বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৩

আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী সহায়তায় ৭ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ


মেহেদী হাসান
আব্দুল কাদের মোল্লা মামালায় আপিল শুনানীতে সহায়তা  এবং মতামত গ্রহনের জন্য  বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ গতকাল বৃহষ্পতিবার  এ নিয়োগ প্রদান করেন। এরা হলেন, সাবেক বিচারপতি  টি এইচ খান, সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রবীন আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

আজ  সকালে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী শুরু হলে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা এই মামলায়  অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  তাদের কাছ থেকে ল’পয়েন্টে মতামত গ্রহণ করা হবে।

এরপর বিকালে এটর্নি জেনারেল অফিস থেকে সাতজন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে।

আজ রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী পেশ করেন। ১৫ দিনের জন্য  গ্রীস্মের ছুটিতে যাবার আগে আজই  ছিল শুনানীর শেষ দিন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষ হয়নি। ছুটি শেষে আগামী সাত জুলাই পুনরায় কোর্ট বসলে এটর্নি জেনারেল তার অসমাপ্ত শুনানী পেশ করবেন। এরপর অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীদের মতামত গ্রহণ করবেন আদালত।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ের  বিরুদ্ধে আসামী এবং রাষ্ট্র উভয় পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আপিল শুনানীতে  রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছ থেকে অনেক আইনগত প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে । বিশেষ করে ট্রাইব্যুনালের রায় হবার পর রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সুযোগ দিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি যে আইন সংশোধন করা হয়েছে  তা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় প্রযোজ্য কি-না তা নির্দিষ্ট করে জানতে  চান আদালত। গত মঙ্গল এবং বুধবার এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানী পেশ করার সময় আদালতের কাছ থেকে  এ বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্নের মুখোমুখি হন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার  বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীকে সাজা দেয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষ আর  আপিল করতে পারবেনা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে যদি আসামীকে  খালাস দেয়া হয় শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে সরকার পক্ষ বা অভিযোগকারী আপিল করার সুযোগ পাবে; অন্যথায় নয়। কিন্তু আব্দুল কাদের মোল্লাকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের পর তার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে  ওঠে।  সে প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনালের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয় সংসদে।  সংশোধিত আইনে বলা হয় আসামী পক্ষের মত সরকার পক্ষও আপিলের সমান সুযোগ পাবে। অর্থাৎ শুধু খালাসের ক্ষেত্রে নয়, ট্রাইব্যুনালের যেকোন রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষও আপিল করতে  পারবে ।
আইনের আপিল সংক্রন্তা ধারা সংশোধনের পর সরকার পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়ে আপিল আবেদন করে।
গত মঙ্গল এবং বুধবারের শুনানীর সময় আদালত সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চান ১৮ ফেব্রুয়ারির সংশোধনী আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না। আদালত এ প্রশ্নের জবাব   পাবার জন্য আইনটি পাশের সময় সংসদ প্রসিডিংস   হাজির করতে বলেন রাষ্ট্রপক্ষকে। কিন্তু সংসদীয় প্রসিডিংস পর্যালোচনা করে দেখা যায় সংশোধনী আইনটি আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য  না চলমান অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে বিষয়ে আইনে যেমন কোন কিছু নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি তেমনি সংসদ প্রসিডিংসেও কিছু  উল্লেখ নেই।
আদালত এটর্নি জেনারেল এর কাছ থেকে জানতে চান- উপমহাদেশ বা ইংল্যান্ডের অন্তত একটি উদাহরন পেশ করুন যেখানে  রায় হবার পর আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করার নজির আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এ নজির পেশ করত ব্যর্থ হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারি সংশোধনী এই মালার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না সে বিষয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত দুই দিনে তার জবাবে বলেন- প্রযোজ্য। তিনি বলেন,  ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদানের পর  এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দিয়ে আইনের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এ সংশোধনী কার্যকর হবে। আপনাদের ধরে নিতে হবে এই সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর আছে। কাদের মোল্লার রায় হবার আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে  রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সমান সুযোগ ছিল বলে ধরে নিতে হবে। সেখানে কবে রায় হল এবং কবে  আইন সংশোধন হল এটা অপ্রাসঙ্গিক  বিষয়। কারণ সংশোধনীতে বলা হয়েছে এ সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর।
কিন্তু আদালত এটর্নি জেনারেল এর উদ্দেশে গত বুধবার বলেন, আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে আমাদেরকে আইন রিরাইট করতে হবে। আইন রিসেটেল এবং রিস্টাবলিশ করতে হবে।
আদালত আরো বলেন, মনে রাখবেন আমরা আজ  এ মামলায় এখান থেকে যে ব্যাখ্যা দেব তা আইন হয়ে যাবে।  ভবিষ্যতে এর অনেক প্রভাব আছে। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাই যা বলার সাবধানে বলবেন। আপনি রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল। একই সাথে আপনি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক।

অবশেষে আজ   আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় আপিল বিভাগ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিলেন আইনী বিষয়ে তাদের মতামত গ্রহনের জন্য। অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে কোট করে বিভিন্ন অনলাইনে পরিবেশিত খবরে বলা হয়- ১৯৭৩ সালের আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় প্রযোজ্য কি-না সে বিষয়ে এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবেন আদালত।

এটর্নি জেনারেল এর কাছে দৈনিক নয়া  দিগন্ত’র পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে  যেমন আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন বিষয়ে মতামত নেয়া হবে কি-না সে বিষয়ে সকালে কোর্ট তো নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। কোর্ট বলেছেন ল’পয়েন্টে মতামত নেয়া হবে। তাহলে আপিলের ধারা  সংশোধন বিষয়ে মতামত নেয়ার যে কথা আপনি বলেছেন তার ভিত্তি কি-। তখন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  বলেন, আমি যেটা বলেছি সেটা আমার অনুমান।   আমি এখনো নিয়োগের অর্ডার কপি পাইনি।

এদিকে আজ  বৃহষ্পতিবার শুনানীর সময় আদালত এটর্নি জেনারেল এর কাছে জানতে চান যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মেয়াদ কত বছর ।  এটর্নি জেনারেল বলেন,  আমৃত্য। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা  তার সাথে একমত পোষন করেন।
বাংলাদেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৭ তে বলা হয়েছে যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের আইনের ক্ষেত্রে পেনাল কোর্ড এবং সিআরপিসি প্রযোজ্য নয়। অপর দিকে ট্রাইব্যুনালের আইনে যাবজ্জীবন সাজার  মেয়াদও উল্লেখ নেই। ফলে এ নিয়ে গতকাল প্রশ্ন তোলেন আদালত।
অপরদিকে এ বিচার দেশীয় আইনে করা যাবে বলে  মত দেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ গতকাল শুনানী গ্রহণ করেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন