বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৩

কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানী//এটর্নি জেনারেল এর প্রতি আদালত : আপনার আবেদন গ্রহণ করলে আইন রিরাইট করতে হবে


mehedy hasan
আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল শুনানীর সময় এটর্নি জেনারেল এর প্রতি লক্ষ্য করে আদালত বলেন, আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে আমাদেরকে আইন রিরাইট করতে হবে। আইন রিসেটেল এবং রিস্টাবলিশ করতে হবে।
আদালত আরো বলেন, মনে রাখবেন আমরা আজ  এ মামলায় এখান থেকে যে ব্যাখ্যা দেব তা আইন হয়ে যাবে।  ভবিষ্যতে এর অনেক প্রভাব আছে। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাই যা বলার সাবধানে বলবেন। আপনি রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল। একই সাথে আপনি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক। সাবমিশন রাখার সময় এ বিষয় মনে রাখবেন। 

রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করেছে। ট্রাইব্যুনালের সাজার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিলনা পূর্বে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন রায় প্রদানের পর শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলনের দাবির ফলে   গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনের আপিলের ধারা সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষকেও আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। এ সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপক্ষ ফাঁসির দাবিতে আবেদন করেছে । আজ বুধবার  রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল তার দাবির পক্ষে যুক্তি পেশ করার সময়  দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত তাকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেন।

গতকালের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজ বুধবার শুনানীতে এটর্নি জেনারেল  মাহবুবে আলম  বলেন, আদালতের প্রশ্ন হল ট্রাইব্যুনাল আইনের চতুর্থ সংশোধনী কাদের মোল্লার মামলায় প্রযোজ্য কি-না। এ প্রশ্নে আমার জবাব হল- প্রযোজ্য। ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদানের পর  এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দিয়ে আইনের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এ সংশোধনী কার্যকর হবে। আপনাদের ধরে নিতে হবে এই সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর আছে। কাদের মোল্লার রায় হবার আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে  রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সমান সুযোগ ছিল বলে ধরে নিতে হবে। সেখানে কবে রায় হল এবং কবে  আইন সংশোধন হল এটা অপ্রাসঙ্গিক  বিষয়। কারণ সংশোধনীতে বলা হয়েছে এ সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর।

এটর্নি জেনারেল বলেন,  সংবিধানের ৪৭ ধারা মোতাবেক ১৯৭৩ সালের আইন সংরিক্ষত একটি আইন। এ আইনকে চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। সে হিসেবে আইনের চতুর্থ সংশোধনীও চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। তিনি বলেন, এই আইন চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। চ্যালেঞ্জ করলে আইনের উদ্দেশ্য ফ্রাসট্রেট হয়ে যাবে।

এটর্নি জেনারেল এর এ সাবমিশনের জবাবে আদালত বলেন, আমরা কোন আইন বা সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করছিনা। আমরা সিম্পল জানতে চাচ্ছি  ১৮ ফেব্রুয়ারি যে সংশোধনী হয়েছে তা  কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন,  এই সংশোধনী বিশেষ করে এই মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না তা বলেন।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, এই সংশোধনীতেতো কোন দণ্ড দিচ্ছেন না, বরং রাষ্ট্রপক্ষকে  আপিলের পাওয়ার দিচ্ছেন।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গতকালের মত আজো প্রশ্ন করেন, ভারতীয় উপমহাদেশে বা ইংল্যান্ডে যেকোন একটি সিঙ্গেল বেঞ্চ  এর একটি উদাহরন দেখান যেখানে রায় হবার পর এ ধরনের আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা হয়েছে।
এসময় এটর্নি জেনারেল বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশের মত ৩০ লাখ লোক মারা যায়নি, এত লোক ধর্মান্তরিত, দেশান্তরিত হয়নি এবং এত লোক ইজ্জত হারায়নি।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, এরকম হলে আসামী ন্যায় বিচার পাবেননা। ইমশোনাল হবেননা।
বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়া বলেন, ১৯৭১ সালে কি হয়েছিল তা কি আমরা জানিনা? আমরা কি বিদেশ থেকে এসেছি? আমরা যদি ইমশোনাল হয়ে যাই তাহলে কি ন্যায় বিচার হবে?
এর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ঠিক আছে আপনি কন্টিনিউ করেন। আমরা কম ইন্টারফেয়ার করব।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, কি বলেন আপনি? আমরা কি প্রশ্ন করবনা? আমরা কি কিয়ার হবনা? মনে করেন আমরা আসামীকে ফাঁসি দিয়ে দিলাম। তাহলে এর বিরুদ্ধে আসামীর আপিলের সুযোগ কোথায়? কারণ ট্রাইব্যুানালের রায়ের বিরুদ্ধে তারা এখানে এসেছে আপিল নিয়ে। ট্রাইব্যুনালতো তাকে ফাঁসি দেয়নি। এখন আমরা ফাঁসি দিলে তারা পরে আর আপিলের সুযোগ কোথায় পাবে? আর রাষ্ট্রপক্ষেরওতো আগে আপিলের সুযোগ ছিলনা।

সাবমিশনের এক পর্যায়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মাইলর্ড, আসামীর ক্ষেত্রে এখানে ইননোসেন্ট শব্দ ব্যবহার হবে কেন?
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমাদের এখানে তো ইননোসেন্ট হিসেবে একটা সাবমিশন আছে।
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া এটর্নি জেনারেলকে বলেন, তাহলে আপনারা আপিলের বিধান না রাখলেই পারতেন। ট্রাইব্যুনালই সব, বলে দিলে পারতেন। মিস্টার এটর্নি জেনারেল, মনে রাখবেন আমাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখতে হবে। আমরা আজ এখানে যে ব্যাখ্যা দেব তাই আইন। ভবিষ্যতে এর অনেক প্রভাব থাকবে। তাই যা বলার সাবধানে বলবেন।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এটর্নি জেনারেল এর উদ্দেশে বলেন,  আপনার আবেদন গ্রহণ করতে হলে ইউ হ্যাব টু রিরাইট দি ল’, রিসেটেল দি ল’ এন্ড  রিস্টাবলিশ দি ল’।

বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, আপনি রাষ্ট্রের একজন এটর্নি জেনারেল। সেই সাথে রাষ্ট্রের একজন নাগরিক। কাজেই সে হিসেবে সাবমিশন রাখবেন।

আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর আগে তার সাবমিশনের বলেছিলেন,  ট্রাইব্যুনালের সাজার বিরুদ্ধে পূর্বে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিলনা। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধনের পর  রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সুযোগ পেয়েছে এবং তারা মৃত্যুদন্ডের দাবি করে আবেদন করেছে। ১৮ ফ্রেবুয়ারি যদি আইনটি সংশোধন না হত তাহলে কাদের মোল্লার ফাঁসির কোন সুযোগ ছিলনা। আপিল বিভাগকে হয় ট্রাইব্যুনালের সাজা যাবজ্জীবন বহাল রাখতে হত না হয় কমাতে হত। কিন্তু যাবজ্জীবন বাড়িয়ে ফাঁসি দিতে পারতনা। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধনের ফলে আসামীর অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
আইন সংশোধন, আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে গতকাল এবং আজো বিতর্ক চলে শুনানীতে।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে  চার নং অভিযোগ কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হত্যাকান্ড থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। এর বিরুদ্ধেও সাজা দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে।  এ আপিলের সুযোগ আছে কিনা- আদালতের এ প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, সুযোগ আছে।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন