২৩/১২/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারও পুনরায় শুরুর আবেদন করা হয়েছে । আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ আসামী পক্ষ আবেদন দুটি জমা দেয়। অধ্যাপক গোলাম আযমসহ এ দুটি আবেদনের শুনানী আজ সোমবার একসাথে শুরু হবার কথা রয়েছে।
স্কাইপি কেলেঙ্করির জের ধরে আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনটি মামলার ক্ষেত্রে পুনরায় বিচার শুরুর আবেদন করল এ পর্যন্ত।
সাঈদীর মামলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের শুনানী : আজ পুনরায় বিচার শুরু বিষয়ক কোন আবেদনের শুনানীর জন্য ধার্য্য ছিলনা। তবে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, আমাদের শুনানীতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অংশ নিতে চান। কিন্তু তিনি আগামীকাল দেশে থাকবেননা। সেজন্য আজ তিনি খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু কথা বলতে চান এ আবেদন বিষয়ে। তিনি দেশের একজন অত্যন্ত সম্মানিত সিনিয়র আইনজীবী। তিনি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাকে এ সুযোগ দেয়া হোক।
ট্রাইব্যুনাল আবেদন বিষয়ে বেশ কিছুক্ষন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিয়ে বললেন, সাঈদী সাহেবের মামলা পুনরায় বিচারের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন এ মর্মে আপনি শুধু আইনী দিক তুলে ধরে আপনার শুনানী পেশ করেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ট্রাইব্যুনালকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম যা রেখে গেছেন তার ওপর ভিত্তি করে রায় দেবেন তা দিতে পারেন কিন্তু তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু হবে তা আপনাদের ভাবতে হবে। কারণ বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম পুরো বিচার কার্যক্রমকে কলুষিত করে রেখে গেছেন। তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। তার আর কিছু করার ছিলনা। কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন? একটা অস্বাভাবিক অবস্থায় পড়ে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
আপনাদের দেখতে হবে তিনি যা রেখে গেছেন তার সবকিছু যদি আপনারা গ্রহণ করেন তাহলে তা ন্যায় বিচারের মধ্যে পড়ে কি-না।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা এমন একটা রায় দিন যাতে মানুষ মনে করে এবং বিশ্বাস করে যে, আপনারা ন্যায় বিচার করেছেন। তা নাহলে এ বিচার আজ এখানে শেষ হয়ে যাবেনা। ৫/১০ বছর পরও মানুষ এ নিয়ে গবেষনা করবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ (৬) ধারায় বলা আছে ‘শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনালের কোন সদস্যের পরিবর্তন হলে বা কোন সদস্য অনুপস্থিত থাকলে ইতোপূর্বে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন এমন কোন সাক্ষীকে পুনরায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তলব করতে বা পুনরায় শুনানী গ্রহনে ট্রাইব্যুনাল বাধ্য থাকবেনা।’
আবার ২(এ) ধারায় বলা আছে ট্রাইব্যুনাল স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করবেন এব্ং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। কিন্তু বিচারপতি নিজামুল হক তো স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করেননি। চার্জ গঠনের আদেশ বাইরে থেকে এসেছে। এটা চিন্তারও অতীত। দুনিয়ার ইতিহাসে এটা ঘটেনি। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে অপসারনের যে আবেদন করা হয়েছিল সে আদেশও বাইরে থেকে এসেছে। রায়ের কাঠামো কি হবে তাও বাইরে থেকে এসেছে। এরপর ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা থাকল কোথায়?
সংবিধানে বলা আছে প্রধান বিচারপতি স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করবেন। আপনারাও সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীনভাবে বিচার কাজ করবেন। ৬(৬) ধারা এখানে প্রয়োগ করতে আপনারা বাধ্য নন। আপনারা এখানে ন্যায় বিচারের জন্য বসেছেন এবং আইন ও সংবিধানে আপনাদের ন্যায় বিচারের জন্য ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং ন্যায় বিচার করতে আদেশ দিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে শুনানী শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অপক্ষেমান সাংবাদিকদের বলেন, স্কাইপ কেলেঙ্কারি দৈনিক আমার দেশ এবং ইকনোমিস্টে ফাঁস হওয়ার পর সুবিচার পাওয়ার যে আকাঙক্ষা তা নষ্ট হয়ে গেছে। আইনের ৬(৬) ধারা অনুযায়ী যেখানে বিচার শেষ হয়েছে সেখান থেকে শুরা করার কথা বলা আছে। সে অনুযায়ী সাঈদী সাহেবের বিচার শেষ হয়ে গেছে এখন শুধু রায় দিতে বাকী আছে । আইন অনুযায়ী যতটুকু বিচার হয়েছে সেখান থেকে আবার শুরু হবার কথা বলা আছে। কিন্তু ২(এ) ধারায় ট্রাইব্যুনালকে স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। বিচারপতি নিজামুল হক স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করেননি। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। বিচারপতি যখন শপথ নেন তখন তিনি অনেক বিষয়ের মধ্যে সংবিধান সমুন্নত রাখারও শপথ নেন। সংবিধানে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। বিচারপতি নিজামুল হক কোন শপথ রক্ষা করেননি। তিনি সুবিচার পাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। ৬(৬) ধারাকে এখানে প্রাধান্য দেয়া ঠিক হবেনা। কারণ তিনি তো স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করেননি। আমার দীর্ঘ আইনজীবী জীবনে শুনিনাই যে বাইরে থেকে চার্জ গঠনের আদেশ আসে।
নৈতিকতার স্বার্থে, সংবিধানের সার্থে শুরু থেকে শুরু করতে হবে এ বিচার। এভিডেন্সে গ্রহণ থেকে শুরু করে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে হবে।
তাজুল ইসলামের ওপর নিষেধাজ্ঞা আংশিক শিথিল: আসামী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী তাজুল ইসলাম এখন থেকে ট্রাইব্যুনালে (১) প্রবেশ করতে পারবেন। তবে শুনানীতে অংশ নিতে পারবেননা। গতকাল তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আংশিক শিথিল করে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
গত ৫ নভেম্বর মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরন করা হয়। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাজুলইসলামসহ আরো দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে তাজুল ইসলামকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রবেশেওর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বিচারপতি নিজামুল হক তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন। গতকাল তাজুল ইসলামের মামলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শুনানী করেন ট্রাইব্যুনালে। আগামী ১০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারন করা হলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অনুরোধ জানান তাজুল ইসলামের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য। পরে ট্রাইব্যুনাল আংশিক শিথিল করেন নিষেধাজ্ঞা।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আবেদন শুনানী আজ: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুমের বিরুদ্ধে স্কাইপি সংলাপ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে অপসারনের আবেদন করেছেন। আজ এ আবেদনের ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। তবে এ বিষয়েওর শুনানীও আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে।
এদিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম গতকাল ট্রাইব্যুনালের সামনে একটি সিডি তুলে ধরে বলেন, স্কাইপি সংলাপের সিডি বের হয়েছে। এখানে বিচারপতি নিজামুল হক এবং ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সংলাপ আছে। এটি ট্রাইব্যুনালে শোনানোর ব্যবস্থা করা হোক। ট্রাইব্যুনাল বলেন এটি এখানে শোনার ব্যবস্থা করা হবেনা।
এসময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অপর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, কোন কোন মহল থেকে বলা হচ্ছে আমার দেশ পত্রিকায় নাকি সংলাপ রং ছড়িয়ে লিখেছে। সেজন্য যাতে কোন সন্দেহ না থাকে এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে মূল কপি শোনা দরকার।
কড়া নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে : আজ ট্রাইব্যুনাল ভবনের সামনে সশস্ত্র অবস্থায় ডিবি পুলিশ সদস্যদের লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ার হোসেন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আসামী পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, ব্যারিস্টার ইহসান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, মতিউর রহমান আকন্দ প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন