রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৩

১৯৬৯ সালে শেখ কামাল, তোফায়েল আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সিরাজুল আলম খানসহ অনেকে আমার বাসায় যেতেন-ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী


মেহেদী হাসান, ৩০/৬/২০১৩
বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, ১৯৬৯ এর আন্দোলনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সেই সুবাধে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রইউনিয়নের অনেকের সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৬৯ সালে তার ধানমন্ডির বাসায়  শেখ কামাল, তোফায়েল আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অনেকে যেতেন।  এছাড়া তার বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিরাজুল আলম খান, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রউফ, ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদসহ অনেকে যোগ দিতেন।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, তিনি ১৯৭১ সালের   রেসকোর্স ময়দানে  ঐতিহাসিক সাত মার্চের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, সালমান এফ রহমানসহ অনেকে তার সাক্ষী আছেন। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষনকে যদি স্বাধীনতার ঘোষনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তাহলে  সে সমাবেশে অংশগ্রহনের কারনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী  নিজেকে  স্বাধীনতার স্বপক্ষে একজন সক্রিয় সমর্থক  হিসেবে দাবি করেন  আইনগতভাবে। তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচার চলছে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আসামী পক্ষের এক নং সাক্ষী হিসেবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেই নিজের পক্ষে সাক্ষী প্রদান করছেন। আজ  তিনি সাক্ষ্যপ্রদানকালে উপরোক্ত তথ্য তুলে ধরেন।

ইংরেজিতে প্রদান করা জবানবন্দীতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, গুডস হিল আমাদের পারিবারিক বাসা কিন্তু সীমিত কিছু  সময় ছাড়া  আমার সেখানে কখনোই স্থায়ীভাবে বসবাস করা হয়নি। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান ক্যাােডট  কলেজ বর্তমানে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার স্বাধীন জীবন যাপন   শুরু হয়। একইভাবে  ভাওয়ালপুর সাদিক পাবলিক  বোর্ডি স্কুল, নটরডেম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালে আমি স্বাধীনভাবে  জীবন যাপন করেছি । ১৯৬৫ সালের শেষের দিকে অথবা ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকে  এসএসসি পরীক্ষার সময় চারমাস ছাড়া চট্টগ্রামের গুডস হিলে আমার কখনোই বাস করা হয়নি।  আমার  প্রায় সব বন্ধুবান্ধব এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হয় ১৯৭৪ সালের পর। চট্টগ্রামে  আমার যারা পরিচিত তারা সবাই ১৯৬০ সালের পূর্বের এবং     ১৯৭৪ সালের পরবর্তী সময়ে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালে আমি ঢাকার ধানমন্ডিতে একা এক বাসায় থাকতাম এবং আমার তখন একটি  গাড়ি ছিল ব্যবহারের জন্য।  আমার পিতা মাসে এক দুইবার আমাকে দেখতে আসতেন তখন ঢাকায়।  ধানমন্ডি বাসায় বসবাসকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার যেসব বন্ধু ধানমন্ডি এবং ধানমন্ডির বাইরে  বাস করত এবং ধানমন্ডি এলাকার   আমার অনেক বন্ধু, আমার বাসায় নিয়মিত আসত। বিশেষ করে ১৯৬৯  এর আন্দোলনের সময়। আমিও সে আন্দোলনে অংশ নিয়েছি । সেসমময় আমার বাসায় আমার যেসব পরিচিত বন্ধুবান্ধব আসতেন তাদের মধ্যে  মধ্যে রয়েছেন  শেখ কামাল, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তৌহিদ সামাদ, আহমেদ সালমান এফ রহমান, নিজাম আহমেদ, খায়রুল বাসার, ইরফান খান, ইমরান আহমেদ, কাজী আনোয়ার, আব্দুস সামাদ, কাইউম রেজা চৌধুরী। চলমান আন্দোলনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমার বাসায় তখন ছাত্রনেতাদের অনেক বৈঠক হত। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আহবানে ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ, ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, সিরাজুল আলম খান, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজসহ অনেকে আমার বাসায়  বৈঠক করেছেন চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে। এসব নেতাদের অনেকে আমার পিতার সাথে বেশ কয়েকবার দেখা সাক্ষাৎ করেছেন। বড়ভাইদের এসব মিটিংয়ে আমার বাড়ি ব্যবহার ছাড়াও তাদের  আসা যাওয়ার জন্য আমার গাড়ি  দিয়ে সেবা করার সুযোগ হয়েছিল।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ১৯৬৫র শেষে বা ১৯৬৬ সালের শুরুতে আমার পিতাকে  মুসলিম লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। ফলে আমার পিতা একজন স্বাধীন পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে আইউব বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এসময়  পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের অনেকের সাথে আমারও বন্ধুত্ব হয়। আমি কখনো কোন ছাত্রসংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলামনা কিন্তু তারপরও ১৯৬৯ এর আন্দোলনে আমি অংশগ্রহণ করে।  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে আসাদ নিহত হওয়ার সময়  আমি তার থেকে মাত্র দুশফুট দূরে অবস্থান করছিলাম। 
সালাহবউদ্দিন কাদের চৌধুরী উপরে যাদেরকে তার বাসায় যাবার কথা উল্লেখ করেছেন তারা মূলত এসময়ে তার  যেতেন বলে বলেছেন।
সালাহউািদ্দন কাদের চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের বন্ধুদের সাথে আমি রেসকোর্স ময়দানে  ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলাম। শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল  আহমেদ, মনিরুল হক চৌধুরী, নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, সালমান এফ রহমান, খায়রুল বাশার, কইউম রেজা চৌধুরী, ড. বেলাল বাকী, তৌহিদ সামাদসহ অনেকে তার সাক্ষী আছেন। সাত মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনকে অনেকে স্বাধীনতার ঘোষনা হিসেবে আখ্যায়িত করে। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষন যদি সর্বসম্মতভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা হিসেবে  গ্রহণ করা হয় তাহলে সেই সমাবেশে আমার সক্রিয় অংশগ্রহনের কারনে আমি স্বভাবতই স্বাধীনতার পক্ষে একজন সক্রিয় সমর্থক হিসেবে দাবি করতে পারি।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন,  সাত মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠক করেছেন। তাছাড়া ১৯৭২ সালে আমার পিতার বিরুদ্ধে দালাল আইনের মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আসামী পক্ষের সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়। এর মাধ্যমে যেটি প্রমানিত তা হল আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু রহমানকে পাকিস্তানের নির্বাচিত নেতা হিসেবে  এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেকে তার হাতে  ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে ছিলেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক আজ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে তার জবানবন্দী শেষ করার জন্য  বলেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত  সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফরমাল চর্জ জমা দেয়ার জন্য আগামী ১৫ জুলাই নির্ধারন করা হয়েছে।
   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন