বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

ভাই হত্যায় জড়িতদের কাছ থেকেই হত্যার বিবরন শুনলেন সাক্ষী

মেহেদী হাসান, ২০/২/২০১২, সোমবার
আজ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে    সাক্ষ্য  দিলেন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি এবং নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন। সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন  আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে জানান, তার ভাই  সাঈফ মিজানুর রহমান ১৯৭১ সালে পিরোজপুর জেলা মেজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর  ছিলেন। হুমায়ুন আহমেদের পিতা পিরোজপুর জেলার  তৎকালীন এসডিপিও ফয়জুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত এসডিও আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার ভাই মেজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমানকেও  পাক আর্মি  হত্যা করে বলেশ্বর নদীতে  লাশ ফেলে দেয়।

জবানবন্দী  এবং জেরায় সাক্ষী  জানান, ভাইকে হত্যার খবর পাওয়ার পর তিনি তার পিতা এবং বোনকে নিয়ে  পিরোজপুর যান ।  পিরোজপুর গিয়ে সেখানকার শান্তি কমিটির  প্রতিষ্ঠাতা  খান  বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজাল ও রাজাকার মন্নাফের কাছে তিনি  তার ভাইকে  হত্যার বিবরণ শোনেন।   সাক্ষী  সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন  আদালতে বলেন,  তার ভাইকে পাক আমি ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে মন্নাফ রাজাকার ও দেলোয়ার হোসেন ছিল। যে মন্নাফ রাজাকার তার ভাইকে ধরে নিয়ে যাবার সময়  পাক আর্মির গাড়িতে ছিল সেই মন্নাফ রাজাকারের কাছেই ভাই হত্যার বিবরণ শোনেন বলে জবানবন্দী  এবং জেরায় জানান সাক্ষী। সাক্ষী জানান তারা  খান বাহাদুর আফজালের বাড়িতে যান ভাই হত্যর খবর জানার জন্য। সেদিন সেখানে মন্নাফ রাজাকারও ছিল।

পিরোজপুর অস্ত্রাগার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র বের করে দেয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার অভিযোগে তার ভাই  সাইফ মিজানুর রহমানকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয় বলে খান বাহাদুর এবং মন্নাফ রাজাকারের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন বলে সাক্ষী জানান আদালতে ।

তবে জেরায় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জানান তৎকালীন পিরোজপুর জেলার ওসি  ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাইফ মিজানুর রহমান, এসডিও আব্দুর রাজ্জাক এবং এসডিপিও ফয়জুর রহমানকে পাক আর্মির হাতে  ধরিয়ে দেয়ার পর তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।  এ তিনজনে হত্যার  বিষয়ে ফফজুর রহমানের জামাতা আলী হায়দার খান সাহেবের লিখিত  বক্তব্য কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র  গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।  এ বইটি তথ্যমন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে।   এ বইয়ের কোথাও মাওলানা সাঈদীর সাহেবের স্বাধীনতা বিরোধী কোন ভূমিকার কথা উল্লেখ নেই।

এর আগে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছেন হুমায়ুন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ লিখিত ‘পিরোজপুরের জীবন যেরকম’ বইতেও মাওলানা সাঈদীর নাম উল্লেখ করেননি তার স্বামী হত্যার বিষয়ে। এমনকি তিনি তার স্বামীসহ সাইফ মিজানুর রহমান হত্যা মামলায়ও মাওলানা সাঈদীকে আসামী করেননি।

সাক্ষীর জবানবন্দী:
আমার নাম  সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন। বয়স ৬৫ বছর। ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে  আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। নড়াইল জেলা আইনজীবী সমতিরি আমি ষষ্ঠ বারের মত নির্বাচতি  সভাপতি বর্তমানে। ১৯৭০-৭১ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলাম। থাকতাম এস এম হলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী: ১৯৭০-৭১ সালের ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলেন।
সাক্ষী : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই বৈষম্যের কারনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের মাঝে ক্ষোভ ছিল। এর বহিপ্রকাশ ঘটে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানী  জান্তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। ফলে বিক্ষোভ  আরো বাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”  বলে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। সে জনসভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। এরপর অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমি নড়াইল গ্রামের বাড়িতে চলে যাই।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী : শহীদ সাইফ হাফিজুর রহমান আপনার কি হয়।
সাক্ষী :  তিনি আমার বড় ভাই।
আইনজীবী : ১৯৭১ সালে তিনি কি করতেন?
সাক্ষী : পিরোজপুর  জেলার মেজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টার ছিলেন।
আইনজীবী : পিরোজপুরের ঐ সময়ের অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলেন।
সাক্ষী : দেশের অন্যান্য স্থানের মত পিরোজপুরেও মুক্তিযুদ্ধের শক্তির জনতা  এবং প্রশাসনের যারা পক্ষে ছিলেন তারাও মুক্তিযুদ্ধের  জন্য প্রস্তৃতি গ্রহণ করতে থাকে।
আইনজীবী : প্রশাসনের যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিলেন তাদের নাম বলেন।
সাক্ষী : ভারপ্রাপ্ত এসডিও (সাবডিভিশন অফিসর) আব্দুর রাজ্জাক, এসডিপিও (সাব ডিভিশন পুলিশ অফিসার)  ফয়জুর রহমান (সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পিতা) এবং আমার ভাই মেজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান।
আইনজীবী : এরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছিল?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : আপনার ভাইয়ের কি হল সে বিষয়ে বলেন।
সাক্ষী : ১৯৭১ সালের ৫ মে আমার ভাই পাক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে নৃশংসভাবে নিহত হয় বলে জানতে পারি।
আইনজীবী : আপনার ভাই নিহত হয়েছে একথা শোনার পর কি করলেন?
সাক্ষী : আমি, আমার পিতা এবং আমার ছোট বোন নড়াইল থেকে খুলনা যাই। ভাবির সাথে দেখা করি। মানসিকভাবে বিব্ধস্ত থাকার পরও আমরা ভাবীর কাছে ঘটনা শুনে পিরোজপুর যাই। পিরোজপুরে খান বাহাদুর আফজাল ও রাজাকার মন্নাফকে পাই। খান বাহাদুর আফজালের কাছ থেকে জানতে পারি আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা  করার কারনে এবং ট্রেজারি থেকে অস্ত্র বের করে দেয়ার কারনে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। হত্যার পূর্বে তাকে বলতে বলা হয় ‘বল পাকিস্তান জিন্দাবাদ’। সে বলে ‘জয় বাংলা’। আমার বড় ভাই মিজানুর রহমান, এসডিও আব্দুর রাজ্জাক, এসডিপিও ফয়জুর রহমানকে বলেশ্বর নদীতে নিয়ে যায়। ব্রাশফায়ার দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে পরে ব্রাশফায়ার  করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। তাদেরকে  ধরে গাড়িতে নিয়ে যাবার সময় গাড়িতে পাক আর্মি ছিল। দেলোয়ার হোসেন ও মন্নাফ রাজাকারও  ছিল গাড়িতে। মন্নাফের কাছে শুনতে পাই। ওনাদেরকে গ্রেফতার করে ঐ গাড়িতে করে বলেশ্বর নদীতে নিয়ে হত্যা করা হয়।
আইনজীবী :  আপনার আব্বা জীবিত নাই?
সাক্ষী : নাই।
আইনজীবী : যারা ঐ গাড়িতে  ছিল তাদের সম্পর্কে পরে আর কিছু শুনেছেন?
সাক্ষী : পরে আফজাল সাহেব ও অন্যান্য লোকজনের কাছে শুনি পিরোজপুরে যেসমস্ত  হত্যা, অগ্নিকান্ড, ধর্ষণ হয়েছে তার সবগুলোর সাথে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। (আসামী পক্ষের আপত্তিসহকারে)।
আইনজীবী : দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সম্পর্কে পরে আর কি শুনেছেন?
সাক্ষী : ঐ সময় দেলোয়ার হোসেন  নামে শুনেছি। পরে জেনেছি তিনি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।

জেরা:
আইনজীবী : খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজাল কি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক ছিলেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : খান  বাহাদুর সৈয়দ আফজালের নেতৃত্বে ৭ মে সর্বপ্রথম পিরোজপুর শান্তি কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সাক্ষী : না। এর আগেই তার নেতৃত্বে  শান্তি  কমিটি গঠন হয়েছিল।
আইনজীবী : শান্তি কমিটি গঠন বিষয়ে ঐসময় থেকে আজ পর্যন্ত কোন খবর পত্রিকায় দেখেন নাই আপনি।
সাক্ষী : দেখিনাই লোকমুখে শুনেছি।
আইনজীবী : পিরোজপুর শান্তি কমিটি কবে গঠিত হয়েছিল এবং এ কমিটি গঠনের তারিখ আপনি কবে শুনতে পেলেন?
সাক্ষী : নির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।
আইনজীবী : মাসের তারিখ বলতে পারবেন?
সাক্ষী : মার্চে। ( একটু পরে বলেন ) না এপ্রিলের শেষের দিকে।
আইনজীবী : ১৯৭১ সালে পাক আর্মি পিরোজপুর সর্বপ্রথম কবে যায়  জানা  আছে?
সাক্ষী : লোকমুখে  শুনেছি ৩ মে।
আইনজীবী : আপনার এলাকা এবং অন্যান্য এলাকার মত পিরোজপুরেও পাক আর্মি আসার আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের  স্বপক্ষের শক্তির নিয়ন্ত্রনে ছিল   পিরোজপুর?
সাক্ষী : পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের  স্বপক্ষের শক্তির নিয়ন্ত্রনে ছিল একথা বলা যাবেনা। শান্তি কমিটি রাজাকার বাহিনী গঠনের পর তারাও নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে।
আইনজীবী : আপনার ভাই যে ট্রেজারিতে ছিল সেটা দু’বার লুট হয়। ২৭ মার্চ অস্ত্র  এবং ৩ মে অর্থ লুট হয়।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : অস্ত্র  এবং অর্থ কবে লুট হয় সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছিলেন?
সাক্ষী : জানা নেই। তবে একই দিনে ২০৬টি অস্ত্র  এবং নগদ টাকা লূট হয়েছিল।
আইনজীবী : আপনি বলেন এসডিও আব্দুর রাজ্জাক, এসডিপিও ফয়জুর রহমান  এবং আপনার ভাই  মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোক ছিলেন। এরা বাদে ঐ সমময় প্রশাসন নিয়ন্ত্রন করার মত শক্তিশালী আর কোন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন পিরোজপুরে?
সাক্ষী : ছিলনা।
আইনজীবী : রাজাকার বাহিনী গঠন হয় আনছার আইন বিলুপ্ত করে।
সাক্ষী : বেশ পরে।
আইনজীবী : রাজাকারদের মাসিক বেতন এবং নির্দিষ্ট পোশাক ছিল।
সাক্ষী : আমার জানা নেই।
আইনজীবী : পিরোজপুর যেদিন গেলেন সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত খান  বাহাদুরের নেতৃত্বে যে শান্তি কমিটি গঠিত হয় তার সদস্য কারা ছিল তা জানতে পেরেছেন?
সাক্ষী : চেষ্টা করেছি। জানতে পারিনি।
আইনজীবী : পিরোজপুরে কবে রাজাকার বাহিনী গঠন সে বিষয়ে আপনার জানা নেই।
সাক্ষী : নির্দিষ্ট করে বলতে পারবনা।
আইনজীবী : দেশ স্বাধীনের পর প্রত্যেক জেলার ইতিহাস সরকারি এবং বেসরকারিভাবে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে।
সাক্ষী : শুনেছি।
আইনজীবী : তথ্য মন্ত্রণালয়ের  অধীনে   কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায়  স্বাধীনতা যুদ্ধের  দলিলপত্র  নামে গ্রন্থ প্রকাশ  করা হয় তা জানা আছে?
সাক্ষী : মুনেছি। পড়িনি।
আইনজীবী : ড. মো: মফিজুল্লাহ কবির, প্রোভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নাম শুনেছেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ড. সালাউদ্দিন  আহমদ, প্রফেসর ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাম শুনেছেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ড. আনিসুজ্জামান, প্রফেসর বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাম শুনেছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : ড. সফর আলী আঁকন, পরিচালন ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী।
সাক্ষী : শুনিনাই।
আইনজীবী : ড. এনামুল হক। পরিচালক জাতীয় জাদুঘর।
সাক্ষী : শুনেছি।
আইনজীবী : ড. কে এম মহসিন, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সাক্ষী : শুনি নাই।
আইনজীবী : ড. শামসুল হুদা হারুন, সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাম শুনেছেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : ড. আহমদ শরীফ, প্রফেসর চেয়ারম্যান বাংলা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাম শুনেছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : কবি হাসান হাফিজুর রহমানসহ এদের মধ্যে যাদের নাম আপনি   শুনেছেন বললেন তারা তো কেউ স্বাধীনতার বিপক্ষের ছিলেননা?
সাক্ষী : সেই সময় স্বাধীনতার পক্ষে না বিপক্ষে ছিলেন তা বলতে পারবনা।
আইনজীবী : কবি হাসান হাফিজুর রহমান তো স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেননা?
সাক্ষী : বিপক্ষে ছিলেননা।
আইনজীবী : আপনি দুবার এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন?
সাক্ষী : হ্যা, ৮৬ এবং ৮৮ সালে। 
আইনজীবী : ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি  এবং জামায়াত  অংশ নেয়নি।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : আপনি বর্তমানে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : নড়াইলে বসেই প্রথম সংবাদ পান আপনার ভাই নিহত হয়েছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : কত তারিখে সংবাদ পান মনে আছে?
সাক্ষী : ঠিক মনে নেই।
আইনজীবী : অনুমান কতদিন পরে খবর পান?
সাক্ষী : ঘটনার ১০/১৫ দিন পর খবর পাই অনুমান।
আইনজীবী : খবর পাবার কতদিন পর খুলনায় গেলেন?
সাক্ষী : সঠিক মনে নেই।
আইনজীবী : অনুমান করে বলতে পারবেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : খুলনায় কতদিন ছিলেন?
সাক্ষী : ভাবীর সাথে দেখা করে ঐদিনই পিরোজপুর যাই।
আইনজীবী :  ভাবীর নাম?
সাক্ষী : লুৎফুন্নাহার।
আইনজীবী : তিনি জীবিত আছেন?
সাক্ষী : হ্যা। আমেরিকায় থাকেন বর্তমান স্বামীর সাথে।
আইনজীবী : কতদিন আগে তিনি আমেরিকায় গেছেন?
সাক্ষী : অনুমান ৭/৮ বছর আগে।
আইনজীবী : আপনার ভাই যখন নিহত হলেন তখন ভাবী  তার সাথে ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : পিরোজপুর থেকে ফেরার পর আপনার ভাবীর সাথে আর দেখা হয়েছে?
সাক্ষী : হ্যা। ভাবীর নতুন স্বামী  এবং সন্তানদের নিয়ে আমার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন।
আইনজীবী : ভাই নিহত হবার খবর নিতে গিয়ে পিরোজপুর কতদিন ছিলেন?
সাক্ষী : পরের দিনই চলে আসি।
আইনজীবী : পিরোজপুর কার বাসায় ছিলেন?
সাক্ষী : হোটেলে।
আইনজীবী : হোটেলের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী : মনে নেই। ৪০ বছর আগের ঘটনা।
আইনজীবী : আফজাল সাহেবের বাসায় গিয়ে দেখা করেছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : সাথে আপনার পিতা  এবং বোন ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : মন্নাফের বাড়ি গিয়েছিলেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : মন্নাফের সাথে কোথায় দেখা হয়?
সাক্ষী : ঐ বাড়িতে (খান বাহাদুর আফজাল)
আইনজীবী : থানায় গিয়েছিলেন ঐদিন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : দেশ স্বাধীন হবার পর স্বাধীনতা বিরোধীরা হয় পালিয়ে গিয়েছিল না হয় গ্রেফতার হয়।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : স্বাধীনতা বিরোধীদের দেশের অভ্যন্তরে কোন প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিলনা।
সাক্ষী : প্রকাশ্যে ছিলনা। গোপনে গোপনে ছিল।
আইনজীবী : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধীরা গোপন তৎপরতা চালিয়েছে মর্মে কোন খবর দেখেছেন পত্রিকায়?
সাক্ষী : না । তবে আমি রাজনীতিবিদ হিসেবে গোপন খবরাখবর পেতাম।
আইনজীবী : স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন গোপন মিটিংয়ে ছিলেন আপনি?
সাক্ষী : প্রশ্নই আসেনা।
আইনজীবী : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আপনার ভাই হত্যার বিষয়ে আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ কোন মামলা করেননি।
সাক্ষী : করিনি কারণ পরিবেশ ছিলনা।
আইনজীবী :  জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে আপনি যখন এমপি ছিলেন তখন আপনার ভাই এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের কোন উদ্যোগ নিয়েছিলেন?
সাক্ষী : আমি সংসদে কোন উদ্যোগ নেইনি।
আইনজীবী : গণতদন্ত কমিশনের কাছে কোন অভিযোগ পাঠিয়েছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা। সম্ভবত সেক্রেটারির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। তারা একটি ফরম পাঠিয়েছিল। সে ফরম পূরন করে ডাকে পাঠিয়ে দেই। তা তারা পায় কি-না জানা নেই।
আইনজীবী : ওনার অফিস কোথায় জানা আছে?
সাক্ষী : বলতে পারবনা ।
আইনজীবী : অভিযোগের কোন কপি রেখেছিলেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : চিঠি পাঠানোর কোন প্রমান পত্রও নেই।
সাক্ষী : নাই । রেজিস্ট্রি করে পাঠাইনি।
আইনজীবী : ফয়জুর রহমান সাহেবের জামাই অ্যাডভোকেট আলী হায়দার খান সাহেবকে চেনেন?
সাক্ষী : আমার বড় ভাইর বন্ধু ছিলেন। বহু আগে একবার তার সাথে দেখা হয়েছিল।
আইনজীবী : তিনি বেঁচে আছেন?
সাক্ষী : সম্ভবত বেঁচে আছেন।
আইনজীবী : তিনি স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন?
সাক্ষী : আমি যতদুর জানি পক্ষে ছিলেন।
আইনজীবী : তিনি ঐ সময় পিরোজপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। সাক্ষী : সম্ভবত।
আইনজীবী : ফয়জুর রহমান সাহেবের স্ত্রী  আয়েশা ফয়েজের নাম  শুনেছেন?
সাক্ষী : নাম শুনেছি।
আইনজীবী : দেশ স্বাধীন হবার পর আয়েশা ফয়েজ তার স্বামীর লাশ দাফনের আগে ময়না তদন্ত করান। দাফনের পর আপনার ভাইসহ স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে পিরোজপুর থানায় মামলা করেছিলেন। সে বিষয়ে জানা আছে?
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী : স্বাধীনতার পরে পিরোজপুর স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার বিষয়ে আপনার কোন ধারণা নেই।
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : কবি  হাসান হাফিজের সম্পাদনায় স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র গ্রন্থের  ৭ম, ৮ম  ও ১০ম খন্ডে পিরোজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিাহস, মুক্তিযু্েদ্ধর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিদক ব্যক্তিবর্গের তালিকা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিবর্গের নাম, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের নামসহ তাদের ভূমিকার বর্ণনা, পিরোজপুরের খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকার এবং জনাব আলী হায়দার খানের লিখিত  বক্তব্যে এসডিও আব্দুর রাজ্জাক, এসডিপ্রি ফয়জুর রহমান এবং আপনার ভাই মেজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানকে পিরোজপুর  থানার তৎকালীন ওসি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ডেকে নিয়ে পাক আর্মির কাছে হস্তান্তর করলে তারা তাদের গুলি করে হত্যা করার বর্ণনা  এবং উক্ত দলিল পত্রে সাঈদী সাহেবের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন ভূমিকার কথা উল্লেখ  না থাকার বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করে বলেছেন বইটি আপনি পড়েননি।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : পিরোজপুর জেলা পরিষদের  উদ্যোগে পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামে বইয়ের কথাও আপনি জানেন।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : আমি বলছি আপনি যে দেলোয়ার হোসেনের নাম বলেছেন তিনি ভিন্ন ব্যক্তি হওয়ায় জেনে শুনে বইটি না পড়ার কথা বলছেন।
সাক্ষী : সত্য নয়:
আইনজীবী : তদন্ত  কর্মকর্তা হেলাল সাহেবের কাছে কবে জবানবন্দী দিলেন ?
সাক্ষী : তারিখ মনে নেই।
আইনজীবী : কোথায় বসে জবানবন্দী দিলেন?
সাক্ষী : নড়াইলে আমার বাসভবনে।
আইনজীবী : ঐ সময় আপনার বোন ছিলেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : মেজর জিয়া উদ্দিনের নাম শুনেছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : তিনি মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখেছেন জানা আছে?
সাক্ষী : জানা নেই।
আইনজীবী : আপনি ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগে ছিলেননা।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : ১৯৭৪ সালে রক্ষী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত আপনি ন্যাপ সদস্য ছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী :  আপনি ২০০৯ সালে আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকাকালে আদিবাসীদের পক্ষ নিয়ে নড়াইলের কোন আইনজীবী আপনার বিরুদ্ধে কোন মামলা পরিচালনা করতে পারবেনা মর্মে একটি  রেজুলেশন পাশ করিয়েছেন ।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : ২০০৯ সালের ২৫ জুলাই দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় এ বিষয়ে খবর ছাপা হয়  এবং আপনি তার কোন প্রতিবাদ করেননি।
সাক্ষী : প্রতিবাদ করেছি। ছাপেনি।
আইনজীবী : ২০০৯ সালের ২৫ জুলাইল ঐ খবরে আপনার বিরুদ্ধে  জাল দলিলের মাধ্যমে আদিবাসীদের জমি দখলের অভিযোগও ছিল । আপনার বর্ননামতে এসব মিথ্যা অভিযোগ  এবং পত্রিকাটি আপনার প্রতিবাদ না ছাপানোর বিষয়ে আপনি কোন আইনগত ব্যবস্থা নেননি।
সাক্ষী : নেইনি।
আইনজীবী : আপনি ঐ একবারাই পিরোজপুর গিয়েছিলেন।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : আপনি যে দেলোয়ার হোসেনের কথা বলেছেন তিনিই যে বর্তমানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এ কথা কবে শুনলেন?
সাক্ষী : ১২/১৪ বছর আগে।
আইনজীবী : নড়াইলে শুনেছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : নড়াইলে কে বলেছিলেন এ কথা?
সাক্ষী : নাম খেয়াল নেই।
আইনজীবী : ঐ দেলোয়ার হোসেন যে বর্তমানে সাঈদী নামে পরিচিত একথা শোনার পর পিরোজপুর গিয়ে তা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছেন?
সাক্ষী : না।  এই মকদ্দমার আগে যাচাই করেছি।
আইনজীবী : ১৯৭১ সালে যারা দেলোয়ার হোসেনের নাম বলেছিলেন তাদের কারো  মাধ্যমে যাচাইয়ের চেষ্টা করেছেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : খান বাহাদুর আফজালের কাছে শুনতে পাই যে, ঘটনার দিন আমার ভাইকে গ্রেফতার করার সময় দেলোয়ার হোসেন ও মন্নাফ ঐ গাড়িতে ছিল। একথাগুলো আপনি এ মামলার তদন্ত  কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত  জবানবন্দীতে বলেননি।
সাক্ষী : বলেছি।
আইনজীবী : খান বাহাদুর আফজাল ও অন্যান্য লোকজনের নিকট আরো জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানতে পারি যে, পিরোজপুরে ১৯৭১ সালে যেসব লুটপাট, ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে তার সবগুলোর সাথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল বলে যে কথা আজ আদালতে বলেছেন সে কথাগুলোও আপনি আগে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি।
সাক্ষী : বলেছি।
আইনজীবী : ঐ সমময় দেলোয়ার হোসেন নামে শুনেছি পরে জেনেছি তিনিই দেললাওয়ার হোসাইন সাঈদী একথাগুলোও আপনি পূর্বে  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি।
সাক্ষী : বলেছি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন