বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়-ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক


মেহেদী হাসান, ৯/৫/২০১৩
মুহম্মদদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট রায় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এ রায়ে আমরা স্তব্ধ, বিস্মিত এবং শঙ্কিত। প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড তো দূরে থাকÑ কোনরূপ সাজা দেয়ারই কোনো সুযোগ নেই বলে আমরা মনে করি। সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর এই মামলাটি দাঁড়িয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষনার পর নিজ বাসভবনে সংবাদ মাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিকৃয়ায় তিনি আসামী পক্ষ থেকে একথা বলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বীকৃত মতে ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিল একজন ১৯ বছরের  তরুণ। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যুদ্ধপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাদের যত বিচার হয়েছে তার কোথাও এরকম একজন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে পরবর্তী ৭টি প্রধান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোথাও এরকম একজন তরুণের কাঁধে এ ধরনের মারাত্মক অপরাধের দায় চাপানো হয়েছিল, তার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। যুদ্ধাপরাদের বিচারের ইতিহাসে এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।
আমরা মনে করি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায় চাপানোর একমাত্র কারণ হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা এবং এসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ রায়ে আমরা শোকস্তব্ধ, বিস্মিত এবং আতঙ্কিত। প্রসিকিউশন স্পষ্টতই এ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ মামলার তারকা চিহ্নিত সাক্ষী মোহন মুন্সি তার জবানবন্দির বিভিন্ন অংশে স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদান করে আলোচিত হয়েছেন। তিনি তার জবানবন্দিতে সোহাগপুর হত্যাকাণ্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের ৩টি ভিন্ন ভিন্ন তারিখ উল্লেখ করেছেন। প্রসিকিউশনের সাক্ষিরা এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, যা এমনকি ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণও অসম্ভব বলে মনে করেছেন। সাক্ষীরা এক দিকে বলেছে ওই সময় কামারুজ্জামান ছিল একজন তরুণ অন্য দিকে তারা বলেছে তিনি পাকিস্তান আর্মি অফিসারদেরকে নির্দেশ দিতেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতেন, যা আধুনিক যুগের সামরিক নেতৃত্বের কাঠামোর মধ্যে অসম্ভব ব্যাপার। সেনাবাহিনীর মেজর, কর্নেল, বিগ্রেডিয়ার জেনারেলরা ১৯ বছরের একজন ছাত্রের নির্দেশ মেনে চলত এটা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে?

তিনি বলেন,  প্রসিকিউশনের কিছু সাক্ষি তাদের নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেছেন অথচ তথ্য প্রমাণে তারা যে “ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা” তা প্রমাণিত হয়েছে এবং একই সাথে তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে। সরকার পক্ষের প্রতিটি সাক্ষী একইভাবে বিতর্কিত এবং অবিশ্বাসযোগ্য। উপরন্তু প্রসিকিউমন পক্ষের মামলা ব্যাপকভাবে শোনা সাক্ষীর ওপর নির্ভরশীল।  প্রমাণ্য অন্যান্য তথ্যাদি ছাড়া এই ধরনের শোনা সাক্ষী  নির্ভর মামলা প্রসিকিউশন অভিযোগের অসারতা ও দুর্বলতা প্রমাণ করে। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর যে একটি আদালত এমন সব দুর্বল, স্ববিরোধী এবং অবিশ্বাসযোগ্য, শোনা  সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে সাজা প্রদান করতে পারে।
উপরন্তু এই মামলার পদ্ধতিগত ত্রুটি এই রায়কে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রসিকিউশন পক্ষের ১৮ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়া হলেও আসামী পক্ষের সাক্ষী সংখ্যা ৫ জনে বেধে দেয়া হয়। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন দেড় বছর সময় নিয়ে এই মামলাটি সাজিয়েছিল অথচ ডিফেন্স পক্ষকে তাদের মামলার প্রস্তুতি এবং জবাব দেয়ার জন্য সময় দেয়া হয় মাত্র ৪ সপ্তাহ। ট্রাইব্যুনাল জোরপূর্বক প্রসিকিউশন পক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার জেরা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েছিলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন বহুল আলোচিত বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত একটি বেঞ্চ যার সততা ও নিরপেক্ষতা আমার দেশ ও ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত স্কাইপ   কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে বিচারপতি নিজামুল হক তার পদ থেকে সরে দাড়ানোর পর এ মামলা আর কোনমতেই চলতে পারেনা।

তিনি বলেন, আসামী পক্ষ মনে করে প্রসিকিউশনের উপস্থাপতি সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কখনই এরকম রায় হতে পারে না। এটা একটা ন্যায়ভ্রষ্ট রায়।  এ রায়টি দেশের সুপ্রীম কোর্টের রায়ের মানের অনেক নিইে শুধুই নয়  বরং এই ধরনের অপরাধের জন্য প্রতিষ্ঠিত যেকোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মানেরও  অনেক নিচে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য আমাদের হাতে অনেক শক্তিশালী কারণ এবং গ্রাউন্ড রয়েছে। তাই আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন