বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

সাঈদী নামে রাবির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মামলাও চালানো হয়েছে মাওলানা সাঈদীর নামে

মেহেদী হাসান, ২৬/৪/১২, বৃহষ্পতিবার
রাজশাহীর মতিহার থানায় ২০০৯ সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলার আসামীর নাম দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র।  বয়স ২৬। কিন্তু নামের মিল থাকায় রাবির এই ছাত্রের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটিও চালিয়ে দেয়া হয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামে। 

আজ  দ্বিতীয় দিনের মত মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  মিজানুল ইসলাম জেরা করেন তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে। গতকাল জেরার সময় এ তথ্য বের হয়ে আসে।
তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিন এর আগে জবানবন্দী প্রদানের সময় ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিলেন  মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে   বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ১৭ টি মামলা রয়েছে। এই ১৭টি মামলার মধ্যে রাজশাহীর মতিহার থানার উক্ত মামলাটিও  অন্তর্ভুক্ত। 

আজ জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেন তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ১৭টি মামলা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে মাত্র দুটি মামলা ছাড়া অন্য ১৫টি মামলার সাথে বর্তমান মামলার কোন সম্পর্ক নেই।
মিজানুল ইসলাম বলেন, মাওলানা সাঈদীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টতা  না থাকা সত্ত্বেও এসব মামলা সাঈদীর নামে উল্লেখ করেছন।

জেরা:
আইনজীবী :  আসামী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে অত্র মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের সাথে  তদন্তের অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন আপনি ।  সেই প্রতিবেদনে অন্যান্য মামলার সাথে  উল্লেখিত দুইটি মামলায়ও (পিরোজপুরের দুটি মামলা)  আসামী দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদী গ্রেফতার আছেন মর্মে উল্লেখ  করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা : হ্যা।
আইনজীবী :  আপনি জবানবন্দীর সময় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা থাকার কথা বলেছেন।  ১৭টি মামলার মধ্যে ১নং ক্রমিকে বর্ণিত কদমতলী থানার মামলাটির এজাহারকারী ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুরুল মোর্শেদ এস,বি, ঢাকা ।
তদন্ত কর্মকর্তা : আমার জানা নেই। 
আইনজীবী : কদমতলীর ঐ মামলায় এজাহারকারী কি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন?
তদন্ত কর্মকর্তা : আমি পিরোজপুরের দুটি মামলা পর্যালোচনা করেছি তদন্তের সময়।  ১৭টি মামলার মধ্যে অন্য মামলা পর্যালোচনা করিনাই ।
আইনজীবী : ঐ ১৭টি মামলায়  সংশ্লিষ্ট অফিসাররা যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন আপনি তার সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা : না।
আইনজীবী : ১৭টি মামলার মধ্যে ১৫নং  মামলাটি কোন ধারার বা  কোন আদালতে বিচারাধীন তাহা উল্লেখ করেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা : না।
আইনজীবী : ১৩, ১৪ এবং ১৬ নং ক্রমিকের জি.আর মামলাগুলি বাদে  অন্যান্য জি.আর মামলায় আসামী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নাম এজাহারে নাই এবং  এখন পর্যন্ত পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি। পরবর্তীতে  আসামীকে  ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়রানি করার জন্য গ্রেফতার দেখানো হইয়াছে  তা জেনেও আপনি সত্য গোপন করছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা : সত্য নয়।
আইনজীবী :  উত্তরা থানার মামলার এজাহারে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের নাম নাই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় নাই এবং পুলিশ রিপোর্টও দাখিল করা হয়নি।  লোকসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উক্ত মামলার কথা আপনি আসামীর বিরুদ্ধে উল্লেখ করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা : সত্য নয়।
আইনজীবী :  ১৬ নং মামলাটি দায়ের করা হয়  রাজশাহীর মতিহার থানায়।  মামলা নং-২০ তারিখ ২৫/০৫/২০০৯ইং। এই মামলার আসামীর নাম    দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদী । তিনি   রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র।  তার বয়স ২৬ বছর। এটা জেনেও আপনি মাওলানা সাঈদী সাহেবকে   ঐ মামলার আসামী বলে চালিয়ে দিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা : এই মামলা সম্পর্কে আমার কোন ধারণাও নেই পর্যালোচনাও করিনি।  মামলাটির সূত্রসহ অন্যান্য সূত্র সম্বলিতএকটি প্রতিবেদন মাহবুব হোসেন পি.পি.এম, এডিশনাল ডি.আই.জি (রাজনৈতিক) পক্ষে এডিশনাল আই.জি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা এর নিকট হতে প্রাপ্ত হই। সূত্রে উল্লেখিত মামলাগুলি আন্তর্জাতিক অপরাধের কোন ঘটনা নয়, কাজেই ক্রমিক নং-৬ ও ৭ এ বর্নিত মামলা দুটি ছাড়া আমি আর কোন মামলা পর্যালোচনা করি নাই বিধায় মামলার গর্ভে কি আছে তাহা আমার জানা নাই। আমি রাজশাহীর মতিহার থানায় মামলা নং-২০ তারিখ ২৫/০৫/২০০৯ইং সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমি দেখি নাই ও পর্যালোচনা করি নাই।

আইনজীবী : তাহলে আপনি এই মামমলা তদন্তকালে মতিহার থানার ঐ মামলার মূল রিপোর্ট দেখেননি এবং পর্যালোচনাও করেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা :  হ্যা :
এ পর্যায়ে মতিহার থানার মামলাসহ আরো কিছু মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, যে মামলা তিনি পর্যালোচনা করেননি বলে  স্বীকার করেছেন সে মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করা কতটা সঙ্গত এবং তার উত্তরই বা  তিনি কি দেবেনে। এর জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, আইন অনযায়ী  তদন্ত কর্মকর্তা এসব মামলা পর্যালোচনা করতে বাধ্য। পর্যালোচনা ছাড়া কোন ডকুমেন্ট, কাগজপত্র আদালতে জমা দেয়ার এখতিয়ার তার নেই। তিনি একজন দায়িত্বশীল অফিসার। তিনি যা বলবেন এবং আদালতে জমা দেবেন তা দায়িত্ব নিয়েও করবেন এটাই ধরে নিতে হবে।  তিনি পর্যালোচনা না করে কিভাবে ঐ সব মামলা বিষয়ে জবানবন্দীতে উল্লেখ করলেন। আমার বিবেচনায় তিনি সব মামলাই পর্যালোচনা করছেন কিন্তু এখন সত্য গোপন করছেন।
ট্রাইব্যুনাল বলেন আপনি সেই প্রশ্ন তাকে করতে পারেন যে, আপনি  মামলাগুলোর বিষয়বস্তু জানা সত্ত্বেও সত্য গোপন করছেন।
আইনজীবী :  ১৭টি মামলার মধ্যে ক্রমিক নং-১ এর মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯, ১৫নং ক্রমিকের মামলাটি কর ফাঁকি মামলা ।  ৯, ১০, ১৩ এবং ১৭নং মামলাগুলির কোন ধারায় করা হয়েছে তা আপনি উল্লেখ করেননি এবং জানেনও না।  বাকী  মামলাগুলি সবই দন্ডবিধির মামলা।

তদন্ত কর্মকর্তা : সত্য।
আইনজীবী : ১৭টি মামলার মধ্যে যেগুলো  সি.আর মামলা তা বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের করা হয়েছে।  সি.আর মামলাগুলি যারা দায়ের করেছেন তারা  আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
তদন্ত কর্মকর্তা :  সি আর মামলাগুলি বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের করা হয়েছে কি-না আমার জানাে  নেই। আর মামলার  বাদী আসামীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইহা সত্য নয়।      
এ পর্যন্ত জেরা চলার পর মাওলানা সাঈদীর বিচার ৭ মে পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ মুলতবি আদেশ দেন। জেরার সময় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন মনজুর আহমদ আনছারী, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার তানভীর আল আমিন, শিশির মনির, শাহজাহান কবির, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবী।

সংগ্রাম সম্পাদক রিপোর্টারকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা :
দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক প্রকাশক আবুল আসাদ এবং  ফেনী সংবাদদাতা  একেএম আব্দুর রহিমকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমান করা হয়েছে ।  অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাভোগ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল  জরিমানা সংক্রান্ত এ আদেশ প্রদান করেন।  এছাড়া এ দুজনকে গতকাল  কোর্ট চলাকালীন সময় পর্যন্ত কয়েক মিনিটের প্রতিকী দণ্ডভোগের আদেশও দেয়া হয়েছে। আদেশ দেয়ার সাথে সাথেই  তিন বিচারপতি কোর্ট থেকে নেমে যান এবং এর সাথে সাথেই দণ্ডভোগের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।

চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, বিচারপতি আনোয়ারুল হক এবং বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ সমন্বয়ে  গঠিত  তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল প্রথমবারের মত কোন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তির আদেশ দিলেন ।

গত ২ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত “পুলিশকে দেয়া জবানবন্দী সাক্ষ্য  হিসেবে গ্রহনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফেনীর আইনজীবীগণ” শীর্ষক খবরের  প্রেক্ষিতে গতকাল ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।  আদালত আদেশে বলেছেন খবরটি উচ্চ মাত্রায় আদালত অবমাননাকর ছিল এবং সংগ্রাম সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার এর দায় এড়াতে পারেননা। ফেনী বার সমিতির ১০ জন আইনজীবীকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ হিসেবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে  আদালত অবমাননার শাস্তি থেকে।

দৈনিক সংগ্রামের ২ এপ্রিলের রিপোর্ট এর প্রেক্ষিতে আদালত  ফেনি বারের ১২ জন আইনজীবীসহ সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক এবং ফেনী সংবাদদাতাকে গত ১৬ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল তলব করেন। ঐদিন আবুল আসাদ নি:শত ক্ষমা প্রার্থনা করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।

ফেনী বারের ১২ জন আইনজীবীর বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে  ২ এপ্রিলের  দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত রিপোর্টে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে দলীয় ট্রাইব্যুনাল আখ্যায়িত করা হয়েছে  । বিবৃতিতে আইনজীবীরা বলেন,  “এই ট্রাইব্যুনালে কোন মানুষ ন্যায় বিচার পাবেনা।” বিবৃতিতে  আইনজীবীগন একই সাথে ১৫ জন সাক্ষীর বক্তব্যকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ না করে তা প্রত্যাখ্যান এবং দলীয় ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে বন্দী জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবি  করেছেন। 

১৬ এপ্রিল ফেনী বারের  আইনজীবীগন আদালতে এসে বলেন তারা এ জাতীয় কোন বিবৃতি দেননি। সংগ্রামের ফেনী সংবাদদাতা বলেন তার নাম করে অন্য কেউ  উক্ত রিপোর্ট পত্রিকায় পঠিয়েছেন। সংগ্রাম সম্পাদক বলেন তিনি ঐদিন অফিসে দায়িত্ব পালন করেননি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন