মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৩

আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী/// আলুবদি হত্যাকান্ড বিষয়ে যুক্তি পেশ শুরু

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের  আপিল শুনানী চলছে।   আজ পাঁচ নং অভিযোগ তথা  মিরপুরে  আলুবদি হত্যাকান্ড বিষয়ে  যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ  শুনানী গ্রহণ করেন।

আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল-২ যে দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারদন্ড প্রদান করেছে তার মধ্যে একটি হল মিরপুরের আলুবদি  গ্রামে গণহত্যার  ঘটনা। আব্দুল  কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এটি ছিল পাঁচ নং অভিযোগ।

৫ নং অভিযোগ : ট্রাইব্যুনালের রায়ে  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৫ নং অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরন তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়- ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল  সাড়ে চারটার সময় আব্দুল কাদের মোল্লার  সদস্যরা (মেম্বারস)  পাকিস্তান আর্মি সাথে নিয়ে মিরপুর পল্লাবীর  আলুবদি গ্রামে নিরীহ বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমন পরিচালনা করে । আক্রমনের অংশ হিসেবে তারা নির্বিচারে গুলি চালায় এবং এতে ৩৪৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। এ গণহত্যায় সহায়তার অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

৫ নং অভিযোগ বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষ দুই জন সাক্ষী হাজির করে। তারা হলেন  ৬ নং সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা এবং ৯ নং সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা। তারা দাবি করেছেন তারা এ গনহত্যা তারা দেখেছেন এবং আব্দুল কাদের মোল্লা মূল নায়ক হিসেবে এতে অংশগ্রহণ করে। তারা সে সময় ওই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ।
অপর দিকে এ ঘটনা বিষয়ে আসামী পক্ষের একজন সাক্ষী হল আলতাফ উদ্দিন মোল্লা। আলতাফ উদ্দিন মোল্লা আবার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লার ছোট ভাই।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আজ উক্ত তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরা পড়ে শোনান আদালতে। এরপর রায় থেকে কিছু ফাইন্ডিংস তুলে ধরেন। এরপর তিনি ৬ নং  সাক্ষী সফিউদ্দিন মোল্লা এবং তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের গরমিল তুলে ধরেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৬ নং সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন- তিনি ১৯৭০ সালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে চিনতেন। তার দাবি আব্দুল কাদের মোল্লা তখন গোলাম আযমের নির্বাচনের পক্ষে কাজ করেছেন। অন্যদিকে সাক্ষী নিজে আরেক প্রার্থী জহির উদ্দিন জালালের পক্ষে কাজ করেছেন কর্মী হিসেবে। সেই হিসেবে তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে চিনতেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষীকে জেরায় প্রশ্ন করা হয়-১৯৭০ সালে আব্দুল কাদের  মোল্লাকে চেনার কথা কি আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেছিলেন?
সাক্ষী  উত্তর দিয়েছেন-বলেছি।
তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয় সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা ১৯৭০ সালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে চিনত একথা কি আপনাকে বলেছিল? তদন্ত কর্মকর্তা জনান-না বলেননি।

তাছাড়া সাক্ষীকে প্রশ্ন করা হয় আপনি যে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন সে কি বাঙ্গালী না অবাঙ্গালী ছিলেন। তার উত্তর তিনি দিতে পারেননি। এছাড়া নির্বাচনী এরিয়ার কথাও তিনি বলতে পারেননি।

সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, তিনি দেখেছেন ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটনার সময় আব্দুল কাদের মোল্লা রাইফেল হাতে দাড়িয়ে ছিল এবং নিজে গুলি করেছে।
জেরায় তাকে প্রশ্ন করা হয় একথা আপনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছিলেন কি-না। সে জবাব দেয়-বলেছি। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় জানান  আব্দুল কাদের মোল্লাকে রাইফেল হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখার কথা সাক্ষী তাকে  বলেননি।
সাক্ষী বলেছেন তিনি ফজরের আজানের সময় ঝোপের মধ্যে চার ফিট একটি গর্তের মধ্যে থেকে এ ঘটনা দেখেছেন।
সাক্ষী আরো বলেছেন তিনি দেখেছেন আব্দুল কাদের মোল্লা আর্মির সাথে উর্দুতে কথা বলেছেন। কিন্ত দূরে থাকায় তিনি তা শুনতে পাননি।
শুনানী শেষে আসামী পক্ষের অপর আইনজীবী শিশির মো : মনির সাংবাদিকদের জানান, আমরা আগামীকাল বুধবার আদালতে স্কেচ ম্যাপ দিয়ে দেখাব ঝোপের মধ্যে চারফিট গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থেকে হত্যাকান্ডের  স্থান এবং ঘটনা দেখা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে আজ যুক্তি উপস্থাপনে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, শিশির মো : মনির, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন