বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

আসামী পক্ষের জুনিয়র আইনজীবীদের আটকে রেখে বিচার পরিচালনা ট্রাইব্যুনালে

মেহেদী হাসান, ২৪/৪/২০১২, মঙ্গলবার
গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার  দাবীতে আজ দ্বিতীয় দিনের মত সারা দেশে হরতাল চলছে।  হরতালের মধ্যে আসামী পক্ষের জুনিয়র আইনজীবীদের আটকে রেখে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। বিচার কার্যক্রম শুরুর পর বেশ কয়েকবার জুনিয়র আইনজীবীরা চলে আসতে চাইলেও তাদেরকে কোর্ট রুম ত্যাগের অনুমতি দেননি আদালত। জুনিয়র এসব আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন তাদেরকে কোর্টরুমে বসে থাকতে বাধ্য করা   হয়েছে।

আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম  শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবী হাসানুল বান্না ট্রাইব্যুনালে দাড়িয়ে বলেন, মাননীয় আদালত  হরতালের কারনে আমরা পায়ে হেটে এসেছি। আমাদের কোন সিনিয়র আইনজীবী আসতে পারেননি।   হরতালে চলাফেরা করায় ঝুকি রয়েছে। গতকাল দুজন মারা গেছে। এ অবস্থায় আমাদের সিনিয়র আইনজীবীগন আমাদের পাঠিয়েছেন তারা আসতে পারবেননা সে কথা জানানোর জন্য।  তাই মাওলানা সাঈদীর  বিচার কার্যক্রম আজ মুলতবি করা হোক।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এসময় বলেন, না, আজ  বিচার কার্যক্রম  শুরু করা হবে। আপনারা সামনে এসে বসেন। দেখেন আমরা কি করি।

এসময় অপর জুনিয়র আইনজীবী সাজ্জাদ আলী চৌধুরী মুলতবি আবেদন ট্রাইব্যুনালের কাছে পেশ করেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্যান্য জুনিয়র আইনজীবীরাও মুলতবি বিষয়ে  কথা বলেন। এসময় মাওলানা  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও কঠগড়ায় দাড়িয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে বেশ কিছুক্ষন কথা বলেন।
এরপর আদালত মুলতবি আবেদন খারিজ করে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন সাক্ষ্য প্রদান শুরু করার জন্য। তখ:ন সকাল ১০টা ৫৫ মিনিট।
এসময় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবীরা বলেন, যেহেতু আমাদের সিনিয়র আইনজীবী কেউ নেই তাই আমরা তো  কোর্ট এবং আমাদের মক্কেলকে কোন ধরনের সাহায্য করতে পারছিনা। এ অবস্থায় সাক্ষ্য গ্রহণ চললে আসামী প্রিজুুডিস হবেন। তাই তারা আদালতের অনুমিত চান কোর্ট থেকে চলে যাবার জন্য।
বিচারপতি নিজামুল হক এসময় উচ্চস্বরে “নো” বলেন। তিনি তাদের বলেন “টেক ইউর সিট”।

সাক্ষ্য  গ্রহন দুই তিন মিনিট চলার পর আবারো মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবীরা দাড়িয়ে  চলে যাবার অনুমতি চান। তখন বিচারপতি নিজামুল হক   আবারো উচ্চস্বরে বলেন, “ইউ শ্যাল নট লিভ দি রুম উইদাউট পারমিশন অব ট্রাইব্যুনাল।”
এভাবে  জুনিয়র আইনজীবীরা পাঁচবার কোর্ট রুম ত্যাগের জন্য উঠে দাড়ান এবং চলে যাবার অনুমিত চান। কিন্তু তাদের কোর্টরুম ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়নি।

মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আজ পাঁচজন জুনিয়র আইনজীবী কোর্টে আসেন। তারা হলেন, হাসানুল বান্না সোহাগ, আবু বকর সিদ্দিক, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী, আমিনুল হক এবং গাজিী এম এইচ তামীম। এদের মধ্যে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মাত্র দুজন আইনজীবীরা ওকালাত নামা রয়েছে। বাকীরা সিনিয়র আইনজীবীদের সহকারী  হিসেবে ডিফেন্স টিমের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য চলাকালে এসব জুনিয়র আইনজীবীগন মাঝে মাঝে চলে যাবার জন্য  বেঞ্চে বসা অবস্থা থেকে দাড়িয়ে থাকেন। সাজ্জাত আলী চৌধুরী  বলেন, মাই লর্ড প্রতিদিন আমরা  ট্রাইব্যুনালে আসি । কিন্তু আজ মনে হচ্ছে জেলখানায় আছি।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের কাছে জবানবন্দীর কপি নেই।  সিনিয়রদের কাছে থাকে এসব কপি। তাই যেহেতু আমারা কোর্টকে সহায়তা করতে পারছিনা তাই আমাদের এখানে থাকা এবং না থাকা উভয়ই সমান।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, কেন আপনাদের কাছে কপি নেই, কার কাছে থাকে বা না থাকে  সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আপনাদের কোর্টরুম লিভ করতে দেয়া হবেনা। আপনারা এসিস্ট করতে পারছেন কি পারছেননা সেটাও আমাদের দেখার বিষয় নয়। আপনারা বসেন। কথা বলবেনা। এসময় বেশ কিছুক্ষন তারা পাঁচজন দাড়িয়ে থাকেন। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য  গ্রহনও চলতে থাকে।
এসময় হাসানুল বান্না বলেন, অনেক্ষন তো কোর্ট চলল মাই লর্ড এবার মুলতবী করা হোক।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আর একটু বসেন। শেষ করে দেব।
বিচারপতি নিজামুল হক এরপর বলেন, আজ তদন্ত কর্মকর্তার জবাবনবন্দী  কোজ করব। এরপর জেরার জন্য তারিখ দেব। আজই তার জেরা শুরু করতাম। কিন্তু যেহেতু আপনাদের সিনিয়র আইনজীবী নেই তাই আগামীকাল জেরা শুরু করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি বলেন, পরবর্তীতে  যদি তদন্ত কর্মকর্তার আরো কিছু যোগ করার থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী সে ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আজই তার জবানবন্দী কোজ করতে হবে।
বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর জুনিয়র আইনজীবীদের প্রতি বলেন, ভাল হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে আপনারা জেরা শুরু করেন। তারপর মুলতবি করা হবে।  আজ যদি আপনারা একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা শুরু করেন তাহলে আর নতুন করে  তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্যে যোগ করার  সুযোগ থাকবেনা। তা না হলে কাল আবার তার বলার সুযোগ  থেকে যাবে।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সে সুযোগটি তাদের জন্য খোলা থাক এটাই আমার হাম্বল সাবমিশন। আমাদের সিনিয়র আইনজীবীদের উপস্থিতিতেই তার  জবানবন্দী কোজ করা হোক।
বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী আজই কোজ করা হোল। কাল (বুধবার) থেকে জেরা শুরু হবে।
তখন আবু বকর সিদ্দিক বলেন তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী  কোজ না করা বিষয়ে আমার আবেদনের কি হল।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলনা। জবাববন্দী আজই কোজ। কাল জেরা শুরু হবে।
তখন  আবু বকর সিদ্দিক  তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শুরুর জন্য কমপক্ষে একসপ্তাহ সময় চান।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  কাল আপনাদের সিনিয়র আইনজীবীরা আসুক এবং তারাই এসে এ সময়ের আবেদন করুক। তখন দেখা যাবে।

দুপুর ১২টার  একটু পরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষ হলে আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের   বলেন, আমাদেরকে কোর্টরুম ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে বসে ছিলাম। আমরা এসেছিলাম সিনিয়র আইনজীবীরা আসতে পারবেননা সেকথা জানাতে এবং মুলতবী আবেদন দিতে। কিন্তু আমাদের বসিয়ে রেখে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেয়া হল। আমরা  মাননীয় আদালতকে বলেছিলাম যে, আমরা তো কোন এসিস্ট করতে পারছিনা। আমাদের  থাকা এবং না থাকা সমান ।  আমাদের চলে যেতে দেয়া হোক। কিন্তু আমাদের যেতে দেননি কোর্ট।

ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে আমরা এটা  আশা করিনি-মিজানুল ইসলাম:
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন,  আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই আমরা আমাদের কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবীদের পাঠিয়েছিলাম আমরা আসতে পারছিনা তা জানানোর  জন্য। কিন্তু সিনিয়র আইনজীবীদের অনুপুিস্থতিতে এভাবে তদন্ত  কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ  অত্যন্ত দু:খজনক, হতাশাব্যঞ্জক এবং ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। জুনিয়র আইনজীবীদের আটকে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আরো দুর্ভাগ্যের বিষয়। ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে আমরা এটা আশা করিনি।

মিজানুল ইসলাম বলেন, গত বৃহষ্পতিবার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পরের সোমবার তারিখ দেন আদালত। আমরা ধরে নিয়েছি রোববার হরতালের কারনেই ঐদিন তারিখ রাখা হয়নি। সোমবার কোর্ট বসলে সেদিনও আমরা যেতে পারিনি হরতালের কারনে এবং  মাননীয় আদালত ঐদিন মুলতবি করেন। আমরা আশা করেছিলাম আজো (মঙ্গলবার) আমাদের আবেদন গ্রহণ করা  হবে। কিন্তু হলনা।
মিজনুল ইসলাম বলেন আজ আদালতে আরো কয়েকটি মামলা ছিল। মাওলানা নিজামী, মুজাহিদ এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর  মামলা। তাদের কোন আইনজীবী আসেননি এবং সে মামলাগুলোর কার্যক্রমও চলেনি। কিন্তু সাঈদী সাহেবের ক্ষেত্রে কি এমন হল যে, আজ  তার মামলার কাজ চালাতেই হল?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন