বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

বিচরপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীর বিতর্কের কারনে কোর্ট মুলতবি করলেন প্রধান বিচারপতি

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের  আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহষ্পতিবার কবি  মেহেরুন্নেসা হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে এবং তিন নং অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ বিষয়ে শুনানী শুরু হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল  হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ যুক্তি পেশ করে বলেন, কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগ বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন সাক্ষী হাজির করেছে। তিনজন সাক্ষী তিনরকম সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২ নং সাক্ষী শহীদুল হক মামলা বলেছেন, তিনি জনতার কাফেলা থেকে এবং পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছেন এ ঘটনা। ১০ নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম বলেছেন অবাঙ্গালীরা কবি মেহেরুনকে হত্যা করেছে। অপর দিকে ৪ নং সাক্ষী কাজী রোজী ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিলেও তার নিজের লেখা বইয়ের  তথ্যের সাথে ট্রাইব্যনালে প্রদত্ত বক্তব্যের গরমিল রয়েছে। তাহলে কার কোন বক্তব্য আপনারা গ্রহণ করবেন? কাউকে কোন অভিযোগে সাজা দিতে হলে সকলের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে তাদের এভিডেন্স বিষয়ে একটাই উপসংহারে  পৌছতে হবে। কিন্তু এখানে সবার সাক্ষ্য বিবেচনা করে একটা উপসংহারে পৌছানো সম্ভব নয়। তাই এ অভিযোগে তাকে সাজা দেয়ারও উপায় নেই।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী বিতর্কের কারনে  কোর্ট মুলতবি করতে বাধ্য হলেন প্রধান বিচারপতি :

গত মঙ্গলবার ২৮  মে শুনানীর সময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন কবি মেহেরুন হত্যা বিষয়ে সাক্ষী কাজী রোজী তার জবানবন্দীর এক স্থানে বলেছেন তিনি শুনেছেন এবং আরেক স্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন। এভাবে তিনি বিপরীতধর্মী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আজো শুনানীর সময়  আবারো এ বিষয়ের অবতারনা হলে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, আপনি বলেছেন সাক্ষী  একস্থানে বলেছেন তিনি দেখেছেন আরেক স্থানে বলেছেন তিনি শুনেছেন। সাক্ষী ঘটনা দেখার কথা কোথায় বলেছেন তা দেখান।
ডিড শি সে শি স’ ইট?  শো ইট ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তখন সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শোনাতে শুরু করেন। সাক্ষী কাজী রোজী বলেছেন “২৭ মার্চ  বিকালে খবর পেলাম যে, মেহেরুন্নেসা ও তার দুই  ভাই ও মাকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী যারা ছিলেন তাদের অনেকে মাথায় সাদা অথবা লাল পট্টি বেঁধে সকাল ১১টা মেহেরের বাসায় ঢুকে যায় বলে শুনেছি।”
আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন “কাদের মোল্লার নেতৃত্বে সেদিন ওরা মেহেরুনের বাসায় ঢুকেছিল। কিন্তু কাদের মোল্লা নিজে ওই বাসায় ঢুকেছিল কি-না তা বলতে পারবনা। ”
সাক্ষীর জবানবন্দী থেকে রেফারেন্স পেশ শেষ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে তিনি ঘটনা এমনভাবে বর্ননা করছেন মনে হয় যেন তিনি নিজে ঘটনা দেখেছেন।
এসময় বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, এখানে তিনি দেখেছেন তা কোথায় আছে? তিনি দেখেছেন একথা কি বলেছেন সাক্ষী?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হ্যা বলেছেন। এটা আমার সাবমিশন। আপনি এর সাথে একমত হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন সেটা আপনার এখতিয়ার। কিন্তু আমাকে আমার সাবমিশন রাখতে দেন। আমি একজন কাউন্সেল।
এসময় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরীকে থামার ইশারা দিয়ে ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাককে চালিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্লিজ প্রসিড। প্লিজ  প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক।
বিচারপতি  এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে লক্ষ্য করে বলেন, প্লিজ ডোন্ট মিস লিড দি কোর্ট।  কোর্টকে মিস লিড করবেননা।  দিস ইজ দি হাইয়েস্ট কোর্ট অব দি নেশন। কোর্টকে মিস লিড করবেননা।
তিনি আবারো জানতে চান সাক্ষী দেখার কথা বলেছেন তা কোথায় আছে দেখান। এসময় আবারো প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরীর দিকে  তাকিয়ে   তাকে থামার অনুরোধ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ, প্লিজ । এটা ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের সাবমিশন। এরপর তিনি  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে  সামনে এগিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে আবারো বলেন, মিস্টার রাজ্জাক প্লিজ প্রসিড।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিচারপতি শামুসুদ্দীন চৌধুরীর  প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করলে প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, সিঙ্গেল জাস্টিসকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখবেননা। কোর্টকে এড্রেস করে সাবমিশন রাখুন প্লিজ। প্লিজ প্রসিড, প্রসিড মিস্টার রাজ্জাক।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তো শিখেছি কোর্টের কোন একজন জাজ কোন প্রশ্ন করলে সেটা কোর্টেরই কোশ্চেন ধরে নেয়া হয়। সেজন্য আমি তার জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি।
এসময় বিচারপতি এ এইচ এম  শামসুদ্দীন চৌধুরী আবারো ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের উত্তেরের বিরোধীতা করে মন্তব্য  মন্তব্য করা অব্যাহত রাখলে  এবং তার প্রশ্নের জবাব চাওয়ায় প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী প্লিজ প্লিজ ।  কিন্তু তখনো  তিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের  সাবমিশনের বিরোধীতা করে তার মত প্রকাশ করায় প্রধান বিচারপতি  কোর্ট মুলতবি ঘোষনা করেন।
তখন ঘড়ির কাটায় ১০টা ৫৫ বাঁজে। সাধারনত সকাল ১১টায় কোর্ট মুলতবি হয় এবং ১২টায় আবার বসে। আজ  বিতর্কের এ পর্যায়ে ১০টা ৫৫ মিনিটের সময় কোর্ট মুলতবি ঘোষনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১২টা আবার বসবে কোর্ট। যথারীতি ১২টায় আবার কোর্ট বসে।

বিতর্কের এক পর্যায়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একবার দাড়িয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন হাত নেড়ে।

বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এর অবসর গ্রহণ : আপিল বিভাগের বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান এর চাকরির  বয়স পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে গেছেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ  তাকে বিদায় জানান। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এজে মো : আলী তাকে বিদায় সম্ভাষন জানান।  বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানীর জন্য গঠিত বেঞ্চের সদস্য। তার অবসরর গ্রহনের ফলে এ বেঞ্চের সদস্য সংখ্যা দাড়াল এখন পাঁচ।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে যুক্তি উপস্থাপনে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির। অন্যাান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন খান, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন