রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩

নিজামীকে জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাক্ষীর দুই ধরনের বক্তব্য


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে  চলতি মাসের ২০ জুন  বৃহষ্পতিবার ১১ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু । তিনি পেশায় অ্যাডভোকেট এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ  করেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে জানান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তিনি তার জবানবন্দীতে অনেকগুলো অভিযোগ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য মাওলানা নিজামীসহ অন্যান্যরা মিলে স্বাধীনতা বিরোধী সেল গঠন, সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন, রুপসী প্রাইমারি স্কুলে শান্তিকমিটি গঠনের নির্দেশ এবং আলবদর বাহিনী গঠনের নেতৃত্ব দান।  এছাড়া মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষনের নেতৃত্ব দানের বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেন সাক্ষী। পাবনা এলাকায় সংঘটিত এসব অপরাধের নেতৃত্ব দানের সময় সাক্ষী মাওলানা নিজামীকে দেখেছেন বলে সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন,  ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল পাকিস্তানী বাহিনী গানবোট নিয়ে নগরবাড়ি ঘাটের দিকে অগ্রসর হয়।  মাওলানা নিজামী এবং তার দলবল তাদের সাথে থেকে তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। সেদিনের যুদ্ধে প্রায় দেড়শ লোক শহীদ হয়। ১১ এপ্রিল মাওলনা নিজামী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিয়ে পাবনা শহরে প্রবেশ করে এবং রাস্তার দুপাশের  ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, দোকানপাট লুটপাট করে। ১৯ এপ্রিল একইভাবে মাওলানা নিজামীর সহায়তায় ডাববাগান আক্রমন পরিচালনা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৪ই মে, ১৯৭১ ফজরের আযানের পর সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামী, রফিকুন নবী, কুখ্যাত দালাল আসাদ এবং তার দলবল রূপসী, বাউশগাড়ী এবং ডেমরা গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং ব্যাপক গোলাগুলি চালিয়ে নিরস্ত্র নীরিহ এবং নির্দোষ মানুষদেরকে হত্যা করে। এতে ৪৫০ জনের অধিক শহীদ হন ।  এভাবে আরো বেশ: কিছু ঘটনা উল্লেখ করে সাক্ষী বলেন, মাওলানা নিজামীর দেখানো মতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেককে হত্যা করে। এসব  অনেক  অপরাধ সংঘটনের সময় মাওলানা নিজামীকে তিনি দেখার কথা বলেছেন।


ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার পূর্বে সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দেন এবং সে জবানবন্দীতেও মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য লিখিত আছে তার নামে।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার পূর্বে গত বছর জুলাই মাসে মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু অ্যাডভোকেট দিগন্ত টেলিভিশনের সাথে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সে সাক্ষাতকারে তিনি  বলেন, মাওলানা নিজামীকে  জড়িয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন জবানবন্দী দেননি তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি পাবনায় মাওলানা নিজামীকে দেখেননি। মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে তার নামে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীতে যদি কিছু লেখা থাকে তাহলে তা মিথ্যা। দিগন্ত টিভি কর্তৃক গ্রহণ করা তার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়নি ; তবে সে সাক্ষাতকারটি এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ইউটিউবে তার আরো একটি ভিডিও সাক্ষাকার  রয়েছে এবং সেখানেও তিনি মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন কিছু বলার কথা অস্বীকার করছেন। তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীতে তার  নামে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে জবানবন্দী বিষয়টি নজরে আসার পর সাক্ষী মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু অ্যাডভোকেট ২০১২ সালে একটি এফিডেভিট তৈরি করেন এবং সেখানে তিনি ঘোষনা করেন-   ১৯৭১ সালের ঘটনা বিষয়ে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে তার নামে তদন্ত কমকর্তার  তৈরি করা জবানবন্দীতে যা আছে তা মিথ্যা। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী উল্লেখ করে বলেন তিনি এসব কথা তার কাছে বলেননি।

প্রথমে আসা যাক দিগন্ত টিভিতে ধারন করা ইউটিউবে প্রচারিত তার সাক্ষাতকার বিষয়ে। নিম্নের এ লিংক দুটিতে তার সাক্ষাতকার দেখা এবং শোনা যাবে।
http

http://www.youtube.com/watch?v=90QbqzX4Y7E://www.youtube.com/watch?v=VdCU_R-6OLg

দিগন্ত টিভিতে  প্রদত্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, বাউশগাড়ী ঘেরাও করার সময়  পাকিস্তানী আর্মিকে  সাহায্য করছে বেড়ার আসাদ নাম করে একটা লোক। সে  ওদেরকে রাস্তা দেখায়ে নিয়ে আসছে। ... বিষয়টা হলো তখন পাকিস্তান মিলিটারীর দাবড় খাইয়া লোক যার যার মত লাইফ নিয়ে পালায়।  যেটা বাস্তবতা। পালায়ে চলে যায়। আসাদকে সামনা সামনি আমি দেখিনি, তবে লোক সবাই বলছে, যারা দেখছে যে, আসাদ ছিল। এইখানে মাওলানা নিজামী সাহেব, সোবহান সাহেব বা আদারস্ যারা আছে, ওদের ওখানে কেউ বলে নি যে, তারা ছিল বা আমরাও দেখিনি।....স্বাধীন হওয়ার পর যখন যাদের লোকজন মারা গেছে তারা আসাদকে দেখায়ে দিল যে এই লোকটি আনছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা গণআদালতে আসাদের বিচার করে, বিচার করে তার মৃত্যুদ- দেয়।...ডেমরা হত্যাকান্ডে  পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে রাস্তা আসাদ দেখায়ে নিয়ে আসছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, এ ঘটনায় আমি মতিউর রহমান নিজামীর নাম বলিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, তখন আমি মাওলানা নিজামী সাহেবকে চিনতামও না।আরেক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি তো বললাম, একাত্তরে তার সাথে আমার পরিচয়ই ছিলো নাই।

সাক্ষী বলেন, যে আসাদ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু সে মারা যাবার আগে কখনো মাওলানা নিজামী, আব্দুস সোবহানের নাম বলেনি।

তার নামে তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক  জমা দেয়া জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে সরাসরি অনেক অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাক্ষী বলেন, তিনি এটা বলেননি। যদি এধরনের কথা লেখা থাকে তাহলে তা  ঠিক নয় এবং তিনি এর প্রতিবাদ করবেন।

ইউটিউবে প্রচারিত তার আরেকটি সাক্ষাতকারে দেখা যায় যেখানে সাক্ষী বলছেন “তা তো তখন আমি কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার সামনেও সে (নিজামী)  কোন দিন পড়ে নাই। তার কারণ তাকে কোথাও কোন দিন দেখিও নাই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কিছু করার দেখি নাই বিরোধীতা করার কিছু করারও দেখি নাই।.. আমি নিজামী সাহেবকে কখনো দেখিনি। আমি একচুয়ালি যখন ওই যে পলিটিকস ওপেন হলো ৮৬ ইলেকশনে এ তখন থেকে তার সঙ্গে পরিচয়।

এফিডেভিট : সাক্ষী মো : মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু  ২০১২ সালে ১ম শ্রেণীর মেজিস্ট্রেট/ নোটারি পাবলিক এর কার্যালয়, পাবনা একটি হলফনামা তৈরি করেন। ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে তৈরি করা সে হলফনামায় সাক্ষী মো : শামছুল হক ঘোষনা করেন- স্বাধীনতাবিরোধী সেল গঠন, বাউশগাড়ীসহ বিভিন্ন অপারেশনে মাওলানা নিজামী কর্তৃক পাকিস্তানী সেনাবাহিীনকে নিয়ে যাওয়া এবং পথ দেখিয়ে দেয়া, রাজাকার বাহিনী গঠনসহ মাওলানা নিজামীকে জড়িয়ে আমার নামে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীতে যা উল্লেখ রয়েছে তা মিথ্যা।

তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক  জমা দেয়া জবানবন্দী কোট করে তিনি  ঘোষনা করেন-“এ বিষয়ে আমার পরিস্কার বক্তব্য এই যে,  আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জনাব আব্দুর রাজ্জাক খানের  নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীকালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে জড়াইয়া এ ধরনের কোন বক্তব্য প্রদান করিনাই। যদি আমার নামে উল্লিখিত কোন বক্তব্য লিখিত থাকে তাহা হইলে তা তদন্ত কর্মকর্তার মনগড়া বক্তব্য।
আমি এই মর্মে আরো ঘোষনা করিতেছি যে, আমি যে বক্তব্য প্রদান করিয়াছি তাহাতে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে জড়াইয়া কোন বক্তব্য  প্রদান করিনাই। কারণ তিনি উল্লিখিত ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত ছিলেননা।”

এফিডেভিট, দিগন্ত টিভিতে প্রদত্ত সাক্ষাতকার যা এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে এ বিষয়ে সাক্ষীর মতামত জানানর জন্য তাকে ফোনে চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।


ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত জবানবন্দী :
২০/৬/২০১৩
আমার নাম মোঃ শামছুল হক ওরফে নান্নু, আমার বয়স অনুমান ৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা- গ্রাম ছোট পাথাইল হাট, থানা- সাঁথিয়া, জেলা- পাবনা।
আমি পেশায় একজন আইনজীবী। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতির সদস্য। ঢাকা এবং নিজ জেলা পাবনায় আইন পেশায় নিয়োজিত আছি।
মহান মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন আমি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের বি,এ, কাসের ছাত্র ছিলাম। আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ ঢাকা থেকে শহীদ ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর নিকট থেকে একটি টেলিফোন পাই। ফোনে তিনি আমাকে বলেন যে, পাকিস্তানীদের সংগে আলোচনা সফল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তোমরা সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাবনা জেলায় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বি,এল,এফ) এর পাবান জেলা শাখা আমরা গঠন করি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে। ২৪শে মার্চ তারিখে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার নিকটবর্তী দোকানদার সেকেন্দার আলীর নিকট থেকে জানতে পারি যে ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ইছহাক, রফিকুন নবী ওরফে বাবলু পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় বসে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য ও সহযোগীতা করার জন্য একটি স্বাধীনতা বিরোধী সেল গঠন করে। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে যখন পাকিস্তান আর্মিরা পাবনায় ক্রাকডাউন করে তখন ২৬ মার্চ পাবনা বাসিরা, পুলিশ ও আর্মি সদস্য (অবসর প্রাপ্ত) পাকিস্তান ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ পাবনা সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয়। পাবনা হানাদার মুক্ত হওয়ার পর মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ইছহাক, রফিকুন নবী ওরফে বাবলু গং পাবনা থেকে পালিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখের পূর্বে আমরা উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার নগরবাড়ী ঘাটে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অবস্থান নিই। প্রতিরোধের অংশ হিসাবে আরিচা ঘাটে ই,পি,আর, এর ওয়ারলেস সেট সহ একজন অবজারভেটিভ পারসন (ও,পি) নিযুক্ত করা হয়। ৯ই এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে আরিচা ঘাটের ওয়ারলেস অপারেটর নগরবাড়ী ঘাটের ওয়ারলেস অপারেটরকে এই মর্মে জানান যে অনুমান সকাল ৮:০০ ঘটিকার সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গানবোট ফেরী নিয়ে নগরবাড়ী ঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের সাথে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব এবং তার দলবলের লোকজন আছে। এতে আমরা বুঝলাম মতিউর রহমান নিজামী সাহেব এবং তার দলবল পাকিস্তানী বাহিনীকে পাবনা আক্রমণ করার জন্য পথ দেখিয়ে নগরবাড়ী ঘাটের দিকে নিয়ে আসছে। ঐদিন বেলা অনুমান ১১:০০ টার দিকে তারা নগরবাড়ী ঘাটে এসে পৌঁছলে সেখানে পাকিস্তানী সোনাবাহিনীর সংগে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সহযোগীতা নেয়। সেই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন, ই,পি,আর, অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী আর্মি, পুলিশের সদস্যসহ প্রায় দেড়শত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালী শহীদ হন, যারা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগীতা করেছিল। এই ধরনের বিমান থেকে গোলা বর্ষণ এবং আর্টিলারী আক্রমণে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান প্রত্যাহার করে পাইকারহাটি ডাব বাগানে (বর্তমান নাম শহীদ নগর) অবস্থান নিই। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের সহযোগী মতিউর রহমান নিজামী এবং তাদের দলবলসহ পাবনা শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং তখন রাস্তার দুই পাশের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে থাকে। ঐদিন বিকাল বেলা তারা পাবনা শহরে প্রবেশ করে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক নারকীয় যজ্ঞের সৃষ্টি করে। ১১ই এপ্রিল বিকাল বেলা তারা আমার পাবনা শহরের শালগাড়িয়া বাসভবন আক্রমণ করে লুটপাট করে জ্বালিয়ে দেয় এবং পরিবারের লোকজনকে মারধোর করে। ঘটনার সময় পাকিস্তান আর্মিদের সংগে ছিল মতিউর রহমান নিজামী এবং তার দলবল। ১৯৭১ সালের সম্ভবত ১৯শে এপ্রিল দুপুর ২:০০ টার দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এদেশীয় সহযোগীদের সাথে করে পাইকারহাটি ডাব বাগানে (বর্তমান শহীদ নগর) মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর ব্যাপক সশস্ত্র আক্রমণ চালায়। সেই সহযোগীদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবসহ তার দলবল ছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য সহযোগীতা করেছিল। আমি ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং প্রত্যক্ষভাবে ঐ ঘটনা দেখি। ১৯৭১ সালের মে মাসের ১০ তারিখে সকাল অনুমান ১০:০০/১১:০০টার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, মাওলানা আব্দুস সোহবান, ইছহাক মাওলানা, রফিকুন নবী বাবলু, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কুখ্যাত দালাল আসাদসহ কিছু লোকজন নিয়ে রূপসী প্রাইমারী স্কুলে আসে। সেখানে এসে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে লোকজন ডেকে নিয়ে মতিউর রহমান নিজামী বলেন যে, এখানে শান্তি কমিটি গঠন করতে হবে এবং অচিরেই পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী এসে এ এলাকায় শান্তি স্থাপন করবে, লোকজনকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগীতা করার জন্য নির্দেশ দেন। আমি ঐ সময় ডেমরা গ্রামে অবস্থান করছিলাম। নিজামী সাহেবদের আসার খবর পেয়ে আমি রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যাই এবং দেখতে পাই যে মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ইছহাক, রফিকুন নবী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কুখ্যাত দালাল হেডমাস্টারের অফিস থেকে বেরিয়ে সাঁথিয়ার দিকে যাচ্ছে। আমি তখন রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেড মাস্টার শামসুর রহমান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি জানান যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেব তাদেরকে শান্তি কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন, অচিরেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এই এলাকায় আসবে এবং শান্তি স্থাপন করবে।
এই ঘটনার চারদিন পর অর্থাৎ ১৪ই মে, ১৯৭১ ফজরের আযানের পর সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সংগে মতিউর রহমান নিজামী, রফিকুন নবী, কুখ্যাত দালাল আসাদ এবং তার দলবল রূপসী, বাউশগাড়ী এবং ডেমরা গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং ব্যাপক গোলাগুলি চালিয়ে নিরস্ত্র নীরিহ এবং নির্দোষ মানুষদেরকে হত্যা করে। এই আক্রমণ ছিল বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে আংশিক অথবা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। ঐ আক্রমণে আমার পরিচিত আজগর, আহেজ, ওয়াজ, আপেল, একেন, আব্দুল মোকছেদ, খোরশেদ, আবুল, জামিরন, খুদে রায়, বলরাম রায়, দিলীপ কুমার রায়, মনিন্দ্র নাথ নদী, আলম প্রামাণিক, মলম প্রামাণিকসহ মোট ৪৫০ জনের অধিক শহীদ হন। এই আক্রমণটি ছিল প্রি-প্লানড, সিষ্টেমেটিক এবং ওয়াইডস্প্রেড। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে করুনতম দিন যা আমি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের নিকট সাক্ষাতকারে বলেছিলাম, এটা বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা। এই আক্রমণের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তার সহযোগী নিজামী সাহেব এবং তার দলবল ১৩৭টি বাড়িঘর, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার সময় লাগালাগি ঐ তিনটি গ্রামের ৩০/৪০ জন মেয়েকে ধর্ষণ করে। তাদের মধ্যে শিখা ও শিলা নামের দুইজন কলেজ ছাত্রীকে পাকিস্তান আর্মির লোকজন ধরে নিয়ে গিয়েছিল যাদের সন্ধান আজও পাওয়া যায় নাই। এই ঘটনার সময় আমার বন্ধু বেণু রায়ের বাড়িতে আমি অবস্থান করছিলাম। ভোর বেলায় চাইনিজ অটোমেটিক রাইফেলের ব্রাশ ফায়ারের শব্দে আমি বুঝতে পারি নিকটেই কোন জায়গায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ হয়েছে। তখন আমি ঐ বাড়ির লোকজনকে সর্তক করি এবং ওখানে থাকা নিরাপদ মনে না করে স্কেপ করার জন্য আমি নিজে রাস্তার দিকে বেরিয়ে আসি। রাস্তায় বেরিয়ে এসে আমি দেখতে পাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা ইছহাক, মাওলানা আব্দুস সোবহান, রফিকুন নবী, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালাল আসাদকে দেখি এবং তারা যাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছিল পাকিস্তান আর্মিরা তাদেরকেই গুলি করে হত্যা করছিল। আমি তখন নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে ধান ক্ষেতের ড্রেনের ভিতর অবস্থান নিই। ঐখান থেকেও কিছু কিছু ঘটনা দেখা যাচ্ছিল, যেমন মানুষের পালিয়ে যাওয়া, মেয়েদের হাত ধরে টানতে টানতে পাকিস্তান আর্মিদের ধরে নিয়ে যাওয়া, গাছের নিচে বসিয়ে মেয়েদের শরীর থেকে গহনা খুলে নেওয়া, বাড়ি ঘরে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলা। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর লোকজন চলে যাওয়ার পর আমি গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করি এবং নারকীয় যজ্ঞের চিহ্ন দেখি।
১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০০/১৫০ রাজাকারসহ এসে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। ক্যাম্প উদ্বোধনী বক্তৃতায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের হত্যা করতে হবে। আরও বলেন যে, যুবক ছেলেদের রাজাকারে ভর্তি করতে হবে। ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারা পাকিস্তানের ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় আলবদরের ক্যাম্প স্থাপন করেন। ঐ ক্যাম্প থেকে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের আদেশ নির্দেশে এবং ষড়যন্ত্রে বৃহত্তর পাবনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় আলবদররা হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করতো। সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব মাঝেমাঝে যেতেন এবং তারই আদেশ নির্দেশে ঐ ক্যাম্পের কমান্ডার সামাদ ফকির সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করতো। আমি সাঁথিয়া পাইলট স্কুলের ছাত্র বিধায় সেদিন যখন সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয় তখন আমি খবর পেয়ে স্কুলের সংগে লাগোয়া একটি খালের ওপারে দাড়িয়ে অবলোকন করার চেষ্টা করি। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত লোকজনের নিকট থেকে উল্লেখিত বিবরণ জানতে পারি।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালে সারা পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। এই ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা কর্মীদের নিয়ে তিনি সমগ্র বাংলাদেশে আলবদর বাহিনী গঠন করেন। তিনিই ছিলেন এই আলবদর বাহিনীর প্রধান। তারই আদেশ, নির্দেশ ও ষড়যন্ত্রে এই আলবদর বাহিনী সারা বাংলাদেশে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ইত্যাদি প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। বিজয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এদেশকে মেধা শূন্য করার জন্য আলবদর বাহিনী পাকিস্তানী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এদেশের সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের রায়ের বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি।


দিগন্ত টিভি সাক্ষাৎকার-শামসুল হক নান্নু ঃ
শামসুল হক নান্নু ঃ  তারা পুলিশ, বাঙ্গালী মেলেটারী এবং পাবনার ডিসি নুরুল কাদের খান, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী এক্সাইল বাংলাদেশ গভমেন্টের সংস্থাপন সচিব হয়েছিলেন। তিনি এবং পাবনার এসপি এম.এ গোফার এরা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রতিরোধ করে। প্রতিরোধের এ পর্যায়ে ২৭শে মার্চ পাবনা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় এবং ২৯শে মার্চ সারা বাংলাদেশে মধ্য একমাত্র পাবনাতেই পাবনার জেলা প্রশাসক, এসপি, জেলা জজ, অল ম্যাজিস্টেস্, অল গভমেন্ট অফিসার্স এবং পুলিশের গার্ড অব অনারে স্বাধীন বাংলাদেশের পাবনা জেলা জজ কোর্টের উপরে উঠানো হয় এবং সিভিল প্রশাসন চালু করা হয়। তো সেই অবস্থা থেকে গনরবাড়ী ঘাটে তখন প্রতিরোধ, নগরবাড়ী ঘাট যেহেতু উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ছিল প্রতিরোধ যোদ্ধারা ওই নগরবাড়ী ঘাটে অবস্থান নেয়। সম্ভবত অনেক দিনের ঘটনা, সবকিছু ঠিকঠাক মনে নেই। ৯ এপ্রিলের আগে, ৭ই এপ্রিল হতে পারে, সেই নগরীরঘাটে পাকিস্তানী এয়ার এটার্ক হয় এবং সম্মিলিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আক্রমণ হয়। তখন আমাদের এম্বুস উড্র করে আমরা পাইকের হাটি ডাববাগানে আসি। সেইখানে ইপিয়ারের বগুড়ার এবং বিভিন্ন জায়গার প্রতিরোধ করে। প্রতিরোধ যুদ্ধে সেখানে প্রতিরোধ ভাইঙ্গে পড়ে।
তার পরে হলো, সেটা বৈশাখ মাসের কয় তারিখ হইতে পারে ঠিক মনে নাই, আমি আমার দেশেরবাড়ী ডেমরার কাছে ছোট পাথালের বানাগডা ওখানে যায়।
চ্যানেল ঃ আচ্ছা এখানে ডেমরার এবং বাউসগাড়ী।
শামসুল হক নান্নু ঃ  হ্যা, ডেমরা এবং বাউসগাড়ী এডজাস্টেন।
চ্যানেল ঃ সেখানকার যে হত্যাকা- বা লুটপাট সেই প্রসঙ্গে ওই ঘটনার ক্ষেত্রে ওখানে কি ঘটেছিল?
শামসুল হক নান্নু ঃ  ওখানে ঘটেছিল, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত। ওই ডেমরা গ্রামে চারদিক থেকে ধনাঢ্য হিন্দুরা এসে ওখানে সেল্টার নেই। এটা শোনা যাচ্ছিল যে, পাকিস্তানী মিলিটারী আসতে পারে। তো ওই দিনে দেখাগেলো যে, চাইনিস অটো রাইফেলের গুলির শব্দ। আমরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সাউন্ডটা বুঝতে পারতাম, কোন পক্ষের বুলেট, তখন দেখাগেলো যে, গোট ডেমরা গ্রাম পাকিস্তানী মিলিটারী ঘিরে নিছে। এইটা ঘেরায় সাহায্য করছে বেড়ার আসাদ নাম করে একটা লোক ওদেরকে রাস্তা দেখায়ে নিয়ে আসছে। এই আসাদ যাদেরকে দেখায়ে দিছে তারা আর জানে বাঁচে নাই। তাদেরকে গুলি করে মাইরে ফেলছে। তো সেইখানে এবাউট সাড়ে চারশ লোক মারা যায়। প্রায় পৌনে দুইশ বাড়ীÑঘর পুড়ে যায়, বেশকিছু মেয়ে ধর্ষণ হয়। ডেমরা এবং বাউসগাড়ী পাশাপাশি দুইটি গ্রাম।
চ্যানেলঃ তো এখানে বলা হচ্ছে যে, এই ধর্ষণ, হত্যাকা- বা অগ্নিসংযোগ যেটা ঘটেছে তাতে একটি নাম বলেছেন, শোনা যাচ্ছে এই ঘটনার সাথে মতিউর রহমান নিজামী, তারপরে আরো মাওলানা সুবহানসহ আরো কয়েকজন ইনভলভ আছে। এই বিষয়ে আপনি একটু বলবেন..?
শামসুল হক নান্নু ঃ  বিষয়টা হলো তখন পাকিস্তান মিলিটারীর দাবড় খাইয়া লোক যার যার মত লাইফ নিয়ে... যেটা বাস্তবতা। পালায়ে চলে যায়। আসাদকে সামনা সামনি আমি দেখিনি, তবে লোক সবাই বলছে, যারা দেখছে যে, আসাদ ছিল। এইখানে মাওলানা নিজামী সাহেব, সোবহান সাহেব বা আদারস্ যারা আছে, ওদের ওখানে কেউ বলে নি যে, তারা ছিল বা আমরাও দেখিনি।
চ্যানেল ঃ ট্রাইব্যুনালের কাছে আপনি যে লিখিত স্টেটমেন্ট যেটা ট্রাইব্যুনালে পেশ করেছেন সেখানে স্বাক্ষী হিসেবে আপনার নাম আছে, এবং আপনি তাদের নাম বলেছেন এরকম স্টেটমেন্ট আছে।
শামসুল হক নান্নু ঃ  এধরনের স্টেটমেন্ট থাকলে স্টেটমেন্টটা ঠিক না। আমরা এধরনের স্টেটমেন্ট দেয়নি।
চ্যানেলঃ প্রসিকিউটর যে আদালতে দিল সেটা কতটুকু সত্য?
শামসুল হক নান্নু ঃ  আমাদের নাম দিয়ে যদি এ ধরনের কোন স্টেটমেন্ট দেয়, সেটা আমরা প্রটেস্ট করব। সেটা তারা দিলে এটা ঠিক করেনি।
চ্যালেনঃ আদালতকে তারা যে আপনাদের সাথেপ্রসিকিউটরের এ বিষয়ে কোন কথা হয়নি?
শামসুল হক নান্নু ঃ  প্রসিকিউটরের সাথে আপনি যেভাবে জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে কথা হয়েছে। যে, ওখানে গণহত্যাটা কিভাবে হলো? তখন আমি আসাদের নাম বলছি। সেই রাস্তা দেখায়। এবং এই আসাদটা, আপনাকে আরো বলি, স্বাধীন হওয়ার পর যখন যাদের লোকজন মারা গেছে তারা আসাদকে দেখায়ে দিল যে এই লোকটি আনছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা গণআদালতে আসাদের বিচার করে, বিচার করে তার মৃত্যুদ- দেয়।
চ্যানেলঃ প্রসিকিউশনের কাছে আপনি কি বলেছিলেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  প্রসিকিউশনের কাছে আমি বলছি যে, ডেমরা হত্যাকা-ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে রাস্তা আসাদ দেখায়ে নিয়ে আসছে।
চ্যানেলঃ সেখানে আপনি কি মতিউর রহমান নিজামীর নাম বলেছিলেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  না, আমি মতিউর রহমান নিজামীর নাম বলিনি।
চ্যানেলঃ তাহলে তার নামটা আপনার নাম দিয়ে কেন দিল?
শামসুল হক নান্নু ঃ  এটা তাদের বিষয়, দিয়ে থাকলে আমি এটা প্রটেস্ট করব।
চ্যানেলঃ তো অনেকদিন পরে, মানে এখন যে স্টেটমেন্ট, আপনি এখন যে জিনিসটা বলতেছেন, এটা এখন যে আপনি সাহস নিয়ে সততার পরিচয় দিয়ে বললেন, এটা কোন উপলব্ধি থেকে বললেন? বা আপনার এ ফিলিংসটা কেন আসল?
শামসুল হক নান্নু ঃ  আমরা যেটা সত্যিকারের ঘটনা সেটা প্রকাশ করার জন্য বললাম। যেটা বাস্তব সেটা লোক জানুক। ওই এলাকায় আপনি যদি কোন সময় যান আপনি টেলিভিশন টীম নিয়ে, তারাও বলবে যে, আসাদ নিয়ে আসছিল। এবং যারা শহীদ পরিবারের লোকজন তারাও বলবে যে, আসাদই নিয়ে আসছিল।
চ্যানেলঃ এইখানে যদি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বা সোবহান সাহেব এদের নাম জড়িয়ে মামলাটা পরিচালনা করা হয় আপনি তো একজন বিশিষ্ট আইনজীবীও, এ বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  এটা করা হলে সত্যের একটা অপলাপ হবে। যেহেতু আসাদ নিয়ে আসছিল, সেই আসাদকে গণআদালতে বিচার করে তখনই ৭১ সালেই ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে মৃত্যুদ- দেয় হয়। সেই বিষয়টি যদি অন্যের উপরদিয়ে ই-করা হয়, এটা একটা সত্যের অপলাপ হবে।
চ্যানেলঃ তো এ বিষয়ে আপনি কোন এপিটএভিট দিয়েছেন? যাতে সত্য জিনিসটা প্রকাশ পায়।
কামসুল হক নান্নু ঃ  প্রয়োজন হলে আমি দেব। আমি সত্যি কথাটা বলব।
চ্যানেলঃ তখন আপনি কি বলেছেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  এই কথাই বলছি।
চ্যানেলঃ এই বিচারটা, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, এই বিচারটা আপনি কেমনভাবে দেখতে চান?
শামসুল হক নান্নু ঃ  আমার বক্তব্যটা হলো, এই বিষয়ে স্বাধীন হওয়ার পরপর বাংলাদেশের পার্লামেন্টে একটা আইন হয়। সেই আইনে অনেকে গ্রেফতারও হয়, অনেকে কনভিউশন হয়, অনেকের একুইটাল হয়। ঐটা একটা বিষয় এমন এটা আগেই এ বিষয়ের যা কার্যক্রম বা একশান হয়ে গেছে। তো এতদিন পরে এ বিষয়টা নিয়ে টানাটানি করে জাতীকে দিধা বিভক্তি করা ওঃ রিষষ ষড়ংব ড়ঁৎ রহফবঢ়বহফবহপব. এটা আমার নিজেস্ব উপলব্ধি।
চ্যানেলঃ প্রসিকিউশনের সাথে আপনি যখন কথা বলেছেন, তখন আপনি একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, যেখানে একজন সৎ সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনি সত্য কথাগুলো বলেছেন। তাহলে পরবর্তীতে আপনার স্টেটমেন্ট, এখন যেটা দেখা যাচ্ছে যেটা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে, এই দুইটার মধ্যে গড়মিলটা কেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  এখন আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, যে ১৬১ করে যে আয়ু, সে তার কলমে অনেক কিছুই লিখতে পারে। পরবর্তীতে সে ১৬১টা আদালতে স্বাক্ষী দিয়ে প্রমাণিত হয়। আইনের দৃষ্টিতে পুলিশের কাছে দেয়া স্টেটমেন্টের আইনগত খুব একটা ভ্যালু নেই। আদালত যখন ১৬১ এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে, আদালতে যেটা স্বাক্ষ্য দেয় সেটাই হলো আসল কথা।
চ্যানেলঃ তো এখানে আপনার দেয়া লিখিত স্টেটমেন্ট যেটা আছে, সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ৩৫০ বা ৪৫০জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। ১৩৭টি বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
শামসুল হক নান্নু ঃ  এগুলো হয়েছে, কিন্তু এগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে আসাদ। পাকিস্তানী মিলিটারীর সাথে এসে ও লোক চিনায়েও দিয়ে যে, এই লোক এরকম, ও যাকে দেখায়ে দিয়েছে সে আর বাচেনিতো।
চ্যানেলঃ নিজামীর নাম আসলো কেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  এটা প্রসিকিউটর বলতে পরবে।
চ্যানেলঃ আপনি নিজামীর নাম বলেননি?
শামসুল হক নান্নু ঃ  না।
চ্যানেলঃ এখানে তো প্রসিকিউটর বলছে আপনিই বলছেন নিজামীর নাম।
শামসুল হক নান্নু ঃ  সেটা বললে বলতে পারে। আমি বলিনি। সেখানে তারা কেসটা সাজাইতে যে যে কৌশল নেওয়া লাগে সেভাবে হয়তো করছে।
চ্যানেলঃ আচ্ছা এটা কি আপনার কাছে খারাপ লাগতেছে যে, আপনি এত কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করলেন, এত আপনি একজন সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা, আপনার স্টেটমেন্টটা বিকৃত হলো।
শামসুল হক নান্নু ঃ  এটা পুলিশ কেসে প্রায় কেসেই এরকম হয়। একটা কেস সত্যি-মিথ্যা দিয়ে আদালতে খাড়া করে, পরে আদালতে স্বাক্ষী নিয়ে আদালত সেটা বিচার করে।
চ্যানেলঃ একেবারে লাস্ট, আমি আপনাকে কষ্ট দেব না, আপনি যদি একটু বলতেন, নিজামী বা মাওলানা সোবহান এদের নাম কি আসলে আপনি বলছিলেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  না, আসলে আমি কারো নাম বলি নাই, আমি আসাদের নাম বলছি এবং ওই এলাকার সবাই জানে যে, আসাদই ইনভলব এটার সাথে। তখন আমি মাওলানা নিজামী সাহেবকে চিনতামও না। শুনছি যে, উনি একজন ছাত্রনেতা, মাদ্রাসায় পড়ে, কিন্তু তার সাথে সামনা-সামনি আমার কোন সাক্ষাৎ হয়নি। পরিচয়ও ঘটেনি।
চ্যানেলঃ নিজামী সম্পর্কে আপনি যা জানেন, সেটা একটু বলবেন?
শামসুল হক নান্নু ঃ  আমি তার সম্পর্কে যেটুকু জানি, আমার এলাকায় প্রথম যখন উনি নির্বাচনে দাঁড়ায় তখনি তাকে দেখলাম। আমার একই নির্বাচনী এলাকার লোক। আমরা তখন অধ্যাপক আবু সাঈদের নির্বাচন করি, উনি উনার দলের নির্বাচন করেন। দেখা হলো, পরিচল হলো। লোক চিনালো যে, ইনি ক্যান্ডিডেট, ইনি জামায়াতে ইসলামীর ক্যান্ডিডেট। এলাকায় ওয়েল রেপুটেড লোক। তার ব্যক্তিগত কোন দূর্নীতির খবর আমার জানা নাই। ওয়েল রেপুটেড লোক। কাজেই ম্যান হিসেবে ভাল মানুষ। আবার উনি এমপিও হয়েছেন আমার এলাকা থেকে জনগনের ভোটে মন্ত্রীও হয়েছেন। এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজও করেছেন উনি। এটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলছি।
চ্যানেল ঃ একাত্তরের তিনি কোথায় ছিলেন ?
শামসুল হক নান্নু ঃ সে বিষয়ে আমার জানা নাই। আমি তো বললাম, একাত্তরে তার সাথে আমার পরিচয়ই ছিলো নাই। আমি তখন পড়তাম এডওয়ার্ড কলেজের বিএ কাসে। আমরা এক রাজনীতি করতাম উনারা একটা করত। দেখা সাক্ষাত হয় নি কোন সময়।
চ্যানেল ঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শামসুল হক নান্নু ঃ আমি সত্যি কথা যেটা সেটাই বললাম।

মাননীয় আদালত উনার কি বিচার করবেন সেটা তাদের ব্যাপার। আশা করি আদালত ফেয়ার বিচার করার চেষ্টা করবে।
আসাদকে যারা আমরা এরেস্ট করেছিলাম শরষিকান্ত থেকে, সাথিয়া থানার শরষিকান্ত থেকে। সে স্বিকারও করেছে করছে কিনা। তখন ইন্ট্রোগেশনও হয়েছে। আর কারা আছে ? আসাদ ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ধরা পড়ে। যখন নিয়ে যাওয়া হয়..
চ্যানেল ঃ আসাদকে যখন জিজ্ঞেস করেছেন কারা কারা ছিল ? আসাদ কাদের কাদের নাম বলেছে?
শামসুল হক নান্নু ঃ সে সব হলো তারা পেটের দায়ে রাজাকার হয়েছিল এ রকম ধরনের কিছু বলেছিল।
চ্যানেল ঃ আসাদকে আপনারা ধরেছিলেন কিনা বা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন কিনা ?
শামসুল হক নান্নু ঃ আমি ঠিক ধরি নাই আমার সহযোগী সাথীরা ধরেছিল শরীষা গ্রাম থেকে, (কাকে?) আসাদকে। যে ডেমরা ও বাউশগাড়ি হত্যাকান্ডে পাকিস্তানী মিলিটারিকে রাস্তা দেখায়া নিয়ে যায়। তারপরে যেসব বাড়িতে রেইট করতে হবে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং ব্যাপক লুটতরাজের টাকা পয়শা বস্তা ভরে আসাদ নিয়েও গেছিলো। সেই টাকা পয়শা পরবর্তীতে যাদের হাতে পরে তারাই গোপন ইনফরমেশন দিয়ে আসাদকে ধরায় দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের। তার কারণ ধনাঢ্য হিন্দু গ্রাম ডেমরা হিন্দু অধূষ্যিত গ্রাম তো ঐখানে গিয়ে শেল্টার নিয়েছিল।
চ্যানেল ঃ আসাদ কি স্বিকার করেছিল ?
শামসুল হক নান্নু ঃ আসাদ স্বিকার করেছিল আমার সাথে দুটো লোক আছে সে দুটো লোক একদমই গরীব লোক বেড়াবাজারে কুলিগীরি করতো। তারা পেটের দায়ে আসাদের পিছ পিছ গেছে। তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়নি মুক্তিযোদ্ধারা তারা এখনও বেঁচে আছে। কিন্তু কোন সময়ই বলেনি আসাদ মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞাসাবাদে, আমার সাথে ইন্ডায়রেক্টলি বা ডায়রেক্টলি যে মওলানা নিজামী, সুবহান সাহেবরা আছে হত্যাকান্ডের সাথে, কখনও বলেনি। (সমাপ্ত)


ইউটিউবে তার আরেকটি সাক্ষাতকার
নাম- আমি এডভোকেট শামছুল হক নান্নু, আমার গ্রামের বাড়ি- পাবলা জেলার সাঁথিয়া থানার ছোট পাথারিয়া গ্রামে,  পিতা-হাজি নিয়ামত আলী মরহুম।
প্রশ্নঃ আপনি তো পেশায়?
শামছুল হক নান্নুঃ আমি পেশায় আইনজীবী। সুপ্রীম কোর্ট বারের মেম্বার। সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সাথে একজন মুক্তিযোদ্ধা গর্ভনমেন্টের সম্মানী ভাতা প্রাপ্ত।
প্রশ্নঃ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী? তখন উনি ছোট ছাত্র মানুষ। খুব ম্যাচিউট ছিলেন না আমার চেয়ে তার বয়সে খুবটা বেশি ডিফারেন্স হবে না। তা তো তখন আমি কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার সামনেও সে কোন দিন পড়ে নাই। তার কারণ তাকে কোথাও কোন দিন দেখিও নাই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কিছু করার দেখি নাই বিরোধীতা করার কিছু করারও দেখি নাই। তো ঐ সময় বিভিন্ন গ্রুপে ডেমাডলে হয়তো আমার বাসাটা পুড়ে গিয়েছিল কিন্তু কারা পোড়াইছে এটা আমি সঠিক বলতে পারিনা, দেখি নাই। তার কারণ আমি তখন যুদ্ধে ছিলাম আপনার ইতে ছিলাম না, আমার বাসাটা একচুয়ালি কারা পোড়া দিছে এটা আমি শুনিও নাই কেউ বলতেও পারে নাই অ্যা, এবং আপনি অভিযোগ করছেন কিনা না, আমি অভিযোগ করেছিলাম কিনা নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে না, নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে বাসা পোড়ানোর কোন অভিযোগ করিনি। সেটা ঔ সিচিওশনে নিজামী সাহেব ছিলেন না পাবনা সদরে, উনি তখন পাবনায় থাকতেন না।
প্রশ্নঃ আপনি কি কখনো নিজামী সাহেবকে কি দেখেছেন?
শামছুল হক নান্নুঃ না, আমি নিজামী সাহেবকে কখনো দেখিনি।
প্রশ্নঃ কবে ওনাকে প্রকৃত অর্থে চিনলেন?
শামছুল হক নান্নুঃ আমি একচুয়ালি যখন ওই যে পলিটিকস ওপেন হলো ৮৬ ইলেকশনে এ তখন থেকে তার সঙ্গে পরিচয়।
প্রশ্নঃ এর আগে উনি এরকম কোন পাবনায়?
শামছুল হক নান্নুঃ না, ডেমরা থানায় পাকিস্তানী পিরিউডে হত্যা যজ্ঞ করে, তাদেরকে যে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধারা ধরে পরবর্তীতে এবং তাদের গণআদালতে বিচার করে তাদের সাজা দেয়া হয় নাম ছিলো আসাদ। হাজার হাজার লোক জানে আসাদের গণআদালতে বিচার করে তখন মৃত্যু দন্ড দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যু দন্ড কার্যকরী করে। তখন নিজামী সাহেব, সোবহান সাহেব, সাঈদী সাহেব বা গোলাম আযম বা অন্য কারও নাম তখন ওঠেও নাই, জনগণ অভিযোগও করেনি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল পাকিস্তান পিরিওডে তার হলো আসাদ। আসাদের বিরুদ্ধে জনগণ অভিযোগ করছিল, আসাদ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে এবং গণরায় তার মৃত্যু দন্ড দেয় এবং তা কার্যকরী করা হয়।
প্রশ্নঃ এই আসাদের বাড়ী কোথায় ছিল?
শামছুল হক নান্নুঃ আসাদের বাড়ি বেড়া। এটা সবাই এলাকার লোকজন জানে। এখানে যুদ্ধ হয় ঠিক ক্যালানী গ্রামে কিন্তু অন্য লোক পাকিস্তানীর বিরুদ্ধে গাইড করে নিয়ে গিয়েছিল। সেই লোকটাকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে ১৮ই ডিসেম্বরে লোকটা ধরা পড়ে। তার নাম লোক জানিয়ে যায় যে, জানা জানি হয়ে যায় যে এই লোক নিয়ে গেছে। সে লোকটার সেখানে মৃত্যু দন্ড কার্যকরী করা হয় পরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রকাশে, মুক্তিযুদ্ধটা কালিয়ানী গ্রামে হয়। গ্রামটার নাম হলো কল্যানী, লোকালী কালিয়ানী বলে ডাকে যে যুদ্ধের সময় নিজামী সাহেব ঐ এলাকায় যানও নাই এবং পাকিস্তানী মেলেটারীর সাথে যে লোক গেছিল সে লোক প্রকৃতই মেলেটারীকে গয়েন্দা সংস্থার লোক বাঙ্গালী, অ্যা, তাকেও ৭১ সালে যুদ্ধের পর জনগণ ধরে বিচার করে এবং কালিয়ানি প্রাইমারী স্কুলে তার মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়, অ্য, প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড কার্যকরী করা হয়। অ্যা, সে লোকটার নাম আমি স্মরণ করতে পারছি না। তবে এই ঘটনার সাথে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের যুদ্ধের দিনে বা সময়ে বা ঐ সময়ে ঐ এলাকায় উনি যাননি। আব্দুর রাজ্জাক খানের সামনে আমি যে বক্তব্য আমি দিয়েছি সে গুলো এ বক্তব্যের সাথে নিজামী সাহেব, গোলাম আযম সাহেব, সোবহান মাওলানা এদের নাম নাই। আমি, আমার শুধু কমপ্লেইনটা ছিল শুধু মাওলানা ইছহাকের বিরুদ্ধে। অ্যা, তখন উনি মিনিস্টার ছিলেন ঐ ড. মালেক মন্ত্রী সভার সেই সূত্রে আমার বাড়িঘর পুড়ে যায়। এই হিসাবে আমি অভিযোগ করেছিলাম। তাছাড়া নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে, গোলাম আযম সাহেবের বিরুদ্ধে, মাওলানা সোবহান সাবেবের বিরুদ্ধে, কি রফিকুন নবী এদের নামের বিরুদ্ধে আমি কখনো অভিযোগ করিনি। আমি আগেই বলেছি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ। তাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানোর জন্য এই মোকদ্দমা খাড়া করা হয়েছে।
প্রশ্নঃ আপনি বলেছেন বলে এখানে এই সাক্ষীতে আসছে যে, ১৪ই মে ১৯৭১, বাংলা ২৩শে বৈশাখ ভোরে ফজরের নামাজের পরপর মুক্তিযোদ্ধাদের জিম্মি করার বা মৃত অবস্থায় ধরার জন্য মাওলানা নিজামী, মাওলানা সোবহান, মাওলানা ইছহাক এর নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ জন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ডেমরা ও বাউশগারী গ্রাম ঘিরে ফেলে তাদের দেখিয়ে দেয়া লোকদের যারা ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কথা বলে তাদেরকে নিশৃংসভাবে হত্যা করে এবং নারী ধর্ষণ করে। এটা আপনি বলেছেন বলে?
শামছুল হক নান্নুঃ এই বিষয়টা হলো, এই বক্তব্যটা আমার বক্তব্য না, এই বক্তব্যটা পলিটিক্যালই জনাব মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলেম এবং ইসলামী চিন্তাবিদ তাকে পলিটিক্যালই ঘায়েল করার জন্য এধরনের একটা বক্তব্য আইও এই কেসের তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়ে আসছে। এটা তার মনগড়া বক্তব্য এটা আমার বক্তব্য নয়। এই বিষয়ে কোন সময়ে যদি সাক্ষী হিসাবে প্রয়োগ করা হয় এটা আমার বক্তব্য নয়, আমি সর্ব আদালতে বলতে প্রস্তুত আছি এবং হ্যা যদি কোন লিখিত স্টেটমেন্ট দেয়া লাগে তবে তাও দিতে আমি প্রস্তুত আছি।
প্রশ্নঃ আপনি তো বলেছেন প্রকৃত অর্থে আপনি ১৯৮৬ সালের নির্বাচন থেকেই আমি তাকে প্রথম চিনি?
শামছুল হক নান্নুঃ আমি আগে তাকে চিনতাম না।
প্রশ্নঃ কাজেই এধরনের বক্তব্য আপনার?
শামছুল হক নান্নুঃ এটা আমার বক্তব্য না। এটা শুধু পলিটিক্যালই তাকে ঘায়েল করার জন্য বক্তব্যটা সাজানো হয়েছে এবং আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া গণআদালতে যদি সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয় এটা আমি চ্যালেঞ্জ করব যে, এটা আমার বক্তব্য নয়।
প্রশ্নঃ অন্য জায়গায় বলা হচ্ছে যে, আপনার বক্তব্যে আমি আসছি যে, মুক্তিযুদ্ধ থাকিয়া জানিতে পারি অধ্যাপক গোলাম আযমের নির্দেশ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা সোবহান, মাওলানা ইছহাক, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আল-বদর বাহিনী গঠন করে মতিউর রহমান নিজামী আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন?
শামছুল হক নান্নুঃ আমি যুদ্ধে থাকাকালীন কোন দিন শুনিনি যে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেব আলবদর বাহিনীর কামান্ডার এবং ওনাকে কোন জায়গায় দেখিও নাই। উনি যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যে পাকিস্তানীদের পক্ষে নেমে বিরুধীতা করা এটাও আমার এলাকার কোন লোকজন দেখে নাই, বলে আমার জানা নাই। কেউ বলে নাই যে আমি দেখিছি। আমি হলফ করে বলতে চাই যে এই কথা গুলো আমার না। এখানে ভুলভাবে সাজানো হয়েছে বক্তব্য। আমার কাছে এটা এইভাবে আসছে আমি যেটা অনুভব করি ধং ধ পড়হংপরড়ঁং পরঃরুবহ ড়ভ ঃযব পড়ঁহঃৎু এটা রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসানোর জন্য এই ধরনের বক্তব্য আইও খাড়া করছে কারও ডিরেকশন নাই। এটা আমার বক্তব্য নয় এবং কোন আদালতে যদি আমার বক্তব্য বলে চালানো হয় তবে আমি তার বিরুদ্ধে আইনীগতভাবে চ্যালেঞ্জ করব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন