বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আদেশ পুনর্বিবেচনা আবেদনের ওপর ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে পেশ করা লিখিত বক্তব্য।

মেহেদী হাসান, ২২/৫/২০১২

১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা হয়েছে ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে। এ  বিষয়ে   আজ  শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে  যে লিখিত বক্তব্য  পাঠ করে শোনানো হয় এখানে তা বাংলায় তুলে ধরা হল। 

মূল কথা : ডিফেন্স টিমের পক্ষ থেকে  তথ্য প্রমান সহকারে প্রমানের চেষ্টা করা হবে সাক্ষী হাজির  করতে না পারা বিষয়ে যে কারণ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দেখানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ।   সাক্ষীরা  নিখোঁজ নয়, তাদের  প্রায় সবাই বাড়িতেই আছেন। তাদের অনেককে সাক্ষ্য দিকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। তারা প্রসিকিউশেরন হেফাজতে ছিল। তারা প্রসিকিউশেনর শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি বিধায় তাদের কোর্টে হাজির করা হয়নি। এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য প্রমান সংগ্রহ করা হয়েছে।  সাক্ষীদের অনেকে বলেছেন তাদের নামে যে  জবানবন্দী আদালতে জমা দেয়া হয়েছে তাও তাদের স্টেটমেন্ট নয়।  তাদের নামে  তদন্ত কর্মকর্তা তার মনগড়া মিথ্যা  বক্তব্য লিখে জমা দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালকে প্রতারিত করেছেন।

তাই ২০ মার্চ ৪৬ সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের যে আবেদন জানানো হয়েছে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সেই আবেদনই বাতিল করার দাবি ডিফেন্স টিমের।

জেরা ছাড়া তাদের  মিথ্যা  স্টেটমেন্ট আসামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে  ব্যবহার করা হলে ন্যায় বিচার পাবার কোন আশা থাকবেনা।

সাবমিশন:
১. গত ২০ মার্চ ২০১২ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানানো হয় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে। ইন্টারন্যাশানাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট এর ১৯ (২) ধারার অধীনে এ  আবেদন জানানো  হয়।

ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে “ বিচার চলাকালে কোন ব্যক্তি মৃত হলে, তাকে হাজির করা  যদি  কালপেক্ষন এবং ব্যাবহুল হয় এবং ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন এভাবে সময় এবং অর্থ ব্যায় করে কাউকে হাজির করা যুক্তিসঙ্গত নয় তাহলে মেজিস্ট্রেট বা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে উক্ত ব্যক্তিদের  প্রদত্ত জবানবন্দী আদালত  এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করতে পারেন।”

প্রসিকিউশনের আবেদনে বলা হয়েছে সাক্ষ্য প্রদানের নিমিত্তে তাদের হাজির করা দুরুহ, সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং আদৌ সম্ভব নয়।

২.    প্রসিকিউশনের এ আবেদন বাতিলের পক্ষে ডিফেন্স এর পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত নিবেদন পেশ করা হয় আদালতে।

ক.    আইনের ১৯ (২) ধারায় আসাীর গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাই  আইনের এ ধারাটি সন্দেহ সংশয়াতীতভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার।
খ.    প্রসিকিউশেরন বর্নিত বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত ও বানোয়াট। প্রসিকিউশন পক্ষ তাদের উক্তরূপ দাবীর প্রমাণে কোনরূপ প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।তাদেরকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে হবে যে, তাদের হাজির করতে গেলে বিচার বিলম্বিত হবে।
গ.    সাক্ষীর নিরাপত্তা এবং তাকে জেরা করা একটি মৌলিক অধিকার।
ঘ.   
ঙ.   


৩. মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৫ জন সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ  করে গত ২৯ মার্চ আদেশ প্রদান করেন ট্রাইব্রুনাল।

আদালত যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন এরা হলেন, ঊষারানী মালাকার,
সুখরঞ্জন বালী, আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল, সমর মিস্ত্রী, সুরেষ চন্দ্র মন্ডল, গণেশ চন্দ্র সাহা, শহিদুল ইসলাম খান সেলিম, আইউব আলী হাওলাদার, সিতারা বেগম, রানী বেগম, মো: মোস্তফা, আব্দুল লতিফ হাওলাদার, অনিল চন্দ্র মন্ডল এবং  অজিত কুমার শীল। 

১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন বিষয়ক আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন,  আইনের ১৯ (২) ধারার শর্ত প্রসিকিউশন সন্তোষজনকাভাবে পূরন করেছে বিধায় তাদের জবানবন্দী এভিডেন্স হিসেবে গ্রহনের আদেশ দেয়া হল।

৪. জেরা ছাড়া সাক্ষীদের অনুপস্থিতিতে তাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ নিম্নলিখিত কারনে ন্যায় বিচার পরিপন্থী এবং সরাসরি আসামীর ন্যা বিচার থেকে বঞ্চিত করার শামীল।

৫. প্রসিকিউশন তাদের আবেদনের স্বপক্ষে জানিয়েছেন অনেক সাক্ষী নিখোঁজ এবং অনেককে হাজির করা সম্ভব নয় বিভিন্ন কারনে। এর স্বপক্ষে তারা তদন্ত কর্মকর্তার একটি রিপোর্টের ওপর নির্ভর করেছে যদিও আমাদের সে কপি দেয়া  হয়নি।
৬. সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ সম্বলিত কোন রিপোর্ট অভিযুক্ত পক্ষকে সরবরাহ করা হয়নি

        ৭. ঊষারাণী মালাকার সম্পর্কে প্রসিকিউশন বলেছেন যে, সে অসুস্থ এবং তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে । ভ্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা  এর সমর্থনে প্রমানাদি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।          এমনকি ঊষা রাণী মালাকারের বক্তব্য স্মৃতি লোপ পাওয়ার পূর্বে না পরে রেকর্ড করা হয়েছে তাও বলা হয়নি। আইনত মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। বাস্তবিক পক্ষে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য মতে উষারানী মালাকার অসুস্থ নয় এবং  তাকে হাজির করা সম্ভব। তাকে হাজির করার জন্য কোন সমনও জারি করা হয়নি।

         ৮. সুখরঞ্জন বালীর নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে প্রসিকিউশন বলেছেন যে, সুখরঞ্জন বিগত চার মাস যাবৎ নিখোঁজ। কিন্তু তাঁরা তাদের দাবির সমর্থনে একটি প্রমাণও  দিতে পারেননি।  যদি সত্যিকার অর্থে উক্ত ব্যক্তি এমন দীর্ঘ সময়ের জন্য নিখোঁজ থেকে থাকতেন তবে তার পরিবার বর্গ নিশ্চয়ই থানায় সাধারণ ডায়েরী করতেন। কিন্তু এ ধরনের কোন প্রমাণাদি প্রসিকিউশন প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপরোন্তু বিগত ২৭ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্ত’র এক রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যে, উক্ত সাক্ষী মিথ্যা বক্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। সম্ভবত সে কারণেই তাকে সাক্ষী দিতে আনা হয়নি। 

          ৯.     আশিষ কুমার, সুমতি রাণী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রি সম্পর্কে প্রসিকিউশনের বক্তব্য হচ্ছে, তারা বিগত ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা নিখোঁজ নয়, কারন জানুয়ারী মাসে তাদেরকে ঢাকায় আনা হয়েছিল এবং প্রসিকিউশনের তদারকিতে প্রায় এক/দেড় মাস অবধি রাখা হয়, এমনকি একপর্যায়ে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে উক্ত সাক্ষীদের হাজিরাও প্রদান করেন।
          গত ২ ফেব্রুয়ারী প্রসিকিউশন আদালতকে জানায় যে, গতকাল সাক্ষীগণ তাদের আত্মীয়ের সাথে দেখা করবে বলে বের হয়ে আর ফেরৎ আসেনি। এ মর্মে গত ২৭ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে উক্ত সাক্ষীদের নিকট আত্মীয়দের বক্তব্য উদ্ধৃত্ত করে বলা হয় যে, তারা প্রসিকিউশনের হেফাজতে এক থেকে দেড় মাস  ছিল। তারা  মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওয়ায় তাদেরকে আনা হয়নি।  

         এছাড়া গত ১২ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয় প্রসিকিউশন নিয়ন্ত্রিত সেফ হাউজের রেজিস্ট্রার খাতা ,  খাদ্য বুক, এবং জেনারেল ডায়েরীতে বর্ণিত তথ্য মতে সুমতি রানী, সমর মিস্ত্রী এবং আশিষ কুমার মন্ডল গত ১৬ মার্চ ২০১২ পর্যন্ত তারা সেফ হাউজেই ছিল । সেফ হাউজের রেজিস্ট্রি খাতার তথ্য অনুযায়ী তারা ৪৭ দিন সেখানে ছিল। প্রথম দফায় তাদের সেফ হাউজে আনা হয় ১১ নভেম্বর। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের সেখানে রাখা হয়। ১২ এপ্রিল এ বিষয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সংশ্লিষ্ট অংশ তুলে  ধরা হল।
“প্রসকিউিশনরে আবদেনে বলা হয়ছেলি সাক্ষী আশষি কুমার মণ্ডল, সুমতি রানী মণ্ডল ও সমর মস্ত্রিি গত ২ ফব্রেুয়ারি থকেে নখিোঁজ। মাওলানা সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষরে আইনজীবী প্রসকিউিটর অ্যাডভোকটে রানাদাস গুপ্ত ট্রাইব্যুনালকে জানয়িছেলিনে, আত্মীয়রে বাড়তিে বড়োনোর কথা বলে ২ ফবে্রুয়ারি সফে হাউস থকেে তারা বরে হয়ে গছেনে। পরে প্রসকিউিশন তাদরে আবদেনে জানান, ওই ৩ সাক্ষী গোপনে ভারতে চলে গছেনে। অথচ ট্রাইব্যুনালরে সাক্ষীদরে জন্য তরৈি করা সফে হাউসরে রজেস্টিার, সাধারণ ডায়রেি ও খাওয়ার হসিাবরে খাতা অনুযায়ী আশষি কুমার মণ্ডল, সুমতি রানী মণ্ডল ও সমর মস্ত্রিি ১৬ র্মাচ র্পযন্ত তাদরে নয়িন্ত্রণইে ছলিনে। সফে হাউজরে রজেস্টিাররে র্বণনা অনুযায়ী, সাক্ষী আশষি কুমার মণ্ডল ও সমর মস্ত্রিি ও সুমতি রানী মণ্ডল দুই দফায় ৪৭ দনি সফে হাউসে ছলিনে। প্রথম দফায় ২০১১ সালরে ১১ নভম্বেরে এই তনিজনকে সফে হাউসে আনা হয়। সদেনি মোট ৯ সাক্ষী এখানে আনা হয়ছেলি। তাদরে সফে হাউসে রাখা হয় ২২ নভম্বের র্পযন্ত। এই সময় তাদরে কীভাবে সাক্ষী দতিে হব,ে সে বষিয়ে প্রশক্ষিণ দয়ো হয়। সমর মস্ত্রিি এবং আশষি কুমার মণ্ডল ছাড়া এ সময় সফে হাউসে আনা অন্য সাক্ষীদরে মধ্যে ছলিনে মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম, মো. মাহতাব উদ্দনি হাওলাদার, মো. মোস্তফা হাওলাদার, মানকি পসার,ি মো. রুহুল আমনি নবী, মো. আলতাফ হাওলাদার ও মোহাম্মদ আবদুল লতফি হাওলাদার। রজেস্টিারে প্রত্যকে সাক্ষীর মোবাইল নম্বরও উল্লখে রয়ছে।ে

সমর মস্ত্রিি ও আশষি কুমার মণ্ডলসহ ৬ জনকে ২২ নভম্বের পরিোজপুর পাঠানো বষিয়ওে বস্তিারতি উল্লখে রয়ছেে সফে হাউসরে সাধারণ ডায়রেতি।ে এতে বলা হয়, ‘তাহাদরে নজি বাড়ি পরিোজপুর জলোর উদ্দশেে র্ঊধ্বতন র্কতৃপক্ষরে নর্দিশেক্রমে পৌঁছাইয়া দয়োর নমিত্তিে রওয়ানা দওেয়া গলে।’ পরে সমর মস্ত্রি,ি সুমতি রানী মণ্ডল ও আশষি কুমার মণ্ডলকে আবারও গত ৩১ জানুয়ারি সফে হাউসে আনা হয়। সফে হাউসরে রজেস্টিার অনুযায়ী তাদরে আত্মীয়স্বজনসহ ১৬ র্মাচ র্পযন্ত সখোনে ছলিনে। একটানা দড়ে মাসরে বশেি সফে হাউসে উপস্থতি রখেওে শখিয়িে দয়ো মথ্যিা সাক্ষ্য দতিে রাজি না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালরে সামনে উপস্থতি করা হয়ন।ি সমর মস্ত্রি,ি আশষি কুমার মণ্ডল ও সুমতি রানী মণ্ডলরে বষিয়ে ১৬ র্মাচ সফে হাউসরে সাধারণ ডায়রেতিে উল্লখে রয়ছে,ে ‘র্পাশ্ব লখিতি স্বাক্ষর সাক্ষীদরে নয়িা বাড়রি উদ্দশ্যেে রওয়ানা দওেয়া গলে।’ অথচ প্রসকিউিশনরে আবদেনরে র্বণনা অনুযায়ী তারা পালয়িে গছে।ে“

         এ থেকে পরিষ্কার যে, এই তিন সাক্ষীর নিখোঁজ হবার তথ্য একেবারেই  মিথ্যা। তদন্ত কর্মকর্তার শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওয়ায়ই তাদের ট্রাইব্যুনালে  হাজির করা হয়নি।
          ৯. সুরেষ চন্দ্র মন্ডল, গনেশ চন্দ্র সাহা, শহিদুল ইসলাম খান সেলিম, আইউব আলী হাওলাদার, মোস্তাফা, আব্দুল লতিফ হাওলাদার, অনিল চন্দ্র মন্ডল, অীজত কুমার শিল এদের অনুপস্থিতিতে জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল যে  বিষয় আমলে নিয়েছেন তা হল “স্থানীয় শস্ত্র বাহিনী তাদের হুমকি দিয়েছে। জীবনের নিরাপত্তার কারনে তাদের গোপন স্থানে রাখা হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তার কারনে তাদের হাজির করা হলনা। যেসব সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের হুমকি দিয়েছে তারা অভিযুক্তর পক্ষের লোক।”
          নিম্নলিখিত কারনে এ দাবি মিথ্যা।

          ক. হুমকির অভিযোগ বিষয়ে প্রসিকিউশন কোন প্রমান হাজির করতে পারেনি এবং এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানানো , ভিত্তিহীন।
         খ.   প্রসিকিউশন বলেছে  গণেশচন্দ্র একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। কিন্তু তার জবানবন্দী পড়লে বোঝা যায় তিনি কোন প্রত্যক্ষদর্শী নন।
          গ. শহিদুল ইসলাম খান সেলিম কখনো নিখোঁজ হননি। তাকে ১০ জানুয়ারি সেফ হাউজে আনা হয়। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায়  তাকে কোর্টে আনা হয়নি। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ১২ এপ্রিল প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তার প্রমান। এখানে সংশ্লিষ্ট অংশ  তুলে ধরা হল।
“সাক্ষী মুক্তযিোদ্ধা শহদিুল ইসলাম খান সলেমি ১০ জানুয়ারি থকেে ১২ জানুয়ারি র্পযন্ত সফে হাউসে ছলিনে। তাকে ১১ এবং ১২ জানুয়ারি পরপর দুইদনি সফে হাউস থকেে ট্রাইব্যুনালরে প্রসকিউিশন কক্ষে নয়িে আসা হয়। তবে সাক্ষী দতিে ট্রাইব্যুনালরে সামনে উপস্থতি করা হয়ন।ি সাক্ষ্য দতিে উপস্থতি না করে ১২ জানুয়ারি বলো আড়াইটায় তাকে ময়েরে বাসায় ফরেত পাঠানো হয়।“

          ঘ. আমার দেশে প্রকাশিত রিপোর্ট সাক্ষী আইউব আলী হাওলাদার ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত সেফ হাউজে ছিলেন।
         ঙ. সাক্ষী সিতারা বেগমের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তার রিপোর্টের ওপর নির্ভর করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ এবং হুমকির কারনে তাকে আনা যাচ্ছেনা। তিনি অসুস্থ এ মর্মে কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট  দাখিল করেনি প্রসিকিউশন এবং তাকে হুমকির অভিযোগও মিথ্যা। এ ব্যাপারে দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ২৭ মার্চ প্রতিবেদনে তথ্য রয়েছে। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে হাজির করা হয়নি।

চ.    সাক্ষী রানী বেগম এবং মোস্তফা সম্পর্কে ২৭ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে  প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে তারা বাড়িতে আছেন এবং তাদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও মিথ্যা।
মোস্তফার উদ্ধৃতি দিয়ে নয়া দিগন্তে লেখা হয়েছে
“সাঈদীর কোন লোক কোন ধরনের আমাদের ভয়ভীতি দেখায়নি। সুতরাং এ অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কোথাও আত্মগোপনও করিনি। আমরা সবাই নিজ বাড়িতেই আছি।”

ছ.    সাক্ষী আব্দুল লতিফ হাওলাদারের নিখোঁজ হবার অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা। ১২ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশের রিপোর্ট মোতাবেক তাকে ২ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তাকে পরপর চারদিন প্রসিকিউশন রুমে আনা হয়।  ১৬ নভেম্বর ২০১১ তাকে প্রথম  সেফ হাউজে আনা হয়। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। ৩১ ডিসেম্বর তাকে আবার সেফ হাউজে আনা  হয়। ৫ জানুয়ারি  পর্যন্ত তাকে সেখানে রাখা হয।
 আমার দেশের রিপোর্টে লেখা হয়েছে “ “সাক্ষী আবদুল লতফি হাওলাদারকে পর পর ৪ দনি ট্রাইব্যুনালরে প্রসকিউিশন কক্ষে হাজরি করা হয়। সফে হাউসরে ডায়রেি অনুযায়ী আবদুল লতফি হাওলাদারকে প্রথমে গত বছররে ১৬ নভম্বের এখানে উপস্থতি করা হয়। ২২ নভম্বের র্পযন্ত রাখা হয় সফে হাউস।ে পরে ৩১ ডসিম্বের তাকে আবারও সফে হাউসে আনা হয়। এখানে রাখা হয় ৫ জানুয়ারি র্পযন্ত। এ সময় তাকে পরপর ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালরে প্রসকিউিশন কক্ষে নয়িে যাওয়া হয়। প্রতবিারই সাক্ষী দয়োর জন্য ট্রাইব্যুনালরে সামনে উপস্থতি না করে ফরেত পাঠানো হয় সফে হাউস।ে ৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় তাকে বাড়তিে পাঠয়িে দয়ো হয়।“

         
জ. একইভাবে সাক্ষী অনিল চন্দ্র মন্ডল সম্পর্কে ১২ এপ্রিল আমার দেশ পত্রিকার রিপোর্টে লেখা হয়েছে “সাক্ষী অনলি চন্দ্র মণ্ডল গত ১২ জানুয়ারি থকেে ১৬ জানুয়ারি র্পযন্ত সফে হাউসে ছলিনে। তাকে ১২ জানুয়ারি সফে হাউসে নয়িে আসনে তদন্ত সংস্থা। টানা চারদনি সফে হাউসে রখেে শখিয়িে দয়ো সাক্ষ্য দতিে রাজি না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালে হাজরি করা হয়ন।ি তাকে ১৬ জানুয়ারি বাড়তিে পাঠয়িে দয়ো হয়।“
ঝ. সাক্ষী অজিত কুমার শীল সম্পর্কে একই পত্রিকার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় “সাক্ষী অজতি কুমারকে সফে হাউসে নয়িে আসা হয় ১০ ফবে্রুয়ার।ি তাকে এখানে রাখা হয় ১৩ ফবে্রুয়ারি র্পযন্ত। টানা ৩ দনি সফে হাউসে রাখার পরও সাক্ষ্য দতিে ট্রাইব্যুনালে হাজরি করা হয়ন।ি“

          সুতরাং দেখা যাচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তা এসব সাক্ষী হাজির করা সম্ভব নয় মর্মে যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা মিথ্যা রিপোর্ট। প্রসিকিউশনও এ মিথ্যা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে ট্রাইব্যুনালকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে।

          তদন্ত কর্মকর্তা  জবানবন্দী রেকর্ড করেননি কাজেই তাকে বিশ্বাস করা যায়না।
       
১৯(২) ধারা মোতাবেক কারো অনুপস্থিতিতে জবানবন্দী  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হলে তা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে রেকর্ড করতে হবে।  অনেক সাক্ষী প্রকাশ্যে বলেছেন তারা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন স্টেটমেন্ট দেননি। এ বিষয়ে পত্রিকায়ও অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
২২ মার্চ দৈনিক জনতা পত্রিকার একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দেয়া যাক “ “অনুপস্থিতির তালিকায় শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচসহ বিশিষ্টিজনদের নামও রয়েছে। এ ব্যাপরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির গতকাল দৈনিক জনতাকে জানান, তিনি যে সাঈদীর মামলার সাী বিষয়টি তাকে জানানোই হয়নি। এদিকে একই কথা জানিয়েছেন, দেশের বিশিষ্ঠ যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। এই বিষয়ে প্রথমে কথা বলতে অপারগত প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তিনি দৈনিক জনতাকে বলেন, আমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। ” (বসঢ়যধংরং ধফফবফ)
“অনুপস্থিতির তালিকায় শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচসহ বিশিষ্টিজনদের নামও রয়েছে। এ ব্যাপরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির গতকাল দৈনিক জনতাকে জানান, তিনি যে সাঈদীর মামলার সাী বিষয়টি তাকে জানানোই হয়নি। এদিকে একই কথা জানিয়েছেন, দেশের বিশিষ্ঠ যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। এই বিষয়ে প্রথমে কথা বলতে অপারগত প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তিনি দৈনিক জনতাকে বলেন, আমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। ”
শাহরিয়ার কবির গতকাল দৈনিক জনতাকে জানান, আমি তো সাঈদীর মামলার সাী না। আমি গোলাম আযমের মামলার সাী। আর সাঈদী সম্পর্কে আমি যা জানি তা আমার বইতে লেখা আছে, আমি বইটি স্বার করে প্রসিকিউশনকে দিয়ে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, সাঈদীর মামলার বিষয়ে আমাকে কোন সমন দেয়া হয়নি। এটা তারা মিথ্যা বলেছে।”
সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, শাহরিয়ার কবির এবং জুয়েল আইচের নামে যে স্টেটমেন্ট  তদন্ত কর্মকর্তা জমা দিয়েছেন তা তাদের নয়।

অন্যদিকে তাদের হাজির করা আদৌ সম্ভব নয় বলে যে দাবি করা হয়েছে তাও মিথ্যা।
সুতরাং যে ১৫ জনের জবানবন্দী  তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সে জবানবন্দী যে তারা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন সে মর্মে কোন প্রমান নেই।  তদন্ত কর্মকর্তা তাদের নামে মিথ্যা মনগড়া গালগল্প লিখে  জমা দিয়েছেন।

ন্যায় বিচার: সুতরাং জেরা ছাড়া তাদের  মিথ্যা  স্টেটমেন্ট আসামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে  ব্যবহার করা হলে ন্যায় বিচার পাবার কোন আশা থাকবেনা। সুতরাং ২০ মার্চ প্রসিকিউশনের যে আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ ১৫ জন সাক্ষীর স্টেটমেন্ট  সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে তা পুনরায় বিবেচনা কর ২০ মার্চের প্রসিকিউশনের ঐ আবেদন বাতিল করা  হোক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন