি নালিশী দরখান্ত দাখিল করেছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা : জি করেছিলেন।
আইনজীবী :  উক্ত নালিশী দরখাস্তটি পরবর্তিতে জিয়ানগর থানার মামলা নং-৪ তারিখ ০৮/০৯/২০০৯ইং ধারা দন্ডবিধির ৪৩৬/৩৮০/৪২৭/৩০২/৩৪ হিসাবে এজাহার হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা : জি।
আইনজীবী : মামলাটি ও.সি জিয়ানগর থানা রেকর্ড করার পর এস.আই আঃ হাকিম খানের উপর তদন্তভার অর্পন করেন। ঐ মামলায় আসামীর নাম মোঃ দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী হিসেবে উল্লেখ আছে। নামের শেষে “শিকদার” শব্দটি লেখা নাই।
তদন্ত কর্মকর্তা : জি, নামের শেষে শিকদার নেই। সাঈদী লেখা আছে।
আইনজীবী : ঐ মামলার এজাহারে বা  আসামীর নামের কলামে বা অভিযোগের বর্ণনায় আসামী মোঃ দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নামের সহিত “ওরফে দেলু” বা  ‘ওরফে দেইল্লা” জাতীয়  কোন শব্দ উল্লেখ নাই।
তদন্ত কর্মকর্তা : না নেই।
আইনজীবী : বর্তমান মামলায় ঘটনার তারিখ   ২ জুন ১৯৭১ লেখা হলেও  ২ জুন ছাড়াও অন্যান্য তারিখের ঘটনারও বর্ণনা আছে।
তদন্ত কর্মকর্তা : ২ জুন ১৭৯১ ঘটনার কথা উল্লেখ আছে। এছাড়া অন্যান্য ঘটনার কথা উল্লেখ আছে, তবে সেই সব ঘটনার তারিখ উল্লেখ নাই।
আইনজীবী : উক্ত মামলার অভিযোগের মধ্যে মাহবুব আলম হাওলাদারের বাড়ি লুন্ঠন ও নির্যাতন, বিশাবালীকে হত্যা, উমেদপুরে ২৫টি বাড়ীর মালামাল লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ, শহিদুল ইসলাম সেলিমের বাড়ী লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন, মানিক পসারীর বাড়ী লুন্ঠন, অগ্নি সংযোগের অভিযোগ আছে।
তদন্ত  কর্মকর্তা : জি আছে।
আইনজীবী : বর্তমান মামলার স্বাক্ষী  মনিক পসারী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে পিরোজপুর নালিশী আদালতে ১২/০৮/২০০৯ইং তারিখে মামলা দায়ের করেছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা : জি করেছিলেন।
আইনজীবী : নালিশী আদালতের   উক্ত মামলা  পরবর্তীতে পিরোজপুর সদর থানার মামলা নং-৯ তারিখ ১৭/০৮/২০০৯ইং ধারা ৩০২/৩৮০/৪৩৬/৩৪ দন্ডবিধি হিসাবে রেজিষ্ট্রিভূক্ত হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা : হ্যা।
আইনজীবী : ঐ মামলার তদন্তভার কার ওপর দেয়া হয়?
তদন্ত কর্মকর্তা :  এস.আই. আজিম হাওলাদারের উপর ।
আইনজীবী :  উক্ত মামলার ঘটনার তারিখ ০৮ই মে ১৯৭১ইং উল্লেখ আছে।
তদন্ত কর্মকর্তা : সত্য ।
আইনজীবী : উক্ত মামলায় আসামী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নামের সাথে  “শিকদার” “দেলু” বা  “দেইল্লা” শব্দ উল্লেখ নাই।
তদন্ত কর্মকর্তা : না,  নাই।
আইনজীবী : উক্ত মামলার অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি এর হত্যাকান্ড  ও মফিজ উদ্দিনকে অপহরণ এবং  নির্যাতনের কথা উল্লেখ আছে।
তদন্ত কর্মকর্তা :  জি আছে।
আইনজীবী : আপনি এই আদালতে  জবানবন্দী দেয়ার সময়  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট ১৭টি মামলা থাকার বিবরন দিয়েছিলেন। সেখানে  ১৭টি মামলার মধ্যে মাহবুবুল আলম হাওলাদারের আনিত মামলাটি ক্রমিক নং-৭ এবং মানিক পসারীর কর্তৃক আনিত মামলাটি ক্রমিক নং-৬ এ উল্লেখ  করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা : হ্যা।
আইনজীবী : আপনি বর্তমান মামলাটি তদন্ত করার সময় পিরোজপুরে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা আগের দুটি মামলা  পর্যালোচনা করেছিলেন?
তদন্ত কর্মকর্তা : হ্যা করেছি।
আইনজীবী :  বর্তমান মামলাটি আপনি  তদন্ত করা পর্যন্ত উল্লেখিত দুইটি মামলায় পুলিশ রিপোর্ট দাখিল হইয়াছিল কিনা তা জানা আছে ?
তদন্ত কর্মকর্তা : আমার জানা নেই।
আইনজীবী : বর্তমান মামলাটি তদন্তকালে আসামী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন থানায় অন্য কোন মামলা তদন্তাধীন আছে কি-না  কিংবা কোন আদালতে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা বিচারাধীন আছে কিনা এবং  থাকলে ঐসব মামলার অবস্থা  জানার  জন্য বাংলাদেশের সকল থানায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি পাঠিয়েছিলেন?
তদন্ত কর্মকর্তা : হ্যা:
আইনজীবী :   মাহবুবুল আলম হাওলাদার এবং মানিক পসারী নামে যে দুজন পিরোজপুরে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সে মামলা দুটি বিষয়ে কি  তথ্য  পেয়েছিলেন তখন?
তদন্ত কর্মকর্তা : মানিক পসারীর মামলাটি তদন্তাধীন ছিল এবং মাহবুবুল আলম হাওলাদারের আনিত মামলাটি অত্র ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের পর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তদন্তাধীন আছে মর্মে রিপোর্ট  পাই। আইনজীবী : আপনি  বর্তমান মামলা বিষয়ে যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন  যা ফরমাল চার্জের মাধ্যমে মাননীয় ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে তাতে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে

মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়ীতে লুট ও তাার ভাইকে নির্যাতন, বিশাবালী হত্যাকান্ড, উমেদপুরের ২৫টি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, সেলিম খানের বাড়ীতে লুটপাট ও নির্যাতন, মানিক পসারীর বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ইব্রাহীম ওরফে কুট্টি এর হত্যাকান্ড এবং মফিজ উদ্দিনকে অপহরণ ও নির্যাতনের ।
 তদন্ত কর্মকর্তা : অন্য আরো অভিযোগ রয়েছে।
এ পর্যন্ত জেরার পর গতকাল ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম মুলতবী করা হয়। আগামীকাল   আবার জেরা শুরু হবার কথা রয়েছে।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আজ জেরার সময় অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, তাজুল ইসলাম,   ব্যারিস্টার তানভীর আল আমিন, আবু বকর সিদ্দিক, হাসানুল বান্না সোহাগ প্রমুখ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন