বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৩

দেড় বছর বয়সেই নিজামীকে চিনতেন সাক্ষী!!!

মেহেদী হাসান
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১১ তম সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামছুল হক ওরফে নান্নু ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব যখন বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন থেকেই তাকে আমি চিনতাম। তিনি আমার পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোক। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব যখন বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন তাকে কেউ মতি ডাকতেন এবং কেউ তাকে নিজামী ডাকতেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ছাড়াও তোফাজ্জল হোসেন নামে আরো এক ব্যক্তিকে বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায় সাক্ষী চিনতেন বলে জানান।

সাক্ষী অ্যাডভোকেট শামছুল হক তার জবানবন্দীতে বলেছেন, বর্তমানে তার বয়স অনুমান ৬০  বছর। সে হিসেবে তার জন্ম সাল অনুমান ১৯৫৩ । মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম  আমাকে বলেন,  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৫৫ সালে বোয়ালমারী মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছেন এবং এরপর তিনি অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। আর তোফাজ্জল হোসেন ১৯৫৪ সালে একই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে অপর আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। পাসপোর্ট এবং  জাতীয় পরিচয়পত্রে সাক্ষী শামছুল হকের  জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১০ নভেম্বর ১৯৫৩। মিজানুল ইসলাম বলেন,  মাওলানা নিজামী  এবং তোফাজ্জাল হোসেন যখন বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন সাক্ষীর মুখের কথা এবং সনদ অনুযায়ী সাক্ষীর বয়স ছিল ছয় মাস থেকে দেড় বছর। আর মাদ্রাসাটির দূরত্ব সাক্ষীর বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার। কাজেই ছয় থেকে দেড় বছর বয়সের একজন শিশুর পক্ষে মাওলানা নিজামীকে মাদ্রায় ছাত্র থাকাকালে চেনার কথা অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা।

গত ২০ জুন অ্যাডভোকেট শামছুল হক ওরফে নান্নু মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জবানবন্দী প্রদান করেন। গত বুধবার এবং  আজ   বৃহষ্পতিবারের জেরায়  তিনি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং তোফজ্জাল হোসেন নামে আরেকজনকে বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায় চিনতেন বলে জানান। আজ  সাক্ষীর জেরা শেষ হয়েছে। সাক্ষীকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী, তারিকুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দিক, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।

আজ বৃহষ্পতিবারের জেরা (সংক্ষিপ্ত) :
প্রশ্ন : আলীয়া মাদ্রাসায় বৈঠকের খবর দিল যে সেকেন্দার আলী তার বাড়ি কোথায়?
উত্তর : শালগাড়িয়া।
প্রশ্ন : সেকেন্দার আলী বৈঠকের খবর কার কাছ থেকে কিভাবে পেয়েছিল তা জানতে পেরেছিলেন?
উত্তর : সে চায়ের দোকান দিত। বৈঠকে চা দিতে গিয়ে সে বৈঠকের খবর জানতে পারে।
প্রশ্ন : বৈঠকে যে সেল গঠিত হয়ে তাতে আপনার বর্নিত চারজন ছাড়া আর কারা ছিল?
উত্তর : এতদিন পর নাম স্মরন নেই। তবে মুসলিম লীগ, ছাত্রসংঘের লোকজন ছিল।
প্রশ্ন : ১১ এপ্রিলের পরে আপনি সর্বপ্রথম  কবে বাড়ি গেলেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : ১২ এপ্রিল আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : শহীদনগর ডাকবাংলোয়।
প্রশ্ন : ২৮ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কোথায় ছিলেন?
উত্তর : ২ এপ্রিল নগরবাড়ি এমবুশ করি। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। ১১ তারিখ যুদ্ধ শুরু হলে ওই দিন পাবনায় ফিরে আসি। পরে ডাববাগানে ক্যাম্প স্থাপন করি।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি পোড়ানো এবং আত্ময়স্বজনকে মারধোর করার খবর কার কাছ থেকে জানতে পারলেন?
উত্তর : আমি আমাদের বাড়ির পার্শবর্তী হরেন শাহার বাড়িতে পালিয়ে ছিলাম। তাদের বাড়ির ছাদ থেকে আমাদের বাড়ি পোড়ানো দেখতে পাই।
প্রশ্ন : আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর এক ভাই অ্যাডভোকেট ।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে কতদিন ঘর সংসার করেছেন?
উত্তর : অনুমান ২৫ বছর । তিনি ক্যান্সারে মারা গেছেন।
প্রশ্ন : ২৫ বছরে দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাইয়েরা কে কি করেন সে বিষয়ে খোজ নেননি?
উত্তর : আমি ঢাকা থেকেছি, কখনো বিদেশে থেকেছি ।
প্রশ্ন : আপনার প্রথম স্ত্রী কি জীবিত আছেন?
উত্তর : শুনেছি মারা গেছে। নিশ্চিত করে বলতে পারবনা জীবিত  না মৃত। প্রায় ৩০ বছর আগে তার সাথে আমরা বিচ্ছেদ হয়েছে।
প্রশ্ন : পাবনা জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট কে  হামিদুর রহমানকে চেনেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পাবনা নোটারি পাবলিকের অ্যাডভোকেট এ কে এম শামসুল হুদাকে চেনেন?
উত্তর : মনে পড়ছেনা।
প্রশ্ন : পাবনায় সর্ব প্রথম শান্তি কমিটি কবে গঠিত হয়?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : পাবনা শান্তি কমিটির সভাপতি সেক্রেটারির নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : স্মরন নেই।
প্রশ্ন : সাথিয়া পাইলট হাইস্কুলের শরীর চর্চা শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন  । তিনি যখন বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন তাকে চিনতেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : নিজামী সাহেব বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায় ডাবল প্রমোশন হয়েছিল শুনেছেন?
উত্তর :  জানিনা তবে শুনেছি সে ট্যালেন্ট ছাত্র ছিল।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পাবনার ঘটনা বিষয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী ছাড়া অন্য কোন ভিডিও সাক্ষাতকার আপনি দিয়েছেন কখনো?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : অন্য কোন গণমাধ্যমেও কোন ভিডিও সাক্ষাতকার দেননি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে দেয়া সাক্ষাতকারে আপনি নিজামী সাহেবের নাম বলেননি।
উত্তর : সে সাক্ষাতকার আশির দশকে দিয়েছিলাম। নিজামী সাহেবের নাম বলেছিলাম কি-না স্মরন নেই।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্বাদের সর্বশেষ যে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে তাতে আপনার নাম নেই।
উত্তর : সত্য নয়। আমি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাই।
প্রশ্ন : আপনার এসএসসি সনদে জন্ম সাল কত বলতে পারবেন?
উত্তর : মনে পড়ছেনা।
প্রশ্ন : পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ কত তাও মনে নেই?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : আপনার জন্ম সাল কত বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দেয়ার আগে আপনাকে ডিজিএফআই’র লোকজন তুলে নিয়ে গিয়েছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : তদন্ত কর্মকর্তার সাথে জবানবন্দী প্রদানের আগে আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন।
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : গত সংসদ নির্বাচনের আগে আপনার ছেলে প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার এই ছেলে প্রতিপক্ষের একটি মামলার আসামী।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার এই ছেলে বর্তমানে এএসপি।
প্রশ্ন : সত্য ।
প্রশ্ন : আপনি পাবনার ১৯৭১ সালের ঘটনা বিষয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছেন ১৯৭১ সালে আপনি নিজামী সাহেবকে পাবনায় দেখেননি। এমনকি এফিডেভিড করেও একথা বলেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি যে এফিডেভিট করেছেন তা সনাক্ত করেছেন আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাই অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমান।
উত্তর : আমি উক্তরূপ কোন এফিডেভিট করিনি।
প্রশ্ন : পাবনার নোটারি পাবলিক অ্যাডভোকেট এ কে এম শামসুল হুদা আপনার নিকট আত্মীয় এবং কুটুম হন তা  ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছেন।

আজ সাক্ষীর জেরা শেষে আগামী সাত জুুলাই মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষীর তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে।

বুধবারের জেরা :
আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর দেন এখানে শুধু সে উত্তরগুলো তুলে ধরা হল। উত্তর থেকেই আসা করে প্রশ্নটি কি ছিল তা বুঝে নিতে পারবেন।

রাজশাহী বারের এ্যাডভোকেট জনাব ফজলে রাব্বী সাহেবকে আমি চিনি। তিনি মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমি জানি তিনি বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ষাটের দশকের প্রথম দিকে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালসহ সত্তর দশকের প্রথম দিকে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে ছিলেন তাহা আমার স্মরণ নাই। এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী সাহেব আমার তৃতীয় শ্বশুর। তিনি বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী। এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী সাহেব কোন সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না, তিনি সব সময় মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, ইহা সত্য নহে। তিনি মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন আমি সেটা জানা স্বত্ত্বেও গোপন করেছি, ইহা সত্য নহে।
আমি আমার গ্রামের বাড়ি থেকে প্রাথমিক লেখাপড়া করেছি। আমি ১৯৬৭ সালে অসুস্থতা জনিত কারণে এস.এস.সি পরীক্ষা দিতে পারি নাই। ১৯৬৮ সালে সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেছি। আমি সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্র সংসদের কোন নির্বাচন হয়েছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ছে না। ঐ কলেজের ছাত্র সংসদের ভি.পি হিসেবে একজনকে চিনতাম তার নাম সোহরাব উদ্দিন সোবা, তবে তিনি কোন সময়ের ভি.পি ছিলেন তাহা স্মরণ নাই। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ ছাড়াও ছাত্র ইউনিয়ন, মেনন গ্রুপ ছিল এবং ছোট গ্রুপ হিসেবে ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া গ্রুপ ছিল। তাছাড়াও আমাদের কলেজে এন.এস.এফ নামে একটা ছাত্র সংগঠন ছিল। ১৯৬৯ সালে পাবনা সদরে সম্ভবত ক্যাপ্টেন সৈয়দ আজগর হোসেন জায়েদী এম.এন.এ থাকতে পারেন। ঐ সময় পাবনা সদরে এম.পি.এ কে ছিলেন তাহা আমি মনে করতে পারছি না। ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী সাহেবকে আমি ছোট বেলা থেকেই চিনতাম। তিনি আমার পিতার বন্ধু ছিলেন। তিনি আইনজীবী ছিলেন। ১৯৭০ সালে পাবনা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে ছিলেন মনে করতে পারছি না। ১৯৭০ সালে পাবনা শহরে এডওয়ার্ড কলেজ ছাড়া একটি মহিলা কলেজ ছিল। পাবনা শহর ও জেলা ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিল শাহাব উদ্দিন চুপ্পু। এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রলীগের সেক্রেটারী ছিলাম আমি এবং সভাপতি ছিলেন নজরুল ইসলাম। এডওয়ার্ড কলেজে ইসলামী ছাত্রসংঘ আন্ডার গ্রাউন্ড হিসাবে ছিল, প্রকাশ্য কার্যক্রম ছিল না। বিধায় তাদের কাউকে আমি চিনতাম না। শহর ইসলামী ছাত্রসংঘের কাউকে আমি চিনতাম না। জেলা শাখার আবু হানিফ নামে একজনের নাম মনে আছে, আরো অনেককেই চিনতাম তাদের নাম মনে নাই। ঐ আবু হানিফ সাহেব জীবিত আছেন। তবে কোথায় থাকেন তাহা বলতে পারব না। উল্লেখিত আবু হানিফ সাহেব ১৯৭২ সালে পলাতক ছিল বিধায় তাকে স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নাই। রফিকুন নবী বাবলুকে আমি ষাটের দশকের শুরু থেকে চিনতাম। তিনি আমার থেকে বয়সে সামান্য ছোট হতে পারেন। তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন কিনা তাহা আমার মনে নাই। তিনি পাবনা বা পার্শ্ববর্তী জেলার কোন কলেজের ছাত্র ছিলেন কিনা তাহা আমি মনে করতে পারছি না। তিনি কতদূর লেখাপড়া করেছেন সে সম্পর্কেও আমার কোন ধারণা নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে আমি সমগ্র পাবনা জেলায় প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করেছিলাম। তবে আমার নির্বাচনী এলাকা হিসাবে সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া এলাকায় বিশেষভাবে দায়িত্ব পালন করি। মাওলানা ইছহাক সাহেবকে আমি ষাটের দশকের গোড়ার দিক থেকে চিনতাম। তিনি জলসা করতেন এবং ইসলামী রাজনীতির সাথে জাড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব জাতীয় পরিষদে সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর আসনে নির্বাচন করেছিলেন এবং মাওলানা ইছহাক সাহেব পাবনা সদরে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন। অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের প্রতিদ্বন্দী ছিলেন এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক সাহেব সহ আরও অনেকে। এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক সাহেব সম্পর্কে আমার বিস্তারিত আর কিছু জানা নাই। ঐ প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রব বগা মিয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। পাবনা শহরে জনাব আমজাদ হোসেন সাহেব এম.এন.এ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী কে ছিলেন দীর্ঘ দিন আগের ঘটনা হওয়ায় তাহা আমার স্মরণ নাই। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব যখন বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন থেকেই তাকে আমি চিনতাম। তিনি আমার পার্শ্ববর্তি গ্রামের লোক। ঐ মাদ্রাসায় তিনি কোন কাস পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তাহা আমি বলতে পারব না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করার আগে অন্য কোথাও লেখাপড়া করেছেন কিনা সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই। বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়াশুনার পরে তিনি সাঁথিয়া উপজেলার বাহিরে কোন এক মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতেন শুনেছি তবে নাম বলতে পারব না। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব যখন বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন তাকে কেউ মতি ডাকতেন এবং কেউ তাকে নিজামী ডাকতেন।
আমি আমার ছোট পাথাইলহাট বাড়ি থেকে স্থায়ীভাবে শালগাড়িয়ার বাড়িতে যাই এস,এস,সি টেস্ট পরীক্ষার পরে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমি মে মাসের শেষের দিকে উচ্চতর ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে যাই। সেখানে আনুমানিক ১০ দিনের মত ছিলাম। সেখান থেকে ব্যারাকপুর যাই। তোফায়েল আহমেদ সাহেব রাজশাহী বিভাগের মুজিব বাহিনীর প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। সিরাজুল আলম খান নামে একজনকে আমি যুদ্ধকালীন সময়ে চিনতাম যাকে আমরা দাদাভাই বলে ডাকতাম। তিনি সম্ভবত মুজিব বাহিনীর ঢাকা জোনের দায়িত্বে ছিলেন। জেনারেল ওবানের নাম ঐ সময় শুনেছি, ঐসময় তিনি জেনারেল ছিলেন না, তার পদবী কি ছিল তাহা আমার স্মরণ নাই। মুক্তিযোদ্ধা ডি,এস,পি মাহবুব সাহেবকে আমি এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছিনা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে ঢাকা জেলার এস,পি মাহবুব উদ্দিন, বীর বিক্রমকে এই মুহূর্তে চিনতে পারছিনা, অনেক চেনা মুক্তিযোদ্ধার নাম আমি ভুলে গেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে সিরাজুল আলম খান দাদাভাইয়ের চিন্তাধারায় জেনারেল ওবানের সক্রিয় সহযোগীতায় বি,এল,এফ গঠিত হয়, ইহা সত্য নহে। মুজিব বাহিনী কত তারিখে গঠিত হয় তাহা আমি বলতে পারব না, তবে ১৯৭১ সালের মে মাসে গঠিত হয়েছিল। প্রথমে বি,এস,এফ গঠিত হয়, পরবর্তীতে উহা মুজিব বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। আমি ১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম বি.এল.এফ সম্পর্কে শুনতে পাই, তখন জানতে পেরেছিলাম যে, ১৯৬২ সাল থেকে ছাত্রলীগের একটা অংশে বি,এল,এফ-এর চিন্তা-চেতনা ছিল। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চের আগে বি,এল,এফ সংগঠনটি ঢাকায় ছিল, তবে আন্ডারগ্রাউন্ড হিসাবে ছিল।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের সময় আমি সহ পাবনা ছাত্রলীগের আরও অনেকে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলাম। ঐসময় আমি নিয়মিত পত্র-পত্রিকা পড়তাম। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সম্ভবত শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ।
আমার শহরের বাড়ি থেকে আলিয়া মাদ্রাসার দূরত্ব আনুমানিক আধা কিলোমিটারের কিছু বেশি হবে। ১৯৭০-৭১ সালে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কোন সংগঠন ছিল না, তবে কয়েকজন ছাত্র ছাত্রলীগের সমর্থক ছিল। তাদের নাম আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী ছাত্রসংঘের কোন নেতা তৎকালীন সরকার কিংবা সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছিল এই মর্মে ডন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আমি পাবনা পাবলিক লাইব্রেরীতে পড়েছি। ডন পত্রিকাটি করাচি থেকে ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত। সাক্ষাতকার রাওয়ালপিন্ডি নাকি ঢাকায় হয়েছিল তাহা আমার মনে নাই। উল্লেখিত সাক্ষাতকারে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সৈয়দ আবুল আ’লা মওদূদী এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের পক্ষ থেকে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে সৈয়দ আবুল আ’লা মওদূদী ঢাকায় এসেছিলেন মর্মে কোন খবর পত্র-পত্রিকায় দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার মনে নাই। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়েছিলেন কিংবা সেখানে কোন সভা সমাবেশ করেছিলেন মর্মে কোন খবর পত্র-পত্রিকায় দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার মনে নাই। ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাকিস্তান সরকারের পক্ষে এবং আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কোন বিবৃতি দিয়েছিলেন কিনা সে সম্পর্কে কোন খবর আমার নজরে আসে নাই। ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কোথায় ছিল তাহা এতদিন পরে আমি স্মরণ করতে পারছিনা, তবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুইটি অফিস ছিল। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব যে ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন তাহা আমি কেন সকলেই জানতো। পাবনা জেলায় ইসলামী ছাত্রসংঘ আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসকে অফিস হিসাবে ব্যবহার করতো। পাবনা জেলার ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারী ও সভাপতি কে ছিলেন আমি এতদিন পরে স্মরণ করতে পারছি না। পাবনা জেলায় সর্বপ্রথম জুলাই মাসে আলিয়া মাদ্রাসায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল। পাবনা জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তাহা আমার এতদিন পরে স্মরণ নাই। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে স্থানীয় ট্রেনিংয়ের সময় কর্মরত আনছার বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সহযোগীতা করেছিলেন কিনা তাহা সুনির্দিষ্টভাবে আমার স্মরণ নাই। পাবনাতে কোন ই,পি,আর ক্যাম্প ছিল না। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর থেকে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বেসামরিক জনগণের জন্য আরিচা নগরবাড়ী ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল, তবে সামরিক বাহিনীর জন্য ফেরী ব্যবহৃত হতে


 today's (Thursday) cross examination (full)
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত নগরবাড়ী ও আরিচা ফেরী ঘাট সামরিক বাহিনীর লোকজন নিয়ন্ত্রন করতো, তাদের নাম আমি বলতে পারব না। সেকেন্দার আলীর বাড়ি শালগাড়িয়া গ্রামে ছিল। সেকেন্দার চায়ের দোকানদার ছিল, তিনি ঐ মিটিংয়ে চা সরবরাহ করতে গিয়েছিলেন বিধায় বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। যে সেল গঠন করা হয়েছিল দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের নাম আমার মনে নাই, তবে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের লোকজন ছিল। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পাবনা শহর অসহযোগ আন্দোলনকারীদের আংশিক নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ পর্যন্ত পাবনা শহরে আর্মিরা কয়েকটি পয়েন্টে ছিল। তাদের মধ্যে বিসিক, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, অন্তর্ভূক্ত ছিল, ইহা ছাড়া তারা পেট্রোল ডিউটি করতো। ২৭শে মার্চ, ১৯৭১ তারিখের আগ পর্যন্ত পাবনা জেলা সামরিক আইন প্রশাসকের অফিস কোথায় ছিল তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ২৮শে মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিরা পাবনা শহরে স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল, তবে তাদের সহযোগীরা অবরুদ্ধ ছিল না। পাবনা শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ থেকে আলিয়া মাদ্রাসার দূরত্ব আধা কিলোমিটার, তবে কোন্ দিকে তাহা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। ১৯৭১ সালে বিসিক এলাকা পাবনা পৌরসভার ভিতরে নাকি বাইরে ছিল তাহা এ মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না। আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বিসিক এলাকা প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে, তবে কোন্ দিকে তাহা স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালে আলিয়া মাদ্রাসা এবং বিসিক এলাকার অবস্থান যেখানে ছিল এখনও সেখানেই আছে। অসহযোগ আন্দোলন শুরু থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পাবনা শহরের স্বাধীনতার পক্ষের আন্দোলন কার্যক্রম মূলতঃ ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করতো মুরুব্বীদের পরামর্শ অনুযায়ী। মুনসুর আলী সাহেবের টেলিফোন পাওয়ার পর থেকে ২৭শে মার্চ পর্যন্ত আমি পাবনা শহরে ছিলাম। আমি ঐ সময় এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগ শাখা অফিসে থাকতাম। এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের অফিসটি ছিল মুসলিম হোস্টেলে। মুসলিম হোস্টেল থেকে আলিয়া মাদ্রাসার দূরত্ব আনুমানিক ২০০/২৫০ গজ। নগরবাড়ী থেকে পাবনা শহরে যাওয়ার একাধিক রাস্তা রয়েছে তার মধ্যে একটি রাস্তার পাশে আমার বাড়ি। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল তারিখে যখন পাকিস্তান আর্মিরা পাবনা শহরে প্রবেশ করে তখন তারা নগরবাড়ী, কাশিনাথপুর, মুজাহিদ কাব ও আমার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিলের পরে সর্বপ্রথম আমি আমার বাড়িতে কবে গিয়েছিলাম তাহা স্মরণ করতে পারছি না। ১২ই এপ্রিল তারিখে আমি শহিদনগরে ডাব বাগানে এ্যামবুশ অবস্থায় ছিলাম। ১১ই এপ্রিল নগরবাড়ী ঘাট থেকে সরাসরি ডাব বাগানে এসেছিলাম কিনা তাহা আমার মনে পড়ছে না। পাবনা শহরে মার্চের ২৭ ও ২৮ তারিখে প্রতিরোধ যুদ্ধের পর আমরা ২রা এপ্রিল তারিখে নগরবাড়ী ঘাটে গিয়ে এ্যাম্বুশ করি এবং সেখানে আমরা ১১ই এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করি, এরপর সেখানে প্রচন্ড যুদ্ধ হওয়ার কারণে আমরা পাবনা ফিরে আসি এবং সেখানে থেকে পাইকারহাট ডাব বাগানে (বর্তমানে শহীদনগর) এসে এ্যাম্বুশ করি। ১২ই এপ্রিল থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত আমি  ডাব বাগানে ছিলাম কিনা তাহা স্মরণ নাই। আমার শালগাড়িয়ার বাড়ি পোড়ানো এবং আত্মীয় স্বজনদের মারপিট করার ঘটনা আমি পার্শ্ববর্তী হরেন সাহার বাড়ির বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে দেখেছিলাম। নগরবাড়ী ঘাট থেকে আমার শালগাড়িয়ার বাড়ির দূরত্ব আনুমানিক ৫০/৫৫ কিঃমিঃ হবে। ১৯৭১ সালে আমার শালগাড়িয়ার বাড়ির উত্তর দিকে আফজাল হোসেন টিপু, দক্ষিণে খোলা মাঠ এবং তার দক্ষিণে ধোপা বাড়ি ছিল, নাম মনে নেই, পশ্চিমে রাস্তা এবং পশ্চিমে সোনা ধোপার বাড়ি, পূর্ব দিকে হরেন সাহার বাড়ি ছিল। আমার বাড়িতে ঐ সময় আমার মা-বাবা, ভাই-বোন সকলেই ছিল। ভাই-বোনদের মধ্যে আমি সবার বড়। আমার এক ভাই মারা গেছে এবং এক ভাই জীবিত আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে আমাদের বাড়িটি পূন:র্নিমাণ করা হয়। ঐ বাড়িটি বর্তমানে আমাদের মালিকানায় নেই, বিক্রয় করে দিয়েছি। ঐ বাড়িটির বর্তমান মালিক একজন মহিলা, তিনি স্কুল শিক্ষিকা। ঐ বাড়িটিতে বর্তমানে কোন এ্যাডভোকেট থাকেন কিনা তাহা আমি জানি না। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর কোন ভাই এ্যাডভোকেট কিনা তাহা আমার জানা নাই। দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে আনুমানিক ২৫ বৎসর ঘর সংসার করেছি। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে ২৫ বৎসর ঘর সংসার করাকালীন আমি বিদেশে থেকেছি, ঢাকায় থেকেছি বিধায় তার ভাইয়েরা কে কি করেন তাহা খোঁজ খবর নেই নাই। আমার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আনুমানিক ৩৫ বৎসর পূর্বে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়, এবং তিনি জীবিত আছেন কিনা আমি জানি না, তবে শুনেছি তিনি মারা গেছেন। আমার প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি ছেলে আছে। তার নাম মুনতাসির মামুন, শুনেছি সে তার মায়ের সঙ্গে থাকে এবং ব্যবসা করে। পাবনা জেলা জজ আদালতে প্রাকটিসরত এ্যাডভোকেট কে,এম হামিদুর রহমানকে আমি চিনি না। পাবনার নোটারী পাবলিক এ,কে,এম শামছুল হুদা সাহেবকে আমি মনে করতে পারছি না। ২৭ ও ২৮শে মার্চের প্রতিরোধ যুদ্ধে পাবনা শহরে যে সকল পাকিস্তান আর্মিরা ছিল তারা সকলেই নিহত হয়েছিল। ঐ প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তান আর্মিদের কোন সহযোগী বাঙ্গালী নিহত হয়েছিল কিনা তাহা মনে করতে পারছি না। পাকিস্তান আর্মিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের সোর্স ছিল। সোর্সদের মধ্যে একজন ছিলেন অবসর প্রাপ্ত আর্মি আব্দুর রশিদ, তিনি বর্তমানে মৃত। ১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল থেকে ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত আমরা নগরবাড়ী ফেরী ঘাটেই অবস্থান করছিলাম। যে দুইজন অবজারভেটিব পারসনের কথা আমি বলেছি তাদের নাম এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নাই।
পাবনা শহরে বা জেলায় সর্বপ্রথম কোন্ স্থানে কবে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল তাহা স্মরণ নাই এবং তাহার সভাপতি ও সেক্রেটারী কে ছিল তাহাও স্মরণ নাই। পাবনা শহরে শান্তি কমিটির অফিস কোথায় ছিল তাহা আমার স্মরণ নাই, তবে তারা প্রায় সময় আলিয়া মাদ্রাসায় তাদের কার্যক্রম চালাতো। আমাদের শালগাড়িয়া এলাকার সাত্তার মাস্টার শান্তি কমিটির সদস্য ছিল। ঘেটু রাজাকারকে চিনতাম, তার বাড়িও শালগাড়িয়ায় ছিল। সাঁথিয়া এলাকার বাতেন নামে একজনকে চিনতাম সে মাওবাদী ছিল, তবে সে নকশাল ছিল কিনা তাহা আমি জানি না, তবে আমি তাকে কখনো দেখি নাই। আমাদের সাঁথিয়া পাইলট স্কুলের শরীর চর্চার শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন সাহেবকে তিনি যখন বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন থেকে চিনতাম। আমাদের ছোট পাথাইল হাট থেকে বোয়ালমারী মাদ্রাসার দূরত্ব আনুমানিক ৪ কিঃমিঃ হবে। আমাদের ছোট পাথাইলহাট গ্রাম থেকে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের মনমথপুর গ্রামের দূরত্ব আনুমানিক দেড় কিলোমিটার। মাঝে কোন গ্রাম নাই ফাঁকা মাঠ। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বোয়ালমারী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করাকালীন একবার ডাবল প্রমোশন পেয়েছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না, তবে তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন তাহা শুনেছিলাম। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে তারিখের আগে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে রুপসী, ডেমরা ও বাউশগাড়ী গ্রামের আজগর, আহেদ, ওয়াজ, আপেল, হোসেন, আব্দুল, মোকছেদ, খোরশেদ, আবুল, জামিরন, খুদে রায়, বলরাম রায়, দিলীপ রায়, মনিন্দ্র নাথ নন্দী, আলম প্রামানিক ও মলম প্রামানিকদের সাথে কথা বলতে দেখেছি কিনা তাহা স্মরন নাই। শহীদ জামিরনের বাড়ী কোন্ গ্রামে তাহা আমি জানি না, তার সঙ্গে আমার ডেমরা বাজারে দেখা হতো। তার স্বামীর নাম এতদিন পর আমি স্মরণ করতে পারছি না। ঐ তিন গ্রামে পাকিস্তান আর্মিরা বিভিন্ন দিক দিয়ে এসেছিল, তবে বেশীর ভাগ বাউশগাড়ী গ্রামের রাস্তা দিয়ে এসেছিল। ঐ তিন গ্রামে ১৯৭১ সালে আনুমানিক কত লোক বসবাস করতো তাহা এতদিন পরে বলা সম্ভব নহে। ঐ তিন গ্রামে পাকিস্তান আর্মিরা আক্রমণ করার ফলে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আমার বন্ধু শ্যামল কুন্ডুর বোন এবং সেকেন্দার সহ আরও অনেকে আহত হয়েছিল। তাদের সকলের নাম স্মরণ নাই। ঐ তিন গ্রামে ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১২ বৎসর বা তার বেশি ছিল তাদের মধ্যে অনেকে এখন জীবিত আছে। ঐ ঘটনার সময় যারা আহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই এখনও জীবিত আছে। ঐ ঘটনায় শহীদদের আত্মীয় স্বজন অনেকে জীবিত আছে। বেণু রায়ের বাড়ি ডেমরা গ্রামে। ঐ ঘটনার আগে থেকে বেণু রায়ের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল। ১৯৭১ সালে বেণু রায়ের বাড়ির উত্তরে কার বাড়ি তাহা স্মরণ নাই, দক্ষিনে বাগান ছিল, পূর্বে বাশঝাড় এবং পশ্চিমে মেইন রোডে আসার জন্য একটা রাস্তা ছিল। ঐ রাস্তার দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক ৩০০ গজের একটু বেশি।
১৯৭১ সালের ২রা নভেম্বর থেকে ৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাবনার সাথিয়া এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের আংশিক নিয়ন্ত্রনে ছিল। ঐ আংশিক এলাকার মধ্যে সাঁথিয়া সদর অন্তর্ভূক্ত ছিল কিনা তাহা এতদিন পরে মনে করতে পারছি না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় সাঁথিয়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন নিজাম উদ্দিন এবং মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন লোকমান হোসেন। পরবর্তীতে কমান্ড একিভূত করে নিজাম উদ্দিনকে কমান্ডার করা হয়। ১৯৭১ সালের ৮ই ডিসেম্বর সাঁথিয়ার মুক্ত অঞ্চল পাকিস্তান আর্মিরা দখল নেওয়ার জন্য আক্রমন করেছিল। সেই আক্রমনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের কারণে পাকিস্তান আর্মি এবং তাদের সহযোগীরা পালিয়েছিল। সেই আক্রমনে মুক্তিযোদ্ধাদের কেহ নিহত হয় নাই, তবে অনেকে আহত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২রা নভেম্বর থেকে ৮ই ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত সাঁথিয়া মুক্ত এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তান আর্মি ও  তাদের সহযোগীদের আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে যেখানে রাজাকার ক্যাম্প ছিল সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমন হয়েছিল এবং সাথে পাকিস্তান আর্মিরা ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ঐ সময় ধূলাউড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় আক্রমন করেছিল।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সম্পর্কে আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে যে জবানবন্দী দিয়েছি সেই বিষয়টি আমি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সোর্স এবং গোয়েন্দা সোর্সের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম। আমরা ওয়ারলেসের মাধ্যমে এই সমস্ত খবর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতাম। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের আগ পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আল বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। ১৯৭১ সালে আমি পত্র-পত্রিকা পড়তাম এবং মিডিয়া স্টাডী করতাম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন সেই বিষয়ে দেশী পত্রিকায় পরিবেশিত সংবাদ পড়েছি। এই বিষয়টি ঐ সময় ভারতের কিছু পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয় এবং ঐ সময় স্বাধীন বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভারত থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলার বানী পত্রিকায় ঐ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। স্বাধীনতা উত্তরকালে বুদ্ধিজীবি হত্যার বিষয়ে ৪০টির বেশী মামলা হয়েছিল কিনা বা ঐ মামলা সমূহের কোনটিতে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আসামী ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালের মে মাসে যখন মতিউর রহমান নিজামী সাহেব এবং মাওলানা সোবহান সাহেব আলিয়া মাদ্রাসায় আলবদর বাহিনী গঠন করেন তখন আলবদর শব্দটি সর্বপ্রথম শুনতে পাই। পাবনা জেলা আলবদর বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তাহা আমি স্মরণ করতে পারছি না। দেশ স্বাধীনের পরে সাঁথিয়ার বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ৩০ জনের অধিক রাজাকারের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল কিনা তাহা আমি স্মরণ করতে পারছি না। ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেল ছাড়া অন্য কোন টিভি চ্যানেল বা অন্য কোথাও আমি ভিডিও সাক্ষাৎকার দেই নাই কিংবা অন্য কোন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেই নাই। ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেলে আমি আশির দশকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম, ঐ সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নাম বলেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরণ নাই। স্যাটেলাইট টেলিভিশন এদেশে প্রথম কবে চালু হয় তাহা আমি বলতে পারব না। সর্বশেষ প্রকাশিত গেজেট সহ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সম্বলিত কোন গেজেটের প্রকাশিত তালিকায় আমার নাম নাই, ইহা সত্য নহে। এস,এস,সি সার্টিফিকেট জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্টে আমার জন্ম তারিখ ও সাল কত উল্লেখ আছে তাহা এ মূহুর্তে মনে করতে পারছি না। আমার জন্ম তারিখ ১০-১১-১৯৫৩ ইহা জেনেও গোপন করছি, ইহা সত্য নহে।
“১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ ঢাকা থেকে শহীদ ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর নিকট থেকে একটি টেলিফোন পাই। ফোনে তিনি আমাকে বলেন যে, পাকিস্তানীদের সংগে আলোচনা সফল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তোমরা সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও” বা “১৯৭১ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখের পূর্বে আমরা উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার নগরবাড়ী ঘাটে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অবস্থান নিই। প্রতিরোধের অংশ হিসাবে আরিচা ঘাটে ই,পি,আর, এর ওয়ারলেস সেট সহ একজন অবজারভেটিভ পারসন (ও,পি) নিযুক্ত করা হয়। ৯ই এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে আরিচা ঘাটের ওয়ারলেস অপারেটর নগরবাড়ী ঘাটের ওয়ারলেস অপারেটরকে এই মর্মে জানান যে অনুমান সকাল ৮:০০ ঘটিকার সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গানবোট ফেরী নিয়ে নগরবাড়ী ঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের সাথে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব এবং তার দলবলের লোকজন আছে। এতে আমরা বুঝলাম মতিউর রহমান নিজামী সাহেব এবং তার দলবল পাকিস্তানী বাহিনীকে পাবনা আক্রমণ করার জন্য পথ দেখিয়ে নগরবাড়ী ঘাটের দিকে নিয়ে আসছে। ঐদিন বেলা অনুমান ১১:০০ টার দিকে তারা নগরবাড়ী ঘাটে এসে পৌঁছলে” বা “এই যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সহযোগীতা নেয়” বা “ই,পি,আর, অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী আর্মি, পুলিশের সদস্যসহ প্রায় দেড়শত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালী শহীদ হন, যারা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগীতা করেছিল। এই ধরনের বিমান থেকে গোলা বর্ষণ এবং আর্টিলারী আক্রমণে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান প্রত্যাহার করে পাইকারহাটি ডাব বাগানে (বর্তমান নাম শহীদ নগর) অবস্থান নিই। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের সহযোগী মতিউর রহমান নিজামী এবং তাদের দলবলসহ পাবনা শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং তখন রাস্তার দুই পাশের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে থাকে। ঐদিন বিকাল বেলা তারা পাবনা শহরে প্রবেশ করে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক নারকীয় যজ্ঞের সৃষ্টি করে” বা “পরিবারের লোকজনকে মারধোর করে” বা “সেই সহযোগীদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবসহ তার দলবল ছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য সহযোগীতা করেছিল। আমি ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং প্রত্যক্ষভাবে ঐ ঘটনা দেখি। ১৯৭১ সালের মে মাসের ১০ তারিখে সকাল অনুমান ১০:০০/১১:০০টার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, মাওলানা আব্দুস সোহবান, ইছহাক মাওলানা, রফিকুন নবী বাবলু, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কুখ্যাত দালাল আসাদসহ কিছু লোকজন নিয়ে রূপসী প্রাইমারী স্কুলে আসে। সেখানে এসে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে লোকজন ডেকে নিয়ে মতিউর রহমান নিজামী বলেন যে, এখানে শান্তি কমিটি গঠন করতে হবে এবং অচিরেই পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী এসে এ এলাকায় শান্তি স্থাপন করবে, লোকজনকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগীতা করার জন্য নির্দেশ দেন। আমি ঐ সময় ডেমরা গ্রামে অবস্থান করছিলাম। নিজামী সাহেবদের আসার খবর পেয়ে আমি রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যাই এবং দেখতে পাই যে মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ইছহাক, রফিকুন নবী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কুখ্যাত দালাল হেডমাস্টারের অফিস থেকে বেরিয়ে সাঁথিয়ার দিকে যাচ্ছে। আমি তখন রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেড মাস্টার শামসুর রহমান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি জানান যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেব তাদেরকে শান্তি কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন, অচিরেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এই এলাকায় আসবে এবং শান্তি স্থাপন করবে” বা “এই আক্রমণ ছিল বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে আংশিক অথবা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য” বা “এই আক্রমণটি ছিল প্রি-প্লানড, সিষ্টেমেটিক এবং ওয়াইডস্প্রেড। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে করুনতম দিন যা আমি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের নিকট সাক্ষাতকারে বলেছিলাম, এটা বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা” বা “তাদের মধ্যে শিখা ও শিলা নামের দুইজন কলেজ ছাত্রীকে পাকিস্তান আর্মির লোকজন ধরে নিয়ে গিয়েছিল যাদের সন্ধান আজও পাওয়া যায় নাই। এই ঘটনার সময় আমার বন্ধু বেণু রায়ের বাড়িতে আমি অবস্থান করছিলাম। ভোর বেলায় চাইনিজ অটোমেটিক রাইফেলের ব্রাশ ফায়ারের শব্দে আমি বুঝতে পারি নিকটেই কোন জায়গায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ হয়েছে। তখন আমি ঐ বাড়ির লোকজনকে সর্তক করি এবং ওখানে থাকা নিরাপদ মনে না করে স্কেপ করার জন্য আমি নিজে রাস্তার দিকে বেরিয়ে আসি। রাস্তায় বেরিয়ে এসে আমি দেখতে পাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা ইছহাক, মাওলানা আব্দুস সোবহান, রফিকুন নবী, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালাল আসাদকে দেখি এবং তারা যাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছিল পাকিস্তান আর্মিরা তাদেরকেই গুলি করে হত্যা করছিল। আমি তখন নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে ধান ক্ষেতের ড্রেনের ভিতর অবস্থান নিই। ঐখান থেকেও কিছু কিছু ঘটনা দেখা যাচ্ছিল, যেমন মানুষের পালিয়ে যাওয়া, মেয়েদের হাত ধরে টানতে টানতে পাকিস্তান আর্মিদের ধরে নিয়ে যাওয়া, গাছের নিচে বসিয়ে মেয়েদের শরীর থেকে গহনা খুলে নেওয়া, বাড়ি ঘরে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলা। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর লোকজন চলে যাওয়ার পর আমি গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করি এবং নারকীয় যজ্ঞের চিহ্ন দেখি” বা “১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০০/১৫০ রাজাকারসহ এসে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। ক্যাম্প উদ্বোধনী বক্তৃতায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের হত্যা করতে হবে। আরও বলেন যে, যুবক ছেলেদের রাজাকারে ভর্তি করতে হবে” বা “১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারা পাকিস্তানের ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় আলবদরের ক্যাম্প স্থাপন করেন। ঐ ক্যাম্প থেকে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের আদেশ নির্দেশে এবং ষড়যন্ত্রে বৃহত্তর পাবনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় আলবদররা হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করতো। সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব মাঝেমাঝে যেতেন এবং তারই আদেশ নির্দেশে ঐ ক্যাম্পের কমান্ডার সামাদ ফকির সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করতো। আমি সাঁথিয়া পাইলট স্কুলের ছাত্র বিধায় সেদিন যখন সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয় তখন আমি খবর পেয়ে স্কুলের সংগে লাগোয়া একটি খালের ওপারে দাড়িয়ে অবলোকন করার চেষ্টা করি। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত লোকজনের নিকট থেকে উল্লেখিত বিবরণ জানতে পারি” বা “এই ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা কর্মীদের নিয়ে তিনি সমগ্র বাংলাদেশে আলবদর বাহিনী গঠন করেন। তিনিই ছিলেন এই আলবদর বাহিনীর প্রধান। তারই আদেশ, নির্দেশ ও ষড়যন্ত্রে এই আলবদর বাহিনী সারা বাংলাদেশে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ইত্যাদি প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। বিজয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এদেশকে মেধা শূন্য করার জন্য আলবদর বাহিনী পাকিস্তানী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এদেশের সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের রায়ের বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখে” এই কথাগুলি আমি তদন্ত কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
সেকেন্দার আলীর নিকট থেকে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় স্বাধীনতা বিরোধী সেল গঠন করার বিষয় শোনার কথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ১১ই এপ্রিল তারিখে আমার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদানের আগে ডি,জি,এফ,আই এর লোকজন আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, ইহা সত্য নহে। জবানবন্দী প্রদানের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে আমার ছেলে প্রতিপক্ষের আক্রমনে আহত হয়েছিল। ইহা সত্য নহে যে, আমার ছেলে ঐ সময় প্রতিপক্ষের দেওয়া একটি মামলায় আসামী ছিল। আমার ছেলে নির্বাচন পরবর্তীকালে এ,এস,পি পদে নিয়োগ পায়। আমি বিভিন্ন টি,ভি চ্যানেল, গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে এমন কি এফিডেভিট সম্পাদন করে নিজামী সাহেবকে ১৯৭১ সালে দেখি নাই মর্মে বক্তব্য দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। উক্তরুপ কোন এফিডেভিট আমি সম্পাদন করি নাই। উক্তরুপ এফিডেভিট আমি সম্পাদন করেছি এবং উহার সম্পাদনকারী এ্যাডভোকেট ছিল আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ভাই জনাব কে,এম হামিদুর রহমান, ইহা সত্য নহে (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)। পাবনার নোটারী পাবলিক এ,কে,এম শাসছুল হুদা আমার নিকট আত্মীয় বা কুটুম হওয়া স্বত্বেও আমি গোপন করছি, ইহা সত্য নহে। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে উর্দ্ধতন নেতাদের নির্দেশে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে অসত্য জবানবন্দী দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন