২৬/৩/২০১২, সোমবার
মেহেদী হাসান
“মা বলেছেন আমি মৃত্যুর পথে। মরার আগে আমি হুজুরের (মাওলানা সাঈদী) বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে পারবনা। হুজুর ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেননা। ওনার বিরুদ্ধে আমি এখন মিথ্যা কথা বলব কেমন করে?”
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ৪৬ সাক্ষীদের একজন মো: মোস্তফা তার মায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন একথগুলো । মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোস্তফা, তার মা সিতারা বেগম এবং তার বোন রানী বেগমেরও নাম রয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের তালিকায়। কিন্তু তারা সহ মোট ৪৬ জন সাক্ষীর কাউকেই সাক্ষ্য দিতে আদালতে আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় বলে গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আদালতে দরখাস্ত দিয়ে জানানো হয়েছে। ৪৬ জন সাক্ষীদের মধ্যে ১৯ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের কেউ কেউ নিখোঁজ, আত্মগোপনে এবং কেউ কেউ পালিয়ে ভারতে চলে গেছে। দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় কর্মরত একজন সাংবাদিক হিসেবে এ ১৯ সাক্ষীর মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন সাক্ষী এবং তাদের আত্মীয় স্বজন এর সাথে কথা হয় আমার। সাক্ষীরা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবীদের শেখনো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী নন বলেই তারা সাক্ষ্য দিতে যাননি। মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের কর্তৃক ভয়ভীতি এবং হুমকির ফলে আত্মগোপনে চলে যাবার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগের ভয়ে আছেন সরকারী লোকজনের পক্ষ থেকে। যেসব সাক্ষী এবং তার আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা হয়েছে তাদের সকলেই জানিয়েছেন তারা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি জবানবন্দীতে। কিন্তু তাদের নামে কি জবানবন্দী জমা দেয়া হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তাও তারা জানেননা। তারা যা বলতে চান তা বলতে না দিয়ে অন্য কথা বলার জন্য চাপ দেয়ার কারনে তারা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যাননি বলে অভিযোগ করলেন।
যেসব সাক্ষী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলা হয়েছে তা এখানে তুলে ধরা হল।
মো: মোস্তফা:
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ হল ইব্রাহীম কুট্টি নামে এক লোককে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে ধরে নিয়ে যায় এবং তারই নির্দেশে পারেরহাট বাজারে পাক বাহিনী তাকে গুলি করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই ইব্রাহীম কুট্টির শ্যালকই হলেন মো: মোস্তফা। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মো: মোস্তফা, তার মা সিতরা বেগম এবং মোস্তফার এক বোন রানী বেগমকে সাক্ষী করা হয় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে।
মো: মোস্তফার সাথে কথপোকথন: আপনি, আপনার মা এবং বোনসহ মোট ১৪ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দরখাস্ত দিয়ে জানানো হয়েছে আপনাদের মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি দেখিয়েছে। সে কারনে আপনারা আত্মগোপন করেছেন। আপনাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আপনারা এখন কোথায় আছেন একটু বলবেন?
মোস্তফা: আমাদের সাঈদীর কোন লোক কোন ধরনের ভয়ভীতি দেখায়নি। এ অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কোথাও আত্মগোপনও করিনাই। আমরা সবাই নিজ বাড়িতেই আছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা জানান, আমাদের তিনজনকে যে সাক্ষী মানা হয়েছে তা প্রথমে আমরা জানিওনা। পরে আমাদের জানানো হয়েছে।
পিরোজপুর কোর্টের দারোগা আসেছ, ঢাকা থেকে লোক এসেছে। বাবুল পন্ডিত, মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতবা এরা এসে বলেছে বেয়াই সাক্ষী দিতে যাইতে হইবে। আমি বললাম আমার বোনকে (মমতাজ বেগম, তার স্বামীই ইব্রাহিম কুট্টি এবং তাকে হত্যার অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে) সাক্ষী না বানিয়ে আমাকে কেন সাক্ষী বানানো হল।
মো: মোস্তফা বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার সময় হুজুর (মাওলানা সাঈদী) ছিলনা। ইব্রাহীমকে পারেরহাটে নয় আমাদের বাড়িতে (নলবুনিয়ায়) হত্যা করা হয়েছে। পারেরহাটে হত্যা করার কথা ভুয়া। আমার দুলাভাই ইব্রাহিমের সাথে আমার বড় ভাই সাহেব আলীকেও মারা হয়েছে। আমার দুলাভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বোন মমতাজের হাতেও গুলি লাগছে। রাত ১২টার দিকে পাক আর্মি আমাদের বাড়িতে আসে। আমার দুলাইভাই ইব্রাহীমকে আমাদের বাড়িতেই গুলি করে মারা হয়। আমার ভাইকে পিরোজপুর নিয়ে মারা হয়।
মো: মোস্তফা জানান তিনি ঐ হত্যার ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন। হত্যাকান্ডের সময় হুজুর ছিলনা। এ বিষয়ে হুজুরের নাম কোনদিন শুনিও নাই। হুজুরের নাম আমি শুনছি বড় হয়ে । তিনি ওয়াজ করার কারনে তার নাম শুনেছি অনেক পরে।
আপনার দুলাইভাইকে যে রাতে মারা হয় সে রাতে আপনাদের বাড়িতে কারা এসেছিল তাতো শুনেছেন পরবর্তীতে?
আমি তখন ছোট ছিলাম। আমার মা, বোন মমতাজ বেগম তাদের কাছে শুনেছি মোসলেম মাওলানা, দানেস মোল্লা, আইউব আলী, সুন্দর আলী দফাদার, ইউসুফ চকিদার এরা ছিল পাক আর্মিদের সাথে। আমার বোন, মা তাদের দেখছে। আমার বোন মমতাজ তাদের নামে মামলাও করেছিল । তারাই এর সাথে জড়িত ছিল। এর সাথে হুজুরের নাম কোনদিন কারো মুখে শুনিনাই। এখন মামলা হওয়ার পর শুনতে পেলাম।
আপনারা সাক্ষী দিতে চাচ্ছেননা কেন?
মোস্তফা বলেন, আমার বোনের (মমতাজ বেগম) স্বামীকে হত্যা করা হল। সে মামলা করেছিল । তাকে সাক্ষী না বানিয়ে আমাদের কেন সাক্ষী বানানো হল। আমরা জবানবন্দী দিছি। তাতে বলেছি হুজুর ছিলনা ঐ সময় । সব জায়গায় একই কথা বলেছি। মা বলেছে মুত্যুর আগে মিথ্যা কথা বলতে পারবনা হুজুরের বিরুদ্ধে। হুজুরতো ছিলনা। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা কেমনে কমু?
আশিষ কুমার মন্ডল, সুমতি রানী এবং এবং সমর মিস্ত্রী:
এ তিনজন সম্পর্কে সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। জানা যায় তারা গোপনে ভারতে চলে গেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এর আগে ট্রাইব্যুনালে জানানো হয়েছিল তারা ঢাকায় তাদের হেফাজতে ছিল কিন্তু আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবার কথা বলে চলে যাবার পর আর আসেনি।
আশিষ কুমারের একজন ঘণিষ্ঠ আত্মীয়ের সাথে গতকাল দৈনিক নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে কথা হয়। সে তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। উক্ত তিন সাক্ষী নিখোঁজ বিষয়ে তাকে জানানো হলে তিনি বলেন, তারা তো মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে চায়নি। তারা সাক্ষী দেবেই বা কি। তারা তো বাগেরহাটের লোক। পিরোজপুর এসেছে ১৯৭৩ সালে। ১৯৭১ সালে আশিষের বয়স ছিল ৬/৭ বছর। আশিষ কুমারের একজন মামা এবং পাঁচজন মা খালা ছিল। পাক বাহিনীর হাতে তার নানা উপেন্দ্রনাথ এবং মামা বিজয় মারা যাবার পর পিরোজপুর তাদের বাড়িতে পাহারা দেয়ার জন্য ১৯৭৩ সালে আসেন আশিষ কুমার মন্ডল, তার মা সুমতি রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রি। এরপর থেকে তারা এখানে নানার বাড়িতে আছে। তারা ১৯৭১ সালের পিরোজপুরের ঘটনা কি জানে আর বলবেই বা কি? তাদের বাড়ি বাগেরহাটের পঞ্চমালা গ্রামে। গ্রামের লোকজনও বলেছে তোমরা কি বলবা আমরাই তো তেমন কিছু জানিনা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আশিষ কুমারসহ উক্ত তিনজনকে সাক্ষী বানানোর জন্য অনেক চাপ দেয়া হয়েছে। আমাকেও চাপ দেয়া হয়েছিল সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। এমপি একেএমএ আউয়াল সাব সরাসরি তাদের বাড়িতে এসে বলেছে সাক্ষ্য দিতে হবে। এরপর পুলিশ এসে তাদের তিনজনকে ঢাকায় ধরে নিয়ে যায়। এক থেকে দেড়মাস আটকে রাখে। মিথ্যা কথা বলতে চাপ দেয় সাঈদীর বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা তাতে কোন মতেই রাজি হয়নি। যা বললে তাদের ক্ষতি হবে, সাঈদীরও ক্ষতি হবে সে কথা বলতে বলে। কিন্তু তারা তাতে রাজি নয়। ১৫ দিন আগে আশিষের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আশিষ বলেছে, ঢাকায় নিয়ে বলা হয়েছে “চো--(অকথ্য)------পোলা, তোকে যা কইতে কমু তা কবি।” সে আরো জানিয়েছে তার মায়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ আনতে বলে সাঈদীর বিরুদ্ধে। কোন ছেলে মায়ের নামে একথা বলতে পারে? এমন মিথ্যা কথা কেমনে কমু? আশিষ জানিয়েছে তার মা কান্নাকাটি করছে। তাদেরকে টরচার করা হয়েছে মিথ্যা বলার জন্য।
আশিষ কুমারের এ আত্মীয় জানান, শুনেছি তারা ভারতে চলে গেছে। আসলে চলে গেছে না পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তার কিছূ জানিনা। তাদের কোন খোঁজ খবর আমাদের কাছে নেই। তাদের ঢাকায় নিয়েও কেন সাক্ষ্য দেয়ানো গেলনা, তাদের কি কি বলা হয়েছিল সে বিষয়গুলো এলাকায় আসলে হয়ত জানাজানি হবে সেকারনে তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, সাঈদীর নামে কোন অন্যায় অত্যাচারের কথা শুনিনাই। আমার বাবা সুরেন্দ্রনাথ মন্ডলসহ ৫ জন পাক আর্মির হাতে মারা গেছে। এর সাথে সাঈদীর নাম শুনিনাই কখনো।
আমরা দেলোয়ার সিকদার নামে এক রাজাকারের নাম শুনেছিলাম এবং তাকে স্বাধীনতার পরপরই মেরে ফেলা হয়েছে বলে জানি।
অপূর্ব ও রীতা:
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হল বিশাবালী নামে একজনকে গাছের সাথে বেঁধে তার নির্দেশে হত্যা করা। এ বিষয়ে সাক্ষী মানা হয়েছে বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালীকে। সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন তিনি ৪ মাস ধরে নিখোঁজ। গতকাল সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর স্ত্রী রীতা এবং তার ছেলে অপুর্বের সাথে কথা হয় । রীতা জানান, তার স্বামী তাকে বলেছেন, তিনি কোন মিথ্যা কথা বলতে পারবেননা। তারা তাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলাতে চাইছিল। তারা বলতে বলেছিল সেখানে গাছ ছিল। গাছের সাথে বেঁধে তার ভাই বিশাবালীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে । আরো অনেক কথা বলতে বলেছিল। তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারবেননা। উনি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেননা। আমার শ্বাশুড়ী বলেছেন বিশাবালী অসুস্থ ছিলেন। তাকে গুলি করে মারা হয়নি। তাকে বন্দুক দিয়ে পাক বাহিনী বুকে তিনটি ঘা মারে। এর তিনঘন্টা পর তিনি মারা যান। গুলি করার কথা সত্য নয়। সেখানে সেময় কারা ছিল তাদের তিনি দেখেনওনি চেনেনওনি। এখন চাইপপা ধইররা কি কওয়াইতে চায় তার উপরওয়ালা ভাল জানেন।
কেন সাক্ষী দিতে তিনি রাজী নন এ বিষয়ে আবারো প্রশ্ন করা হলে রীতা জানান আমার স্বামী মিথ্যা কথা বলতে পারবেননা।
উষারানী মালাকার: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সাক্ষী উষারানী মালাকার সম্পর্কে বলা হয়েছে তার স্মরনশক্তি লোপ পেয়েছে। ভ্রমনে মুত্যুর ঝুকি রয়েছে। সে কারনে তাকে সাক্ষ্য দিতে আনা সম্ভব নয়।
গতকাল সকালে কথা হয় উষারানী মালাকারের ছেলের ঘরের নাতির সাথে। তিনি জানান, সর্বশেষ যেদিন আমাদের কাছে আসে আমার দাদু তাদেরকে স্টেট বলে দিয়েছেন তিনি কিছু দেখেননি। জানেননা। মিথ্যা বলতে পারবেননা।
উষারানী মালাকারের স্বামী হরলাল মালাকার পারেরহাটে থাকতে মারা গেছে। উষারানী তখন সেখানে ছিলেননা। কারা মেরেছে তাও তিনি জানেননা বলে জানান।
উষারানীর নাতী জানান, তারা আমার দাদুকে নেয়ার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু তিনি যাবেননা ।
চান মিয়া: মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হল মানিক পসরার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং তাদের বাড়ির কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে পারেরহাট বাজারে হত্যা করা। এ বিষয়ে মানিক পসারীসহ বেশ কয়েকজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। কিন্তু তার ভাই চান মিয়া গতকাল বললেন, “আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয় কিন্তু মাওলানা সাঈদী সেখানে ছিলেননা। সাঈদীর নামই এ বিষয়ে কোনদিন শুনিনাই। সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে পারবনা। আমার ভাই মানিক পসারী আমাকে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। আমার কাছে যখন তদন্তের লোকজন আসে তখন আমি সত্য কথা বলে দিয়েছি। শুনেছি আমার নাম সাক্ষীর তালিকায় আছে। কিন্তু আমি সত্য কথা বলতে চেয়েছিলাম সেজন্য তারা আর আমার কাছে আসেনি।
আমাদের বাড়িতে ঘর পোড়ানোর সাথে সেকেন্দার শিকদার, দানেস মোল্লা, কাইউম, মমিন রাজাকার জতি ছিল বলে শুনেছি। সাঈদীর নামই তখন শুনিনাই।”
মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম খান সেলিম: মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার তথ্য জানিয়ে যে ১৪ জনের নাম দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একজন সাক্ষী হলেন শহিদুল ইসলাম খান সেলিম। তার সাথে গতকাল টেলিফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয় দেখানোর কথা সত্য নয়। আত্মগোপনে থাকা বিষয়ে তিনি বলেন আমি বর্তমানে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে আছি। সাক্ষী দিতে চাচ্ছেননা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নই। যুদ্ধ শুরুর আগেই আমি বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাই। কাজেই আমাদের বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছিল তাতো আমি দেখিনাই। সেজন্য সাক্ষী দিতে ইচ্ছুক নই।
গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল: আমি জবানবন্দী দিয়েছি। তবে আমার নামে কি লেখা হয়েছে তা আমি জানিনা। জবানবন্দীতে আমি সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছু বলিনাই। আত্মপোগনে থাকা বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বাসায় আছি। কোর্টেও যাই।
মেহেদী হাসান
“মা বলেছেন আমি মৃত্যুর পথে। মরার আগে আমি হুজুরের (মাওলানা সাঈদী) বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে পারবনা। হুজুর ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেননা। ওনার বিরুদ্ধে আমি এখন মিথ্যা কথা বলব কেমন করে?”
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুপস্থিত ৪৬ সাক্ষীদের একজন মো: মোস্তফা তার মায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন একথগুলো । মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোস্তফা, তার মা সিতারা বেগম এবং তার বোন রানী বেগমেরও নাম রয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের তালিকায়। কিন্তু তারা সহ মোট ৪৬ জন সাক্ষীর কাউকেই সাক্ষ্য দিতে আদালতে আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় বলে গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আদালতে দরখাস্ত দিয়ে জানানো হয়েছে। ৪৬ জন সাক্ষীদের মধ্যে ১৯ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের কেউ কেউ নিখোঁজ, আত্মগোপনে এবং কেউ কেউ পালিয়ে ভারতে চলে গেছে। দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় কর্মরত একজন সাংবাদিক হিসেবে এ ১৯ সাক্ষীর মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন সাক্ষী এবং তাদের আত্মীয় স্বজন এর সাথে কথা হয় আমার। সাক্ষীরা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবীদের শেখনো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী নন বলেই তারা সাক্ষ্য দিতে যাননি। মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের কর্তৃক ভয়ভীতি এবং হুমকির ফলে আত্মগোপনে চলে যাবার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগের ভয়ে আছেন সরকারী লোকজনের পক্ষ থেকে। যেসব সাক্ষী এবং তার আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা হয়েছে তাদের সকলেই জানিয়েছেন তারা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি জবানবন্দীতে। কিন্তু তাদের নামে কি জবানবন্দী জমা দেয়া হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তাও তারা জানেননা। তারা যা বলতে চান তা বলতে না দিয়ে অন্য কথা বলার জন্য চাপ দেয়ার কারনে তারা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যাননি বলে অভিযোগ করলেন।
যেসব সাক্ষী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলা হয়েছে তা এখানে তুলে ধরা হল।
মো: মোস্তফা:
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ হল ইব্রাহীম কুট্টি নামে এক লোককে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে ধরে নিয়ে যায় এবং তারই নির্দেশে পারেরহাট বাজারে পাক বাহিনী তাকে গুলি করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই ইব্রাহীম কুট্টির শ্যালকই হলেন মো: মোস্তফা। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মো: মোস্তফা, তার মা সিতরা বেগম এবং মোস্তফার এক বোন রানী বেগমকে সাক্ষী করা হয় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে।
মো: মোস্তফার সাথে কথপোকথন: আপনি, আপনার মা এবং বোনসহ মোট ১৪ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দরখাস্ত দিয়ে জানানো হয়েছে আপনাদের মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি দেখিয়েছে। সে কারনে আপনারা আত্মগোপন করেছেন। আপনাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আপনারা এখন কোথায় আছেন একটু বলবেন?
মোস্তফা: আমাদের সাঈদীর কোন লোক কোন ধরনের ভয়ভীতি দেখায়নি। এ অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কোথাও আত্মগোপনও করিনাই। আমরা সবাই নিজ বাড়িতেই আছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা জানান, আমাদের তিনজনকে যে সাক্ষী মানা হয়েছে তা প্রথমে আমরা জানিওনা। পরে আমাদের জানানো হয়েছে।
পিরোজপুর কোর্টের দারোগা আসেছ, ঢাকা থেকে লোক এসেছে। বাবুল পন্ডিত, মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতবা এরা এসে বলেছে বেয়াই সাক্ষী দিতে যাইতে হইবে। আমি বললাম আমার বোনকে (মমতাজ বেগম, তার স্বামীই ইব্রাহিম কুট্টি এবং তাকে হত্যার অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে) সাক্ষী না বানিয়ে আমাকে কেন সাক্ষী বানানো হল।
মো: মোস্তফা বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার সময় হুজুর (মাওলানা সাঈদী) ছিলনা। ইব্রাহীমকে পারেরহাটে নয় আমাদের বাড়িতে (নলবুনিয়ায়) হত্যা করা হয়েছে। পারেরহাটে হত্যা করার কথা ভুয়া। আমার দুলাভাই ইব্রাহিমের সাথে আমার বড় ভাই সাহেব আলীকেও মারা হয়েছে। আমার দুলাভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বোন মমতাজের হাতেও গুলি লাগছে। রাত ১২টার দিকে পাক আর্মি আমাদের বাড়িতে আসে। আমার দুলাইভাই ইব্রাহীমকে আমাদের বাড়িতেই গুলি করে মারা হয়। আমার ভাইকে পিরোজপুর নিয়ে মারা হয়।
মো: মোস্তফা জানান তিনি ঐ হত্যার ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন। হত্যাকান্ডের সময় হুজুর ছিলনা। এ বিষয়ে হুজুরের নাম কোনদিন শুনিও নাই। হুজুরের নাম আমি শুনছি বড় হয়ে । তিনি ওয়াজ করার কারনে তার নাম শুনেছি অনেক পরে।
আপনার দুলাইভাইকে যে রাতে মারা হয় সে রাতে আপনাদের বাড়িতে কারা এসেছিল তাতো শুনেছেন পরবর্তীতে?
আমি তখন ছোট ছিলাম। আমার মা, বোন মমতাজ বেগম তাদের কাছে শুনেছি মোসলেম মাওলানা, দানেস মোল্লা, আইউব আলী, সুন্দর আলী দফাদার, ইউসুফ চকিদার এরা ছিল পাক আর্মিদের সাথে। আমার বোন, মা তাদের দেখছে। আমার বোন মমতাজ তাদের নামে মামলাও করেছিল । তারাই এর সাথে জড়িত ছিল। এর সাথে হুজুরের নাম কোনদিন কারো মুখে শুনিনাই। এখন মামলা হওয়ার পর শুনতে পেলাম।
আপনারা সাক্ষী দিতে চাচ্ছেননা কেন?
মোস্তফা বলেন, আমার বোনের (মমতাজ বেগম) স্বামীকে হত্যা করা হল। সে মামলা করেছিল । তাকে সাক্ষী না বানিয়ে আমাদের কেন সাক্ষী বানানো হল। আমরা জবানবন্দী দিছি। তাতে বলেছি হুজুর ছিলনা ঐ সময় । সব জায়গায় একই কথা বলেছি। মা বলেছে মুত্যুর আগে মিথ্যা কথা বলতে পারবনা হুজুরের বিরুদ্ধে। হুজুরতো ছিলনা। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা কেমনে কমু?
আশিষ কুমার মন্ডল, সুমতি রানী এবং এবং সমর মিস্ত্রী:
এ তিনজন সম্পর্কে সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। জানা যায় তারা গোপনে ভারতে চলে গেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এর আগে ট্রাইব্যুনালে জানানো হয়েছিল তারা ঢাকায় তাদের হেফাজতে ছিল কিন্তু আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবার কথা বলে চলে যাবার পর আর আসেনি।
আশিষ কুমারের একজন ঘণিষ্ঠ আত্মীয়ের সাথে গতকাল দৈনিক নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে কথা হয়। সে তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। উক্ত তিন সাক্ষী নিখোঁজ বিষয়ে তাকে জানানো হলে তিনি বলেন, তারা তো মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে চায়নি। তারা সাক্ষী দেবেই বা কি। তারা তো বাগেরহাটের লোক। পিরোজপুর এসেছে ১৯৭৩ সালে। ১৯৭১ সালে আশিষের বয়স ছিল ৬/৭ বছর। আশিষ কুমারের একজন মামা এবং পাঁচজন মা খালা ছিল। পাক বাহিনীর হাতে তার নানা উপেন্দ্রনাথ এবং মামা বিজয় মারা যাবার পর পিরোজপুর তাদের বাড়িতে পাহারা দেয়ার জন্য ১৯৭৩ সালে আসেন আশিষ কুমার মন্ডল, তার মা সুমতি রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রি। এরপর থেকে তারা এখানে নানার বাড়িতে আছে। তারা ১৯৭১ সালের পিরোজপুরের ঘটনা কি জানে আর বলবেই বা কি? তাদের বাড়ি বাগেরহাটের পঞ্চমালা গ্রামে। গ্রামের লোকজনও বলেছে তোমরা কি বলবা আমরাই তো তেমন কিছু জানিনা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আশিষ কুমারসহ উক্ত তিনজনকে সাক্ষী বানানোর জন্য অনেক চাপ দেয়া হয়েছে। আমাকেও চাপ দেয়া হয়েছিল সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। এমপি একেএমএ আউয়াল সাব সরাসরি তাদের বাড়িতে এসে বলেছে সাক্ষ্য দিতে হবে। এরপর পুলিশ এসে তাদের তিনজনকে ঢাকায় ধরে নিয়ে যায়। এক থেকে দেড়মাস আটকে রাখে। মিথ্যা কথা বলতে চাপ দেয় সাঈদীর বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা তাতে কোন মতেই রাজি হয়নি। যা বললে তাদের ক্ষতি হবে, সাঈদীরও ক্ষতি হবে সে কথা বলতে বলে। কিন্তু তারা তাতে রাজি নয়। ১৫ দিন আগে আশিষের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আশিষ বলেছে, ঢাকায় নিয়ে বলা হয়েছে “চো--(অকথ্য)------পোলা, তোকে যা কইতে কমু তা কবি।” সে আরো জানিয়েছে তার মায়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ আনতে বলে সাঈদীর বিরুদ্ধে। কোন ছেলে মায়ের নামে একথা বলতে পারে? এমন মিথ্যা কথা কেমনে কমু? আশিষ জানিয়েছে তার মা কান্নাকাটি করছে। তাদেরকে টরচার করা হয়েছে মিথ্যা বলার জন্য।
আশিষ কুমারের এ আত্মীয় জানান, শুনেছি তারা ভারতে চলে গেছে। আসলে চলে গেছে না পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তার কিছূ জানিনা। তাদের কোন খোঁজ খবর আমাদের কাছে নেই। তাদের ঢাকায় নিয়েও কেন সাক্ষ্য দেয়ানো গেলনা, তাদের কি কি বলা হয়েছিল সে বিষয়গুলো এলাকায় আসলে হয়ত জানাজানি হবে সেকারনে তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, সাঈদীর নামে কোন অন্যায় অত্যাচারের কথা শুনিনাই। আমার বাবা সুরেন্দ্রনাথ মন্ডলসহ ৫ জন পাক আর্মির হাতে মারা গেছে। এর সাথে সাঈদীর নাম শুনিনাই কখনো।
আমরা দেলোয়ার সিকদার নামে এক রাজাকারের নাম শুনেছিলাম এবং তাকে স্বাধীনতার পরপরই মেরে ফেলা হয়েছে বলে জানি।
অপূর্ব ও রীতা:
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হল বিশাবালী নামে একজনকে গাছের সাথে বেঁধে তার নির্দেশে হত্যা করা। এ বিষয়ে সাক্ষী মানা হয়েছে বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালীকে। সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন তিনি ৪ মাস ধরে নিখোঁজ। গতকাল সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর স্ত্রী রীতা এবং তার ছেলে অপুর্বের সাথে কথা হয় । রীতা জানান, তার স্বামী তাকে বলেছেন, তিনি কোন মিথ্যা কথা বলতে পারবেননা। তারা তাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলাতে চাইছিল। তারা বলতে বলেছিল সেখানে গাছ ছিল। গাছের সাথে বেঁধে তার ভাই বিশাবালীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে । আরো অনেক কথা বলতে বলেছিল। তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারবেননা। উনি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেননা। আমার শ্বাশুড়ী বলেছেন বিশাবালী অসুস্থ ছিলেন। তাকে গুলি করে মারা হয়নি। তাকে বন্দুক দিয়ে পাক বাহিনী বুকে তিনটি ঘা মারে। এর তিনঘন্টা পর তিনি মারা যান। গুলি করার কথা সত্য নয়। সেখানে সেময় কারা ছিল তাদের তিনি দেখেনওনি চেনেনওনি। এখন চাইপপা ধইররা কি কওয়াইতে চায় তার উপরওয়ালা ভাল জানেন।
কেন সাক্ষী দিতে তিনি রাজী নন এ বিষয়ে আবারো প্রশ্ন করা হলে রীতা জানান আমার স্বামী মিথ্যা কথা বলতে পারবেননা।
উষারানী মালাকার: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সাক্ষী উষারানী মালাকার সম্পর্কে বলা হয়েছে তার স্মরনশক্তি লোপ পেয়েছে। ভ্রমনে মুত্যুর ঝুকি রয়েছে। সে কারনে তাকে সাক্ষ্য দিতে আনা সম্ভব নয়।
গতকাল সকালে কথা হয় উষারানী মালাকারের ছেলের ঘরের নাতির সাথে। তিনি জানান, সর্বশেষ যেদিন আমাদের কাছে আসে আমার দাদু তাদেরকে স্টেট বলে দিয়েছেন তিনি কিছু দেখেননি। জানেননা। মিথ্যা বলতে পারবেননা।
উষারানী মালাকারের স্বামী হরলাল মালাকার পারেরহাটে থাকতে মারা গেছে। উষারানী তখন সেখানে ছিলেননা। কারা মেরেছে তাও তিনি জানেননা বলে জানান।
উষারানীর নাতী জানান, তারা আমার দাদুকে নেয়ার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু তিনি যাবেননা ।
চান মিয়া: মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হল মানিক পসরার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং তাদের বাড়ির কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে পারেরহাট বাজারে হত্যা করা। এ বিষয়ে মানিক পসারীসহ বেশ কয়েকজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। কিন্তু তার ভাই চান মিয়া গতকাল বললেন, “আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয় কিন্তু মাওলানা সাঈদী সেখানে ছিলেননা। সাঈদীর নামই এ বিষয়ে কোনদিন শুনিনাই। সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে পারবনা। আমার ভাই মানিক পসারী আমাকে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। আমার কাছে যখন তদন্তের লোকজন আসে তখন আমি সত্য কথা বলে দিয়েছি। শুনেছি আমার নাম সাক্ষীর তালিকায় আছে। কিন্তু আমি সত্য কথা বলতে চেয়েছিলাম সেজন্য তারা আর আমার কাছে আসেনি।
আমাদের বাড়িতে ঘর পোড়ানোর সাথে সেকেন্দার শিকদার, দানেস মোল্লা, কাইউম, মমিন রাজাকার জতি ছিল বলে শুনেছি। সাঈদীর নামই তখন শুনিনাই।”
মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম খান সেলিম: মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার তথ্য জানিয়ে যে ১৪ জনের নাম দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একজন সাক্ষী হলেন শহিদুল ইসলাম খান সেলিম। তার সাথে গতকাল টেলিফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয় দেখানোর কথা সত্য নয়। আত্মগোপনে থাকা বিষয়ে তিনি বলেন আমি বর্তমানে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে আছি। সাক্ষী দিতে চাচ্ছেননা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নই। যুদ্ধ শুরুর আগেই আমি বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাই। কাজেই আমাদের বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছিল তাতো আমি দেখিনাই। সেজন্য সাক্ষী দিতে ইচ্ছুক নই।
গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল: আমি জবানবন্দী দিয়েছি। তবে আমার নামে কি লেখা হয়েছে তা আমি জানিনা। জবানবন্দীতে আমি সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছু বলিনাই। আত্মপোগনে থাকা বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বাসায় আছি। কোর্টেও যাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন