বুধবার, ২২ মে, ২০১৩

শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// বিচার শুরুর পরও তদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল  কাদের মোল্লার আপিল আবেদন শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার  পরও  এক বছর পর্যন্ত তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। এমনকি চার্জ গঠনের পরও  তদন্ত বন্ধ করা হয়নি যা বিস্ময়কর ঘটনা।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ-এ শুনানীর সময় আজ  তিনি এ কথা বলেন।  ট্রাইব্যুনাল-২ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লাকে প্রদত্ত  সাজা খালাস চেয়ে আসামী পক্ষে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানী চলছে বর্তমানে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা তদন্ত  শুরু  করে  ২০১০ সালের ৭ জুলাই।  তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর। প্রসিকিউশন তা ফরমাল চার্জ আকারে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর।  ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নয় ২০১১ সালের ২৮ ডিসম্বের। চার্জ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ মে।

কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন  ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া, চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর পরও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। ২০১২ সালের ২৮ মে চার্জ গঠন করা হল আর তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত কাজ চালানোর কথা তদন্ত কর্মকর্তা জেরায়   স্বীকার করেছেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া এবং  চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়ে যাবার পরও কি করে তদন্ত চলতে পারে? তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরও এক বছর তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে  ট্রাইব্যুনালের রুল ভঙ্গ করা হয়েছে। এর পরে আর এ বিচার চলতে পারেনা। এ বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল বিচার ব্যবস্থার দর্শনই সম্পূর্ণরুপে বদলে দিয়েছে।
এসময়  একজন বিচারপতি বলেন,  ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা দেয়া আছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা আছে সত্য,  কিন্তু এ ধরনের আইনবিরোধী, বিধি বিধান বিরোধী কাজের জন্য ট্রাইব্যুনাল কোন আদেশ দেয়নি এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও কোন দরখাস্ত করা হয়নি।
এসময় আরেকজন বিচারপতি এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বলেন, আসামী পক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে জবাব  দিতে হবে এবং কোর্টকে  সন্তুষ্ট করতে হবে।

গতকাল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পল্লাব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী ছিল এবং দুজনই শোনা সাক্ষী। সাক্ষী  শহীদুল হক মামা বলেছেন তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিতদের কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লা জড়িত ছিল।  এটা কেমনতর শোনা কথা হল? কি করে এ জাতীয় শোনা কথাকে এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করা যায়? শোনা কথাকে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের আইনে দেয়া হয়েছে কিন্তু শোনা কথা এমন হতে হবে যার বিচাররিক মূল্য রয়েছে। যদি সাক্ষী বলত যে, আমাকে আমার ভাগনে বলেছে সে দেখেছে আব্দুল কাদের মোল্লা  অমুককে মেরেছে তা হলে তার মূল্য থাকে। কিন্তু এখানে তো এরকম কেউ বলেনি। একটা শোনা কথা আরেকটা শোনা কথাকে সহায়তা করতে পারেনা।  
পল্লব হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের  আরেক সাক্ষী আব্দুল কাইউমও একজন শোনা সাক্ষী। সে মিরপুর বাংলা কলেজের একজন ছাত্রের কাছ থেকে শুনেছে আক্তার গুন্ডা  আব্দুল কাদের মোল্লাসহ পল্লবকে হত্যা করেছে। আবার একথা সে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেনি, বলেছে ট্রাইব্যুনালে এসে। তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সে একথা বলেছিল কি-না।  সে বলেছে হ্যা।  আবার তদন্ত কর্মকর্তকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আব্দুল কাইউম আপনাকে এ বিষয়ে বলেছিল কি-না। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছে বলেনি। এরূপ সাক্ষীর শোনা কথা কি করে এভিডেন্সে হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাক্ষী শহিদুল হক মামা বিটিভির কাছে এক সাক্ষাৎকারে ১৯৭১  সালের  ২৫ মার্চের পর ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছে। জেরায় সে বলেছে বিটিভিতে সে যা বলেছে তা সত্য। কিন্তু তার ওই সাক্ষাৎকারে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম  উচ্চারন করেনি এবং আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে যে ঘটনার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে করা হয়েছে সে বিষয়েও কিছু বলেননি।

এদিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানী  অনুষ্ঠিত হয়নি।
শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার, অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির প্রমুখ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন