বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ছেলের সাক্ষ্য গ্রহণ

মেহেদী হাসান, ১৪/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন তার তৃতীয় ছেলে মাসুদ সাঈদী। তিনি মাওলানা সাঈদীর  মামলায়  তার পিতার পক্ষে  তদবিরকারক। মাওলানা সাঈদীর   পক্ষে  যেসব ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে তা তিনি উপস্থাপন করেন। এছাড়া মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন সে বিষয়েও কিছু ডকুমেন্ট তিনি উপস্থাপন করেন।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে যেসব ডকুমেন্ট তিনি উপস্থাপন করেন তার মধ্যে  একটি হল-মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে ডকুমেন্ট।  ইব্রাহীম কুট্টি এবং তার শ্যালক সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার  এজাহারের সার্টিফাইড কপি তিনি উপস্থাপন করেন। 
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি আলোচিত অভিযোগ হল  কথাসাহিত্যিক হুমাযূন আহমেদের পিতা (তিনি ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের এসডিপিও ছিলেন) শহীদ ফয়জুর রহমানকে হত্যায় সহায়তা করা। হুমায়ুন আহমেদের মা এবং শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ পিরোজপুরের স্মৃতিচারন করে লিখিত ‘জীবন যেরকম’ বই লিখেছেন। সেখানে ফয়জুর রহমান হত্যার  পূর্বাপর ঘটনা তিনি  তুলে ধরেছেন।  মাসুদ সাঈদী ‘জীবন যেরকম’ বইটি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন।

এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট আলী  হায়দার খানের  একটি লেখা  অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের  দলিলপত্র’ নামক প্রামান্য গ্রন্থে।  ওই লেখায় আলী হায়দার খান  ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন । স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামক গ্রন্থের যেখানে ১৯৭১ সালে পিরোজপুর সংক্রান্ত ঘটনা বর্র্নিত আছে সে অংশ  মাসুদ সাঈদী  ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন ।
এছাড়া সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদ লিখিত ‘সুন্দরবনের উন্মাতাল দিনগুলি’, হুমায়ুন আহমেদ রচিত ‘জোসনা ও জননীর গল্প’ বই ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি মাওলানা সাঈদীর বিভিন্ন সময়ে করা পাসপোর্ট  ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ আনসারী নয়া দিগন্তকে জানান, মাওলানা সাঈদী  ১৯৮২, ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ সালে পলাতক ছিলেন মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি যে পলাতক ছিলেননা  তা প্রমানের জন্য ১৯৭৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ের তার অনেকগুলো পাসপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।



মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তথ্য প্রমান উপস্থাপন অব্যাহত

১৫/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে তথ্য প্রমান উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর তৃতীয় ছেলে মাসুদ সাঈদী তার পিতার পক্ষে  ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে তথ্য প্রমান উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় দিনের মত।
আজ  যেসব তথ্য প্রমান উপস্থাপন করা হয় তার মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাজ্যের ইসলামিক মিশন কর্তৃক আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল সিরাত কনফারেন্স- ১৯৭৮ এর কার্যতালিকার ফটোকপি । এতে ২৯ মে তারিখের কার্যতালিকার দ্বিতীয় আইটেমের দারসে কোরআন বাই মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী লেখা আছে। দি ইসলামিক কাউন্সিল অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য প্রদানের জন্য  মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে ভিসা প্রদানের অনুরোধ পত্রের ফটোকপি । ঢাকাস্থ ক্যানাডীয় দূতাবাস  ৫ই আগষ্ট, ১৯৮৬  অনুরোধপত্র পাঠায়। 
ইসলামী সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আয়োজিত ইষ্ট কোষ্ট কনফারেন্সে যোগদানের জন্য  ভিসা প্রদানের জন্য ঢাকাস্থ আমেরিকান এ্যাম্বেসিকে অনুরোধপত্র তারিখ ৭ইমে, ১৯৮৭, দাওয়াতুল ইসলাম যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড কর্তৃক বার্ষিক সভায় যোগদানের আমন্ত্রনপত্র তারিখ ২৬ শে জুলাই, ১৯৭৯,  ইউ.কে. ইসলামিক মিশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক সিরাত সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রনপত্র গ্রহণ করার জন্য প্রদত্ত ধন্যবাদপত্র ১০ই মে, ১৯৭৮, দাওয়াতুল ইসলাম ইউ.কে. এবং আয়ারল্যান্ড কর্তৃক তাদের বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রনপত্র তারিখ ২৮ শে জুন, ১৯৮৫  এর ফটোকপিসহ  মাওলানা সাঈদীকে আরো বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক বিদেশ  গমনের     আমন্ত্রণপত্রের ফটোকপি ট্রাইব্যুনালে  উপস্থাপন করা হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আমাকে  জানান, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি স্বাধীনতার পর আত্মগোপনে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর তিনি ভুয়া মাওলানা হিসেবে নাম বদল করে আত্ম প্রকাশ করেন।   মাওলানা সাঈদী যে স্বাধীনতা  যুদ্ধের পর পলাতক বা আত্মগোপনে ছিলেননা  তার প্রমান হিসেবে এসব দাখিল করা হয়েছে।
এছাড়া পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামক গ্রন্থের ফটোকপি, সাংবাদিক রকুনউদ্দৌলাহ কর্তৃক রচিত “মুক্তিযুদ্ধে যশোর” নামীয় বইয়ের ফটোকপি,  বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১৯৭১ এর ৪র্থ খন্ডে উল্লেখিত ০৯-০৪-১৯৭৪ ইং তারিখে ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পাদিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফটোকপি,  রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষের তালিকাভুক্ত  সাক্ষী খলিলুর রহমানের জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং ভোটার তালিকায় তার নাম সম্বলিত সংশ্লিষ্ট অংশের ফটোকপি দাখিল করা হয়। 
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবীন তার সাক্ষ্যে বলেছিলেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করেছেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর দাবি তিনি বহিষ্কৃতি হয়েছিলেন। সে মর্মে  ডকুমেন্ট গতকাল উপস্থাপন করা হয়। এটি হল  উবনধৎৎবফ ষরংঃ ড়ভ ঃযব উবমৎবব (ঐড়হ’ং) ঊীধসরহধঃরড়হ ড়ভ ১৯৭৬ যবষফ রহ অঢ়ৎরষ, ঔঁষু ধহফ অঁমঁংঃ ১৯৭৮ এর ফটোকপি (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহ) এবং এর ৩৫২ নম্বর ক্রমিকে মোঃ রুহুল আমীন, পিতা আলহাজ্ব সিরাজউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ আছে। 

সেফ হাউজে ডায়েরি   প্রদর্শন করতে দেয়া হয়নি

১৬/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আলোচিত সেফ হাউজ ডায়েরি বা রেজিস্ট্রার বই প্রদর্শনী করতে দেয়া হযনি।    ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন যার কাছ থেকে এ  ডায়েরি বা বই সংগ্রহ করা হয়েছে তাকে ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে এবং তার মাধ্যমে এগুলো উপস্থাপন করতে  হবে।

আজ মঙ্গলবার  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ  মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার সময় আসামী পক্ষ  সেফ হাউজ সংক্রান্ত তিনটি রেজিস্ট্রার বই  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক   চিহ্নিতকরনের উদ্যোগ নিলে  ট্রাইব্যুনাল আপত্তি উত্থাপন করেন।  তবে সেফহাউজ সংক্রান্ত দুটি জিডির ফটোকপি  পদর্শন মার্ক করা হয়েছে।

গতকাল  সোমবার প্রথমে সেফ হাউজ রেজিস্ট্রার বই চিহ্নিতকরন করতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল  সাক্ষীর কাছে জানতে চান এটি তিনি  কিভাবে পেয়েছেন। তখন সাক্ষী  মাসুদ সাঈদী  জানান, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের সাথে যোগাযোগ করি এবং তিনি এটি আমাদের দিয়েছেন। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে ওই রিপোর্টরকে আসতে  হবে। এরপর   এ বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে  জটিলতা না দেখা দেয় সেজন্য আসামী পক্ষকে আরো চিন্তা করার পরামর্শ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামী পক্ষ তখন এ বিষয়টি বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয় প্রদশর্ন করান।

আজ   ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  প্যানেল ট্রাইব্যুনালকে জানান তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটি তারা প্রদর্শন করাবেন । তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা এটি তার (মাসুদ সাঈদী)  কাছ থেকে নেবনা। এটি তার কাছে কিভাবে এসেছে সেটি আগে ঠিক করেন। আমরা বুঝতে পারছিনা তিনি (মাসুদ সাঈদী)  কিভাবে এর সাথে  জড়িত হলেন। আপনাদের দাবি অনুযায়ী এটা সরকারি ডকুমেন্ট। সরকারি ডকুমেন্ট কি যে কেউ প্রদর্শন করতে পারে ? তিনি এটা বলতে পারেননা যে তিনি এটা সংগ্রহ করেছেন।  এটা যে পুলিশের ডকুমেন্ট তা বলার তিনি কে? তিনি এটা অন্য আরেকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন । তাকে আসতে হবে।
তারপরও আমরা আপনাদের সতর্ক করে বলছি যদি দেখা যায় এটা  জাল   তাহলে কিন্তু মারাত্মক পরিণতি হবে। সেই ঝামেলায় আপনারা ওনার ছেলেকে টেনে আনছেন কেন?

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা আপনারা বিবেচনা করবেন কি করবেননা সেটি পরের বিষয় কিন্তু প্রদর্শন হতে আপত্তি কোথায়। 
এরপর  এটি পদশর্নীর পরিবর্তে সাক্ষী মাসুদ সাঈদী সেফ  হাউজের তিনটি রেজিস্ট্রার   বই দেখেছেন এবং তার মধ্যে  কি আছে তার  সংক্ষিপ্ত একটি বিবরন রেকর্ড করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এছ্ড়াা সেফ জাউজ সংক্রান্ত দুটি জিডি প্রদশর্ন করা হয়। 

সাক্ষী মাসদু সাঈদী এ জুডি দুটি বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানান, সেফ  হাউজের রেজিস্ট্রার  বইতে  ৮ ডিসেম্বর ১১২ নং নোটে যাত্রা বাড়ি থানায় তিনটি জিডি করার কথা উল্লেখ আছে। সেফ হাউজে অবস্থানরত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে কে বা কারা হুমকি দেয়। সে কারনে সেফ হাউজের ইনচার্জ   আমজাদ  গত ৮/১২/২০১১ তারিখ যাত্রাবাড়ি থানায় গিয়ে সাক্ষীকে হুমকির বিষয়ে জিডি করেন।  যাত্রাবাড়ি থানায় জিডি করার এ বিষয়টি সেফ হাউজের রেজিস্ট্রার বইতে নোট করে রাখা হয় ১৯/১২/২০১১ তারিখ। সেখানে জিডির নম্বরও উল্লেখ করা হয়। সেই সূত্র ধরে আমরা যাত্রাবাড়ি থানা থেকে জিডির ২টি কপি সংগ্রহ করি। 

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, এ জিডির কপি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেফ হাউজের অস্তিত্ব্ স্বীকার করে নেয়া হল।

এ জিডি কপি প্রদর্শনের সময় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষী মাসুদ সাঈদীকে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সেগুলো হল-
প্রশ্ন : আপনি জিডি হিসেবে যে দুটি  ফটোকপি  হিসেবে দাখিল করেছেন তা যে জিডি তা আপনাকে কে  বলেছে?
উত্তর : কেউ বলেনি। দেখে বুঝেছি এটা জিডির কপি।
প্রশ্ন : থানায় জিডি হয়েছে তা আপনি কিভাবে জানলেন?
উত্তর : সেফ হাউজের ডকুমেন্টে জিডি করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটা দেখে আমার মরহুম বড় ভাই রাফিক বিন সাঈদী ও জিডি কপি সংগ্রহ করেছেন।
প্রশ্ন : এ কুপি দুটি আপনার ভাই কিভাবে কার  কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন তা আপনার জানা আছে?
উত্তর : আমার ভাইয়ের কাছে শুনেছি তিনি থানার মুন্সির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। আরো শুনেছি  জিডির  নম্বর বলতে পারলে এভাবে থানা থেকে জিডি কপি  সংগ্রহ করা যায় ।

এছাড়া জিডির কপি দুটি রেকর্ড করা বিষয়ে আরো কয়েকটি কথা রেকর্ড  করেন ট্রাইব্যুনাল।  সেটি হল- এই ডকুমেন্ট দুইটি থানায়প্রদত্ত দুটি জি,ডি এন্ট্রির ফটোকপি, যখন আসামী পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবিদের এর দায়দায়িত্ব ও সঠিকতা সম্পর্কে স্মরন করিয়ে দেওয়া হয় তখন তাহারা বলেন যে, এর দায় ও সঠিকতা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে তাহারা এই ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

এরপর সেফ হাউজের  যে  তিনটি রেজিস্ট্রার বই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দাখিল করা হয়েছে তা নিম্নোক্ত উপায়ে ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড করা হয়-

সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে ২০-০৩-১২ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়ে সাক্ষীদের আসা যাওয়া সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার খাতা, উক্ত সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে ২০-০৩-২০১২ইং তারিখের সাধারন ডায়রী বই এবং উক্ত সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে৩০-০৩-২০১২ ইং তারিখের খাদ্য রেজিস্ট্রারগুলির ফটোকপি যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী ১৫ জন সাক্ষীর তদন্তকারী অফিসারের নিকট প্রদত্ত জবানবন্দী গ্রহন    করে   মাননীয় ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ প্রদান করেন তা রিভিউ দরখাস্ত শুনানীকালে আমার পিতার পক্ষ হতে ০৩-০৬-১২ইং তারিখ দাখিল করা হয়েছে, তা আমি দেখেছি। ঐ সমস্ত রেজিস্ট্রার প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের আসা যাওয়া, খাওয়া দাওয়া, তাদের সঙ্গীয় মেহমানদের বর্ণনা, মোবাইল নম্বর কে কয়দিন থেকেছে ইত্যাদির বর্ণনা আছে। ঐ রেজিস্টারে উল্লেখযোগ্য যে সমস্ত বিষয় সমুহ লিপিবদ্ধ ছিল তার মধ্যে সাক্ষী আশীষ কুমার মন্ডল এবং তাহার মাতা এবং অপর সাক্ষী সমর মিস্ত্রি উল্লেখিত সেইফ হাউজে ২০১২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত অবস্থান করেছেন।

গতকাল সাক্ষী মাসুদ সাঈদীর  জবানবন্দী শেষে জেরা শুরু হয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করে বলা হয় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  অনুপস্থিত  ৪৬ সাক্ষী হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।   রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন ২৯ মার্চ। এ বিষয়ে রিভিউ আবেদনের শুনানীর সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে  কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হয়। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের ঢাকায় এনে রাখা হত যেখানে সেই সেফ হাউজের তিনটি রেজিস্ট্রার বই তারা উদ্ধার করেছেন। সেখানে কোন সাক্ষী কবে আসছে, কবে গেছে, কতদিন ছিল  তার সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ আছে।  তারা সে তথ্য উপস্থাপন করে বলেন,  সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারন দেখিয়েছে তা মিথ্যা।   যেসব সাক্ষী তারা খুঁজে পাচ্ছেনা বলে দাবি করছেন তার অনেক সাক্ষী ঢাকায় সেফ হাউজে ছিল তাদেরই তত্তাবধানে। 
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মাসুদ সাঈদীকে বুধবারের জেরা :
১৭/১০/২০১২

প্রশ্ন : আপনারা কয় ভাইবোন?
উত্তর : আমরা চার ভাই। বোন নেই। সম্প্রতি আমার বড় ভাই মারা গেছেন।
প্রশ্ন :   তিন ভাই কোথয় কি পড়াশুনা  করেছেন একটু বলেন।
উত্তর : বর্তমানে বড়ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছেন।  তারপর আমি তিতুমীর কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। পরে নিউইয়কের লাগুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। আমার ছোট ভাই সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসি পাশের পর লন্ডনে অথর্নীতিতে পড়াশুনা শেষ করেছে । তবে কলেজের নাম এ মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : কার কি পেশা ?

উত্তর : বর্তমান বড়ভাই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন। টিকেটিং হজ্ব ওহমরাহ। আমি রিয়েল  এস্টেট ব্যবসা করি।  ছোট ভাই লন্ডনে একটি ফার্মে চাকরি করে।
প্রশ্ন : আপনার দাদার বাবার নাম কি?
উত্তর : গোলাম রহমান সাঈদী।
প্রশ্ন : আপনার বাবার লেখালেখি বা বই আছে?
উত্তর : হ্যা। আমার আব্বার লেখা ৭২টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন : ওনার পেশা কি?
উত্তর : লেখক।
প্রশ্ন : এছাড়া তার অন্য কোন পেশা নেই এবং অতীতেও ছিলনা।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনার সাথে সিতারা বেগমের দেখা হয়নি।
উত্তর : না। মামলার (সিতারা বেগমের মেয়ে মমতাজ বেগম তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি, এবং ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে ১৯৭২ সালে  মমতাজ বেগম যে মামলা করেছিল তার কপি) কপিটি আমি আমার বড় ভাইর কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার বড় ভাইর মুত্যৃ হয়েছে কবে?
উত্তর : গত ১৩ জনু। চার মাস আগে।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বিষয়ে আপনার সাথে আপনার বড় ভাইর কথাবার্তা হয়েছে?
উত্তর : না। তবে সম্ভবত মমতাজ বেগম তার মায়ের কাছ থেকে মামলার কপিটি এনে আমার ভাইকে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : কাগজটি কে কখন তুলেছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : প্রদর্শনী-  এ (মামলার কপি) তে সাহেব আলী বা সাহাবউদ্দিন নাম লেখা আছে?
উত্তর : না। তবে সিরাজ আলী  লেখা আছে।
প্রশ্ন : প্রদশর্নী  -- এ’তে এক নং আসামী হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্য পিরোজপুর ক্যাম্প লেখা আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মামলার কপির প্রত্যেক পাতার পেছনে কোন লেখা বা স্বাক্ষর  আছে?
উত্তর : সিল মারা আছে। কোন লেখা বা স্বাক্ষর নেই।
প্রশ্ন : মামলার এ সাটিফাইড কপিটি সম্পূর্ণরুপে  অত্র মামলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং   কপির ভেতরে উল্লিখতি  মামরার কোন অস্তিত্ব নেই।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম বা মমতাজ বেগমের পরিবারের সাথে আপনার বড় ভাইর ভাল সম্পর্ক ছিল।
উত্তর : না। তবে সিতারা বেগমের ছেলে মোস্তফা হাওলাদারের সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।
প্রশ্ন : সিতারা বেগম ও মোস্তফা হাওলাদার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনাদের কারনেই তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
প্রশ্ন : সত্য নয়। তবে অসত্য সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওযায় তারা আসেনি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন