মেহেদী হাসান,২৭/৫/২০১৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যুনালে আজ হাজী মোবারক হোসেন এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী খোদেজা বেগমের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।
আমার নাম খোদেজা বেগম, আমার বয়স-৫৬ বৎসর। আমার ঠিকানা-গ্রাম শিমরাইল কান্দি,থানা ও জেলা ব্রাক্ষণবাড়িয়া।
আমার পিতার গ্রামের নাম ছাতিয়ান টেংরাপাড়া। আমি একজন গৃহিনী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১৪/১৫ বৎসর। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব থেকে আমার পিতা আনছার বিভাগে চাকুরী করতো। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার দাদা, দাদী এবং মা অসুস্থ থাকার খবর পেয়ে আমার পিতা ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ৯ তারিখে রাত্রে বাড়িতে আসেন। ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বর তারিখে আমার পিতা আমাদের এলাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং রাজাকাররা আসতেছে সেই খবর পেয়ে বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে পালানোর সময় রাস্তায় উঠলেই রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে হাত বেঁধে মারপিঠ শুরু করে। তখন আমরা চিল্লা চিল্লি ও কান্নাকাটি করতে করতে তাদের পিছনে পিছনে যাই। তখন রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে নিয়ে যায় যেখানে রাজাকার ও আর্মির ক্যাম্প ছিল। ঐদিন আসরের পরে আমার আম্মা ও দাদী বাবার জন্য ভাত নিয়ে উল্লেখিত ক্যাম্পে যায়। তখন ক্যাম্পের একজন রাজাকার যার নাম আব্দুর রউফ আমার মা ও দাদীকে বলে যে ঐ খাবার আমার নিকট দিয়ে যান আমি খাইয়ে দিব। আব্দুর রউফ রাজাকার মা ও দাদীকে বলেছে উল্লেখিত ক্যাম্পের কমান্ডার আখাউরা থানার নয়াদিল গ্রামের মোবারক হোসেন, যাকে ধরলে আমার বাবাকে ঠাড়িয়ে নেয়া যাবে। তখন আমার মা ও দাদী বািড়তে ফিরে আমাদের ঐকথা জানায়। তখন আমার মা আমাদের বাড়ির পাশের খালেক মাওলানাকে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন আজকে রাত হয়ে গেছে, আগামীকাল সকালে ক্যাম্পে গিয়ে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবেন। পরদিন সকালে খালেক মাওলানার নিকট যাওয়ার পূর্বে লোকজন বলাবলি করছে যে, তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে আমার বাবাকে গুলি করে করে হত্যা করে সেখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। তখন আমরা কান্নাকাটি করে বাকাইল ঘাটে গিয়ে দেখি আমার পিতার হাত,পা বাঁধা, কপালের ডান পাশে গুলি, মাথার খুলি উড়ে গেছে, বুকের ডান পাশে গুলির চিহ্ন এবং নাভির নীচে ও উপরে দুটি কাটা চিহ্ন অবস্থায় লাশ পড়ে আছে। তারপর আমার মা খালেক মাওলানার নিকট যায়। খালেক মাওলানা উল্লেখিত ক্যাম্প থেকে একটি শ্লিপ এনে আমাদের নিকট দিলে আমরা আমাদের পিতার লাশ নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি। যে সকল রাজাকাররা আমার পিতাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাদের কারো নাম ঐসময় জানতামনা, দেখলে চিনবো। আমি শুনেছি আমার বাবাকে ধরে নেওয়ার সময় রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেন ও তার সহযোগী রাজাকার জামশেদ ছিল। ঐসময় আমি তাদেরকে দেখেছিলাম। আমি যে রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেনের কথা বলেছি তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)। তখন তার বয়স কম ছিল, দাড়ি ছিলনা। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী করেছি। আমি আমার পিতার হত্যার বিচার চেয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছিলাম।
জেরা : আজ একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা করা হয়। প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন
রাজাকার জামশেদের নাম আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নয়। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন