বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

দেলোয়ার শিকদার নামে রাজাকার থাকার কথা স্বীকার করলেন সাক্ষী মধুসূদন: স্ত্রী ধর্ষকের পরিচয় বলেননি স্পষ্ট করে

মেহেদী হাসান, ১/২/২০১২
আজ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  আদালতে সাক্ষ্য দিলেন ৮১ বছর বয়স্ক আলোচিত সাক্ষী  মধুসূদন ঘরামী। তিনি রাজাকার বাহিনী  কর্তৃক ১৯৭১ সালে  তার স্ত্রীকে ধর্ষন বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ধর্ষন ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেননা  এবং রাজাকার বাহিনীর সাথে আর কারা ছিল তাও জাননেনা বলে জানিয়েছেন আদালতকে।

মধুসূদন বলেন, “আমার স্ত্রী আমাকে পরে বলেছে, আমাকে যে মুসলমান বানিয়েছে সে এসেছিল”। মধুসূদন বলেন, আমার স্ত্রীর একটি বাচ্চা হয়েছিল  এবং মানুষের গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে সে ভারতে চলে যায়। এরপর আর তার সাথে দেখা হয়নি।

দেলোয়ার শিকদার রাজাকার থাকার কথা স্বীকার :
দেলোয়ার শিকদার, পিতা রসুল শিকদার নামে পিরোজপুরে  কুখ্যাত একজন রাজাকার থাকার কথা স্বীকার করেছেন সাক্ষী  মধুসূদন ঘরামী। সে গনরোষে পিরোজপুর নিহত হয়ে থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন আদালতকে।

এর আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিতে আসা  অধিকাংশ সাক্ষীকে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা রাজাকার দেলোয়ার শিকদার, পিতা রসুল শিকদার  প্রসঙ্গে প্রশ্ন  করলে তারা দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন এই নামে  পিরোজপুরে কোন রাজাকার ছিলনা। এই নামের কোন রাজাকারকে তারা চেনেননা।
পূর্বের সাক্ষীরা   বলেছেন,  দেলোয়ার শিকদার নামে তারা যে রাজাকারকে চেনেন তিনি জীবিত আছেন এবং বর্তমানে  তিনি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নামে পরিচিতি। তার পিতার নাম ইউসুফ সাঈদী। এজন্য তারা  আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় ‘দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী’ এভাবে উচ্চারন করেছেন নামটি।
তবে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা রাজাকার দেলোয়ার শিকদারের  পিতৃ পরিচয় (রসুল শিকদার ) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে প্রশ্ন  করলে  প্রবীণ সাক্ষী মধুসূদন ঘরামী বলেন,  এই নামে একজন  রাজাকার ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার অপকর্মের কারনে মুক্তিযোদ্ধা  এবং এলাকাবাসীর গণরোষের শিকার হয়ে পিরোজপুরে নিহত হয়ে থাকতে পারেন তিনি।

স্ত্রী ধর্ষকের পরিচয় স্পষ্ট করে বলেননি
সাক্ষী  মধুসূদন ঘরামী আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে রাাজাকার বাহিনীর হাতে তার স্ত্রী  শেফালী ঘরামী ধর্ষনের শিকার হন।  এ ঘটনার পর তার একটি বাচ্চা হলে মানুষের গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে সে ভারতে চলে যায়। এরপর আর  তার সাথে দেখা হয়নি।
সাক্ষী মধুসূদন ঘরামী জবানবন্দীতে জানান, স্ত্রীকে ধর্ষনের ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেননা। তার স্ত্রীকে কে ধর্ষন করেছিল সে বিষয়ে তার স্ত্রীও তাকে নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলেছেন মর্মে  উল্লেখ করেননি তিনি।
রাজাকার বাহিনীর সাথে   কারা এসেছিল তার বাড়িতে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার কাছে নির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে মধুসূদন ঘরামী বলেন, “আমি বাড়িতে ছিলামনা। কারা এসেছিল জানিনা। আমার স্ত্রী  আমাকে পরে বলেছে যে, আমাকে (মধুসূদন)  যে মুসলমান বানিয়েছিল সে এসেছিল। তুমি পালাও।”
কে তাকে মুসলমান বানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীরা এ বিষয়ে জবানবন্দীর সময় জানাতে বললে মধুসূদন বলেন, “দেলোয়ার শিকদার।” 
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের জেরার সময় মধুসূদন ঘরামী জানান, তার স্ত্রীর বাজারে যাতায়াত ছিলনা। চেয়ারম্যান, মেম্বার, পিস কমিটি বা রাজাকার বাহিনীর কাউকে তিনি চিনতেননা।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু তিনি কোন রাজাকার বা পিস কমিটির কাউকে চিনতেননা কাজেই তার স্বামীকে কে মুসলমান বানিয়েছিল তাও তার চেনার কথা নয়।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আজকে যেসব অপকর্মের অভিযোগ আনা হচ্ছে এসব অপকর্ম রাজাকার দেলোয়ার শিকদারই করেছে ১৯৭১ সালে । সে গণরোষে নিহত হয়েছে। মধুসূদন ঘরামী স্বীকার করেছেন  দেলোয়ার শিকদার রাজাকার ছিল।

মধুসূদন ঘরামী জানান, ১৯৭০ সালের আগে তার বড়ভাই মারা যাবার পর তিনি তার মৃত ভায়ের ঘরে ওঠেন। সে ঘরে তার বৌদী থাকত এবং  আজ অবধি তিনি ঐ ঘরে আছেন। তার বৌদী এবং তিনি এক পাকে খান। তার বড় ভাই তার থেকে দুই বছরের  বড় ছিলেন এবং তার বৌদী বয়সে তার থেকে ছোট হতে পারে বলে জানান মধুসূদন। ভাই মারা যাবার পর বৌদীর সাথে ভাইয়ের ঘরে বসবাস, এক পাকে খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করার সময় একজন বিচারপতি একাধিকবার মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীকে বলেন কাদায় নামিয়েননা।

পূর্বে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা আদালতে জবানবন্দী প্রদানের সময় রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীদের পক্ষ থেকে প্রথমে একটি, দুটি প্রশ্ন করে বলা হত ১৯৭১ সালের ঘটনা বিষয়ে, রাজাকার পিস কমিটির অপকর্ম বিষয়ে বা আপনার বাড়ি এবং এলাকা কোন ঘটনার কথা জানা থাকলে তা আদালতে বলেন। এরপর সাক্ষী এক নাগাড় বলে যেতেন। কিন্তু গতকাল সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীরা  শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশ্নের মাধ্যমে জবানবন্দী  প্রদান করান। মধুসূদন বয়স্ক এবং অসুস্থ  হওয়ায় ডাক্তারের উপস্থিতিতে সিকবেডে শুয়ে তার সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়।

জবানবন্দী  গ্রহনের সময় রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবী রানাদাস গুপ্ত তাকে একটি একটি  করে প্রশ্ন করেন এবং তিনি জবাব দেন।

প্রশ্ন আকারে সাক্ষী মধুসূদনের জবানবন্দী
প্রশ্ন : আপনার ভাই নিকুঞ্জ বেঁচে আছেন?
উত্তর : না। ১৯৭০ সালের আগেই মারা গেছে।
প্রশ্ন : বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে?
উত্তর : হ্যা। তারা ভারতে চলে গেছে।
প্রশ্ন : আপনি বিয়ে করেছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কবে বিয়ে করেন মনে পড়ে?
উত্তর : যখন সেনাবাহিনী নামে  এবং লুটপাট শুরু করে তার আগে।
প্রশ্ন : যাকে বিয়ে করেন তার নাম কি?
উত্তর : শেফালী ঘরামী।
প্রশ্ন : আপনার শ্বশুর বাড়ি কোথায়?
উত্তর : সাবেক খুলনা। বর্তমানে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ  থানার কচুবুনিয়া গ্রামে।
প্রশ্ন : আপনার শ্বশুড়ের নাম কি?
উত্তর : শ্রিনাথ শিকদার।
প্রশ্ন : বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কোথায় আসলেন?
উত্তর : হোগলাবুনিয়া আমাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসি।
প্রশ্ন : বিয়ে কোন মাসে কোন সময় করেন বলতে পারবেন?
উত্তর : ফালগুন মাসের শেষে।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ  শুরুর সময় ওখানে কোন কমিটি টমিটি হয়েছিল কি-না বলতে পারবেন?
উত্তর : আমার বিয়ের পরই পিরোজপুরে আগুন দেয় লুটপাট করে।
প্রশ্ন : কোন কমিটি হয়েছিল কি-না?
উত্তর : পিস কমিটি হয়।
প্রশ্ন : কারা করে পিস কমিটি?
উত্তর :  দানেস মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, আতাহার, দেলোয়ার ছিল।
প্রশ্ন : যে দেলোয়ারের নাম বললেন সে ঐ সময় কি করত?
উত্তর : টুকটাক দোকান ছিল। স্থায়ী নয়।
প্রশ্ন : কোথায় দোকান ছিল?
উত্তর : ৪০ বছর আগের কথা। কোথায় দোকান ছিল স্মরন নেই।
প্রশ্ন : দেলোয়ার পরে কোন নামে পরিচয় দেয়?
উত্তর: দেলোয়ার শিকদার।
প্রশ্ন : এই দেলোয়ার শিকদার পরে অন্য কোন পরিচয় নিয়েছিল কি-না।
উত্তর : আগে শুনি নাই। এখন  শুনছি সাঈদী।
প্রশ্ন : এরা আর কোন কমিটি গঠন করেছিল?
উত্তর : রাজাকার বাহিনী গঠন করে।
প্রশ্ন : পিস কমিটি ও রাজাকার বাহিনী কি করেছে?
উত্তর : এরা গ্রামে ঢুকে লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগ করে।
প্রশ্ন : এরা যখন এগুলো করত তখন আপনরা কি করতেন?
উত্তর : তখন আমরা ঘুঘুর চেয়েও ছোট  হয়ে যেতাম। মানুষের সামনে পরতে পারতামনা। পালিয়ে বেড়ামাতম।
প্রশ্ন : আপনাদের হোগলাবুনিয়া গ্রামে কি হয়েছে, আপনি কি দেখেছেন সে সম্পর্কে বলেন।
উত্তর : আমাদের হোগলাবুনিয়া গ্রামে একদিন রাতে নয় জন লোক ধরে যায়। কারা ধরে নেয় তা দেখিনাই। সকালে উঠে খবর পাই নয় জনকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
উত্তর : ঐ নয়জন কারা বলতে পারবেন?
উত্তর : তরনী শিকদার, বানীকান্ত শিকদার, নির্মল শিকদার, হরলাল মালাকার, লালু হাওলাদারের ছেলে।  আরেক বাড়ি থেকে তিন জন ধরে নিয়ে গেল। প্রকাশ শিকদার, তার ছেলে  নির্মল  এবং শ্যালক।
প্রশ্ন: আর কোন ঘটনা ঘটেছে?
উত্তর : এর তিন/চারদিন পর রাজাকার বাহিনী আমার বাড়িতে আসে বিকাল  চারটা সাড়ে চারটার দিকে।
প্রশ্ন : রাজাকারদের সাথে  আর কারা ছিল?
উত্তর : আমি বাড়িতে ছিলামনা। কারা এসেছিল জানিনা। আমার স্ত্রী  আমাকে পরে বলেছে যে, আমাকে যে মুসলমান বানিয়েছিল সে এসেছিল। তুমি পালাও।
প্রশ্ন : রাজাকাররা আপনার স্ত্রীকে কিছু করেছিল কি-না?
সাক্ষীর  প্রতি এটি একটি লিডিং প্রশ্ন বলে এ প্রশ্নের বিষয়ে আপত্তি জানান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। আদালত তখন বলেন এ প্রশ্ন নেয়া যাবেনা। তখন রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবী ভিন্নভাবে প্রশ্নটি করেন।
প্রশ্ন : রাজাকাররা আপনার বাড়িতে আর কিছু করেছিল কি-না?
উত্তর : আমার স্ত্রী আমাকে আরো বলেছে যে, তাকে ধর্ষন করা হয়েছে। অসহ্য  যন্ত্রনা। আমি আর বলতে পারছিনা। আমার চিন্তা করনা। তুমি পালাও।
প্রশ্ন : আপনাকে কে মুসলমান করতে চেয়েছিল?
উত্তর : কৃষ্ণসাহা, গনেশ আর আমি একদিন বাজারের মসজিদে বসে মুসলমান হই। দুই তিন পর কৃষ্ণসাহা মারা যায়। মুসলমান হয়েও বাঁচতে পারলনা। মুসলমান বানানোর পর আমার নাম হয় আলী আশরাফ আর গনেশের নাম হয় আলী আকবর।
প্রশ্ন : কে মুসলমান বানালো?
উত্তর : দেলোয়ার শিকদার আমাদেরকে মুসলমান বানায় এবং বলে তোমরা মুসলমান  হলে বাঁচবে। তা না হলে বাঁচবানা।
প্রশ্ন : পরে মুসলমান ছিলেন?
উত্তর :  না। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে আর মুসলমান থাকিনাই। কাউকে বলিও নাই। অন্য দুই জনের একজন মারা গেছে। আরেকজন ভারতে চলে গেছে।
প্রশ্ন : আপনার স্ত্রী  কোথায়?
উত্তর : লুটপাটের চার পাঁচ মাস পরে অগ্রহায়ন মাসে আমার স্ত্রীর  একটি  বাঁচ্চা হয়।
প্রশ্ন: ঐ যে কন্যা  সন্তান হয়
এ প্রর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবী জিজ্ঞেস করার  পর  কন্য সন্তান উল্লেখ বিষয়ে আপত্তি তোলেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।
তখন ভিন্নভাবে আবার প্রশ্ন করা  হয়।
প্রশ্ন : আপনার স্ত্রীর যে সন্তান হয় সে কি ছেলে না মেয়ে?
উত্তর : মেয়ে।
প্রশ্ন : তার নাম কি?
উত্তর : সন্ধ্যা।
প্রশ্ন : তারা   এখন কোথায়?
উত্তর : স্ত্রীকে লোকজন গঞ্জনা করত। তখন আমার শ্যালক কার্তিক শিকদারকে বললাম কি করবা? সে বলল ভারতে নিয়ে যাই। তখন আমার স্ত্রী    ভারতে চলে যায়। তারপর আর তার সাথে দেখা হয়নি।
প্রশ্ন : এরপর আর  আপনি বিয়ে করেননি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তদন্ত  কর্মকর্তার কাছে আপনি জবানবন্দী দিয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।

সাক্ষীকে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের জেরা
আইনজীবী : ঐ যে মেয়ের নাম বললেন সন্ধ্যা। তার নাম হিন্দু মতে রেখেছিলেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : যে মসজিদে নিয়ে গেল আপনাকে সে মসজিদের ইমাম সাহেবের নাম বলতে পারবেন? বা তার নাম মনে আছে?
সাক্ষী : মনে নেই।
আইনজীবী : আযান দিত যে তার নাম কি
সাক্ষী : মনে পড়েনা।
আইনজীবী : দিনে কয়বার আযান দিত বলতে পারবেন?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : চরখালি গ্রামের ইয়াসিন মাওলানার নাম শুনেছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : পারেরহাটে তার একটি  খানকা ছিল। ওখানে তিনি মাঝে মাঝে থাকত।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : আপনার গ্রামের হোগলাবুনিয়ার কাশেম কাশেম আলী হাওলদার ওরফে কাশেম মাস্টার। তাকে চেনেন?
সাক্ষী : হ্যা চিনতাম।
আইনজীবী : রাজ্জাক রাজাকারকে চিনতেন?
সাক্ষী :  হ্যা।
আইনজীবী : রাজাকাররা আপনার বাড়িতে একদিনই এসেছিল?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : হোগলাবুনিয়া থেকে পারেরহাট বাজার কতদূর?
সাক্ষী : রাস্তাধরে গেলে আধা মাইল  অনুমান।
আইনজীবী : হোগালাবুনিয়া থেকে পারেরহাট বাজারে যেতে চালনা ব্রিজ হয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ ছিলনা।
সাক্ষী : ছিল।
আইনজীবী : আপনার বিয়ের আশীর্বাদ কবে  হয়েছিল বলতে পারবেন?
সাক্ষী : বিয়ের দুই তিন পর।
আইনজীবী  : বিয়ের লগ্ন কি রাতে না দিনে  ছিল?
সাক্ষী : রাতে ছিল।
আইনজীবী : বিয়ের কয়দিন পর বৌভাত হয়?
সাক্ষী : বৌ ভাত করি নাই।
আইনজীবী : আপনাদের ঘোরানি ফিরানী, অষ্টমঙ্গলা হয়েছিল কি-না?
সাক্ষী : না। গরিব মানুষ। আমি একা। অষ্টমঙ্গলা করি কি করে?
আইনজীবী : বিয়ের পর স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে তোলেন?
সাক্ষী : হ্যা ।
আইনজীবী : হোগলাবুনিয়ার  আব্দুস সোবহান এবং আব্দুস সুলতান পিতা সইজুদ্দিন, তাদের চেনেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : যুদ্ধের  দুই বছর আগে ১৯৬৯ সালে আপনি আপনার জমিজমা বাড়ি ভিটা সব  তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন?
সাক্ষী  : না।
আইনজীবী : ১৯৬৯ সালে বিক্রি না করলেও জমি জমা ও ভিটাবাড়ি তাদের কাছে বিক্রি করেছিলেন তাতো সত্য।
সাক্ষী : আমি সুলতানের কাছে একটা কাগজ দিয়েছিলাম। আমি আমার অংশ বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু তারা বাকীদের সবার জমি লিখে নেয়। আমি আমার অংশে সাড়ে দশ শতাংশ পেতাম। কিন্তু তারা সব নিয়ে গেল।
আইনজীবী : যুদ্ধের  কত বছর আগে জমি বিক্রি করলেন? ২ বছর আগে?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : জমি বিক্রির পরে আপনি আপনার তৃত ভাইয়ের ঘরে ওঠেন এবং এখনো সেই বাড়িতেই আছেন। আপনার মুত ভাইয়ের নাম নিকুঞ্জ ওরফে সাধু ঘরামী।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : একই ঘরে আপনার বৌদীও থাকতেন?
সাক্ষী : হ্যা। তিনিই আমাকে লালন পালন (দেখাশুনা) করেন।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী আদালতকে বলেন লালন পালনের তো অন্য  অর্থ। তখন ট্রাইব্যুনাল ব্রাকেটে দেখাশুনা শব্দটি যোগ করেন।
আইনজীবী :আপনার ভাই সাধু ঘরামী  আপনার থেকে কয় বছরের বড়?
সাক্ষী : ২ বছর।
আইনজীবী : আপনার বৌদী বয়সে আপনার থেকে ছোট?
সাক্ষী : ছোট হতে পারে।
আইনজীবী : আপনার স্ত্রীর বাজারে যাতায়াত ছিলনা?
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : যেদিন ধর্ষনের ঘটনা ঘটে সেদিন আপনার স্ত্রী  ঐ ঘরে ছিল?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : মুসলমান হবার পরতো আপনি আর লুকিয়ে থাকতেননা।
সাক্ষী : আমি বাড়িতে থাকতাম। তবে কৃষ্ণ মারা যাবার পর ভয়ে পালিয়ে বেড়াতাম।
আইনজীবী : হোগলা বুনিয়া থেকে  নয় জন নিখোঁজ হবার আগেই আপনি মুসলমান হন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : স্বাধীনতা যুদ্ধ  শুরুর পর পিরোজপুর অস্ত্র লুট হয়েছিল  শুনেছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : এরো কিছুদিন পর পিরোজপুরে অর্থ লুট হয়  শুনেছেন?
সাক্ষী : হ্যা। শোনা ছাড়া দেখা কি সম্ভব?
আইনজীবী : আর্মি অর্থ লুটের আগে না পরে আসে?
সাক্ষী : টাকা  লুটের পরপরই আসে।
আইনজীবী : মিলিটারী আসার কয়দিন পর পিস কমিটি গঠিত হয়?
সাক্ষী : আগেই গঠিত হয়।
আইনজীবী : রাজাকার বাহিনী আর্মি আসার আগে না পরে গঠিত হয়?
সাক্ষী : পিস কমিটির সঙ্গে সঙ্গে গঠিত হয়।
আইনজীবী : সেকেন্দার শিকদার, দানেস মোল্লা, সৈয়দ মো: আফজাল, দেলোয়ার শিকদার পিতা রসুল  শিকদার এরা রাজাকার বাহিনী গঠন করে?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : আপনার এলাকায় আরেকজন কুখ্যাত রাজাকার ছিল মোসলেম মাওলানা?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : রাজ্জাক রাজাকার, দেলোয়ার শিকদার পিতা রসুল শিকদার। এদের অত্যাচারের কারনে স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধা  এবং এলাকার লোকজন মিলে এদেরকে মেরে ফেলে।
সাক্ষী : পিরোজপুরে হতে পারে।
আইনজীবী : আপনার স্ত্রী তো কোন মেম্বার চেয়ারম্যান, রাজাকার বা পিস কিমিটির লোকদের চিনতেননা।
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : আপনি  এই মামলার তদন্ত  কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন  খানের কাছে জবানবন্দী দেয়ার সময় ৭০ সালের আগে আপনার ভাই মারা গেছে সে কথা বলেননি।
সাক্ষী : বলি নাই।
আইনজীবী : ফালগুন মাসের শেষের দিকে বিয়ে করেছেন সে কথাও বলেননি।
সাক্ষী : বলেছি।
আইনজীবী : স্ত্রী বলে, তোমাকে যে মুসলমান বানায় সে এসেছিল, তুমি পালাও। একথাও আপনি বলেননি তদন্ত  কর্মকর্তার কাছে।
সাক্ষী : স্মরন নেই।
আইনজীবী : বাজারে মসজিদে বসে মুসলমান বানায় সেকথাও বলেননি  তদন্ত  কর্মকর্তার কাছে।
সাক্ষী : মনে নেই।
আইনজীবী : আপনার নাম আলী আশরাফ আর  কৃষ্ণ বাবুর নাম আলী আকবার রাখা হয় সেকথাও বলেননি।
সাক্ষী : স্মরন নেই।
আইনজীবী : কাশেম আলী হাওলাদার ওরফে কাশেম  মাস্টার আপনার একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলে যায় এবং সাত মাস জেল খাটে।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : কাশেম মাস্টার আপনার স্ত্রীকে ধর্ষন করে সে অভিযোগ আপনি করেন  এবং সে কারনে সে জেলে যায়।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : আপনার স্ত্রী শেফালী ঘরামী ভারতে চলে গেছে  আপনার সাথে বিরোধের কারনে।
সাক্ষী : সত্য নয়।
আইনজীবী : ২০১০ সালের পর থেকে আপনি  এবং আপনার বৌদী বয়স্ক ভাতা পান।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : আপনারা দুজন একান্নে/একপাকে খান।
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : সাক্ষী দেয়ার জন্য কতদিন আগে ঢাকায় আসলেন?
সাক্ষী : ১৮/২০ দিন আগে অনুমান।
আইনজীবী : আপনি সুস্থ  অবস্থায়  ঢাকায় আসেন। এই মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপে পড়ে আপনি অসুস্থ  হয়ে পড়েন।
সাক্ষী : প্রায় সুস্থ  অবস্থায় ঢাকায় আসি। পরে অসুস্থ  হই।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনছারী সাক্ষীকে জেরা করেন। তাকে সহায়তা করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কোর্টের আইনজীবী  কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন