বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

বিচরপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীর বিতর্কের কারনে কোর্ট মুলতবি করলেন প্রধান বিচারপতি

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের  আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহষ্পতিবার কবি  মেহেরুন্নেসা হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে এবং তিন নং অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ বিষয়ে শুনানী শুরু হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল  হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ যুক্তি পেশ করে বলেন, কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগ বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন সাক্ষী হাজির করেছে। তিনজন সাক্ষী তিনরকম সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২ নং সাক্ষী শহীদুল হক মামলা বলেছেন, তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনা। ১০ নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম বলেছেন অবাঙ্গালীরা কবি মেহেরুনকে হত্যা করেছে। অপর দিকে ৪ নং সাক্ষী কাজী রোজী ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিলেও তার নিজের লেখা বইয়ের  তথ্যের সাথে ট্রাইব্যনালে প্রদত্ত বক্তব্যের গরমিল রয়েছে। তাহলে কার কোন বক্তব্য আপনারা গ্রহণ করবেন? কাউকে কোন অভিযোগে সাজা দিতে হলে সকলের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে তাদের এভিডেন্স বিষয়ে একটাই উপসংহারে  পৌছতে হবে। কিন্তু এখানে সবার সাক্ষ্য বিবেচনা করে একটা উপসংহারে পৌছানো সম্ভব নয়। তাই এ অভিযোগে তাকে সাজা দেয়ারও উপায় নেই।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী বিতর্কের কারনে  কোর্ট মুলতবি করতে বাধ্য হলেন প্রধান বিচারপতি :

গত মঙ্গলবার ২৮  মে শুনানীর সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন কবি মেহেরুন হত্যা বিষয়ে সাক্ষী কাজী রোজী তার জবানবন্দীর এক স্থানে বলেছেন তিনি শুনেছেন এবং আরেক স্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন। এভাবে তিনি বিপরীতধর্মী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আজো শুনানীর সময়  আবারো এ বিষয়ের অবতারনা হলে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, আপনি বলেছেন সাক্ষী  একস্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন আরেক স্থানে বলেছেন তিনি শুনেছেন। সাক্ষী ঘটনা দেখার কথা কোথায় বলেছেন তা দেখান।
ডিড শি সে শি স’ ইট?  শো ইট ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তখন সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শোনাতে শুরু করেন। সাক্ষী কাজী রোজী বলেছেন “২৭ মার্চ  বিকালে খবর পেলাম যে, মেহেরুন্নেসা ও তার দুই  ভাই ও মাকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী যারা ছিলেন তাদের অনেকে মাথায় সাদা অথবা লাল পট্টি বেঁধে সকাল ১১টা মেহেরের বাসায় ঢুকে যায় বলে শুনেছি।”
আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন “কাদের মোল্লার নেতৃত্বে সেদিন ওরা মেহেরুনের বাসায় ঢুকেছিল। কিন্তু কাদের মোল্লা নিজে ওই বাসায় ঢুকেছিল কি-না তা বলতে পারবনা। ”
সাক্ষীর জবানবন্দী থেকে রেফারেন্স পেশ শেষ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে তিনি ঘটনা এমনভাবে বর্ননা করছেন মনে হয় যেন তিনি নিজে ঘটনা দেখেছেন।
এসময় বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, এখানে তিনি দেখেছেন তা কোথায় আছে? তিনি দেখেছেন একথা কি বলেছেন সাক্ষী?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হ্যা বলেছেন। এটা আমার সাবমিশন। আপনি এর সাথে একমত হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন সেটা আপনার এখতিয়ার। কিন্তু আমাকে আমার সাবমিশন রাখতে দেন। আমি একজন কাউন্সেল।
এসময় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরীকে থামার ইশারা দিয়ে ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে চালিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্লিজ প্রসিড। প্লিজ  প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক।
বিচারপতি  এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে লক্ষ্য করে বলেন, প্লিজ ডোন্ট মিস লিড দি কোর্ট।  কোর্টকে মিস লিড করবেননা।  দিস ইজ দি হাইয়েস্ট কোর্ট অব দি নেশন। কোর্টকে মিস লিড করবেননা।
তিনি আবারো জানতে চান সাক্ষী দেখার কথা বলেছেন তা কোথায় আছে দেখান। এসময় আবারো প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরীর দিকে  তাকিয়ে   তাকে থামার অনুরোধ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ, প্লিজ । এটা ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের সাবমিশন। এরপর তিনি  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে  সামনে এগিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে আবারো বলেন, মিস্টার রাজ্জাক প্লিজ প্রসিড।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিচারপতি শামুসুদ্দীন চৌধুরীর  প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করলে প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, সিঙ্গেল জাস্টিসকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখবেননা। কোর্টকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখুন প্লিজ। প্লিজ প্রসিড, প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তো শিখেছি কোর্টের কোন একজন জাজ কোন প্রশ্ন করলে সেটা কোর্টেরই কোশ্চেন ধরে নেয়া হয়। সেজন্য আমি তার জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি।
এসময় বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরী আবারো ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের উত্তেরের বিরোধীতা করে মন্তব্য  মন্তব্য করা অব্যাহত রাখলে  এবং তার প্রশ্নের জবাব চাওয়ায় প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ প্লিজ ।  কিন্তু তখনো  তিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের  সাবমিশনের বিরোধীতা করে তার মত প্রকাশ করায় প্রধান বিচারপতি  কোর্ট মুলতবি ঘোষনা করেন।
তখন ঘড়ির কাটায় ১০টা ৫৫ বাঁজে। সাধারনত সকাল ১১টায় কোর্ট মুলতবি হয় এবং ১২টায় আবার বসে। আজ  বিতর্কের এ পর্যায়ে ১০টা ৫৫ মিনিটের সময় কোর্ট মুলতবি ঘোষনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১২টা আবার বসবে কোর্ট। যথারীতি ১২টায় আবার কোর্ট বসে।

বিতর্কের এক পর্যায়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একবার দাড়িয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন হাত নেড়ে।

বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এর অবসর গ্রহণ : আপিল বিভাগের বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এর চাকরির  বয়স পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে গেছেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ  তাকে বিদায় জানান। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এজে মো : আলী তাকে বিদায় সম্ভাষন জানান।  বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানীর জন্য গঠিত বেঞ্চের সদস্য। তার অবসরর গ্রহনের ফলে এ বেঞ্চের সদস্য সংখ্যা দাড়াল এখন পাঁচ।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে যুক্তি উপস্থাপনে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির। অন্যাান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন খান, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।




মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৩

ট্রাইব্যুনালে অঝোর ধারায় কাঁদলেন আলী আহসান মো : মুজাহিদ


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ  আজ অঝোর ধারায় কাঁদলেন ট্রাইব্যুনালে। 

আজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী  ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আলী আহসান মো :  মুজাহিদ ছাত্রজীবনে প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, পরে পিতার অনুরোধে ছাত্রসংঘে যোগ দেন। আর মুজাহিদ এই দরিদ্রতম দেশের একজন মন্ত্রী হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। জীবনের সকল েেত্রই তিনি মেধার স্বার রেখেছেন। এমনকি সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি তার সেই মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। দরিদ্র এই দেশে যেখানে রাষ্ট্র মতায় গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তিরাই অনিয়ম আর দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন সেখানে আজকের কাঠগড়াতে দাঁড়ানো এই মুজাহিদের বিরুদ্ধে বিরোধী প থেকেও সামান্যতম অনিয়মন কিংবা দুর্নীতির কোন অভিযোগ কেউ তুলতে পারেননি।
তিনি বলেন,  একজন সাক্ষী বলেছেন তিনি  তাকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মিদের সাথে  জীপে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এরকম ঘটনা হলে আরো অনেকের তা দেখার এবং জানার কথা। কিন্তু কই অন্য কেউতো এ ধরনের অভিযোগ করেনি আজ পর্যন্ত।

ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির আলী আহসান মুজাহিদের মন্ত্রীত্ব পরিচালনাকালে তার সততার পরিচয়  দিয়ে এভাবে যুক্তি উপস্থাপনের সময় কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান আলী আহসান মো : মুজাহিদ ফুপিয়ে কাঁন্না শুরু করেন। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়াতে থাকে। চোখ মুছতে থাকেন তিনি। এসময় কোর্টে উপস্থিত তার  পরিবারের সদস্যরাও ফুপিয়ে কান্না শুরু করেন। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তারাও । এসময় কোর্টে কিছূ সময়ের জন্য আবেগময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবিরের পর  যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামী পক্ষের অপর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ২৪ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামের একটি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাষ্ট্রপক্ষ ওই রিপোর্টের কপি আদালতে আনেনি।

যুক্তি উপস্থাপনের একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ৪২ বছর পর এই বিচার (মানবতাবিরোধী অপরাধের) হচ্ছে। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যদি প্রমাণ হয় তো হবে। আর না হলে আসামী খালাস পাবে।

যুক্তি উপস্থাপন কলে মুজাহিদের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আরেক সুখরঞ্জন বালী যাতে তৈরি না হয় সেজন্য আমরা ডিফেন্স সাক্ষী আনিনি। আমাদের সাক্ষীদের কি ধরণের হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়েছে।
এসময় বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, আপনার সাক্ষীরা যে চাঁপে তা কোর্টে বলেননি।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, কিভাবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের চাঁপ দিয়ে সাক্ষ্য দিতে আনা হয়েছে তা আজ হয় তো প্রমাণ করা সম্ভব নয়। দুই বা তিন বছর পরে এটা প্রমাণ হবে।
এরপর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আপনি যা বলছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়, মূল্যহীন কথা। মূল্যহীন কথা বলবেন না।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সাতটি অভিযোগের কোনটি নূন্যতমভাবে প্রমান করতে পারেনি। 
যুক্তি উপস্থাপন কালে ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৪ মাসে ২৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট তদন্ত করেছেন। তিনি ’৭১ সালে যারা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের কাছে যাননি। ফরিদপুরের তারাপদ এর পরিবারের ১৮ জন সদস্য মারা গেছেন তদন্ত কর্মকর্তা তার কাছে যাননি। আজকের আসামী হিরো হলে জিপ গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ালে মানুষ তা দেখতে পেত। কিন্তু কেউ তা বলছে না। আমি বলব ঘটনা যেখানে ঘটেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেখানে যাননি।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আসামী ঘটনার সময় ছাত্র ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ’৭১ সালে ছাত্রসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার ও শান্তি বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এমন কোন তথ্য বা ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়নি। ’৭১ সালের কোন ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এই মামলায় কয়েকজন সাী  ঘরে ফিরে কমন সাক্ষী। শাহরিয়ার কবীর ও জহির উদ্দিন জালাল এই ট্রাইব্যুনালে  আরো আসামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। 
এই মামলায় অনেক সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়নি। কারণ তারা এই আদালতে সাক্ষ্য দিতে চায়নি এজন্য তাদের সাী করা হয়নি। মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মামলায় সাক্ষী মুজাহিদের মামলারও সাক্ষী। কিন্তু তিনি মুজাহিদের মামলায় সাক্ষ্য দেননি। এসব সাক্ষীদের কেন আদালতে আনা হয়নি সে ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি।


কাজী রোজী তার নিজের বইয়েই আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি/// পল্লব হত্যা বিষয়ে জল্লাদখানা যাদুঘরের রেকর্ড পড়ে শোনানো হল আপিল শুনানীতে


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক প্রদত্ত সাজা খারিজ চেয়ে আসামী পক্ষের দায়ের করা আবেদনের ওপর আপিল শুনানী চলছে। আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ কবি মেহেরুন্নেসা  এবং পল্লব হত্যা বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন।  আব্দুল কাদের মোল্লাকে যে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে এ  দুটি হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।

কবি মেহেরুন্নেসা বিষয়ে যুক্তি পেশ : কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তিনজন সাক্ষী হাজির করে। তিনজনই এ ঘটনা বিষয়ে শোনা সাক্ষী।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আজ কাজী রোজী নামে একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য  বিষয়ে বিভিন্ন স্ববিরোধীতা তুলে ধরে যুক্তি পেশ করেন।

তিনি বলেন সাক্ষী কাজী রোজী ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ নামে একটি বই লিখেছেন। সে বইয়ে তিনি কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি। অথচ তিনি ট্রাইব্যুনালে এসে এ ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে দায়ী করে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। জেরায় কাজী রোজীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনিতো আপনার নিজের লেখা বইয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম লেখেননি  এ ঘটনা বিষয়ে। তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন ভয়ে তিনি আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০১০ সালের জুলাই মাসে আর কাজী রোজী  তার বইটি লিখেছেন ২০১১ সালে।  তাহলে এখানে জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় আসামীর নাম উল্লেখ করতে ভয়ের কি  যুক্তি থাকতে পারে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বরং যেটা সত্য তা হল কাজী রোজী তার বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন অবাঙ্গালীরা কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী আব্দুল কাইউমও বলেছেন  কাজী রোজীকে নিজ  বাড়িতে সপরিবারে হত্যা  করে অবাঙ্গালীরা।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কাজী রোজী কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার মধ্যে অনেক স্ববিরোধীতা রয়েছে এবং তিনি তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন।
তিনি তার সাক্ষ্যে একস্থানে বলেছেন তিনি ঘটনার কথা শুনেছেন, আরেক স্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন।
তিনি বলেছেন, গুলজার নামে একজন অবাঙ্গালীর কাছে কবি মেহের হত্যার কথা শুনেছেন। আবার আরেক জায়গায় বলেছেন তিনি কাদের কাছ থেকে শুনেছেন তাদের নাম বলতে পারবেননা।
এসময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী  বলেন,  সাক্ষী নাম বলতে পারবোনা বলে যে কথা বলেছেন সেটা অন্য বিষয় সম্পর্কে বলেছেন তিনি। ২৭ মার্চের পরের ঘটনা সম্পর্কে কার কাছ থেকে শুনেছেন তাদের নাম বলতে পারবেননা বলে বলেছেন। তিনি মেহেরুন্নেসা হত্যা বিষয়ে ২৭ মার্চের আগেই শুনেছেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপনি ভিন্নমত পোষন করতেই পারেন। কিন্তু কাজী রোজী তার সাক্ষ্যে  বলেছেন, কাদের মোল্লার নেতৃত্বে তারা কবি মেহেরুন্নেসার বাসায় ঢুকেছিল। কিন্তু কাদের মোল্লা নিজে ঘরে ঢুকেছিল কি-না তা বলতে পারবনা।
তিনি এমনভাবে এ ঘটনা বলছেন যেন মনে হয় তিনি সেখানে ছিলেন ঘটনার সময়।
তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন তাদের মাথায় সাদা পট্টি বাঁধা ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন সাক্ষী তাকে একথা বলেননি। আবার তিনি বলেছেন, কোরআন শরীফ বুকে চেপে বাঁচতে চেয়েছিল মেহের। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন একথাও তাকে বলেনি সাক্ষী।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষী কাজী রোজী ২৪ মার্চ  ভারতে যান। স্বাধীনতার পর ফিরে আসেন। তিনি কার কাছ থেকে কিভাবে ঘটনা শুনলেন? একবার বলেছেন গুলজার নামে একজন  অবাঙ্গালীল কাছ থেকে শুনেছেন। তার কথায় অনেক বৈপরীত্য রয়েছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে তিনি যে অভিযোগহ করেছেন তা সত্য হলে তিনি তার নিজের বইতে  আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করতেন।



পল্লব হত্যা বিষয়ে জল্লাদখানা যাদুঘরের ডকুমেন্ট পড়ে শোনানো হল :
মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা বিষয়ে গতকাল সোমবার  যুক্তি উপস্থাপনের  সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামী পক্ষের চতুর্থ সাক্ষী সাহেরা বেগমের সাক্ষ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সাহেরা বেগম  হলেন পল্লবের ভাবী।   সে ছিল রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। পরে সে পক্ষ ত্যাগ করে আসামী পক্ষে সাক্ষ্য দেন। এ কারনে তার সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে আজ যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন,  ঠিক আছে, পল্লবের ভাবী পক্ষ ত্যাগ করে আসামী পক্ষে এসেছেন  কিন্তু ২০০৮ সালে তিনি তার দেবর সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা নিয়েতো আর প্রশ্ন নেই। মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে সাহেরা বেগম পল্লব হত্যা বিষয়ে যে  বিবরন দেন তা তিনি  আজ আদালতের সামনে পড়ে শোনান। সেখানে তিনি পল্লব হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি বলে  উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

পল্লব হত্যাকান্ড,   শহীদ খন্দকার আবু তালেব, এবং হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে  শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের  সাক্ষাতকার,  লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত  বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে জল্লাদখানা যাদুঘরে।  মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত  পাম্প হাউজে  এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে  এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং  অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে  জল্লাদ খানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ।  জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন  সময়ে তাদের সাক্ষাতকার  বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

পল্লব হত্যাকান্ড বিষয়ে   যাদুঘর কর্তৃপক্ষ পল্লবের  ভাবী সায়রা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন ০৬/০৬/২০০৮ তারিখ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর  কর্তৃপক্ষের কাছে  পল্লব হত্যা বিষয়ে   তার ভাবী সাহেরা বেগম যা বলেছিলেন তা নিম্নরূপ :
 ‘ ভোটাভুটি হয়ে যাওয়ার পর ধরাধরি শুরু হয়। আমি ভোট দিয়েছিলাম। তখন আমার এক ছেলে ফারুকের বয়স পাঁচ মাস। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথা মনে আছে। তার পর থেকে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। আশ্রয়ের জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আবার ঢাকায় আসি। সাভার থাকার সময় আমার দেবর টুনটুনি মিয়া (পল্লাব) বাসা ছেড়ে চলে যায়। কারণ ও ছিল মুক্তিযোদ্ধা। পরে আবার একদিন সাভারে আমাদের কাছে এসেছিল। কিন্তু শুধু বলছিল যে, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি বসে থাকতে পারি না।’ বিহারিরা তাকে খুঁজছিল তা সে জানতে পারে। ফলে সে ভারতে যাওয়ার জন্য পথে বের হয়। নবাবপুর রোডে বিহারিরা তাকে ধরে ফেলে। কেউ তার হাত কাটে, কেউ তার পা কাটে, এভাবে তাঁকে হত্যা করে বিহারিরা।
বিয়ের জন্য আমরা রসিকতা করলে সে বলতো, ‘আমি রাজনীতি করি, আমার বিয়ে হবে ভাল পরিবেশ।’ শেষ রাতের তারা’ নামে একটা সিনেমায় সে অভিনয় করেছিল। নাটকে অভিনয় করতো। আমাদের বলতো সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাবে। টুনটুনি মিয়া তার কলেজে প্যারেড করাতো। সেই গল্প আমাদের শুনাতো বাসায় এসে। পেটে বাচ্চা বেঁধে দৌড়াতে হতো সেই প্যারেডে। আর সে থাকতো খুব ফিটফাট। কবি নজরুলের ভক্ত ছিল টুনটুনি মিয়া। কবির মতো তাঁর গায়ে পেঁচানো থাকতো একখানা চাদর। সে কত ভাল ছিল তা আর কি বলবো! আমার বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ঘুরতো সব সময়। বাইরে বাইরে থাকতো প্রায়ই। তবু তাঁর জন্য এতদিন পরেও আমার চোখে জল আসে। ’

সাহেরা বেগম ছাড়াও আব্বাস নামে আরো এক ব্যক্তির  জবানবন্দী যা জল্লাদখানা যাদুঘরের কাছে রক্ষিত আছে তা পড়ে শোনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। সেখানেও পল্লব হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলা হয়নি বলে আদালতকে জানান তিনি।
সাহেরা বেগম পল্লব হত্যা বিষয়ে আসামী পক্ষের হয়ে ট্রাইব্যুনালে যে জবানবন্দী দেন তাও আদালতে আজ পড়ে শোনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজাক।
যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির। এসসময় আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ ।


সোমবার, ২৭ মে, ২০১৩

হাজী মোবারকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ haji mobarak hossain pw2


মেহেদী হাসান,২৭/৫/২০১৩

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যুনালে আজ হাজী মোবারক হোসেন এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী খোদেজা বেগমের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।

আমার নাম খোদেজা বেগম, আমার বয়স-৫৬ বৎসর। আমার ঠিকানা-গ্রাম শিমরাইল কান্দি,থানা ও জেলা ব্রাক্ষণবাড়িয়া।
আমার পিতার গ্রামের নাম ছাতিয়ান টেংরাপাড়া। আমি একজন গৃহিনী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১৪/১৫ বৎসর। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব থেকে আমার পিতা আনছার বিভাগে চাকুরী করতো। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার দাদা, দাদী এবং মা অসুস্থ থাকার খবর পেয়ে আমার পিতা ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ৯ তারিখে রাত্রে বাড়িতে আসেন। ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বর তারিখে আমার পিতা আমাদের এলাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং রাজাকাররা আসতেছে সেই খবর পেয়ে বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে পালানোর সময় রাস্তায় উঠলেই রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে  হাত বেঁধে মারপিঠ শুরু করে। তখন আমরা চিল্লা চিল্লি ও কান্নাকাটি করতে করতে তাদের পিছনে পিছনে যাই। তখন রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে  সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে নিয়ে যায় যেখানে রাজাকার ও আর্মির ক্যাম্প ছিল। ঐদিন আসরের পরে আমার আম্মা ও দাদী বাবার জন্য ভাত নিয়ে উল্লেখিত ক্যাম্পে যায়। তখন ক্যাম্পের একজন রাজাকার যার নাম আব্দুর রউফ আমার মা ও দাদীকে বলে যে ঐ খাবার আমার নিকট দিয়ে যান আমি খাইয়ে দিব। আব্দুর রউফ রাজাকার মা ও দাদীকে বলেছে উল্লেখিত ক্যাম্পের কমান্ডার আখাউরা থানার নয়াদিল গ্রামের মোবারক হোসেন, যাকে ধরলে আমার বাবাকে ঠাড়িয়ে নেয়া যাবে। তখন আমার মা ও দাদী বািড়তে ফিরে আমাদের  ঐকথা জানায়। তখন আমার মা আমাদের বাড়ির পাশের খালেক মাওলানাকে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন আজকে রাত হয়ে গেছে, আগামীকাল সকালে ক্যাম্পে গিয়ে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবেন। পরদিন সকালে খালেক মাওলানার নিকট যাওয়ার পূর্বে লোকজন বলাবলি করছে যে, তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে আমার বাবাকে গুলি করে করে হত্যা করে সেখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। তখন আমরা কান্নাকাটি করে বাকাইল ঘাটে গিয়ে দেখি আমার পিতার হাত,পা বাঁধা, কপালের ডান পাশে গুলি, মাথার খুলি উড়ে গেছে, বুকের ডান পাশে গুলির চিহ্ন এবং নাভির নীচে ও উপরে দুটি কাটা চিহ্ন অবস্থায় লাশ পড়ে আছে। তারপর আমার মা খালেক মাওলানার নিকট যায়। খালেক মাওলানা উল্লেখিত ক্যাম্প থেকে একটি শ্লিপ এনে আমাদের নিকট দিলে আমরা আমাদের পিতার লাশ নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি। যে সকল রাজাকাররা আমার পিতাকে ধরে  নিয়ে গিয়েছিল তাদের কারো নাম ঐসময় জানতামনা, দেখলে চিনবো। আমি শুনেছি আমার বাবাকে ধরে  নেওয়ার সময় রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেন  ও তার  সহযোগী রাজাকার জামশেদ ছিল। ঐসময় আমি তাদেরকে দেখেছিলাম। আমি যে রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেনের কথা বলেছি তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।  তখন তার বয়স কম ছিল, দাড়ি ছিলনা। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী করেছি। আমি আমার পিতার হত্যার বিচার চেয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছিলাম।

জেরা : আজ একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা করা হয়। প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন
রাজাকার জামশেদের নাম আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নয়। (চলবে)



আপিল আবেদন শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// কল্পনার ওপর ভিত্তি করে কাদের মোল্লাকে সাজা দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল

মেহেদী হাসান, ২৭/৫/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক প্রদত্ত যাবজ্জীবন সাজার  বিরুদ্ধে দায়ের করা  আপিল আবেদনের ওপর শুনানী চলছে।  তাকে সাজা থেকে খালাস চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানীতে অংশ নিয়ে আজ   আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল অনুমান এবং কল্পনার ওপর ভিত্তি করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে সাজা দিয়েছে। ফ্যাক্টস বা ঘটনার ওপর ভিত্তি করে সাজা দেয়নি।  আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমানিত হয়নি এবং তাকে সাজা  দেয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল বিরাট বড় ভুল করেছে  বলে তিনি  আপিল শুনানীতে বলেন।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে  এক নং অভিযোগ তথা পল্লব হত্যার অভিযোগে প্রদত্ত সাজার  বিরুদ্ধে তিনি যুক্তি পেশ করছিলেন। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যার অভিযোগে  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজার বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপনের সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রায় থেকে দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ে শোনান এবং রায়ের নানা অসঙ্গতি  তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, পল্লব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী ছিল এবং দুজনই শোনা সাক্ষী। এদের একজন হলেন আব্দুল কাইউম । তিনি    ট্রইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, আব্দুল কাদের মোল্লা  পল্লব নামে মিরপুর  বাংলা কলেজের একজন ছাত্রকে হত্যা করেছে বলে তিনি শুনেছেন। আবার এ শোনা কথা  তিনি  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীতে বলেননি; বলেছেন  ট্রাইব্যুনালে এসে। তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি  একথা বলেছিলেন  কি-না।  তিনি বলেছেন  ‘হ্যা বলেছি’।  তদন্ত কর্মকর্তকে জেরার সময়  প্রশ্ন করা হয়েছিল আব্দুল কাইউম আপনাকে এ বিষয়ে বলেছিলেন  কি-না। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন ‘না তাকে আব্দুল কাইউম একথা বলেননি’। 
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এরূপ সাক্ষীর  শোনা কথা কি করে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এভাবে সাক্ষীর বিভিন্ন দুর্বল দিক তুলে ধরে তিনি বলেন,  আব্দুল কাইউমের সাক্ষ্য পুরোপুরি বাদ  হলে পল্লব হত্যা বিষয়ে একজন মাত্র সাক্ষী থাকেন এবং তিনি হলেন শহীদুল হক মামা। সাক্ষী  শহীদুল হক মামা বলেছেন- তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিতদের কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লা জড়িত ছিল। 
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালের রায়ের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়েই বলা হয়েছে অন্যান্য ডকুমেন্ট দরকার  এ ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে  সাজা দেয়ার জন্য। কিন্তু আব্দুল কাইউমের সাক্ষ্য  বাদ দিলে তো আর কোন ডকুমেন্ট নাই। শুধুমাত্র শহীদুল হক মামার শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে তাকে সাজা দেয়া যেতে পারে? অন্যান্য ডকুমেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লা ষাটের দশকে কি করতেন, সত্তরের দশকে কি করতেন, জামায়াতে ইসলামের সাথে তার সম্পর্ক কি ছিল এসব। ব্যারিস্টার রাজ্জাক প্রশ্ন করেন এসব কি কোন ডকুমেন্ট হতে পারে সাজা দেয়ার  জন্য। তিনি বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল বিরাট ভুল করেছে। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমানিত হয়নি। সম্পূর্ণ কল্পনা এবং অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।

ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পল্লবের আপন ভাবী সাহেরা খাতুন আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে। তিনি সাক্ষ্য দেয়ার সময় বলেছিলেন পল্লব হত্যা বিষয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম জীবনেও শোনেননি। জীবনেও আব্দুল কাদের মোল্লার নাম শোনেননি বলায় তার সাক্ষ্য আমলে নেয়নি ট্রাইব্যুনাল।




মাওলানা নিজামীকে সালাম দিলেন সাক্ষী //সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

মেহেদী হাসান
২৬/৫/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন মোঃ আইনুল হক। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীকে শনাক্ত করার জন্য সাক্ষীকে নিজামীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সাক্ষী আইনুল হক ট্রাইব্যুনালে কাঠগড়ায় বসে থাকা নিজামীকে দেখে সালাম দেন। মাওলানা নিজামীও সালাম গ্রহণ করেন। এরপর সাক্ষী ডকে ফিরে এসে বলেন, তিনি আসামীকে চিনতে পেরেছেন। 

জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, ১৯৬৪ সালে আমি এসএসসি পাস করি। গ্রামে আমাকে বিবিসি নামে ডাকে। আমি শিক্ষকতা করি, এখন অবসরে। ১৯৭০-’৭১ সালের পত্রিকায় দেখেছিলাম নিজামী সাহেব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। সাক্ষী আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মে মাসের ১০ তারিখে স্কুলের হেড মাস্টারের রুমে ১০-১২জন লেক দেখি। পরে হেডমাস্টারের কাছে জানতে পারি পিস কমিটি গঠনের জন্য তারা এসেছে। হেডমাস্টার বলেন, একজন মতিউর রহমান নিজামী। এরপর সাক্ষী মামা আসগর আলী, চাচা একেএম পরা মানিক খালাতো ভাইসহ প্রায় ৩০০ মানুষকে পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক হত্যা করার ঘটনার বর্ণনা দেন। 

জবানবন্দী শেষে জেরায় সাক্ষীকে একটি প্রশ্ন করেন জুনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম। এরপর সোমবার পর্যন্ত জেরা মূলতবি করা হয়। হরতালের কারনে  আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা যাননি ট্রাইব্যুনালে।

সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপির বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। জবানবন্দী অসমপ্ত অবস্থায় আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।
এছাড়া সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া মৃত ৩ জনসহ নতুন ৮ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, যে সব সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব নয় তাদের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের কাছে এ আবেদন করা হয়েছে।
২৮ মে এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে তার মামলা বাতিল করে দেয়ার ট্রাইব্যুনালের আদেশ (রিকল) পূর্ণ বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা  একটি আবেদন ট্রাইব্যুনালের কাছে দাখিল করেছি যে  বিচারপতি নিজামুল হক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় মামলা বাতিলের আবেদন সংক্রান্ত বিষয়টি খারিজ করেছেন।
কিন্তু ওই আদেশের সাবেক সদস্য বিচারক একেএম জহির আহমেদ দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। অন্য দুই বিচারপতি ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীর ও  নিজামুল হক নিজে। নিজামুল হক স্বাইপির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। সদস্য বিচারক একেএম জহির আহমেদ পদত্যাগ করেছন। ওই বিচারিক প্যানেলের বর্তমান চেয়ারম্যান শুধুমাত্র রয়েছেন। সেহেতু সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করার পরেও  আমরা তার আদেশ রিকল পূর্ণ বিবেচনার জন্য  আবেদন করেছি। এ বিষয়ে শুনানির ধার্য না করে মামলার কার্যক্রম আগামী ২৮ মে পর্যন্ত মুলতি করেন।


রবিবার, ২৬ মে, ২০১৩

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল



 মেহেদী হাসান
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি) জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে  অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানীর তারিখ ২৭ জুন ধার্য্য করা হয়েছে।

চেয়ারম্যান বিচারপতি  এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানীর এ তারিখ ধার্য্য করেন আজ ।

গত ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে।

গত বছর  ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।
অভিযোগ আমলে নেয়া উপলক্ষে মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়  আনা হলেও বিচার কক্ষে নেয়া হয়নি।






হাজী মোবারকের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর জেরা

Mehedy Hasan
২১/৫/২০১৩
হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী দারুল ইসলাম জেরার সময় আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে যেসব উত্তর দিয়েছেন তা নিম্নরূপ :


মোছাঃ রীনা বেগম দায়েরকৃত আখাউড়া থানার মামলা নং-২৬, তারিখ ২৮/০৫/২০০৭ মামলায় ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া দ্রুত বিচার আাদালতে পি ডব্লিউ-৪ হিসাবে আমি সাক্ষ্য প্রদান করিনাই বা আসামী মোবারক আলীও ঐ মামলায় খালাস পায়নাই। উল্লেখিত মামলায় মোবারক আলী আপিলে দায়রা জজ আদালত হইতে খালাস পান কিনা তাহা আমি জানিনা। আমি পশ্চিম পাকিস্তানে আর্টিলারী সেন্টার ক্যামেলপুরে ছিলাম। ১৯৭০ সালে ছুটিতে আসা পর্যন্ত আমার পোষ্টিং ওখানেই ছিল। আমার সি,ও, একজন পাঠান ছিলেন, তার নাম আমি জানিনা। পাকিস্তান আর্মিতে আমি নন কমিশন অফিসার ছিলাম। আমি কাস টেন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। পাকিস্তান আর্মিতে নন কমিশন ল্যান্স নায়েকরা এককালীন ৩মাসের বেশী ছুটি পায়না, ইহা সত্য নহে। আমি  পাকিস্তান আর্মি রুলস পড়িনাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাকে সুবেদার আব্দুর সাত্তার সাহেব ইনটেলিজেন্সের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আব্দুর সাত্তার সাহেব বর্তমানে জীবিত নেই। সাব সেক্টর-২ এর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন আইনদ্দিন সাহেব যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহন করেছেন। তিনি বর্তমানে জীবিত আছেন। (চলবে)

২২-০৫-২০১৩ ইং পুনরায় জেরা শুরু ঃ-
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে নিয়ে পুর্ব পাকিস্তানে আসা সংক্রান্ত কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট এখন নাই। ইহা সত্য নহে যে, পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত কোন আর্মি সদস্য ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাকে বেতন দেওয়া হতো না। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেতন উত্তোলন সংক্রান্ত কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট এখন নাই। আমি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে পূর্ব পাকিস্তান আসি নাই বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেতন তুলি নাই, ইহা সত্য নয়। ইহা সত্য নয় যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি ইনটেলিজেন্স হাবিলদার ছিলাম না। ১৯৭১ সালে গংগাসাগর, আখাউড়া, পাহাড়পূর এবং ফকিরমুরা এলাকা এরিয়া কমান্ডার ছিলেন মেজর সেকান্দার। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালে উল্লেখিত এলাকায় ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লা খান ২৩ বেলুচ রেজিমেন্ট, এরিয়া কমান্ডার ছিলেন। উল্লেখিত ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লা খান ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের তালিকায় ২৩ নং ক্রমিকে আছেন কিনা আমি জানি না। উল্লেখিত এলাকা সমূহে ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন মেজর মোঃ আব্দুল্লাহ খান, মেজর সাদেক নেওয়ার ও ক্যাপ্টেন জাবেদ ইকবাল, ইহা সত্য নয়। ব্রক্ষ্মণবাড়িয়ার মহকুমার পাকিস্তান আর্মিদের কয়টি ইউনিট ছিল তাহা আমার স্মরণ নাই। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার আর্মিদের ৪টি ইউনিটে লেঃ কর্নেল খিজির হায়াত খান ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহ এবং লেঃ কর্ণেল জায়েদী কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া কোন সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালে ২রা আগষ্ট তারিখের পূর্বে বাংলাদেশে কোন রাজাকার ছিলনা, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে পাকিস্তান আর্মিদের সাথে সহযোগিতামূলক কাজ করতো, তৎপূর্বে বাংলাদেশে আনছার ছিলনা। ইহা সত্য নহে যে, মোবারক আলী পাকিস্তান আর্মিদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতো একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই। জেলা প্রশাসক ও মহকুমা প্রশাসকগণ রাজাকারদের নিয়োগ প্রদান করতেন, ইহা সত্য নহে। রাজাকাররা পাকিস্তান সরকার থেকে বেতন ভাতা পেত। রাজাকারদের বদলী এবং পদোন্নতি জেলা প্রশাসকগণ করতেন, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার এস,ডি ও, কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। আমি খবরের কাগজ ও বইপত্র পড়িনা, কারণ সময় পাইনা। ১৯৭১ সালে আগতলা সরকারের কোন পাশ আমার নিকট নাই, কারণ পাশের দরকার হতোনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি অনেকবার আগরতলা যাতায়াত করেছি এমন কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ‘মুক্তিযুদ্ধে ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া’ নামক বইটি আমি পড়ি নাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম তাহা কোন বই বা পত্রিকায় উল্লেখ নাই, ইহা সত্য নহে। মোবারক আলী পাকিস্তান আর্মিদের সংগে সম্পৃক্ত ছিল তাহা ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত কোন পেপার বা পত্রিকায় এই কথা ছাপা হয়েছিল কিনা তাহা আামি জানি না। আমি জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র কখনও পড়িনাই। জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন রোকন হয়না, তবে নেতা হয়। হাজী মোবারক আলী কখনও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সহিত জড়িত ছিলনা তিনি আওয়ামীলীগ করতেন, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে মোবারক আলী পাকিস্তানি আর্মিদের স্বেচ্ছাসেবক ছিল এমর্মে আমার নিকট কোন দালিলিক প্রমান নাই, তবে তিনি রাজাকার ছিলেন। মোবারক আলী রাজাকার ছিল এ মর্মে কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট নাই। মোবারক আলী কোন সময় স্বেচ্ছাসেবক বা রাজাকার ছিলেন না, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার রাজাকার কমান্ডার কে ছিল তাহা আমার স্বরণ নাই। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার শান্তি কমিটির আহবায়ক কে ছিলেন তাহা আমি জানিনা। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিলাম এবং দেশ স্বাধীনের পর পালিয়ে এসেছি, ইহা সত্য নহে। আঃ হামিদ, পিতা আব্দুল কাহার ভূঁইয়ার প্ররোচনায় অর্থের প্রলোভনে আমি অত্র মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছি, ইহা সত্য নহে।
‘‘বর্তমানে আমি অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৬৩ সালে আমি পাকিস্তান আর্মিতে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি মুক্তিযোদ্ধার ইনটেলিজেন্স সার্ভিসে হাবিলদার ছিলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে আমি ৪ মাসের ছুটি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাড়ীতে আসি” বা  ‘‘ বেতন নিতে এসে জানলাম যে, ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিবেন পল্টন ময়দানে” বা ‘‘ বাড়িতে যাওয়ার পর এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী আমি স্থানীয় ছেলে পেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ১লা এপ্রিল থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনিং প্রদান করি” বা ‘‘যুদ্ধে আমরা টিকতে না পারায় আমরা ভারতের আগরতলায় চলে যাই। আমি ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিতাম এবং ট্রেনিং দেওয়ার পর দলে দলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশে পাঠাতাম অপারেশনের জন্য। এপ্রিলের ২০ তারিখে আমি ভারত থেকে নিজ বাড়িতে আসি। ২১শে এপ্রিল তারিখ সকাল বেলা ই,পি,আর, এর ফেলে যাওয়া একটি লাইট মেশিনগান পাই। সেই মেশিনগান পাওয়ার পর আমি বাড়িতে আরও ৫/৬ জনকে যোগাড় করে তাদের নিয়ে পুনরায় ভারতে যাই এবং গোয়েন্দাগিরি করার জন্য মাঝে মধ্যে দেশে আসি” বা ‘‘ উল্লেখিত ব্যক্তিগণ সহ অন্যান্যরা রাজাকারের একটি দল গঠন করল” বা ‘‘২১শে আগষ্ট তারিখে জানতে পারি পাক সেনারা এবং রাজাকাররা এই মর্মে সন্দেহ করে যে, মান্দাইল গ্রামের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঐ ব্রীজটি ভেঙ্গেছে। পরদিন ২২শে আগষ্ট সকাল ৯-০০ টার দিকে গংগাসাগর পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে জামসেদ, মুক্তা মিয়া ও মোবারক মান্দাইল গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর দেয় হাজি নূর বক্স এর বাড়িতে মিটিং হবে সেখানে যাওয়ার জন্য তাদেরকে বলে” বা ‘‘ ঐ বাড়িতে জমায়েত লোকজনদেরকে পাক সেনা ও রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌকায় করে গংগাসাগর দীঘির পাড়ে পাক সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়” বা ‘‘সেখানে জমসেদ, মুক্তা মিয়া, মোবারক আলী, বজু মিয়া উপস্থিত থেকে উল্লেখিতভাবে মান্দাইল গ্রামের ২৬ জন এবং অন্যান্য গ্রামের ৭জন মোট ৩৩ জনকে বাছাই করে তাদেরকে দীঘির পশ্চিম পাড়ে নিয়ে যায়” বা ‘‘ দীঘির পশ্চিম পাড়ে উল্লেখিত ৩৩ জনকে দিয়ে গর্ত খোড়ায়” বা ‘‘ঐ সময় সেখানে মোবারক আলী, জমসেদ, মুক্তা মিয়া উপস্থিত ছিল। পরদিন ২৩শে আগষ্ট তারিখে ক্যাম্পে আটক রাখা বাকী লোকজনদেরকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। আর্মি ক্যাম্প থেকে যাদেরকে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন আবুল বাশার যিনি ঈমামতি করেন তিনি জীবিত আছেন, তার নিকট থেকে আমি ঘটনার বিষয় জানতে পারি এবং আমি নিজেও গোয়েন্দা সূত্রে ঘটনার বিষয় জানতে পারি” বা ‘‘ ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার অসুস্থ মাকে দেখার জন্য নিজ বাড়িতে গেলে মোবারক আলী ও তার সহযোগীরা তাকে ধৃত করে গুলি করে হত্যা করে”
তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নহে। ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় আমি সাক্ষী নাই। ইহা সত্য নহে যে, আমি তাবিজ কবজ করে জিন হাজির করে লোকজনকে প্রতারনা করে অর্থ উপার্জন করি। (সমাপ্ত) 


বুধবার, ২২ মে, ২০১৩

শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// বিচার শুরুর পরও তদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল  কাদের মোল্লার আপিল আবেদন শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার  পরও  এক বছর পর্যন্ত তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। এমনকি চার্জ গঠনের পরও  তদন্ত বন্ধ করা হয়নি যা বিস্ময়কর ঘটনা।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ-এ শুনানীর সময় আজ  তিনি এ কথা বলেন।  ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লাকে প্রদত্ত  সাজা খালাস চেয়ে আসামী পক্ষে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানী চলছে বর্তমানে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা তদন্ত  শুরু  করে  ২০১০ সালের ৭ জুলাই।  তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর। প্রসিকিউশন তা ফরমাল চার্জ আকারে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর।  ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নয় ২০১১ সালের ২৮ ডিসম্বের। চার্জ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ মে।

কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন  ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া, চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর পরও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। ২০১২ সালের ২৮ মে চার্জ গঠন করা হল আর তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত কাজ চালানোর কথা তদন্ত কর্মকর্তা জেরায়   স্বীকার করেছেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া এবং  চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়ে যাবার পরও কি করে তদন্ত চলতে পারে? তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরও এক বছর তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে  ট্রাইব্যুনালের রুল ভঙ্গ করা হয়েছে। এর পরে আর এ বিচার চলতে পারেনা। এ বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল বিচার ব্যবস্থার দর্শনই সম্পূর্ণরুপে বদলে দিয়েছে।
এসময়  একজন বিচারপতি বলেন,  ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা দেয়া আছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা আছে সত্য,  কিন্তু এ ধরনের আইনবিরোধী, বিধি বিধান বিরোধী কাজের জন্য ট্রাইব্যুনাল কোন আদেশ দেয়নি এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও কোন দরখাস্ত করা হয়নি।
এসময় আরেকজন বিচারপতি এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বলেন, আসামী পক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে জবাব  দিতে হবে এবং কোর্টকে  সন্তুষ্ট করতে হবে।

গতকাল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পল্লাব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী ছিল এবং দুজনই শোনা সাক্ষী। সাক্ষী  শহীদুল হক মামা বলেছেন তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিতদের কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লা জড়িত ছিল।  এটা কেমনতর শোনা কথা হল? কি করে এ জাতীয় শোনা কথাকে এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করা যায়? শোনা কথাকে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের আইনে দেয়া হয়েছে কিন্তু শোনা কথা এমন হতে হবে যার বিচাররিক মূল্য রয়েছে। যদি সাক্ষী বলত যে, আমাকে আমার ভাগনে বলেছে সে দেখেছে আব্দুল কাদের মোল্লা  অমুককে মেরেছে তা হলে তার মূল্য থাকে। কিন্তু এখানে তো এরকম কেউ বলেনি। একটা শোনা কথা আরেকটা শোনা কথাকে সহায়তা করতে পারেনা।  
পল্লব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের  আরেক সাক্ষী আব্দুল কাইউমও একজন শোনা সাক্ষী। সে মিরপুর বাংলা কলেজের একজন ছাত্রের কাছ থেকে শুনেছে আক্তার গুন্ডা  আব্দুল কাদের মোল্লাসহ পল্লবকে হত্যা করেছে। আবার একথা সে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেনি, বলেছে ট্রাইব্যুনালে এসে। তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সে একথা বলেছিল কি-না।  সে বলেছে হ্যা।  আবার তদন্ত কর্মকর্তকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আব্দুল কাইউম আপনাকে এ বিষয়ে বলেছিল কি-না। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছে বলেনি। এরূপ সাক্ষীর শোনা কথা কি করে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষী শহিদুল হক মামা বিটিভির কাছে এক সাক্ষাৎকারে ১৯৭১  সালের  ২৫ মার্চের পর ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছে। জেরায় সে বলেছে বিটিভিতে সে যা বলেছে তা সত্য। কিন্তু তার ওই সাক্ষাৎকারে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম  উচ্চারন করেনি এবং আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে যে ঘটনার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে করা হয়েছে সে বিষয়েও কিছু বলেননি।

এদিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানী  অনুষ্ঠিত হয়নি।
শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার, অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির প্রমুখ।



মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৩

শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// ১৯৭৩ সালের আইনে কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়ার এখতিয়ার নেই

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দর রাজ্জাক বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আইনে ব্যক্তি হিসেবে আব্দুল কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়ার এখতিয়ার নেই। আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আলবদর বা রাজাকার বাহিনীর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রমানিত হয়নি এবং তাকে সে হিসেবে সাজাও দেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তাকে সাজা দেয়া হয়েছে একজন ব্যক্তি হিসেবে। কিন্তু কোন বাহিনীর সাথে জড়িত না থাকলে বিচ্ছিন্ন একজন ব্যক্তি হিসেবে তার বিচার করা এবং  সাজা দেয়ার এখতিয়ার ১৯৭৩ সালের আইনে নেই।

আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক দাখিল করা আপিল আবেদনের শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ  একথা বলেন। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ শুনানী চলছে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৫  জন  পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের জন্য বাছাই করেছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু ১৯৭৪ সালে তৃতীয় দেশীয় চুক্তির মাধ্যমে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং  তাদের  বিচার করা হয়নি।  ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের  বিচারের জন্য যে আইন ১৯৭৩ সালে করা হয়েছিল সেই  আইনের অধীনে আজ দেশীয় সহযোগীদের বিচার করা হচ্ছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মূল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে, বিচার থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের সহযোগীদের বিচার করা যায়না। বাংলাদেশ হাইকোর্ট কর্তৃকও এ বিষয়ে একটি রায় রয়েছে (৫৪ ডিএলআর-২৯৮)।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক কারনে এ বিচার করা হচ্ছে।  ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগ একসাথে আন্দোলন করার সময় দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেক বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকে তখন আব্দুল কাদের মোল্লা অংশ নিয়েছেন। তিনি তখন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমদ এবং আব্দুল  কাদের মোল্লাকে ১৯৯৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি একসাথে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন ঘটনা যে, একসাথে দুটি দলে আন্দোলন করার পর একটি দল কর্তৃক আরেক দলের নেতাদের ৪০ বছর পর বিচারের মুখোমুখি করা হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক  প্রতিপক্ষতার কারনেই  আজ এ বিচার করা হচ্ছে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীতে বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর পর কেন এ বিচার করা হচ্ছে, বিচার করতে কেন ৪০ বছর সময় নেয়া হল সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ একটি শব্দও উল্লেখ করেনি, কোন ব্যাখ্যা দেয়নি।
এসময় একজন বিচারপতি প্রশ্ন করেন হিটলারের নাজি সদস্যদেরতো এখনো খুঁজে পাওয়া গেলে বিচার করা হচ্ছে।
জবাবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাজিত  দলের অনেকে পালিয়ে ছিল। যাদের পাওয়া গেছে তাদের বিচার হয়েছে। সেব্রেনিসা গণহত্যার জন্য দায়ী রাদোভান কারাদজিকও নয় বছর পালিয়ে থাকার পর ধরা পড়েছে এবং তার বিচার হয়েছে। কিন্তু  দীর্ঘ ৪০ বছরে আব্দুল কাদের মোল্লা কখনো পালিয়ে ছিলেননা। তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন, চাকরি করেছেন, রাজনীতি করেছেন, দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বও পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে  যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে কোন অভিযোগ আগে আনা হয়নি।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -২ কর্তৃক আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুলের লিখিত জবাব প্রদানের জন্য ২৯ মে শেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আয়াদ এমপি। আসামী পক্ষে গতকাল সময় প্রার্থনা করায় ট্রাইব্যুনাল-২ এ সময় প্রদান করেন।

এছাড়া  ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ  মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষীর জেরা শেষ হয়েছে।


সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।



Mehedy Hasan


জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ খলিলুর রহমান, আমার বয়স আনুমানিক ৬৩/৬৪ বৎসর। আমার ঠিকানাঃ গ্রাম- সোনাতলা, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা।
১৯৬৭ সালে আমি এস,এস,সি পাশ করি। ১৯৭২ সালে এইচ,এস,সি পাশ করেছি। এস,এস,সি পাশ করার পর আমি আমার মামার কনষ্ট্রাকশন ফার্মে চাকুরী করতাম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার বয়স ছিল ২১/২২ বৎসর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতের নদীয়া জেলার কেচুয়াডাঙ্গা ইয়ৎ ক্যাম্পে চলে যাই। সেখানে আনুমানিক আড়াই মাসের মত প্রাথমিক ট্রেনিং গ্রহণ করি। সেখান থেকে হায়ার ট্রেনিংয়ের জন্য দার্জিলিংয়ের পানিঘাটায় যাই। পানিঘাটায় গিয়ে ২৭ দিনের ট্রেনিং গ্রহণ করি। ট্রেনিং নেওয়ার পর ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শিবগঞ্জ বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি এবং সোনা মসজিদে আসি। আমরা একত্রে ১০ জন ছিলাম। আমরা সোনা মসজিদে এসে কলাবাড়িয়া এলাকায় ২৪ দিন অবস্থান করি। সেখানে অবস্থান করা নিরাপদ নয় বিধায় আমরা আবার ভারতে ফিরে যাই। পরে আমরা মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি হয়ে নদীপথে পাবনা জেলার সুজানগর থানা এলাকায় আসি। সেখানে চর এলাকায় ২/৩ দিন অবস্থান করার পর ২৭শে নভেম্বর ১৯৭১ তারিখ দিবাগত রাত্রি আনুমানিক ১২.০০/১২.৩০ টার দিকে সাথিয়া থানার ধুলাউড়ি গ্রামে ডাঃ আব্দুল আওয়াল সাহেবের বাড়িতে চলে আসি। ঐদিন রাত্রি আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ করে আর্মিদের পায়ের বুটের শব্দ শুনতে পাই। তখন আমি ঐ বাড়ির ঘরের পূর্ব দক্ষিণ দিকের জানালা খুলে দেখতে পাই যে, নিজামী এবং কিছু দখলদার বাহিনী এবং কিছু রাজাকার সহ আমাদের ঘরের দিকে আসছে। ঐ ঘরের উত্তর দিকের দরজা খুলে আমি ঘর থেকে বের হই। ঘর থেকে বের হওয়ার পর কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এছাড়া লোকজনের কথাবার্তা ও আনাগোনা এবং হ্যান্ডস আপ শব্দ শোনা যায়। তখন আমি বুঝতে পারলাম আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। তখন আমি আওয়াল সাহেবের বাড়ির পশ্চিম পাশে থাকা বট গাছে উঠে আত্মগোপন করি। বটগাছের উপর থাকা অবস্থায় ভোর হয়ে আসলে দেখতে পাই আশে পাশের মহিলারা ঐ বটগাছের নীচে এসে বসেছে। তখন আরও দেখতে পাই যে, রাজাকাররা মহিলাদের নিকট থেকে গহনা ছিনিয়ে নিচ্ছে। আরও দেখতে পাই ঐ মহিলাদের মধ্য থেকে দুইজন যুবতী মহিলাকে পাক বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে পাশের একটি ঘরের মধ্যে ঢুকছে। ঐ ঘরের ভিতর থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ শোনা যায়। আমি বুঝতে পারলাম ঘরের ভিতর মহিলাদের রেপ করছে। এরপর আরও দেখতে পাই সেখানে নিজামী সাহেব রাজাকারদের বলছে পুরুষদের ধরে নিয়ে আস। এরপর দেখতে পাই যে রাজাকাররা পুরুষদের সেখানে ধরে নিয়ে আসার পর তাদেরকে নিয়ে প্রাইমারী স্কুলের দিকে চলে যায়। প্রাইমারী স্কুলটি ঐ বটগাছের দক্ষিণ দিকে। প্রাইমারী স্কুলের পাশে মাঠ এবং মাঠের পাশে ইছামতি নদী। আমি বটগাছ থেকে সকাল আনুমানিক ৯.০০টা/৯.৩০টার সময় নামি। গছ থেকে নামার পর গছের নীচে থাকা অনেক লোকজনের নিকট জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি মিলিটারীরা চলে গেছে। তৎপর আমি স্কুলের পাশ দিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে মাঠে যাই। সেখানে গিয়ে ২৫/৩০ জন মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। আরও দেখতে পাই আমার সহযোদ্ধাদের মধ্যে চারজন মারা গেছে এবং দুইজন জীবিত আছে। যে দুইজন জীবিত আছে তাদের একজনের নাম শাহজাহান এবং অন্যজনের নাম মাজেদ। শাহজাহানের গলা কাটা অবস্থায় এবং মাজেদের পেটে বেয়নেট চার্জ করা অবস্থায় দেখতে পাই। শাহজাহানের বাড়ি রসুলপুর এবং মাজেদের বাড়ি বনখোলা গ্রামে। বাকীরা স্থানীয় সাধারণ লোকজন। স্বাধীনতার পরে জীবিত দুইজন সহযোদ্ধার সংগে আমার দেখা হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি আগে থেকে চিনতাম, তার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত (আপত্তি সহকারে)। আমি শুনতে পেয়েছি যে, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি। (জবানবন্দী সমাপ্ত)


জেরা : আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর প্রদান করে তা এখানে তুলে ধরা হল।
আমার আদিবাস সোনাতলা গ্রামে। আমি সোনাতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করি। সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করি। এস.এস.সি পাশ করার পরে আমি কলেজে ভর্তি হই নাই, তবে প্রাইভেটে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা তিনি লেখাপড়া কোথায় করেছেন এ সম্পর্কে আমি জানি না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বাড়িতে প্রয়োজন না হওয়ায় যাই নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পিতার পেশা কি ছিল তাহা আমার জানা নাই। উনার পিতা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে নাকি পরে মারা গেছেন তাহা আমার মনে নাই। নিজামী সাহেবের পিতা কয় ভাই বোন ছিল তাহা আমার জানা নাই। নিজামী সাহেবরা তিন ভাই বোন। বাকী দুইজন উনার বোন। উনার বোনেরা কোথায় লেখাপড়া করেছেন তাহা আমার জানা নাই, তবে একজন বোনের বিবাহ হয়েছে আমাদের গ্রামে। বাংলাদেশ হওয়ার আগে উনার ঐ বোনের বিবাহ হয়েছে। আমি অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবকে চিনি। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরে এবং ডাব বাগান যুদ্ধের আগে ভারতে চলে যান কিনা তাহা আমার জানা নাই, তবে তার সঙ্গে আমার ভারতে দেখা হয়েছিল। ২৫ শে মার্চ থেকে আমি ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অধ্যাপক আবু সাঈদের সাথে আমার দেখা হয়েছিল কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে অনেকবার তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমাদের এলাকায় স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরে সংগঠকের দায়িত্বে কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। মদন মোহন দাস ও আমি একত্রে ভারতে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে কোন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাত হয় নাই এবং ঐ সময় এলাকায় কোন মুক্তিযোদ্ধা দেখি নাই। আমাদের সাথিয়া এলাকায় সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাসে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম ভাই স্থাপন করেন। তখন আমি ভারতে ছিলাম। ইহা সত্য নহে যে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজ গ্রামেই থাকতাম, বাইরে যেতাম না। আমাদের ইউনিয়নের নাম নাকডেমরা। ১৯৭১ সালে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ফয়েজ উদ্দিন আহম্মেদ। আমার ওয়ার্ডের মেম্বার কে ছিলেন তাহা আমার এখন খেয়াল নেই। আমার সোনাতলা গ্রামে এখন অনেক মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, তখন আমি এবং মদন মোহন ছাড়া আমাদের গ্রামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। ধুলাউড়ি গ্রাম থেকে আমি দুইজন আহত মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ ও শাহজাহানকে নদী পার করে দিয়ে আমি ডাক্তার হাবিবুর রহমানের বাড়ী যাই, কিন্তু তিনি ভয়ে চিকিৎসা করার জন্য আসেন নাই। ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত্রি সাড়ে তিনটা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা কোন রাজাকার বা আলবদরদেরকে আটক করে নিয়ে যায় নাই। ঐ ঘটনার দিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর বাহিনীর কোন যুদ্ধ হয়েছিল কিনা তাহা আমি জানি না, তবে গোলাগুলির শব্দ শুনেছিলাম। পদ্মাবিলা গ্রামের খবির উদ্দিন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা ঐ দিন ধুলাউড়ি গ্রামের অন্য একটি বাড়িতে ছিলেন, তিনি আমাদের ১০ জনের গ্রুপের সদস্য ছিলেন না। ঐদিন যে সমস্ত পুরুষ লোকজন রাজাকার, আলবদরদের এবং পাকিস্তানী আর্মিদের হাতে ধৃত হয়েছিল তাদের মধ্যে শাহজাহান, মাজেদ ও কুদ্দুস ছাড়া অন্য সকলেই শহীদ হয়। কুদ্দুসের বয়স কম থাকায় তাকে হত্যা করা হয় নাই। সে আমাদের ১০ জনের গ্রুপের একজন সদস্য ছিল। আর্মিরা আসার পরে সর্বপ্রথম কুদ্দুস ধরা পড়ে কিনা তাহা আমি জানি না, তবে সেদিন সে আওয়াল সাহেবের বাড়িতে সেন্ট্রির দায়িত্বে ছিল। কুদ্দুসকে পাকিস্তানী আর্মিরা ধরে পাবনা ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাকে প্রথমে সাত দিন ক্যাম্পে রাখতো এবং একদিন বাড়িতে যেতে দিত তৎপর সাতদিন তাকে বাড়িতে থাকতে দিত এবং একদিন পাবনা ক্যাম্পে হাজিরা দিতে হতো, তৎপর তাকে কবে কিভাবে ছেড়ে দেয় তাহা আমি জানিনা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে কুদ্দুসের সঙ্গে সর্বপ্রথম কবে দেখা হয়েছিল তাহা আমার স্মরন নাই। কুদ্দস সাহেব অদ্য থেকে আনুমানিক তিন বৎসর আগে মারা গেছেন। শাহজাহান সাহেবকে নদী পার করে দেওয়ার পর কত দিন পরে তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় তাহা আমার মনে নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সম্ভবত আমি ভোট দিয়েছিলাম। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট দিতে কয়দিন গিয়েছিলাম তাহা আমার খেয়াল নাই। আমাদের গ্রামে কোন শান্তি কমিটি গঠন হয় নাই। আমাদের ইউনিয়নে কোন রাজাকার বাহিনী বা আলবদর বাহিনী গঠিত হয় নাই। আমি ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগে রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির নাম শুনেছিলাম। সাথিয়া থানার শান্তি কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীর নাম আমি বলতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি আমার কর্মস্থল চাটমোহরে থাকতাম। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সাহেবের সঙ্গে সর্বপ্রথম ভারতের ইয়ৎ ক্যাম্পে দেখা হয়। আমার ১০ জনের গ্রুপের মধ্যে আমি খলিলুর রহমান, আখতার আলম (কমান্ডার), শাহজাহান (আহত), অপর শাহজাহান, মোখলেছুর রহমান ওরফে রঞ্জু, সালাম, কুদ্দুস, মাজেদ, মোকছেদ ও জলিল ছিলাম, তবে জলিল এ ঘটনার দিন আমাদের সঙ্গে ছিল না। জামাল নামে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি, তার বাড়ি ডহরজানি গ্রামে। আমার বাড়ি থেকে পদ্মাবিলা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৯/১০ কিলোমিটার। রতনপুর আমার গ্রাম থেকে কতদূরে তাহা বলতে পারব না। নূরপুর ও বামনডাঙ্গা গ্রাম আমি চিনিনা। রসুলপুর গ্রাম আমি চিনি, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। পদ্মবিলা গ্রাম থেকে রসূলপুর কত দূরে তাহা বলতে পারব না, তবে পাশাপাশি হতে পারে। ধূলাউড়ি গ্রামে আমি ঘটনার দিনই প্রথম যাই নাই, তার আগে থেকে ঐ গ্রামে আমার যাতায়াত ছিল। আমরা যে আওয়াল সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম তার সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল না। তার বাড়ির সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। ১৯৭১ সালের আগে ধূলাউড়ি গ্রামের আব্দুল গফুর ফকির নামে আমার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে আসা যাওয়া ছিল। আব্দুল গফুর সাহেব ১৯৭১ সালে বিবাহিত ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। গফুররা দুই ভাই। তার অপর ভাইয়ের নাম আমার মনে নাই।  (চলবে)

তাং- ২১/০৫/২০১৩ ইং
 জেরা (পুণরায়) ঃ
উল্লেখিত গফুর সাহেব জীবিত আছে। ধূলাউড়ি গ্রামে আমার যাতায়াত আছে। ঐ গ্রামে ১৯৭১ সালে লোকসংখ্যা কত ছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে ঐ গ্রামের যে সকল লোকের বয়স ১৫ বৎসর বা তার অধিক ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন জীবিত থাকতে পারে। ধূলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাদের মধ্যে আমি আবেদ আলী এবং লিয়াকত হোসেন কে চিনি। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে ধূলাউড়ি গ্রামে যাওয়ার আগের দিন চর এলাকা ঘরবাড়িতে ছিলাম। তার নাম মনে নাই এবং গ্রামের নামও মনে নাই। ১৯৭১ সালে পাবনা শহর থেকে ধূলাউড়ি গ্রামে ঢোকার রাস্তা গ্রামের মাঝখান দিয়ে ছিল। আওয়াল সাহেবের বাড়ীর তিন দিকে রাস্তা আছে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিক ছাড়া। আওয়াল সাহেবের বাড়ির পূর্ব দিকে নয় উত্তর দিকে মোকলেছ চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ী। আওয়াল সাহেবের বাড়ী ও মোকলেছ চেয়ারম্যানের বাড়ির মাঝখানে বটগাঠটি ছিল না। আওয়াল সাহেবের বাড়ি থেকে প্রাইমারী স্কুলটির দূরুত্ব আনুমানিক ১০০ ফিট দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায়। স্কুলের মাঠ এবং ইছমতি নদী লাগালাগি নহে, মধ্যখানে চাষের জমি আছে প্রায় ২০০ ফিটের মত। লাশগুলি আমি চাষের জমির উপর পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। স্কুলের মাঠে কোন লাশ ছিল কি না তাহা বলতে পারব না, কারণ আমি সেই দিন স্কুলের মাঠে যাই নাই। যে লাশগুলি আমি পড়ে থাকতে দেখেছিলাম তার মধ্যে আমার পরিচিত ব্যক্তির লাশ ছিল। যার মধ্যে আকতার আলম, শাহজাহান, মোকছেদ, মোসলেম এর লাশ ছিল। তাছাড়া যেখানে আহত অবস্থায় শাহজাহান এবং মাজেদকে পেয়েছিলাম যাদেরকে চিনতাম। অন্যদের নাম আমার মনে নাই। উল্লেখিত নিহত আহত ৬ জনই আমার গ্রুপের সদস্য ছিলেন। বাকী নিহতদের নাম আমি জানি না। আমাদের গ্রুপের সালাম ঘটনার রাত্রে সেন্ট্রির দায়িত্বে ছিল এবং সে ঐ রাত্রে পালিয়ে গিয়েছিল। তিনি বর্তমানে জীবিত আছেন এবং তার বাড়ি গাঙ্গহাটি বনগ্রাম। গাঙ্গহাটি বনগ্রাম ১৯৭১ সালে সাথিয়া থানাধীন ছিল। আমি ঐ গ্রামে কখনও যাই নাই। সাথিয়া থানায় বনগ্রাম নামে গ্রাম আছে তাহা আমি জানি। বনগ্রামের উত্তর-পশ্চিম কর্ণারে গাঙ্গহাটি গ্রাম অবস্থিত। বনগ্রামে একটি হাট আছে। ঐ হাটে আমি নিজে গিয়েছি। গনগ্রাম বড় কিনা আমি জানি না। রসূলপুর বনগ্রামের কোন পাশে তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বরের আগে পাকিস্তান আর্মিদের আমি দেখেছিলাম। আমি তাদেরকে ঢাকায় দেখেছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি ঢাকায় এসেছিলাম কি না তাহা আমার স্মরণ নাই। আরও যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা সাথিয়া থানাধীন এলাকায় ছিল তাদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা ২৭ নভেম্বর তারিখে ধূলাউড়ি গ্রামে গিয়েছিলাম। উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমরা এদিন ধূলাউড়ি গ্রামে গিয়েছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে নিজাম উদ্দিন সাহেবের ক্যাম্প কোথায় ছিল তাহা আমি বলতে পারি না। ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে আমার ধূলাউড়ি গ্রামে যাওয়ার এবং ২৮ নভেম্বর তারিখে ঐ গ্রাম থেকে চলে আসা পর্যন্ত আমার সঙ্গে নিজাম উদ্দিন সাহেবের দেখা হয় নাই। ১৯৭১ সালে ধূলাউড়ি গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর তারিখে দিবাগত রাত্রি তিনটার সময় যখন আমি জানাল খুলে দেখি তখন জোৎ¯œা রাত্রি ছিল। ১৯৭১ সালে রমজান মাস ইংরেজী কোন মাসে ছিল তাহা আমি বলতে পারি না। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোরবানীর ঈদ কোন মাসে হয়েছিল তাহা আমি বলতে পারিনা। ১৯৭১ সালে রমজান মাস শীতকালে নাকি গরমকালে হয়েছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর তারিখ সকালে কুয়াশা ছিল তবে ততবেশী নহে। চন্দ্রমাসের আট বা নয় তারিখে চাঁদ কয়টার সময় উঠে এবং কয়টার সময় ডুবে যায় তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালের ২০ শে নভেম্বর ঈদ উল ফিতরের দিন ছিল কিনা তাহা আমার খেয়াল নেই। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর দিবাগত রাত্রি ৩.৩০ মি. সময় জোৎ¯œা ছিলনা। ঐদিন রাত্র ১.২৩ মিনিট সময় চন্দ্র অস্ত গিয়েছিল, ইহা সত্য নহে। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট ০৬-১১-২০১০ ইং তারিখে জবানবন্দী প্রদান করেছি। ১৯৭১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার থাকা অবস্থায় ধূলাউড়ি গ্রামের ঘটনা নিয়ে কোন মামলা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঘটনার রাত্রে রেজাউল করীম নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা ঐ গ্রামে ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। রেজাউল করীম নামে একজনকে আমি চিনি, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি একটি বই লিখেছেন মর্মে জানি, তবে উহাতে ধূলাউড়ি গ্রামের বর্ণনা আছে কিনা তাহা আমি জানি না। উনার ঐ বইটি মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা এটা আমি শুনেছি। জহুরুল ইসলাম বিশু নামে কোন মুক্তিযোদ্ধার নাম আমি শুনি নাই। ট্রেনিং শেষে ভারত থেকে এসে পাবনার সুজানগরে প্রবেশ করি। সুজানগরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকবাল সাহেব ছিলেন কিনা তাহা আমি জানি না। ১৯৭১ সালে যুদ্ধাকালীন সময়ে সুজানগর থানার মুক্তিযোদ্ধাদের ডেপুটি কমান্ডার কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। সাথিয়া থানার মুক্তিযোদ্ধাদের সি এ্যান্ড সি নিজাম উদ্দিন সাহেব ছাড়া অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার বা মুক্তিযোদ্ধা বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডারের নাম আমি বলতে পারব না। ধূলাউড়ি গ্রামে শহীদদের স্মরনে যে স্মৃতিস্তম্ভ হয়েছে তাহা আমি দেখেছি। ঐ স্মৃতিস্তম্ভে সকল শহীদদের নাম লেখা আছে কিনা তাহা আমি জানিনা, তবে আমার গ্রুপের যে ৪ জন শহীদ হয়েছিল তাদের নাম লেখা আছে। মাজেদ ঘটনার সময় জীবিত ছিলেন একথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
    “...............কন্ট্রাডিকশন - এই কথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।”
“মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে” মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন একথা আমাকে কে বলেছিল তাহা আমার মনে নাই, তবে আমি শুনেছিলাম। ঘটনার রাত্রে আক্রমনকারীদের মধ্যে নিজামী সাহেবকে আমি চিনতে পেরেছিলাম, বাকীদের চিনতে পারি নাই। নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি। নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আমি পাবনা থেকে এসেছি। আসামীর কাঠগড়ায় একজন ব্যাক্তিই উপস্থিত আছেন। আমি নিজামী সাহেবকে জড়িত করে যে বক্তব্য দিয়েছি তাহা অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত্রি সাড়ে তিনটার সময় হতে (২৮ শে নভেম্বর) পরবর্তী সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ধূলাউড়ি গ্রামে দেখেছি মর্মে অসত্য বক্তব্য দিয়েছি, ইহা সত্য নহে। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালে আমি মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে দেখি নাই। জহরুল ইসলাম বিশু এবং রেজাউল করীম কর্তৃক লিখিত বই দুইটি পড়েছি এবং সত্য প্রকাশের ভয়ে পড়ি নাই মর্মে বলেছি, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)



কাদের মোল্লার মামলায় আপিল শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক/// ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের বিচারের জন্যই ১৯৭৩ সালের আইন করা হয়েছিল

Mehedy Hasan
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আপিল আবেদনের শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,  ১৯৭৩ সালের যে আইনের মাধ্যমে আজ জামায়াতসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বিচার করা হচ্ছে  সে আইনটি করা হয়েছিল শুধুমাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য।।  বাংলাদেশীদের ঐ আইনের অধীনে বিচারের কোন উদ্দেশ্যই ছিলনা।
১৯৭৩ সালের আইনটি যে  শুধুমাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার বিচারের জন্যই পাশ করা হয়েছিল সে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আইন পাশের আগে বিলের ওপর তৎকালীন সংসদে যে আলোচনা হয়েছিল তা তুলে ধরেন আপিল বিভাগে। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলের ওপর এবং আইনটি পাশ বিষয়ে যে  বক্তব্য দিয়েছিলেন তা আদালতে পাঠ করে শোনান তিনি।  আইনমন্ত্রী  মনোরঞ্জন ধরের বক্তব্য উদ্ধৃতি করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, পাকিস্তানী  শসন্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাঙ্গালী জাতির বিরুদ্ধে বর্বর মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। তাদের বিচারের জন্য এই আইন প্রণয়ন করা হল।
এছাড়া আব্দুল্লাহ সরকার, এম সিরাজুল হক, আব্দুস সাত্তারসহ অন্য যারা ১৯৭৩ সালে সংসদে বিলের ওপর আলোচনা করেছিলেন তাদের বক্তব্যও পড়ে শোনানো হয়। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনের খসড়ায় ‘ইনকুডিং এনি পারসন’ বলে শব্দ  যুক্ত ছিল। এ  নিয়ে তখন সংসদ সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ সরকার সংসদে বলেছিলেন, এনি পারসন বলতে যেকোন ব্যক্তিকেই  এই আইনের আওতায় ফেলে দেয়া যাবে। এখানেই আমার আপত্তি।
আব্দুস সাত্তারসহ অন্যান্য অনেকে তখন প্রস্তাব করেন, যুদ্ধবন্দীসহ যেকোন ব্যক্তির পরিবর্তে শুধু যুদ্ধবন্দী শব্দ রাখা হোক।
আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর তখন সংসদে বলেন আমি এটা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি সংশোধনী  আনেন এবং ইনকডিং শব্দ বাদ দিয়ে বিলটি আইন আকারে পাশ করা হয়। মনোরঞ্জন ধর তখন বলেছিলেন আমাদের মহান নেতার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সম্মতিতে এ সংশোধনী আনা হয়েছে এবং এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হোক।
এসব রেফারেন্স পেশ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন পাশের পূর্বে সংসদের তখনকার আলোচনা থেকে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে,  ১৯৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী ছাড়া অন্য কারো বিচার করা এ আইনের কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। কোন বাংলাদেশীযে যাতে এ আইনের অধীনে বিচার করা না হয় সেজন্য তারা  উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং সংসদে আলোচনা শেষে বিল থেকে  ‘যেকোন ব্যক্তি’ কথাটি বাদ  দিয়ে শুধু যুদ্ধবন্দী কথাটা রাখা হয়।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিন্তু আজ সেই পাকিস্তানীদের সেনা কর্মকর্তাদের জন্য প্রণীত আইনটিকেই ২০০৯ সালে সংশোধন করে দেশীয় লোকদের বিচার করা  হচ্ছে। সংসদে আলোচনার মাধ্যমে  ‘যেকোন ব্যক্তি’ কথাটি বাদ দেয়া হলেও ২০০৯ সালের আবার ‘ইন্ডিভিজুয়াল’ (একক ব্যক্তি) এবং গ্রুপ অব ইন্ডিভিজুয়ালস’ (ব্যক্তিগোষ্ঠী) শব্দ যোগ করা হল।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপীল বেঞ্চ আজ  শুনানী গ্রহণ করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  এ পর্যায়ে শুনানী পেশ করার সময় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এটর্নি জেনারেল মাহবুলে আলমকে উদ্দেশ করে বলেন আপনি ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন এর জবাব প্রদানের জন্য এবং কোর্টকে সহায়তা করবেন।

শুনানীতে  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইনটি পাশ করা হয়। আইনটি পাশের আগে ১৫ জুলাই বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা হয় আর এটিই ছিল সংবিধানের প্রথম সংশোধনী।  ১৯৭৩ সালের আইন পাশের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছিল  কারণ ১৯৭৩ সালের আইনে ১৯৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকারের বেশ কয়েকটি  ধারা রহিত করা হয়েছিল।
সেজন্য ৭৩ সালের আইনটিকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধনী আনতে হয়েছিল। ৪৭ (ক) ও ৪৭ (৩ ) নামে দুটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়। 




হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আজ প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।




হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আজ  প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দী  গ্রহণ করা হয়।

Mehedy Hasan
আমার নাম মোঃ দারুল ইসলাম, আমার বয়স-৭৩ বৎসর। আমার ঠিকানা ঃ গ্রাম-বচিয়ারা, থানা-আখাউড়া, জেলা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া। বর্তমান ঠিকানা ঃ গ্রাম-গংগানগর, থানা-আখাউড়া, জেলা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া।
বর্তমানে আমি অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৬৩ সালে আমি পাকিস্তান আর্মিতে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি মুক্তিযোদ্ধার ইনটেলিজেন্স সার্ভিসে হাবিলদার ছিলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে আমি ৪ মাসের ছুটি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাড়ীতে আসি। মার্চ মাসে ঢাকায় আসি বেতন নেওয়ার জন্য। বেতন নিতে এসে জানলাম যে, ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে আমি উদ্ভূদ্ধ হয়ে নিজ বাড়িতে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পর এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী আমি স্থানীয় ছেলে পেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ১লা এপ্রিল থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনিং প্রদান করি। ১৬ই এপ্রিল তারিখে পাক সেনা বাহিনী আমাদের এলাকায় আসে এবং সেখানে আমাদের সাথে তাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আমরা টিকতে না পারায় আমরা ভারতের আগরতলায় চলে যাই। আমি ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিতাম এবং ট্রেনিং দেওয়ার পর দলে দলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশে পাঠাতাম অপারেশনের জন্য। এপ্রিলের ২০ তারিখে আমি ভারত থেকে নিজ বাড়িতে আসি। ২১শে এপ্রিল তারিখ সকাল বেলা ই,পি,আর, এর ফেলে যাওয়া একটি লাইট মেশিনগান পাই। সেই মেশিনগান পাওয়ার পর আমি বাড়িতে আরও ৫/৬ জনকে যোগাড় করে তাদের নিয়ে পুনরায় ভারতে যাই এবং গোয়েন্দাগিরি করার জন্য মাঝে মধ্যে দেশে আসি। গংগাসাগর দীঘির উত্তর পাড়ে পাক সেনাদের ক্যাম্প ছিল। সেই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল মেজর সেকান্দার এবং আমাদের এলাকার কিছু লোকজন যেমন বজু মিয়া, আবরু মিয়া, মোবারক আলী, মুক্তা মিয়া এবং জমসেদ মিয়া ঐ ক্যাম্পে আর্মিদের সাথে থাকতো। মোবারক মিয়া পাকিস্তান আমলে ই,পি,আর, তর সোর্স হিসাবে কাজ করতো। উল্লেখিত ব্যক্তিগণ সহ অন্যান্যরা রাজাকারের একটি দল গঠন করল। ১৯শে আগষ্ট আমরা মান্দাইল গ্রামের লোকজনের সাহায্যে তিনলাখপীর স্থানে ব্রীজ ভাঙ্গার জন্য যাই এবং ব্রীজ ভাঙ্গা হয়। আমার সংগে ছিল সুবেদার গিয়াস উদ্দিন, নায়েব সুবেদার আব্দুল কাদির এবং মিন্টু মিয়া সহ প্রায় ১২০ জন। ব্রীজ ভেঙ্গে আমরা চলে আসি। ২১শে আগষ্ট তারিখে জানতে পারি পাক সেনারা এবং রাজাকাররা এই মর্মে সন্দেহ করে যে, মান্দাইল গ্রামের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঐ ব্রীজটি ভেঙ্গেছে। পরদিন ২২শে আগষ্ট সকাল ৯-০০ টার দিকে গংগাসাগর পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে জামসেদ, মুক্তা মিয়া ও মোবারক মান্দাইল গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর দেয় হাজি নূর বক্স এর বাড়িতে মিটিং হবে সেখানে যাওয়ার জন্য তাদেরকে বলে। বেলা তিনটার দিকে হাজী নূর বক্সের বাড়িতে প্রায় ১৩০/১৩২ জন লোক জড়ো হয়। ঐ সময় গংগাসাগর ক্যাম্প থেকে পাক সেনারা নৌকা যোগে এসে হাজি নূর বক্স এর বাড়ি ঘেরাও করে। ঐ বাড়িতে জমায়েত লোকজনদেরকে পাক সেনা ও রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌকায় করে গংগাসাগর দীঘির পাড়ে পাক সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে কার বাবা, কার ভাই, কার আত্মীয় স্বজন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে তাদের বাছাই করা হয়। সেখানে জমসেদ, মুক্তা মিয়া, মোবারক আলী, বজু মিয়া উপস্থিত থেকে উল্লেখিতভাবে মান্দাইল গ্রামের ২৬ জন এবং অন্যান্য গ্রামের ৭জন মোট ৩৩ জনকে বাছাই করে তাদেরকে দীঘির পশ্চিম পাড়ে নিয়ে যায়। বাকী লোকদেরকে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আটক রাখে। দীঘির পশ্চিম পাড়ে উল্লেখিত ৩৩ জনকে দিয়ে গর্ত খোড়ায়। এরপর পাক সেনারা ঐ ৩৩জনকে ব্রাশ ফায়ার করে গুলি করে হত্যা করে ঐ গর্তে মাটি চাপা দেয়। ঐ সময় সেখানে মোবারক আলী, জমসেদ, মুক্তা মিয়া উপস্থিত ছিল। পরদিন ২৩শে আগষ্ট তারিখে ক্যাম্পে আটক রাখা বাকী লোকজনদেরকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। আর্মি ক্যাম্প থেকে যাদেরকে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন আবুল বাশার যিনি ঈমামতি করেন তিনি জীবিত আছেন, তার নিকট থেকে আমি ঘটনার বিষয় জানতে পারি এবং আমি নিজেও গোয়েন্দা সূত্রে ঘটনার বিষয় জানতে পারি। গংগাসাগর ক্যাম্প থেকে রাজাকার বাহিনী গঠন করে মোবারক আলীকে রাজাকার কমান্ডার করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আনন্দময়ী কালি মন্দিরে পাঠায়। সেখানে গিয়ে মোবারক আলী ও তাহার সহ রাজাকাররা কালি মন্দিরে মূর্তি ভেঙ্গে লুটপাট করে কালিমন্দিরের নাম পরিবর্তন করে ‘‘রাজাকার মঞ্জিল” নাম দিয়ে সেখানে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর মোবারক আলী অন্য রাজাকারের উপর ঐ ক্যাম্পের দায়িত্ব দিয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। সুহিলপুর রাজাকার ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মোবারক আলীর দায়িত্বে ঐ এলাকায় বেশ কিছু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়। ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার অসুস্থ মাকে দেখার জন্য নিজ বাড়িতে গেলে মোবারক আলী ও তার সহযোগীরা তাকে ধৃত করে গুলি করে হত্যা করে। আসামী মোবারক আলী ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন রোকন ছিলেন এবং তিনি স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে জামায়াতে ইসলামীর একজন সদস্য ছিলেন। আমি যে মোবারক আলীর কথা বলেছি তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী করেছি।



বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৩

সুখরঞ্জন বালীর সন্ধান লাভ// ভারতের কারাগারে বন্দী সে

 Bali

Bali's wife crying after abduction of Bali
Mehedy Hasan
সুখরঞ্জন বালীর সন্ধান পাওয়া গেছে। কলকাতার দম দম কারাগারে বন্দী সে।
সুখরঞ্জন বালী ভারতের কারাগারে বন্দী রয়েছে মর্মে আজ  নিউএজ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।  চাঞ্চল্যকর এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি করেছেন নিউএজ পত্রিকার সাংবাদিক (এডিটর স্পেশাল রিপোর্টস) ডেভিড বার্গম্যান। এখানে তার প্রতিবেদনটির অনুবাদ তুলে ধরা হল।

(সুখরঞ্জন বালী ছিলেন  রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিতে না এসে বালী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। কিন্তু সাক্ষ্য দেয়ার আগে অপহরনের শিকার হন তিনি। দেশে বিদেশে এ নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় তখন। )

ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন সাক্ষী ছিলেন সুখরঞ্জন বালী। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করে বলে আসামী পক্ষ দাবি করে আসছে। কলকাতার একটি কারাগারে তার খোঁজ পাওয়া  গেছে।
দণিাঞ্চলীয়  জেলা পিরোজপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের  লোক সুখরঞ্জন বালী।  গত বছরের ৫ নভেম্বর  সকালে তিনি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছিলেন। এসময় সকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে  থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে অপহরন করে নিয়ে য়াওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।

সুখরঞ্জন বালী কলকাতার দম দম সংশোধন কেন্দ্রে আটক রয়েছেন  এবং তাকে দেখতে তার  পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছে  মর্মে চলতি  বছরের  ফেব্রয়িারি মাসে  জানতে পারে নিউএজ।  এরপর এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে এবং কিভাবে তিনি সেখানে গেলেন তা খুজের বের করার জন্য অনুসন্ধান চালায় পত্রিকাটি।
পত্রিকাটি তার সঙ্গে দেখা করতে এবং তার বক্তব্য জানার জন্য  ওই কারাগারে  প্রবেশে  সক্ষম  একজন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিরাপত্তার কারণে তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছর কথা জানান ওই ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দের বিচার চলছে। এর কোন একটি দলের সাথেও ওই ব্যক্তির কোন সম্পৃক্ততা নেই।

যাকে দিয়ে আমরা সুখরঞ্জন বালীর কাছ থেকে বক্তব্য সংগ্রহ করেছি তিনি নিউএজকে নিশ্চিত করেছেন যে,  যে ব্যক্তির বক্তব্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার সাথে বালীর আসল ছবির সম্পূর্ণ মিল রয়েছে।

বালীর কাছ থেকে বক্তব্য সংগ্রহ করা ওই ব্যক্তি নিউএজকে জানান, বালী পুরো অপহরন ঘটনার অত্যন্ত স্পষ্ট বিবরন দিয়েছেন। । আমি মনে করি, ঘটনাটি সত্য না হলে এ রকম মুহূর্তে তার কাছ থেকে এমন বিবরণ আসা খুবই কঠিন।’ অবশ্য বালীকে তখন নার্ভাস দেখাচ্ছিল  বলেও ওই ব্যক্তি নিউ এইজ-কে জানান।

বালী জানান, অপহরনের পর  তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।  তবে তারা প্রশ্ন করেছে  ‘কেন আমি সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছি।  তারা বলেছে- আমাকে হত্যা করা হবে এবং সাঈদী সাহেবকে ফাঁসিতে ঝোলানো  হবে।’
তার বক্তব্য অনুযায়ী  ২০১২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী  বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার আগে ঢাকায় তাকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত আটক রাখা হয়। গত সাড়ে চার মাস তাকে  ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক রাখা  হয়েছে।

বালীর এসব দাবির সত্যতা নিউএইজ স্বাধীনভাবে   নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ, এর আগে তার পরিবারের এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামী পক্ষ তার অপহরন বিষয়ে যেসব কথা বলেছিল তার সাথে বালীর সর্বশেষ বক্তব্যের কিছু  কিছু গরমিল রয়েছে। তবে  বালী আটক থাকা থাকার  সময়সীমার যে তথ্য দিয়েছে তার সাথে মিল রয়েছে ভারতীয় আদালতে তার আটক থাকা বিষয়ে  পুলিশের দাখিলকৃত তথ্যের সাথে।

ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দেশটির ফরেইনার অ্যাক্ট-১৯৪৬ এর অধীনে কলকাতার একটি আদালত বালীকে ১০৫ দিনের কারাদণ্ড দেয় গত ৩ এপ্রিল । । যেহেতু বিচার চলাকালে এই মেয়াদটা  তিনি কারাভোগ করেছেন, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে  তাকে যেকোনো দিন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশনস কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে (বালীর বিষয়ে) কোনো তথ্য নেই। আমি যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের  সঙ্গে কথা বলেছি এবং তিনি বলেছেন- তিনি কিছুই জানেন না। এই মুহূর্তে বালী কোথায়  আছে তিনি তা জানেন না।’ মনিরুল ইসলাম ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে।  এরমধ্যে একটি হলো- সুখরঞ্জন বালীর ভাই বিশাবালীকে হত্যায় জাতি  থাকার অভিযোগ।

আদালত রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে  বিশাবালীকে একটি নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা  হয়  এবং ‘অভিযুক্ত দেলাওয়ার  হোসাইন সাঈদীর নির্দেশে  রাজাকাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে।  আদালত আরো ছয়টিঅপরাধের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করলেও কোনো সাজা ঘোষণা করেনি। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম  কোর্টের  আপিল বিভাগে রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে বালীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করেছে এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে সরকার এবং ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ৫ নভেম্বর  সকালে আসামিপক্ষের  আইনজীবীরা বালীকে অপহরনের ঘটনাটি  ট্রাইব্যুনালকে  জানায়। এর কিছুক্ষন পর  চিফ  প্রসিকিউটর  আদালতকে বলেন, ‘আদালত চত্বরে সাক্ষী অপহরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। আদালত চত্বরে যেসব পুলিশ সদস্য রয়েছে তাদের সাথে আমি কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে এখানে আজ এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেননা। চিফ প্রসিকিউটর যখন ট্রাইব্যুনালকে এ তথ্য জানান তখন তার পাশে তদন্ত সংস্থার প্রধানও উপস্থিত ছিলেন এবং তিনিও এ বক্তব্য সমর্থন করেন।


এরপর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয় সাক্ষী অপহরনের ঘটনাটি আসামী পক্ষের একটি অগ্রহনযোগ্য নাটক। নেতাদের বেআইনিভাবে মুক্ত করতে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম বনচাল করতে তাদের  (জামায়াাতে ইসলামীর) চেষ্টার অংশ এটি।

অপহরণের ঘটনার এক সপ্তাহ পর বালীর পক্ষে দায়ের করা হেবিয়াস করপাস  আবেদনের পরিপ্রেেিত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাই কোর্টকে বলেন, ‘এই গল্প একেবারেই উদ্ভট এবং ট্রাইব্যুনালের সুনাম নষ্ট, ট্রাইব্যুনালকে হেয় প্রতিপন্ন  করাই এর উদ্দেশ্য।

বালীর জেলখানায় থেকে দেয়া বিবৃতিতে জানন,  ছয় সপ্তাহ তাকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটকে রাখার পর ২৩ ডিসেম্বর তাকে চোক বেঁধে  পুলিশ তাকে সীমান্তে  নিয়ে যায়। এরপর ভারতীয়  সীমান্তরী বাহিনী-বিএসএফের হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়।  নিজের সই করা বিবৃতিতে বালী বলেন, ‘তারা আমাকে খাবার দেয়ার  জন্য মাগুরার একটি হোটেলের সামনে গাড়ি থামায় ।  এসময় তারা আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয়  এবং আমি বুঝতে পারি আমাকে প্রাইভেটকারে এখানে আনা  হয়েছে।

‘আমার খাবার খাওয়া  শেষ হলে ফের আমার চোখ বেঁধে  রওয়ানা দেয়া হয় গাড়িতে করে।  সর্বশেষ বিকেল ৫টার দিকে বিএসএফের হাতে আমাকে তুলে দিয়ে  তারা চলে যায।

বালী বলেন, বিএসএফ সদস্যরা তার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে। ‘তারা আমাকে নির্যাতন করে এবং জানতে চায় আমি সেখানে কী করছিলাম। বিএসএফের হাতে তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত আমি কী করেছি তা তুলে ধরার চেষ্টা করি। সম্ভবত তারা আমার কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব পায়নি এবং আমাকে আরো বেধধড়়ক মারধর করা হয়।’
এতে আহত হলে বিএসএফ তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে স্বরূপনগর থানায  নিয়ে যাওয়া  হয়। সেখান থেকে পরদিন তাকে বসিরহাট আদালতে তোলা হয়। । বসিরহাট কারাগারে ২০ দিন আটক থাকার পর তাকে দম দম   সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয় বলে জানান বালী।

বালী তার বক্তব্যে বলেন, ২০১২ সালের মে মাসের কিছুদিন পর সাঈদীর ছেলে ‘বুলবুল’ তার বাড়িতে যান  তার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এসময় তিনি বাড়িতে ছিলেননা। পরে ফোনে তিনি তিনি তাকে প্রথমবারের মত তার পিতা  সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য  দিতে বলেন। বুলবুল তার বাবার জন্য সাক্ষী হতে আমাকে অনুরোধ করে। কিছুদিন পর বুলবুল মারা যান। বালী উল্লেখ করেন  ২০১২ সালের ১৩ জুন সাঈদীর বড় ছেলে রফিক-বিন-সাঈদী মারা যান।

এই ছেলে হৃদরোগে মারা যাওয়ার পর সাঈদীর আরেক ছেলে তার  সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ রাখেন বলে জানান বালী এবং দুর্গাপূজার আগে (অক্টোবর ২০-২৪) তিনি ঢাকা আসেন। সাঈদীর বাসায়  ১৫ থেকে ১৬ দিন থাকেন।
তিনি বলেন, ৫ নভেম্বর তাকে সাঈদীর আইনজীবীদের অফিস পল্টনের একটি ভবনের ১০ম তলায় নেয়া হয়।  সেখানে সাঈদীর আইনজীবীদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। এরপর  তাকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যায়  তারা।

এর আগে সাঈদীর আইনজীবীরা এবং বালীর স্ত্রী দাবি করেন, বালী নভেম্বরের শুরুতে প্রথমে ঢাকা আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালে বালী সাঈদীর পরিবারের কোনো সদস্যের বাড়িতে অবস্থান করেননি  বলেও দাবি করেন তারা আইনজীবীরা।
ভারতীয় পুলিশের ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর দাখিল করা প্রথম প্রতিবেদনে  বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তা কুলদীপ সিং ভারতীয়  সীমান্তবর্তী স্বরূপনগরে ‘সন্দেহজনক গতিবিধি পর্যবেক্ষন’ করেন এবং বালীকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি পালান। এফআইআর-এ বলা হয়, আটক করা হলে বালী তাদের জানায়, ‘তিনি বাংলাদেশ থেকে তার ভাইযয়ের সঙ্গে দেখা করতে ভারতে এসেছে।’

কলকাতায় বাংলাদেশ   হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) শরিফ উদ্দিন নিউ এইজ-কে বলেন, ‘বিভিন্ন সংশোধন কেন্দ্রে আটক বাংলাদেশিদের দেখতে এপ্রিলের শেষের দিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  একটি দল কলকাতায় আসেন।’
‘আমরা  দম দম  সংশোধন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু  তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বালী সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা আমি বলতে পারবো না’ বলে জানান শরিফ উদ্দিন।

ওই  প্রতিনিধি দলের একজন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির লে. কর্নেল তৌহিদ বলেন, ‘বালীর সঙ্গে তারা দেখা করেছেন কিনা তা তিনি বলতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু কারাগারে  প্রায় ১৩০ জন ছিল, তাই আমি বিষয়টি স্মরণ করতে পারছি না। আপনাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে হবে।’

সুখরঞ্জন বালীর নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরনের শিকার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে বালীকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত হবেনা। কারণ এখানে ফেরত আসলে তার জীবন সত্যিই হুমকীর সম্মুখীন হবে।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় আজ রিপোর্ট  করা হয়েছে সুখরঞ্জন বালীর সন্ধান পাওয়া গেছে।  বর্তমানে সে ভারতের দম দম জেলখানায় বন্দী রয়েছে। বালীকে নিয়ে এ রিপোর্ট প্রকাশের পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার নিরাপত্তার দাবি  জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা  হয়েছে- দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারত  উভয় দেশ কর্তৃক সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বালীর অপহরনের বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়-বালীর দাবিমতে তাকে  ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে বাংলাদেশী পুলিশ অপহরন করে । এরপর তাকে কিছুদিন বাংলাদেশে বন্দী করে রাখার পর আইনশঙ্খলা বাহিনী তাকে সীমান্ত দিয়ে  ভারতে পাঠিয়ে দেয়  জোর করে। বালী অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা তাকে আটক করে এবং তার ওপর নির্যাতন চালায়। এরপর তাকে দমদম জেলে পাঠানো হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড  এ্যাডমা  গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলেছেন- ‘ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে সাক্ষী অপহরনের বিষয়টি প্রসিকিউশন, বিচারক এবং সরকারের আচরন নিয়ে  গভীর উদ্বেগ এবং সন্দেহের  জন্ম দিয়েছে।  অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন হল কে এই অপহরনের নির্দেশ দিয়েছিল এবং  উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিভাবে এর সাথে নিজেরা জড়িত ছিলেন?’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়-ট্রাইব্যুনালে আসামী পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল বালীর। বালী জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর তাকে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে। এরপর তাকে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে পুলিশের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
ট্রাইবু্যুনালের সামনে অবস্থানকারী অনেকে এ অপহরন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে।
আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে এ অপহরন ঘটনা জানানোর পর  ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের (প্রসিকিউশন) নির্দেশ দেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।  অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য স্বাধীন কোন সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়নি। কিছুপক্ষন পর  প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে ফিরে এসে বললেন আদৌ এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। কোন অপহরনের ঘটনা ওইদিন ঘটেনি। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপক্ষ আসামী পক্ষের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করলেন।
বালীর নিরুদ্দেশ হওয়া  বিষয়ে তদন্তের জন্য বিচারকরা পরবর্তীতে আর কোন নির্দেশ দিলেননা। সে কোথায় আছে সে বিষয়ে  কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি জনসম্মুখে। বালী বিষয়ে তদন্তের দাবিও অস্বীকার করল সরকার। বালীর পক্ষে দায়ের করা হেবিয়াস করপাস শুনানীতে  এটর্নি জেনারেল বললেন আদালতের সুনাম ুন্ন করার জন্য এ অভিযোগ করা হচ্ছে আসামী পক্ষ থেকে।

১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগসমূহের মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল সুখরঞ্জন বালীর ভাই   বিশাবালীকে হত্যার অভিযোগ।  রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন সুখরঞ্জন বালী। সাঈদীকে যে দুটি হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অভিযোগ হল বিশাবালীকে হত্যা।

বালী দাবী করেছেন তাকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে পুলিশ অপহরন করেছে। এরপর সরকারী হেফাজতে তাকে কয়েক সপ্তাহ আটকে রাখা হয়। এরপর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়-বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পারি দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে তাদেরকে কিভাবে বিএসএফ হত্যা করে তার ডকুমেন্ট হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে রয়েছে। ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের  দায়ে এপ্রিল মাসে বালীকে ভারতের একটি কোর্ট ১১০ দিনের জেল দেয়। তার কারাবাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো সে জেলে রয়েছে।

ভারতের দম দম জেলে বালীর বন্দী থাকার বিষয়টি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত মার্চ মাসে জানতে পেরেছে। কিন্তু বালীর নিরাপত্তার স্বার্থে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। গত বৃহষ্পতিবার ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমরা বালী বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করছি বলে উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএন এইচসিআর) ভারতীয় অফিস কর্তৃক বালীর সাথে কথা বলার আগে যেন বালীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো না হয়। বালী কোন রাজনৈতিক আশ্রয় চায় কি-না এবং সে উদ্বাস্তু কি-না সেটি তারা নির্ধারন করতে পারে। বালী যদি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাও করে এবং তার এ দাবি যদি প্রত্যাখ্যানও হয় তবু তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ঠিক হবেনা বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।  কারণ এখানে তার এখানে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার ঝুকি রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়-বালীকে যারা অপহরন করে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঠেলে দিয়েছে তাদের ধারণা ছিল বিএসএফ তাকে হত্যা করবে অথবা সে চিরতের নিখোঁজ হয়ে যাবে।
ব্রাড অ্যাডাম বলেন, সত্যিই বালীর জীবন এখানে হুমকির সম্মুখীন। কারণ এখানে তাকে ফেরত পাঠালে  অপহরনের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়বে। বালীর এখন একজন নিরপেক্ষ স্বাধীন আইনজীবী এবং ইউএনএইচসিআর  এর সহায়তা দরকার যাতে তাকে তার নিরাপত্তাহীনতার  বিষয়টি তুলে ধরা যায় এবং এ প্রেক্ষিতে সে  সে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানী ৬ জুন//“স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ের জন্য ইকোনমিস্ট দায়ী নয়”





মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা  এ কে এম ইউসুফের জামিন আবেদন খারিজ করা হয়েছে। জামিন আবেদন খারিজ করে আগামী ৬ জুন তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের  শুনানীর জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ  এ আদেশ দেন।

স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ে ইকোনমিস্ট দায়ী নয় : লন্ডন ভিত্তিক সাময়িকী দি  ইকোনমিস্টোর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১ কর্তৃক  জারি করা আদালত অবমাননা নোটিশের  ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইকোনমিস্ট’র পক্ষে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানীতে অংশ নিয়ে বলেন, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি  নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ এবং ২৩০টি ইমেইল ডকুমেন্ট ইকোনমিস্ট কর্তৃপক্ষ তৃতীয় একটি পক্ষের কাছ থেকে লাভ করে। কাজেই স্কাইপ সংলাপ হ্যাকিংয়ের জন্য ইকোনমিস্ট দায়ী। প্রাপ্ত ডকুমেন্ট এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইকনোমিস্ট সোর্সের সাথে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু গোপনীয়তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ সূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। ব্রিটেনের আইনে সে সুরক্ষা প্রদান করা আছে।

ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম  নিয়ে বেলজিয়ামের ড. আহমদ জিয়া উদ্দিনের সাথে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ এবং ইমেইল ডকুমেন্ট হাতে পাওয়ার পর ইকোনমিস্ট এর সাংবাদিক বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। এ প্রেক্ষিতে গত বছর ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে আদালত অবমনানা বিষয়ে নোটিশ জারি করেন  বিচারপতি নিজামুল হকের   ইমেইল, স্কাইপি একাউন্টস এবং  কম্পিউটর  থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ  করা হয়েছে তা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং  গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হয় ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে।
আদেশে বলা হয়, ইমেইল, স্কাইপি, কম্পিউটার হ্যাক করা, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা   ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং  বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রভাবিত করার শামিল। টেলিফোনে চেয়ারম্যানের সাথে যিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি  নিজেকে চেয়ারম্যানের সাথে কথপোকথনে লিপ্ত করেছেন এবং আইন অনুযায়ী তিনি এটি পারেননা।
তাই বিচারকাজে বাঁধা সৃষ্টি এবং হস্তক্ষেপ এর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে ব্যাখ্যা দানের নির্দেশ দেয়া হয়।

আজ শুনানীর সময় ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন, বিচারকের সাথে সাংবাদিকের কথা বলা অপরাধ কি-না। 
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোন আইন নেই এবং কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনেরও কোন নজির নেই। বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজীর  সাথে  দৃটি পত্রিকার সাংবাদিক কথা বলে রিপোর্ট করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ  একটি পর্যবেক্ষন দিয়ে বলেছিলেন সাংবাদিকরা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কথা বলতে পারতেন বিচারকের কাছে কোন কিছু জানতে চাওয়ার ক্ষেত্রে।
ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান ট্রাইব্যুনালকে প্রস্তাব করেন এ ক্ষেত্রেও কিছু পর্যবেক্ষন দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা যেতে পারে।

ইকোনমিস্ট কোন সূত্র থেকে স্কাইপ এবং ইমেইল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি । এ বিষয়ে  ট্রাইব্যুনালের এ প্রশ্নের জবাবে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা কোন অবস্থাতেই সূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য নয়।

ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে নোটিশের মূল বিষয় ছিল বিচারকের সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে। বিচারকের সাথে সাংবাদিকের কথা বলা আদালত অবমাননা কি-না এবং  ইকোনমিস্ট পক্ষ দাবি করেছেন তারা সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন। এ বিষয়ে আপনাদের জবাব কি?
তাছাড়া বিচারকের সাথে কথা বলার বিষয়ে ব্রিটেনের আইনে কি আছে সে বিষয়েও মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল।
উভয় পক্ষ জবাব প্রদানের জন্য সময় চাইলে  আগামী ১৮ জুন শুনানীর জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


সোমবার, ১৩ মে, ২০১৩

আসামীর নামও উচ্চারন করলেননা সাক্ষী


 মেহেদী হাসান
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গতকাল ৩৪ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীর নাম দ্বিজন কৃষ্ণ চৌধুরী (৫৮)। তবে সাক্ষী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে  কোন অভিযোগ করেননি এমনকি আসামীর নামও উচ্চারন করেননি। তাই আসামী পক্ষ থেকে তাকে জেরাও করা হয়নি।

জবানবন্দী :
আমার নাম দ্বিজয় কৃঞ্চ চৌধূরী, আমার বয়স-৫৮ বৎসর, আমার ঠিকানা-জগৎমল্লপাড়া, থানা-রাউজান, জেলা-চট্টগ্রাম।
১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল প্রায় ১৬ বৎসর। তখন আমি এস,এস,সি, পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমি বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে ডাক বিভাগে চাকুরী করি। ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল তারিখে বেলা আনুমানিক ৯.০০/১০.০০টার সময় আমাদের বাড়ির পশ্চিম দিক থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। গোলাগুলির শব্দ শুনে আমার বাবা-মা, ভাই ও বৌদি সহ আমরা ডাবুয়ায় আমার খালা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। যাওয়ার পথে কিছুদূর যাওয়ার পর আমাদের বাড়ির দিকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। লোকমুখে শুনতে পাই স্থানীয় কিছু রাজাকার, আলবদরের লোকজন এবং পাক অর্মিরা এসে শান্তি মিটিংয়ের নাম করে আমাদের বাড়ির পাশে কিরণ বিকাশ চৌধূরী ও সুরেন্দ্র বাবুর বাড়ির উঠানে লোকজন জড়ো করে এবং ব্রাশ ফায়ার করে ৩০/৩২জন মানুষ হত্যা করে। ২/৩দিন পরে বড়–য়া পাড়ার লোকজন এসে কিরণ বিকাশ চৌধূরীর বাড়ির উঠানের পাশে লাশগুলি গণকবর দেয়। পরে আমরা ভারতে চলে যাই। পরে আমরা আরো জানতে পারি যে আমাদের গ্রামের তিনজন বিজয় কৃঞ্চ চৌধূরী, বিধু ভূষণ চৌধূরী এবং ধীরেন্দ্র চৌধূরীকে ধরে ডাবুয়া খালের পাড়ে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে। দেশ স্বাধীনের পর দেশে ফিরে আসার পর জানতে পারি যে নিহতদের হাড় গোড় গণকবর থেকে উঠিয়ে স্থানীয় শ্মশানে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাহ করা হয়। যে স্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছিল সেখানে স্মৃতিসৌধ তৈরী করে নিহতদের নাম লেখা হয়েছে। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছি।



মাওলানা ইউসুফের জামিন আবেদন আদেশ tomorrow. Usuf's bail petition hearing held


মেহেদী হাসান, ১৩/৫/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফের পক্ষে করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।  শুনানী শেষে আগামীকাল  মঙ্গলবার আদেশের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামিন আবেদন শুনানীতে অংশ নেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীতে অংশ নিয়ে বলেন, রোববার মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হল। আমরা বলেছিলাম সোমবার আমরা তাকে স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করব। ট্রাইব্যুনালও বলেছিলেন আমরা সে সুযোগ পাব। কিন্তু সে সুযোগ পেলাম কোথায়? কোর্টের আদেশের পর লিখিত  ওয়ারেন্ট কপি পাবার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করল।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা সিরিয়াস অবজেকশন জানচ্ছি এর বিরুদ্ধে। কোর্টের সই করা লিখিত পরোয়ানা কপি ছাড়া কি করে তাকে গ্রেফতার করা হল? এর মাধ্যমে কোর্টের আদেশ এবং আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। তাই এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

জামিন আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তার বয়স ৮৭ বছর। অনেকবার অপারেশন হয়েছে। তাকে  হয় জামিন দেয়া হোক, অথবা বাসায়  গৃহবন্দী রাখা হোক, অথবা অধ্যাপক গোলাম আযমের মত হাসপাতালে রাখা হোক।

রাষ্ট্রপক্ষ জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে বলেন, মাওলানা উইসুফ জামায়াতের নায়েবে আমির। তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত। নায়েবে আমিরের দায়িত্ব যিনি পালন করতে পারেন তার ক্ষেত্রে অসুস্থতার কারণ খাটেনা।
জবাবে আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মাওলানা ইউসুফ জামায়াতের নায়েবে আমির সত্য কিন্তু এটা একটা অর্নামেন্টাল পোস্ট হিসেবে তাকে  রাখা হয়েছে এ পদে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নেননি। কোন মিটিংয়েও অংশ নেননি। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, গত এক বছর ধরে তিনি গৃহবন্দী রয়েছেন। আমরা তাকে কোর্টে নিয়ে  আসার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। তিনি কোর্টে আসার জন্য রেডি ছিলেন। কিন্তু তারপরও কোর্টের আদেশ হওয়া মাত্র লিখিত কপি ছাড় করার আগেই তাকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে রাজনৈতিক কারনে।
তাজুল ইসলাম শুনানী শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জামায়াতের নেতা হওয়া এবং জামায়াতের কর্মী হওয়া এখন অপরাধ হয়ে দাড়িয়েছে  এবং সেই অপরাধের কারনেই রাজনৈতিক উদ্দেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদেশ কপি সাইন করার আগেই আমরা টিভিতে খরব দেখতে পেলাম মাওলানা ইউসুফ গ্রেফতার। এটা নজিরবিহীন। তাকে এভাবে গ্রেফতার করা অবৈধ।
জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন সৈয়দ হায়দার আলী ও ঋষিকেষ সাহা।


রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক বৈরি ঘোষনা

মেহেদী হাসান, রোববার ১২/৫/২০১৩,:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক বৈরি ঘোষনা করা হয়েছে। এরপর আসামীর বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষীর জবানবন্দীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃকই মিথ্যা  আখ্যায়িত করে তাকে জেরা করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  কর্তৃক।

today মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সপ্তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রদীব কুমার দেব। রাষ্ট্রপক্ষের এ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি; এমনকি তার  জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীর নামও উচ্চারন করেননি। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কি  আসামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছিলেন? জবাবে সাক্ষী বলেন-মনে নেই।

সাক্ষীর এ জাতীয় জবাবে  বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাকে  জেরা করেন। জেরায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে বলেন, আপনি আসামী পক্ষ কর্তৃক আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সত্য গোপন করছেন। সাক্ষী তা অস্বীকার করেন।

আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক কোন সাক্ষীকে  বৈরি ঘোষনার ঘটনা এটিই প্রথম ঘটল ট্রাইব্যুনালে।

এর আগে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী গণেশ  চন্দ্র পক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন ট্রাইব্যুনালে। এছাড়া মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আরো এক সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষ পক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরনের শিকার হন এবং আজ অবধি তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।


জবানবন্দী
সাক্ষী প্রদীপ কুমার তার জবানবন্দীতে বলেন,  বয়স আনুমানিক ৬২/৬৩ বৎসর  ।  ঠিকানা- গ্রাম করমজা, থানা সাথিয়া, জেলা পাবনা।

সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমার গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৮ই মে তারিখ ভোর রাত্রে মেঘা ঠাকুরের লিচু গাছে উঠি লিচু পাড়ার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পাকিস্তানি সেনারা মেঘা ঠাকুরের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তারপর পাকিস্তানি সেনারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির মধ্যে থেকে লোকজনকে ধরে মারধোর করে মন্দিরের পাশে নিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। যাদেরকে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে মেঘা ঠাকুর, দ্বিজু ঠাকুর, করু ঠাকুর, ষষ্টি হালদার, শান্তি হালদার, আদু হালদার, কার্তিক হালদার, সুরেশ হালদার এবং আমার কাকা মুরালী চন্দ্র প্রমুখ ছিল। লাইনে আরেকজনকে দাঁড় করানো হয়েছিল তার নাম তারা হালদার, তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। ঐ হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর উহা দেখে আমি পালিয়ে যাই। ঐ হত্যাকান্ডের সময় সেখানে শুকুর, আফজাল, আছাদ, মোসলেম গং উপস্থিত ছিল।
ঐ ঘটনার ১২/১৪ দিন আগে খোদা বক্স চেয়ারম্যানের বোর্ড অফিসে একটি মিটিং হয়েছিল। সেই মিটিংয়ে খোদাবক্স চেয়ারম্যান ও অন্যান্যরা ছিল;    সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, গ্রাম ছেড়ে কেউ বাইরে যাবে না। আমি এই পর্যন্ত জানি।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর ইকবাল করিম সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এই ঘটনা সম্পর্কে আপনাকে  জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল?
সাক্ষী জবাবে বলেন,  আমার মনে নাই।

এসময় মীর ইকবাল করিম বিব্রতক অবস্থায় পড়েন এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুমতি চান সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে জেরা করার জন্য। ট্রাইব্যুনাল বলেন, লিখিত দরখাস্ত দিতে হবে এজন্য। লিখিত দরখাস্ত দেয়ার বিষয়ে রাজি হওয়া সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে জেরার অনুমতি প্রদান করেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীকে জেরা করা হয়।

জেরা :
প্রশ্ন : আপনি  ০৬/১১/২০১১ ইং তারিখে  এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক সাহেবের নিকট জবানবন্দী দিয়েছিলেন।
উত্তর :  আমার স্মরন নাই।

প্রশ্ন : আপনি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদানের সময়  মতিউর রহমান নিজামী এবং রফিকুন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন।
উত্তর :  আমার খেয়াল নেই।
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে বলেছিলেন আলবদরের কমান্ডার রফিকুন নবী বাবলু মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত লোক ছিল ।
উত্তর :  আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : মতিউর রহমান নিজামী সাহেব মেঘা ঠাকুরের বাড়িতে হত্যাকান্ডের সময় এবং খোদা বক্স চেয়ারম্যানের বোর্ড অফিসে মিটিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন তা  জানা সত্ত্বেও আপনি  আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে  গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর :  সত্য নয়।
প্রশ্ন : আসামী পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন আপনি।
উত্তর : সত্য নয়।
হরতালেল কারনে গতকাল আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা অনুপস্থিত ছিলেন।

মাওলানা ইউসুফ গ্রেপ্তার Maolana AKM Ususf arrest



মেহেদী হাসান, ১২/৫/২০১৩,
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, প্রবীণ আলেমে দ্বীন বিশিষ্ট হাদিস বেত্তা  মাওলানা একেএম ইউসুফকে গেপ্তার  করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরোয়ানা জারির পরপরই মাওলানা ইউসুফকে তার ধানমন্ডি বাসা থেকে গ্রেপ্তার  করে র‌্যাব, পুলিশ সদস্যারা।

দুপুর একটার দিকে মাওলানা ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে র‌্যাব-২ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকাল চারটার দিকে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনালে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বিকাল পাঁচটার কিছু আগে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল সকালে মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধ বিষয়ক অভিযোগ আমলে নেয়। এরপর ২৬ মে’র মধ্যে তাকে গ্রেপ্তারের  নির্দেশ দেয়া হয়।
গত ৮ মে বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ফরমাল চার্জে মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা,  ধর্মান্তরকরন, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ১৫ ধরনের অভিযোগ  আনা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয় বলে ঘোষনা করে তদন্ত সংস্থা।
আগামীকাল  সোমবার মাওলানা  এ কে এম ইউসুফের জামিন আবেদনের ওপর শুনানী  অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। মাওলানা ইউসুফের পক্ষে  অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান বলেন মাওলানা ইউসুফকে এভাবে গ্রেপ্তার করা এবং কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি দু:খজনক এবং নজিরবিহীন। সকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সময় ২৬ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আমরা ট্রাইব্যুনালকে বলেছে আজ সোমবার আমরা সেচ্ছায় হাজির করব। ট্রাইব্যুনালও বলেছেন, ২৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার কি, আগামী কাল (আজ) আপনারা তাকে হাজির করেন। কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরপরই পরোয়ান হাতে পাবার আগেই আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। এটা আইনের শাসনের ব্যত্যয়। কোর্ট মুলতবি হয়ে যাবার পর তাকে বিকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় এবং চেম্বারে  বসে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান বলেন, মাওলানা ইউসুফের বর্তমান বয়স ৮৭ বছর। তিনি বার্ধ্যক্যজনিত নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি  জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়-ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক


মেহেদী হাসান, ৯/৫/২০১৩
মুহম্মদদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট রায় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এ রায়ে আমরা স্তব্ধ, বিস্মিত এবং শঙ্কিত। প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড তো দূরে থাকÑ কোনরূপ সাজা দেয়ারই কোনো সুযোগ নেই বলে আমরা মনে করি। সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর এই মামলাটি দাঁড়িয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষনার পর নিজ বাসভবনে সংবাদ মাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিকৃয়ায় তিনি আসামী পক্ষ থেকে একথা বলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বীকৃত মতে ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিল একজন ১৯ বছরের  তরুণ। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যুদ্ধপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাদের যত বিচার হয়েছে তার কোথাও এরকম একজন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে পরবর্তী ৭টি প্রধান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোথাও এরকম একজন তরুণের কাঁধে এ ধরনের মারাত্মক অপরাধের দায় চাপানো হয়েছিল, তার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। যুদ্ধাপরাদের বিচারের ইতিহাসে এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।
আমরা মনে করি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায় চাপানোর একমাত্র কারণ হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা এবং এসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ রায়ে আমরা শোকস্তব্ধ, বিস্মিত এবং আতঙ্কিত। প্রসিকিউশন স্পষ্টতই এ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ মামলার তারকা চিহ্নিত সাক্ষী মোহন মুন্সি তার জবানবন্দির বিভিন্ন অংশে স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদান করে আলোচিত হয়েছেন। তিনি তার জবানবন্দিতে সোহাগপুর হত্যাকাণ্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের ৩টি ভিন্ন ভিন্ন তারিখ উল্লেখ করেছেন। প্রসিকিউশনের সাক্ষিরা এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, যা এমনকি ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণও অসম্ভব বলে মনে করেছেন। সাক্ষীরা এক দিকে বলেছে ওই সময় কামারুজ্জামান ছিল একজন তরুণ অন্য দিকে তারা বলেছে তিনি পাকিস্তান আর্মি অফিসারদেরকে নির্দেশ দিতেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতেন, যা আধুনিক যুগের সামরিক নেতৃত্বের কাঠামোর মধ্যে অসম্ভব ব্যাপার। সেনাবাহিনীর মেজর, কর্নেল, বিগ্রেডিয়ার জেনারেলরা ১৯ বছরের একজন ছাত্রের নির্দেশ মেনে চলত এটা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে?

তিনি বলেন,  প্রসিকিউশনের কিছু সাক্ষি তাদের নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেছেন অথচ তথ্য প্রমাণে তারা যে “ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা” তা প্রমাণিত হয়েছে এবং একই সাথে তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে। সরকার পক্ষের প্রতিটি সাক্ষী একইভাবে বিতর্কিত এবং অবিশ্বাসযোগ্য। উপরন্তু প্রসিকিউমন পক্ষের মামলা ব্যাপকভাবে শোনা সাক্ষীর ওপর নির্ভরশীল।  প্রমাণ্য অন্যান্য তথ্যাদি ছাড়া এই ধরনের শোনা সাক্ষী  নির্ভর মামলা প্রসিকিউশন অভিযোগের অসারতা ও দুর্বলতা প্রমাণ করে। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর যে একটি আদালত এমন সব দুর্বল, স্ববিরোধী এবং অবিশ্বাসযোগ্য, শোনা  সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে সাজা প্রদান করতে পারে।
উপরন্তু এই মামলার পদ্ধতিগত ত্রুটি এই রায়কে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রসিকিউশন পক্ষের ১৮ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়া হলেও আসামী পক্ষের সাক্ষী সংখ্যা ৫ জনে বেধে দেয়া হয়। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন দেড় বছর সময় নিয়ে এই মামলাটি সাজিয়েছিল অথচ ডিফেন্স পক্ষকে তাদের মামলার প্রস্তুতি এবং জবাব দেয়ার জন্য সময় দেয়া হয় মাত্র ৪ সপ্তাহ। ট্রাইব্যুনাল জোরপূর্বক প্রসিকিউশন পক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার জেরা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েছিলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন বহুল আলোচিত বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত একটি বেঞ্চ যার সততা ও নিরপেক্ষতা আমার দেশ ও ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত স্কাইপ   কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে বিচারপতি নিজামুল হক তার পদ থেকে সরে দাড়ানোর পর এ মামলা আর কোনমতেই চলতে পারেনা।

তিনি বলেন, আসামী পক্ষ মনে করে প্রসিকিউশনের উপস্থাপতি সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কখনই এরকম রায় হতে পারে না। এটা একটা ন্যায়ভ্রষ্ট রায়।  এ রায়টি দেশের সুপ্রীম কোর্টের রায়ের মানের অনেক নিইে শুধুই নয়  বরং এই ধরনের অপরাধের জন্য প্রতিষ্ঠিত যেকোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মানেরও  অনেক নিচে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য আমাদের হাতে অনেক শক্তিশালী কারণ এবং গ্রাউন্ড রয়েছে। তাই আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিল।