বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমি পেইড সাক্ষী নই : কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী

মেহেদী হাসান, ৩/৭/২০১২, মঙ্গলবার
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।  আজ প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন  মোজাফফ আহমেদ খান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ  আব্দুল কাদের মোল্লার বিচার চলছে।
স্যা গ্রহণের এক পর্যায়ে সাক্ষী উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি পেইড সাক্ষী নই। সরকার পক্ষের আইনজীবী ও ট্র ইব্যুনালের বিচারকদের  উদ্দেশে বলেন, আমাকে কেন চার্জ করছেন, আমি কোন স্যাই দেব না। আমাকে আমার নিজের মত করে কথা বলার সুযোগ না দিলে কোন কথাই বলবো না। তিনি উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, আমি সাী দেব না অপনারা যা-খুশি করেন।
সাী মোজাফফর  আহমেদ তার সাক্ষ্যের  শুরুতে বলেন, '৭১ সালের ২৫ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভোর রাতে গুলীর শব্দ শুনি।  ওই সময় আমি  যোদ্ধাদের নিয়ে কলাতিয়া নাজিরপুর থেকে  ঘাটারচর এলাকার দিকে যাই।   ইতোমধ্যে আমার বাবার সঙ্গে দেখা হয়। বাবা বললেন তুমি কোনদিকে যাচ্ছ। আমি বললাম ঘাটারচরের দিকে যাচ্ছি। বাবা বললেন ওইদিকে যেওনা। আমাদের বাড়ি আক্রমন করা হয়েছে এবং সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বললেন মুক্তিযোদ্ধা ওসমান ফারুক ও গোলাম মোস্তফাকে ওরা হত্যা করেছে স্থানীয় রাজাকাররা।
সাী এই বক্তব্য দেয়ার পর ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক  মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, পথে খানবাড়ীতে আক্রমণ হলে আমার ভাগ্নে ওসমান গনী ও গোলাম মোস্তফা নিহত হয়। এই লাইনটি কিয়ার করতে হবে। ওসমান গনী ও গোলাম মোস্তফা কিভাবে নিহত হয় তা আগে কিয়ার করেন তারপর বলেন। তখন সাী মোজাফর আহমেদ খান বলেন, আমার পিতার সাথে দেখা হওয়ার ঘটনা বলি তারপর বলব। এ পর্যায়ে বিচারক  মো. শাহিনুর ইসলাম আবার বলেন, ওই লাইনটা কিয়ার হচ্ছে না। তখন সাী  উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার করে বিচারকদের ল্য করে বলতে থাকেন, আমাকে কেন চার্জ করছেন। আমাকে বলার সুযোগ দেন। এভাবে চার্জ করলে আমি সাী দেব না আপনারা যা খুশি করেন।
এরপর ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়েই সাক্ষী  চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি হাইব্রিড মুক্তিযোদ্ধা নই। আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। বহু হাইব্রিড মুক্তিযোদ্ধা আমি দেখেছি। আমি পেইড সাী নই। আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে স্যা দিতে এসেছি। সাী ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের উপর প্তি হয়ে যখন এসব বক্তব্য দেন তখন কিছু সময়ের জন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিচারপতিরা চুপ করে নির্বিকার বসে থাকেন।

চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী, একেএম সাইফুল ইসলাম এবং তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান শেষ পর্যন্ত সাীকে পানি পান করিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনার প্রায় ১৫ মিনিট পর সাী আবার সাী দিতে রাজি হন। তখন তিনি বসে থেকে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর প্রশ্নে উত্তর দেন। এরপর মোজাফফর  আহমেদ খান দীর্ঘসময় স্যা দিলেও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম কোন প্রশ্ন না করে নীরব থাকেন।
স্যাগ্রহণ শেষ হলে বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জনাব চীফ প্রসিকিউটর যা ঘটেছে তার যৌক্তিকতা বিবেচনা করবেন। আমরা কিছুণের মধ্যে নেমে যাব। বিষয়টি আপনি ভেবে দেখবেন।

জবানবন্দী :
আমার নাম মোজাফফর আহমেদ খান। পিতা মৃত নূর মোহাম্মদ খান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। আটি বাউল হাই স্কুলের ছাত্র। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান কেরানীগঞ্জ ছাত্রলীগ থানা সভাপতি ছিলাম।

১৯৬৯ এর গনআন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনেতাদের সাথে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ঢাকা মহানগর মিরপুর-মোহাম্মদপুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা করেছি। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন গোলাম আযম। গোলাম আযমের পক্ষে আব্দুল কাদের মোল্লা কাজ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনের পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেই। ২৬ মার্চের পর আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার জন্য ভারতে যাওয়ার  প্রস্তুতি নেই। ১৯৭১ সালের ১৫ মে আমি আমার ১৫ জন বন্ধু নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওয়ান দেই। প্রশিক্ষন শেষে আমার নেতৃত্বে ২৫ জন মুক্তিযুদ্ধ দেশে প্রবেশ করি। কেরানিগঞ্জের কলাতিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপন করি।
যুদ্ধচলাকালীন সময়ে ২৫ নভেম্বর ভোর রাতে সর্বপ্রথম আমরা গুলির আওয়াজ পাই। তারপর আমি আমার ট্রুপস নিয়ে কলাতিয়া নাজিরপুর থেকে ঘাটারচরের দিকে মুভ করি। ইতোমধ্যে আমার বাবার সঙ্গে দেখা হয়। বাবা বললেন তুমি কোনদিকে যাচ্ছ। আমি বললাম ঘাটারচরের দিকে যাচ্ছি। বাবা বললেন ওইদিকে যেওনা। আমাদের বাড়ি আক্রমন করা হয়েছে এবং সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বললেন মুক্তিযোদ্ধা ওসমান ফারুক ও গোলাম মোস্তফাকে ওরা হত্যা করেছে স্থানীয় রাজাকাররা। তোমার কাছে যে অস্ত্র আছে তা দিয়ে তুমি ফায়ার ওপেন করোনা। আমি আমার ট্রুপস নিয়ে সেখানেই একটু নিচু জায়গায় বসে পড়লাম। বাবাকে বললাম আপনি আমার ক্যাম্পে যান, আমি দেখছি। আক্রমনটা ছিল ভোরে ফজরের আজানের সময়। ফজরের আজান থেকে ১১টা পর্যন্ত এই আক্রমন চলে। ওখানে ঘাটার চরে হিন্দু ও মুসলিম ৫৭ জনকে হত্যা করে। ঘাটারচর থেকে খান বাড়ি, খান বাড়ি থেকে বড় ভাওয়াল আক্রমন করে ২৫ জনকে হত্যা করে। বেলা ১১টার দিকে খবর পাই রাজাকার এবং পাক বাহিনী ওই স্থান ত্যাগ করে চলে গেছে। আমি প্রধান সড়ক দিয়ে না এসে পেছন দিক দিয়ে আমার ট্রুপস নিয়ে ভাওয়াল খান বাড়িতে আসি। ওইখানে এসে দেখলাম আমার বাড়ি আগুনে জ্বলছে। ওসামন গনি এবং গোলাম মোস্তফার লাশ সেখানে পড়ে আছে। লাশের দাফন সেরে পেছনের রাস্তা দিয়ে খান বাড়ি থেকে ঘাটার চরে চলে যাই। ঘাটারচরে গিয়ে বিভৎস অবস্থা দেখি। চারদিকে শুধু রক্ত, লাশ আর লাশ। স্থানীয় তৈয়ব আলী এবং আব্দুল মজিদের সাথে আমার দেখা হয়। তৈয়ব আলী, আব্দুল মজিদ এবং আরো অনেকে লাশ সনাক্ত করতে থাকে হিন্দু ও মুসলিম। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আব্দুল মজিদ বলল ২৩/২৪ নভেম্বর ঘাটারচরে একটি মিটিং হয়েছিল। ওই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল মুসলিম লীগের ডা. জয়নাল, কেজি করিম বাবলা, মুক্তার হোসেন, ফয়জুর রহমান, এরা ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে যোগাযোগ করে ওই মিটিংয়ের আয়োজন করে এবং আব্দুল কাদের মোল্লা ওই সময় ওই সভায় উপস্থিত ছিল। সভায় নিরস্ত্র মানুষকে গণহত্যার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করে ২৫ নভেম্বর ১৯৭১। আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ছদ্মবেশে মোহাম্মদপুরে আমার মামার বাসায় গিয়েছি একবার। মামার বাসা থেকে যখন গ্রামের বাড়িতে ফিরি মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে রাজাকার আল বদরের একটা টর্চার সেল ছিল। ওখানে ফেরার পথে দেখি টর্চার সেলের গেটের সামনে অস্ত্র হাতে কাদের মোল্লা সঙ্গীদের সাথে দাড়িয়ে আছে। ২৫ মার্চের (পরে বলেন) ২৬ নভেম্বর ঘাটার চরে যে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট হয় তা স্থানীয় রাজাকাররা কাদের মোল্লার সাথে যোগাযোগ করে তার নেতৃত্বে সংঘটিত করে। আমি দীর্ঘদিন   ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি জানিয়ে আসছি। ২০০৭ সালে আমি ঢাকার চিফ জুড়িশিয়াল মেজিস্ট্রেট এর কাছে এই বিচারের দাবিতে একটি সিআর মামলা করি। মামলা নং ১৭/২০০৭। পরবতীতে এটা জিআর মামলায় পরিণত  হয়। কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা নং ৩৪/১২, ২০০৭।

জেরা
প্রশ্ন : ভোটার আইডি কার্ড আছে?
উত্তর : আছে। সাক্ষী কার্ড প্রদর্শন করেন।
প্রশ্ন : ভোটার আইডিতে জন্ম তারিখ লেখা আছে কি?

উত্তর : আছে, ৩ মার্চ ১৯৫৩।

প্রশ্ন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন কি?

উত্তর: মনে নেই। এরপর ট্রাইব্যুনাল সাীর জেরা আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করেন। এছাড়া আগামী ১২ জুলাই আসামী পরে ডকুমেন্ট ও সাীর তালিকা জমা দেয়ার দিন ধার্য করেন।

স্যাগ্রহণের আগে ডিফেন্স কাউন্সেল এডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, রাষ্ট্রপ বার বার সাীর তালিকা পরিবর্তন করছে। আজকে যার সাী দেয়ার জন্য আসার কথা ছিল তিনি আসেননি। তালিকার ১০ নম্বর সাী এসেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা শুরু করি। জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, তালিকার নাম অনুসারে স্যাগ্রহণ শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এ সময় ডিফেন্স ল'ইয়ার ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবীর, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

৮/৭/২০১২
রোববার
কাদের মোল্লাকে সরাসরি কোন অপরাধ করতে দেখেননি সাী

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে সরাসরি কোন অপরাধ করতে দেখেননি  সাী মোজাফফর আহমেদ খান। শুধু চাইনিজ রাইফেল হাতে নিয়ে কাদের মোল্লাকে দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখেছেন তিনি। আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ও অপর দুই সদস্য ওবাইদুল হাসান ও শাহিনুর ইসলাম সাীর জেরা গ্রহণ করেন। আইনজীবী একরামুল হক সাীকে জেরা করেন। এর আগে গত ৩ জুলাই আদালত কে সাী তার অনাকাঙিত আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মা প্রার্থনা করেন। আজ  জেরাতে সাী বলেন, কাদের মোল্লাকে তিনি অনেক অপরাধ করতেই দেখেছেন। কিন্তু আইনজীবীর প্রশ্ন এবং স্পেসিফিক কোন অপরাধটি কাদের মোল্লা নিজে করেছেন তার সঠিক জবাবই দিতে পারেননি, শুধু বলেছেন কাদের মোল্লা মো.পুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সামনে একটি চাইনিজ রাইফেল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ডিফেন্স টিমের আইনজীবী অবশ্য ট্রাইব্যুনালকে জানান, ৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর কাদের মোল্লা ফরিদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। আর ঢাকায় ফিরে আসেন ৭২ সালের জানুয়ারি মাসে। আজকের  সাীর জেরা ও উত্তর তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : আটিবাউল হাই স্কুল কোন থানার অধীনে?

উত্তর : কেরানীগঞ্জ থানার অধীনে।

প্রশ্ন : আপনি কোন সালে এসএসসি, এইচএসসি ও বিকম পাস করেছেন?

উত্তর : এসএসসি ৭২ সালে আটিবাউল হাই স্কুল থেকে, এইচএসসি হাফেজ মুসা কলেজ থেকে পাস করি এটা তখন লালবাগ থানা বর্তমানে হাজারীবাগ থানার অধীনে।

প্রশ্ন : বিকম কবে পাস করেছেন?

উত্তর : আমি বিএসসিতে ভর্তি হয়েছিলাম পরীা দেইনি। বোরহানউদ্দিন কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম।

প্রশ্ন : এরপরে কি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিা নিয়েছেন?

উত্তর : না।

প্রশ্ন : সরকারি বা অন্য কোন চাকরি করেছেন?

উত্তর : না।

প্রশ্ন : ৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের কারা ভিপি বা জিএস ছিলেন বলতে পারবেন?

উত্তর : না, বলতে পারবো না।

প্রশ্ন : আপনি ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন কেরানীগঞ্জ থানার। আপনাকে কে স্বীকৃতি দিয়েছে?

উত্তর : তৎকালীন ছাত্রনেতা নুরে আলম সিদ্দিকী।

প্রশ্ন : তিনি এখন কি করেন?

উত্তর : তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য।

প্রশ্ন : কেরানীগঞ্জে কি তখন ছাত্রলীগের কোন অফিস ছিল?

উত্তর : না।

প্রশ্ন : ছাত্রলীগে আপনার থানায় কত সদস্য ছিল?

উত্তর : ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ছিল।

প্রশ্ন : ঐ সময়ে সেক্রেটারি কে ছিলেন?

উত্তর : জাফরুল্লাহ। তিনি মারা গেছেন।

প্রশ্ন : কমিটির কত জন বেঁচে আছেন?

উত্তর : মনে হয় ১৫ জনের মতো।

প্রশ্ন : জীবিত ১৫ জনের নাম বলতে পারবেন?

উত্তর : ১৫ জনের মধ্যে বর্তমানে একজন সরকারের সচিব। অন্যরা হলেন, সাহাবুদ্দিন, খলিলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন ফারুকী, শাহজাহান, শাহনেওয়াজ, আজিজুর রহমান খান, মফিজ উদ্দিন, আ. জলিল, মাহমুদুল হক, ফজলুর রহমান, শামসুল হক, নজরুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, আর মনে পড়ছে না।

প্রশ্ন : এই ১৩ জনের মধ্যে ফ্রিডম ফাইটার কত জন ছিলেন?

উত্তর : আনোয়ার হোসেন ফারুকী, শাহজাহান, নুরুল ইসলাম, মফিজ উদ্দিন, এই কয়জন।

প্রশ্ন : এরা কি আপনার সমবয়সী?

উত্তর : কাছাকাছি বয়সের।

প্রশ্ন : এরা সবাই কি কেরানীগঞ্জে বাস করেন?

উত্তর : হ্যাঁ, সবাই কেরানীগঞ্জে বাস করেন।

প্রশ্ন : আপনি বলেছেন, ১৫ জন বন্ধু নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা গিয়েছেন। তাদের নাম বলুন?

উত্তর : সাহাবুদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, আ. হাকিম, মজিবুর রহমান, বাবুল মিয়া, এরশাদ আলী, হাসান, সিরাজুল হক, শহিদুল্লাহ, আনোয়ার হোসেন, আ. আওয়াল, সোবহান, শাহ আলম, আব্দুল মান্নান।

প্রশ্ন : এরা কি সবাই জীবিত?

উত্তর : না, কয়েকজন মারা গেছেন। হাসান, সোবহান, বাবুল মিয়া, এরশাদ এরা মারা গেছেন।

প্রশ্ন : গোলাম মোস্তফার পিতার নাম কি?

উত্তর : সাদেক আলী।

প্রশ্ন : জীবিতরা কি সরকারি কোন চাকরি করেন?

উত্তর : না। তারা সবাই বাড়িতে আছেন।

প্রশ্ন : এই ১৫ জন কি ভারতে গিয়ে কংগ্রেস ভবনে নাম এন্ট্রি করেছেন?

উত্তর : হ্যাঁ।

প্রশ্ন : আগরতলায় গিয়ে আপনি কয় দিন ছিলেন?

উত্তর : বিভিন্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে বিভক্ত করে দিয়েছিল আমাদের।

প্রশ্ন : ১৫ জনের মধ্যে আপনার সাথে কে কে ছিল?

উত্তর : না, আমার সাথে ১৫ জনের মধ্যে কেউ ছিল না। আমি একাই হাপানিয়া ক্যাম্পে গিয়ে ২০ দিন থাকি।

প্রশ্ন : সেখান থেকে কোথায় পাঠালো? কতদিন ছিলেন?

উত্তর : মোহনপুর ক্যাম্পে ৭ দিন ছিলাম।

প্রশ্ন : কত তারিখে সেখানে যান বলতে পারেন?

উত্তর : না, কত তারিখ থেকে কত তারিখ ছিলাম তা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না।

প্রশ্ন : মোহনপুর থেকে কোথায় গেলেন?

উত্তর : দুর্গা চৌধুরীপাড়া। এটা আগরতলায় ছিল। সেখানে ১৫ দিন ছিলাম।

প্রশ্ন : সেখান থেকে কোথায় গেলেন?

উত্তর : গোকুল নগর ক্যাম্পে, সেখানে ১৫ দিন ছিলাম।

প্রশ্ন : আপনি অস্ত্র পেলেন কখন?

উত্তর : আসামের লাইলাপুরে ২১ দিন ট্রেনিংয়ের পরে দ্বিতীয় ভাগে আরও ৭ দিন বিশেষ ট্রেনিং করেছি আমাদের ইনচার্জ ছিলেন মেজর বরীন্দ্র সিং।

প্রশ্ন : অস্ত্র পেলেন কবে?

উত্তর : আসাম থেকে আগরতলায় আসার পর ট্রানজিট ক্যাম্পে আসার পর অস্ত্র পাই হাতে।

প্রশ্ন : ২১ দিনের ট্রেনিং কত তারিখে শুরু হয়?

উত্তর : '৭১ সালে জুলাই মাসের ৩ তারিখে লাইলাপুর ক্যাম্পে যাই। সম্ভবত ৩০ জুলাই আমাদের ডিপারচার দিন।

প্রশ্ন : মোট কতজন ঐ তারিখে ফেরত আসেন?

উত্তর : আমাদের সাথে ১০টি ট্রাক ছিল। প্রতি ট্রাকে ২০/২৫ জন করে ছিলাম।

প্রশ্ন : তারা কী সবাই বাংলাদেশী?

উত্তর : হ্যা, সবাই বাংলাদেশী।

প্রশ্ন : আপনার সাথে কেরানীগঞ্জের কত জন ছিল?

উত্তর : আমার সাথে আগের ঐ ১৫ জনই ছিল।

প্রশ্ন : রবীন্দ্র সিং কী কোন কাগজপত্র দিয়েছিলেন?

উত্তর : হ্যাঁ, আমাদের সাথে ভারতীয় অফিসার ছিলেন। তার কাছে দিয়েছেন।

প্রশ্ন : প্রতি টীমে কত জন সদস্য ছিল?

উত্তর : আমার টীমে ২৫ জন ছিলাম।

প্রশ্ন : আপনাদের কোথায় পাঠালো?

উত্তর : আমাদেরকে কুমিল্লার সিএমবি রোডে অস্ত্রসহ নামিয়ে দিয়ে যায়।

প্রশ্ন : দেশে এসে আপনারা কোথায় অবস্থান নিলেন?

উত্তর : কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় ক্যাম্প স্থাপন করি।

প্রশ্ন : সেখানে কী স্কুল বা প্রতিষ্ঠান ছিল?

উত্তর : না, এটা ছিল প্রাইভেট বাড়ি।

প্রশ্ন : মালিকের নাম কি?

উত্তর : মতিউর রহমান সরকার।

প্রশ্ন : তিনি কি জীবিত আছেন এখন?

উত্তর : হ্যাঁ, বেঁচে আছেন তবে বয়স্ক বিধায় চলাফেরা করতে পারেন না।

প্রশ্ন : কবে আপনারা ক্যাম্প স্থাপন করেন?

উত্তর : '৭১ সালের ২৮ আগস্ট।

প্রশ্ন : প্রথম অপারেশন কবে কোথায় করেন?

উত্তর : প্রথম অপারেশন হয় ৫/৯/৭১ স্থান ছিল সৈয়দপুরের তুলসীখালীতে। এই জায়গাটি ছিল তিনটি থানার সংযোগস্থল।

প্রশ্ন : অপারেশন কখন শুরু হয়?

উত্তর : সকাল ১০টায় আরম্ভ করি।

প্রশ্ন : আপনার অপারেশন কাদের বিরুদ্ধে?

উত্তর : পাকিস্তান আর্মিদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ ছিল।

প্রশ্ন : পাক আর্মি কিভাবে আসছিল?

উত্তর : ধলেশ্বরী নদীতে গানবোটে এসেছিল।

প্রশ্ন : তারা কোথায় আক্রমণ করে?

উত্তর : তারা প্রথমে একটি মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। এর নাম ছিল পাড়াগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প।

প্রশ্ন : ঐ ক্যাম্পে কতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল?

উত্তর : ২০০ জন ছিল।

প্রশ্ন : পাক আর্মি কত জন ছিল?

উত্তর : গানবোট ও স্প্রীটবোটে ৩০০ জন ছিল পাক আর্মি।

প্রশ্ন : ঐ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার কে ছিলেন?

উত্তর : ইয়াহিয়া খান পিন্টু।

প্রশ্ন : কতণ গুলী বিনিময় হয়?

উত্তর বিকেল ৪টা পর্যন্ত?

প্রশ্ন : কলাতিয়াতে কতটি ক্যাম্প ছিল?

উত্তর : সেখানে ৫টি ক্যাম্প ছিল।

প্রশ্ন : কোন দলের কত জন মারা যায় বা আহত হয়?

উত্তর : মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শহীদ হয় আমিসহ ১০ জন আহত হই।

প্রশ্ন : শহীদ ওমর আলী কার অধীনে ছিল?

উত্তর : পিন্টু সাহেবের অধীনে ছিল আমার গ্রুপে আমি ছাড়া কেউ আহত হয়নি। বাকি নয় জন ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর কমান্ডে ছিলেন।

প্রশ্ন : পাক আর্মি কত জন হতাহত হয়েছিল?

উত্তর : ৫৩ জন পাক আর্মি মারা যায় ঐ দিন।

প্রশ্ন : আপনি কোথায় ব্যাক করেন?

উত্তর : আমাকে আহত অবস্থায় কলাতিয়াস্থ ডা. আব্দুস সালামের বাসায় নিয়ে আসা হয়। ৭ দিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলাম।

প্রশ্ন : ঐ এলাকাতে কী আপনাদের বয়সী কোন রাজাকার ছিল?

উত্তর : হ্যাঁ, ছিল।

প্রশ্ন : সালাম সাহেবের বাসায় কি অন্যান্য সদস্যরা ছিল?

উত্তর : হ্যাঁ, ছিল।

প্রশ্ন : আপনার কথা কি অন্যরা জানাতো?

উত্তর : না, এটা সিক্রেট ছিল।

প্রশ্ন : ৭ দিন চিকিৎসা শেষে আপনি কোথায় গেলেন?

উত্তর : ৭ দিন পর আমি নাজিরপুরে চলে যাই। ১৫ দিন আমি নাজিরপুর ক্যাম্পে বিশ্রামে ছিলাম।

প্রশ্ন : এই সময়ে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা কি কোন অপারেশন করেছে?

উত্তর : হ্যাঁ, ছোট ছোট অপারেশন করেছে কেরানীগঞ্জের ভেতরেই।

প্রশ্ন : ঐ সময়ে রাজাকাররা কোন আক্রমণ করেছে?

উত্তর : না, আমাদের ক্যাম্পে কোন আক্রমণ হয়নি। আমার ক্যাম্পটি ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানেই ছিল।

প্রশ্ন : পুরো সময়টা সেখানেই ছিলেন?

উত্তর : অক্টোবরের ৫ তারিখে আমি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাই ভারতে ১৫ দিন ছিলাম এই দিন ভারতের বিশাল গড়ে।

প্রশ্ন : এর পর কোথায় গেলেন?

উত্তর : পরে আমি মেলাগড়ে আমার সেক্টর কমান্ডারের সাথে দেখা করতে যাই সেখানে দুই দিন ছিলাম।

পরে আমি নাজিরপুরে নতুন কিছু দায়িত্ব নিয়ে আসি। একই সাথে আমাকে কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিলে চলে আসি। আমি ফিরে এসে আমার পূর্বের সহযোদ্ধাদের পাই।

প্রশ্ন : এরপরে আর কোথায় কোথায় অপারেশন করেছেন?

উত্তর : আমাকে দেয়া নতুন দায়িত্ব অনুযায়ী মো.পুর রাজাকার ক্যাম্পটি উড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রশ্ন : রাজাকার ক্যাম্পটি কোথায় ছিল?

উত্তর : নাজিরপুর থেকে মো.পুরের রাজাকার ক্যাম্পটি ১০ মাইল দূরে অবস্থিত ছিল।

প্রশ্ন : কবে রওয়ানা দেন?

উত্তর : নাজিরপুরের আটিবাজার থেকে নৌকাযোগে মো.পুর এসে পুরনো মসজিদের কাছে ঘাটে এসে নামি। তখন সকাল ১০টা বাজে।

প্রশ্ন : নৌকাঘাট থেকে মো.পুর রাজাকার ক্যাম্প কত দূর?

উত্তর : ঘাট থেকে রাজাকার ক্যাম্প কোয়ার্টার মাইল দূরে ছিল। সেদিন আমার সাথে নিরাপত্তার জন্য ছোট অস্ত্র ছিল। আমি রেকি করার জন্য এসেছিলাম সাথে শাক ও একটি কদু ছিল।

প্রশ্ন : আপনি কিভাবে এসেছেন?

উত্তর : আমি ক্যাম্পটি ভাল করে দেখার জন্য পায়ে হেঁটে ক্যাম্পের সামনে দিয়ে মামার বাসায় আসি।

প্রশ্ন : মামার নাম কি?

উত্তর : গিয়াসউদ্দিন। তিনি মারা গেছেন।

প্রশ্ন : রাজাকার ক্যাম্পটি কোথায় ছিল?

উত্তর : ক্যাম্পটি ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ছিল। তবে বাইরে কোন রাজাকার ক্যাম্প লেখা সাইন বোর্ড ছিল না।

প্রশ্ন : মামার বাসায় কতণ ছিলেন?

উত্তর : মাত্র ১০ মিনিট ছিলাম মামার বাসায় সেদিনই আমার প্রথম আসা হয়।

প্রশ্ন : মামার বাসার নম্বর কত?

উত্তর : নিরাপত্তার স্বার্থে বলবো না। মামী ছাড়া মামাতো ভাই বোনেরা সবাই বেঁচে আছেন। তাদের নামও বলা যাবে না।

প্রশ্ন : কোন পথে আবার বাসা থেকে ফিরে গেলেন?

উত্তর : যে পথে এসেছি সেই পথেই ফিরে গেছি। সাধারণ লোকের সাথে ঐ সময়ের মধ্যে কোন কথা হয়নি। তবে যাওয়ার পথে বাড়িতে যাই। ভাওয়াল খান বাড়িতে গিয়ে মায়ের সাথে দুপুরের খাবার খাই।

প্রশ্ন : মামার বাড়ি থেকে আপনার মায়ের বাড়ি কত দূর?

উত্তর : মামা বাড়ি থেকে নাজিরপুরে যেতে পথের মধ্যে আমার মায়ের বাড়ি। দূরত্ব হবে ৫ মাইল। মায়ের সাথে কুশল বিনিময়ে জানতে পারলাম ভারতে যাওয়ার পরে এরমধ্যে আমার মায়ের কোন তি হয়নি। মায়ের সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সবাই থাকতো।

প্রশ্ন : মো.পুর থেকে কলাতিয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকারদের কতটি ক্যাম্প ছিল?

উত্তর : মুক্তিযোদ্ধাদের কোন ক্যাম্প ছিল না। তবে ঘাটারচর ও আটিবাজারে দুটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল।

প্রশ্ন : আপনি কখন নাজিরপুর হয়ে চলে আসেন?

উত্তর : তখন প্রায় সন্ধ্যা।

প্রশ্ন : আপনি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে কোথায় কোথায় আক্রমণ করেন?

উত্তর : না। কোন আক্রমণ বা অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। আমি ১০ নবেম্বর আবার ভারতে ফিরে গিয়ে রিপোর্ট করি দুই দিন পরে ফিরে আসি।

প্রশ্ন : ভারত থেকে কোথায় আসেন?

উত্তর : ভারত থেকে নাজিরপুরে ফিরে আসি।

প্রশ্ন : ২০০৮ সালে কোথায় ভোট দিয়েছেন?

উত্তর : আমি লালবাগে ভোট দিয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মোস্তফা জালাল অহিউদ্দিন। আমি তার পইে কাজ করেছি।

প্রশ্ন : ৭১ সালের পরে কি আপনি লালবাগ চলে এসেছেন?

উত্তর : আমি লালবাগ থাকলেও আমার ব্যবসা বাণিজ্য কেরানীগঞ্জে।

প্রশ্ন : কেরানীগঞ্জ এলাকা আপনার পরিচিত এলাকা?

উত্তর : এটা আমার নিজস্ব এলাকা।

প্রশ্ন : ওসমান গনি, গোলাম মোস্তফার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিষয়ে আপনার জানা আছে কি?

উত্তর : তাদের সনদ আছে তাদের পরিবারের কাছে তারা সরকারি ভাতাও পাচ্ছে।

প্রশ্ন : ওসমান গনির পরিবারের কে কে বেঁচে আছে?

উত্তর : ওসমান গনির মা, ২ ভাই ও ৫ বোন বেঁচে আছেন। বাবা বেচে নেই।

প্রশ্ন : গোলাম মোস্তফার পিতার নাম আহমদ হোসেন ওরফে টুকুবানী। ওসমান গনির পিতা মৃত মোহাম্মদ হোসেন?

উত্তর : হ্যাঁ। মোস্তফার স্ত্রী ১ ছেলে ও ১ মেয়ে জীবিত আছে।

প্রশ্ন : ৭১ সালের ১০ নবেম্বরের পরে ভারত থেকে ফেরত এসে কোন রেড হয়েছি কি?

উত্তর : না। তবে ২৫ নবেম্বর ছোট একটি ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় জবানবন্দিতে উল্লেখিত ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া আর কেউ মারা যায়নি। ২৫ নবেম্বরের পরে আমরা আর কোন অপারেশনে যাইনি।

প্রশ্ন : আপনার অস্ত্র কবে কোথায় জমা দেন?

উত্তর : ১৬ ডিসেম্বরে আমি আমার অস্ত্র মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মোস্তফা মহসীন মন্টুর কাছে জমা দেই। জানুয়ারি মাসে তিনিই ঢাকা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দেন। জেনারেল ওসমানী তখন মুক্তিবাহিনীর প্রধান ছিলেন।

প্রশ্ন : আ. মজিদ কি বেঁচে আছেন?

উত্তরা : হ্যাঁ, তিনি এখন ঘাটারচরেই আছেন।

প্রশ্ন : ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কার পে কাজ করেছেন?

উত্তর : কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা মহসীন মন্টুর পে কাজ করেছি।

প্রশ্ন : ২০০৭ সালে যে মামলাটি আপনি করেছেন সেটির অবস্থা কি?

উত্তর : আমি শুনেছি আমার মামলাটি অত্র ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা নং- ৩৪(১২)২০০৭।

প্রশ্ন : ৭০ সালে ঢাকসুর জিএস কে ছিলেন?

উত্তর : সম্ভবত তোফায়েল আহমেদ তবে আমি সঠিকভাবে মনে করে বলতে পারছি না।

প্রশ্ন : ৭০ সালে নির্বাচনের পূর্বে আপনার এলাকায় কেউ কি গিয়েছেন?

উত্তর : হ্যাঁ, আ স ম রব ও শাহজাহান সিরাজসহ আরো ৪ জন কেরানীগঞ্জে গিয়েছিলেন।

প্রশ্ন : ৭০ সালে শহীদুল্লাহ হলের জি এস কে ছিলেন?

উত্তর : সম্ভবত ছাত্রসংঘের কাদের মোল্লা ছিলেন। কাদের মোল্লার সাথে আমার ব্যক্তিগত দ্বনদ্ব ছিল না তবে রাজনৈতিক দ্বনদ্ব ছিল।

প্রশ্ন : কাদের মোল্লাকে কবে থেকে চেনেন?

উত্তর : ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন থেকেই চিনি। তাকে ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবেই চিনতাম।

প্রশ্ন : যুদ্ধকালীন সময়ে পাক সেনারা কি আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছে?

উত্তর : আমি তাদের মুখোমুখি হইনি।

প্রশ্ন : আগে কি আপনি জবানবন্দি দিয়েছেন?

উত্তর : আগে ১৭(২০০৭) নং মামলায় সিজেএম কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছি। এছাড়া আর কোথাও জবানবন্দি দেইনি।

প্রশ্ন : কারও কাছে সনদপত্র দিয়েছেন কি?

উত্তর : আমার কাছে কেউ মুক্তিযুদ্ধের সনদ চায়নি আমি দেইনি। আমার কমান্ড সার্টিফিকেট পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আমি ডুপ্লিকেট কপি মেজর হায়দারের কাছে চেয়েছি কিন্তু ফটোকপি মেশিন না থাকায় পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন : ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এরকম কোন জবানবন্দি বা বক্তব্য কোথাও দিয়েছেন কি?

উত্তর : না, দেইনি।

প্রশ্ন : কাদের মোল্লা নিজে কোন অপরাধ করেছেন?

উত্তর : নির্বাক। আপনি নিজে দেখেছেন কি?

প্রশ্ন : ৭১ সালে আব্দুল কাদের মোল্লাকে কোন অপরাধ করতে স্বচে দেখেছেন কি?

উত্তর : হ্যাঁ দেখেছি।

প্রশ্ন : কি অপরাধ করতে দেখেছেন?

উত্তর : চাইনিজ রাইফেল হাতে দেখেছি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন