বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় প্রসিকিউশন সাক্ষীদের আনতে পারেনি

              
         মেহেদী হাসান,   ২৮/৩/২০১২, বুধবার
          মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ  ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, সাক্ষীগন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় প্রসিকিউশন তাদেরকে আদালতে আনতে পারেনি।  অনুপস্থিত এসব সাক্ষীর যে জবানবন্দী জমা দেয়া হয়েছে তা তদন্ত কর্মকর্তার মনগড়া বক্তব্য। সাক্ষী হাজির না করা বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যে কারণ দেখিয়েছেন তা বানোয়াট এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।
          ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আদালতে  কয়েকজন সাক্ষীর বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, তারা এলাকায় আছেন, স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন। তাছাড়া শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচ, মেজর জিয়াউদ্দিন এর মত নেতৃস্থানীয় সাক্ষীগন কেন আসবেননা সে বিষয়ে কারণ দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছেন।  এসব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে টিভিতে দেখা যাচ্ছে। ব্যরিস্টার  রাজ্জাক বলেন, সম্ভবত তারা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে চাচ্ছেননা। সে কারনে তাদের হাজির করা হয়নি।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয়  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  ৪৬ জন  সাক্ষীকে  হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই  ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক। ৪৬ জন সাক্ষীর বিষয়ে ১৯ জন সম্পর্কে আবেদনে বলা হয়েছে তাদের অনেকে (১৪) জন  আসামীর পক্ষের  সন্ত্রাসীদের হুমিকর কারনে আত্মপোগনে চলে গেছে। বাকীদের কেউ   কেউ নিখোঁজ। কেউ ভারতে পালিয়ে গেছে। কেউ অুসস্থ এবং স্মরনশক্তি লোপ পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এ আবেদনের বিরোধীতা করে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার সাথে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভির আল আমীন।  এখানে  লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হল।

          প্রসিকিউশনের আবেদনের এক নং  প্যারাগ্রাফে বর্নিত বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত ও বানোয়াট। তদন্তকারী কর্মকর্তা ৪৬ জন সাীর বক্তব্য রেকর্ড করেছেন মর্মে বক্তব্য সঠিক নয়। বাস্তবে তিনি নিজে এই মনগড়া বক্তব্য তৈরি করেছেন। মূলত সাীগন আসামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে রাজী না হওয়ায় প্রসিকিউশন তদেরকে আনতে পারে নাই। এ সংক্রান্তে বিগত ২৪ মার্চ দৈনিক সংগ্রামে, ২৫ মার্চ দৈনিক আমার দেশ এবং ২৭ মার্চ দৈনিক নয়াদিগন্তে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। প্রসিকিউশনের দাবীকৃত সাী না আনার ৫টি কারণ ই বাস্তবতা বিবর্জিত তাই পরিত্যাজ্য।

প্রসিকিউশনের দাবীকৃত ৫ টি কারনের কোনটিই আইনের  ধারা ১৯ (২) এর আওতাভূক্ত নয়।
          কারণগুলো  হল  :  (১) রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  দাবী করছে না যে, তাদের ৪৬ জন সাক্ষী মৃত। যেটি ধারা ১৯(২) এর আওতায় পড়ার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়।  (২)    ১নং ক্রমিকে বর্ণিত ঊষারাণী মালাকার সম্পর্কে প্রসিকিউশন বলেছেন যে, সে অসুস্থ এবং তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে । ভ্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা  এর সমর্থনে প্রমানাদি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

         এমনকি ঊষা রাণী মালাকারের বক্তব্য স্মৃতি লোপ পাওয়ার পূর্বে না পরে রেকর্ড করা হয়েছে তাও বলা হয়নি। আইনত মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
          (৩)    সুখরঞ্জন বালীর নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে প্রসিকিউশন বলেছেন যে, সুখরঞ্জন বিগত চার মাস যাবৎ নিখোঁজ। কিন্তু তাঁরা তাদের দাবির সমর্থনে একটি প্রমাণও  দিতে পারেননি।  যদি সত্যিকার অর্থে উক্ত ব্যক্তি এমন দীর্ঘ সময়ের জন্য নিখোঁজ থেকে থাকতেন তবে তার পরিবার বর্গ নিশ্চয়ই থানায় সাধারণ ডায়েরী করতেন। কিন্তু এ ধরনের কোন প্রমাণাদি প্রসিকিউশন প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপরোন্তু বিগত ২৭ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্ত’র এক রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যে, উক্ত সাক্ষী মিথ্যা বক্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। সম্ভবত সে কারণেই তাকে সাক্ষী দিতে আনা হয়নি।  (৪)     আশিষ কুমার, সুমতি রাণী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রি সম্পর্কে প্রসিকিউশনের বক্তব্য হচ্ছে, তারা বিগত ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা নিখোঁজ নয়, কারন জানুয়ারী মাসে তাদেরকে ঢাকায় আনা হয়েছিল এবং প্রসিকিউশনের তদারকিতে প্রায় এক/দেড় মাস অবধি রাখা হয়, এমনকি একপর্যায়ে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে উক্ত সাক্ষীদের হাজিরাও প্রদান করেন।
         গত ২ ফেব্রুয়ারী প্রসিকিউশন আদালতকে জানায় যে, গতকাল সাক্ষীগণ তাদের আত্মীয়ের সাথে দেখা করবে বলে বের হয়ে আর ফেরৎ আসেনি। এ মর্মে গত ২৭ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে উক্ত সাক্ষীদের নিকট আত্মীয়দের বক্তব্য উদ্ধৃত্ত করে বলা হয় যে, তারা প্রসিকিউশনের হেফাজতে এক থেকে দেড় মাস  ছিল। তারা  মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওয়ায় তাদেরকে আনা হয়নি।  

          (৫)সাক্ষীদের ক্রমিক ৬ থেকে ১৯ সম্পর্কে প্রসিকিউশনের বক্তব্য হচ্ছে, “আসামীর পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়ীতে গিয়া হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হইয়া সাক্ষীগণ আত্মগোপন করিয়াছে বিধায় তাহাদের খুজিয়া পাওয়া যাইতেছে না”। উক্ত দাবী সম্পূর্ণ অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রসিকিউশন পক্ষ তাদের উক্তরূপ দাবীর প্রমাণে কোনরূপ প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি তাঁরা একটি প্রমাণও প্রদান করতে পারেনি। মূলত আসামী দরখাস্তকারীর কোন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ নাই, যারা সাক্ষীদের হুমকী/ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের তীব্র নজরদারী থাকা সত্ত্বেও আসামীর পক্ষে উক্তরূপ হুমকী /ভয়ভীতি প্রদর্শন করা অসম্ভব। সরকার সমর্থিত দল পিরোজপুরে ক্ষমতাসীন থাকায় কোন ব্যক্তি সাক্ষীদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে সাহস করবে না। উপরোন্তু আসামী পক্ষের আইনজীবিগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে কিছু লোক তাঁদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ও ফিরে যেতে বলে। সম্ভবত উক্ত ৬ থেকে ১৯ নং সাক্ষীগণ মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় প্রসিকিউশন ইচ্ছাকৃতভাবে তাদেরকে আদালতে হাজির করেননি। উক্ত সাক্ষীদের কেউই পলাতক নয়। উদাহরণস্বরূপ এ্যাডভোকেট গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল নিয়মিত স্থানীয় আদালতে প্রাকটিস্ করছেন। সাাক্ষী খলিলুর রহমান শেখ হাসিনা একাডেমী স্কুলের নাইট গার্ড হিসেবে নিয়মিত স্কুলে হাজিরা দিচ্ছেন।            

    ২০ থেকে ৪৬ নং সাক্ষী সম্পর্কে প্রসিকিউশন কি কারণে তাদেরকে আদালতে উপস্থাপন করা যাচ্ছে  না সে মর্মে কোনরূপ কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি উক্ত সাক্ষীগণ আদালতে আসতে অপারগ মর্মেও কোনরূপ দাবী করা হয়নি। সাক্ষীগণ সমাজে নেতৃস্থানীয়  ও সম্মানিত ব্যক্তি। এমনকি তাদের কেউ কেউ নিয়মিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান করছেন সুতরাং তাদেরকে অবশ্যই আনা সম্ভব। সম্ভবত তারা সাক্ষ্য দিতেই অস্বীকৃতি জানায় তাই প্রসিকিউশন তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেনি।

          আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ১৯(২) ধারা শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তি অথবা যে ব্যক্তির উপস্থিতি অকারণে অযথা দীর্ঘ বিলম্ব অথবা অকারণ অত্যাধিক ব্যয় ব্যতিত নিশ্চিত করা সম্ভব নয় তার 
          ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অন্য কোন অবস্থায় যথা হারিয়ে যাওয়া, আতœগোপন করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।  সুতরাং নিখোঁজ ব্যক্তি সম্পর্কে ধারা ১৯(২) প্রযোজ্য নয়।

    প্রসিকিউশন পক্ষের দরখাস্তের প্যারা-২ এ বর্ণিত বক্তব্য সঠিক নয় বিধায় বাতিলযোগ্য । তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৮(৬) ধারা অনুসারে সাক্ষীদের বক্তব্য সঠিকভাবে রেকর্ড করেননি। রেকর্ডকৃত বক্তব্য সমূহ জব্দকৃত মালামাল, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ছবি ও অন্যান্য বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং উক্ত সাক্ষীদের বক্তব্য কোনভাবেই দালিলিক প্রমান হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

          প্রসিকিউশনের দরখাস্তে প্যারা-৩ এ বর্ণিত “যেহেতু মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট অন্যান্য যে সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন তাহাদের মাননীয় আদালতে প্রদত্ত বক্তব্য এবং যে সমস্ত সাক্ষীগণ আদালতে উপস্থিত হন নাই, তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট তাহাদের প্রদত্ত বক্তব্য সমূহ একই মানের এবং একই প্রকারের বিধায় উহা সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করিতে আইনগত কোন অসুবিধা নাই” মর্মে বক্তব্য সঠিক নয় এবং সর্বৈব পরিত্যাজ্য।
উপরোন্তু প্যারা-৩ এ বর্ণিত “উক্ত সাক্ষীদের মাননীয় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করানোর চেষ্টা শুধু কালক্ষেপন ও ব্যয়বহুল হইবে এবং সেই কারণে উক্তরূপ প্রচেষ্টা যুক্তিসংগত নয়” মর্মে বক্তব্য সঠিক নয় এবং পরিত্যাজ্য। 

৫নং প্যারায় বর্ণিত “উল্লেখিত সাক্ষীদের জবানবন্দী, যাহা তদন্তকারী কর্মকর্তা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন তাহা সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ না করিলে ন্যায় বিচার ব্যাহত হইবে এবং প্রসিকিউশনের ক্ষতি হইবে” মর্মে বক্তব্য আদৌ সঠিক নয় এবং পরিত্যাজ্য। বাস্তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক লিখিত জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করলেই বরং আসামী পক্ষ ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হবে।          

তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক রেকর্ডকৃত জবানবন্দী নি¤œলিখিত কারণে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ক) ইতিমধ্যে পরীক্ষিত বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার কোর্টে প্রদত্ত সাক্ষ্যে  তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দেয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
খ) স্বাক্ষী রুহুল আমীন নবীন কোর্টে প্রদত্ত সাাক্ষ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট দেয়া তার জবানবন্দী অত্র মামলার তদন্ত শুরুর আগেই দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
গ) আদালতে এখন পর্যন্ত সে সমস্ত স্বাক্ষীর জবানবসন্দী গৃহীত হয়েছে তাদের অধিকাংশেরই বক্তব্য তদন্তকারী কর্মকর্তার লিখিত জবানবন্দীর সাথে কোন মিল নাইা।
ঘ) তদন্তকারী কর্মকর্তার লিখিত জবানবন্দী যে মনগড়া তার উৎকৃষ্ট প্রমান হল, বহু স্বাক্ষীর জবানবন্দী একে অপরের বক্তব্যের সাথে দাড়ি কমা সহ মিল আছে।

ট্রাইব্যুনালে নয়া দিগন্ত রিপোর্ট প্রসঙ্গ 

গত ২৭ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত “মা বলেছেন, মরার আগে হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলতে পারবনা। সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় হাজির করা গেলনা সাক্ষীদের।” শীর্ষক খবরের জন আজ  ক্ষোভ  প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তব্যের সমর্থনে নয়া দিগন্তের উক্ত রিপোর্টটি আদালতে দাখিল করেন।  ব্যারিস্টার  তানভির আল আমিন লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানোর সময় নয়া দিগন্তের রিপোর্টের রেফারেন্স দেন এবং কিছু অংশ পড়ে শোনান। সাক্ষীদের মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য টরচার করার অভিযোগ সংক্রান্ত অংশ  পড়ার সাথে সাথে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, কে লিখেছেন এই রিপোর্ট। এ সময় বিচারপতি  একেএম জহির আহমেদ বলেন, কিভাবে এ ধরনের রিপোর্ট হতে পারে বিচারাধীন অবস্থায়।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, প্রসিকিউশন  জানিয়েছেন সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছেনা। আর উনি সাক্ষীদের সাথে টেলিফোনে কথা বলে তাদের বক্তব্য ছেপে দিয়েছেন। উনি সাক্ষী আনুক।
এ পর্যায়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক আমার দেশ এবং দৈনিক সংগ্রামসহ অন্যান্য পত্রিকায় সাক্ষীদের নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের উদাহরন দেন। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,

কালের কন্ঠের রিপোর্টে কি সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়  আছে? ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আছে।
বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন,  সংগ্রাম এবং আমার দেশের রিপোর্ট নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তারা একটা সিম্পল রিপোর্ট করেছে। কিন্তু নয়া দিগন্ত কিকরে এভাবে লিখল।
তিনি বলেন, সাক্ষীর জবানবন্দীতে যা নেই  এমন বক্তব্য লেখা হয়েছে  সাক্ষীর সাথে টেলিফোনে কথা বলে। হুবহু সাক্ষীর কথপোকথন তুলে দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আশিষ কুমার মন্ডল কি জবানবন্দী দিয়েছেন তাতো আমাদের সামনে আছে। যে বিষয়ে তিনি জবানবন্দীতে বলেননি সে বিষয়ে সাক্ষ্য  দেয়ার  জন্য কেন চাপ সৃষ্টি করা হবে? 
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  অনুসন্ধানী রিপোর্টের মানে এই নয় যে, তারা গোপন ডকুমেন্ট পাবলিকের সামনে হাজির করবে। তাদেরকে একটা জায়গায় থামতে হবে। আমরা কোন কোন সাংবাদিককে এর আগে সতর্ক করেছি। একটি জাজমেন্ট দিয়েছি। আমরা বলেছি আমাদের সমালোচনা করা যাবে। কি লেখা যাবে কি যাবেনা তা বলেছি। আমরা  আশা করেছিলাম আমাদের আদেশ মান্য করা হবে।
বিচারপতি নিজামুল হক প্রশ্ন করেন,  প্রসিকিউশন থেকে  বলা হয়েছে এই এই কারনে সাক্ষী হাজির করা যাচ্ছেনা। নয়া দিগন্তের এজেন্ট সাক্ষীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে  প্রসিকিউশন যে কারণ দেখিয়েছে তা সত্য কি-না। এটা একজন সাংবাদিকের কাজ কি-না। এটা করার অধিকার তার আছে কি-না।
এ বিষয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  উনি (নয়া দিগন্তের রিপোর্টার) জজ হয়ে গেছেন। আমরা আসল কাজ বাদ দিয়ে পত্রিকা পড়া শুরু করি।
এসময় অপর বিচারপতি আনোয়ারুল হক আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন,  যে অবস্থা হচ্ছে তাতে আপনাদেরও আর দরকার নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন