রবিবার, ২৬ মে, ২০১৩

হাজী মোবারকের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর জেরা

Mehedy Hasan
২১/৫/২০১৩
হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী দারুল ইসলাম জেরার সময় আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে যেসব উত্তর দিয়েছেন তা নিম্নরূপ :


মোছাঃ রীনা বেগম দায়েরকৃত আখাউড়া থানার মামলা নং-২৬, তারিখ ২৮/০৫/২০০৭ মামলায় ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া দ্রুত বিচার আাদালতে পি ডব্লিউ-৪ হিসাবে আমি সাক্ষ্য প্রদান করিনাই বা আসামী মোবারক আলীও ঐ মামলায় খালাস পায়নাই। উল্লেখিত মামলায় মোবারক আলী আপিলে দায়রা জজ আদালত হইতে খালাস পান কিনা তাহা আমি জানিনা। আমি পশ্চিম পাকিস্তানে আর্টিলারী সেন্টার ক্যামেলপুরে ছিলাম। ১৯৭০ সালে ছুটিতে আসা পর্যন্ত আমার পোষ্টিং ওখানেই ছিল। আমার সি,ও, একজন পাঠান ছিলেন, তার নাম আমি জানিনা। পাকিস্তান আর্মিতে আমি নন কমিশন অফিসার ছিলাম। আমি কাস টেন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। পাকিস্তান আর্মিতে নন কমিশন ল্যান্স নায়েকরা এককালীন ৩মাসের বেশী ছুটি পায়না, ইহা সত্য নহে। আমি  পাকিস্তান আর্মি রুলস পড়িনাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাকে সুবেদার আব্দুর সাত্তার সাহেব ইনটেলিজেন্সের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আব্দুর সাত্তার সাহেব বর্তমানে জীবিত নেই। সাব সেক্টর-২ এর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন আইনদ্দিন সাহেব যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহন করেছেন। তিনি বর্তমানে জীবিত আছেন। (চলবে)

২২-০৫-২০১৩ ইং পুনরায় জেরা শুরু ঃ-
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে নিয়ে পুর্ব পাকিস্তানে আসা সংক্রান্ত কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট এখন নাই। ইহা সত্য নহে যে, পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত কোন আর্মি সদস্য ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাকে বেতন দেওয়া হতো না। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেতন উত্তোলন সংক্রান্ত কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট এখন নাই। আমি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে পূর্ব পাকিস্তান আসি নাই বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বেতন তুলি নাই, ইহা সত্য নয়। ইহা সত্য নয় যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি ইনটেলিজেন্স হাবিলদার ছিলাম না। ১৯৭১ সালে গংগাসাগর, আখাউড়া, পাহাড়পূর এবং ফকিরমুরা এলাকা এরিয়া কমান্ডার ছিলেন মেজর সেকান্দার। ইহা সত্য নহে যে, ১৯৭১ সালে উল্লেখিত এলাকায় ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লা খান ২৩ বেলুচ রেজিমেন্ট, এরিয়া কমান্ডার ছিলেন। উল্লেখিত ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লা খান ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের তালিকায় ২৩ নং ক্রমিকে আছেন কিনা আমি জানি না। উল্লেখিত এলাকা সমূহে ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন মেজর মোঃ আব্দুল্লাহ খান, মেজর সাদেক নেওয়ার ও ক্যাপ্টেন জাবেদ ইকবাল, ইহা সত্য নয়। ব্রক্ষ্মণবাড়িয়ার মহকুমার পাকিস্তান আর্মিদের কয়টি ইউনিট ছিল তাহা আমার স্মরণ নাই। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার আর্মিদের ৪টি ইউনিটে লেঃ কর্নেল খিজির হায়াত খান ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহ এবং লেঃ কর্ণেল জায়েদী কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া কোন সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় তাহা আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালে ২রা আগষ্ট তারিখের পূর্বে বাংলাদেশে কোন রাজাকার ছিলনা, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে পাকিস্তান আর্মিদের সাথে সহযোগিতামূলক কাজ করতো, তৎপূর্বে বাংলাদেশে আনছার ছিলনা। ইহা সত্য নহে যে, মোবারক আলী পাকিস্তান আর্মিদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতো একথা তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই। জেলা প্রশাসক ও মহকুমা প্রশাসকগণ রাজাকারদের নিয়োগ প্রদান করতেন, ইহা সত্য নহে। রাজাকাররা পাকিস্তান সরকার থেকে বেতন ভাতা পেত। রাজাকারদের বদলী এবং পদোন্নতি জেলা প্রশাসকগণ করতেন, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার এস,ডি ও, কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার কে ছিলেন তাহা আমি জানি না। আমি খবরের কাগজ ও বইপত্র পড়িনা, কারণ সময় পাইনা। ১৯৭১ সালে আগতলা সরকারের কোন পাশ আমার নিকট নাই, কারণ পাশের দরকার হতোনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি অনেকবার আগরতলা যাতায়াত করেছি এমন কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে। ‘মুক্তিযুদ্ধে ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া’ নামক বইটি আমি পড়ি নাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম তাহা কোন বই বা পত্রিকায় উল্লেখ নাই, ইহা সত্য নহে। মোবারক আলী পাকিস্তান আর্মিদের সংগে সম্পৃক্ত ছিল তাহা ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত কোন পেপার বা পত্রিকায় এই কথা ছাপা হয়েছিল কিনা তাহা আামি জানি না। আমি জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র কখনও পড়িনাই। জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন রোকন হয়না, তবে নেতা হয়। হাজী মোবারক আলী কখনও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সহিত জড়িত ছিলনা তিনি আওয়ামীলীগ করতেন, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে মোবারক আলী পাকিস্তানি আর্মিদের স্বেচ্ছাসেবক ছিল এমর্মে আমার নিকট কোন দালিলিক প্রমান নাই, তবে তিনি রাজাকার ছিলেন। মোবারক আলী রাজাকার ছিল এ মর্মে কোন দালিলিক প্রমান আমার নিকট নাই। মোবারক আলী কোন সময় স্বেচ্ছাসেবক বা রাজাকার ছিলেন না, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালে ব্রক্ষ্মণবাড়িয়া মহকুমার রাজাকার কমান্ডার কে ছিল তাহা আমার স্বরণ নাই। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার শান্তি কমিটির আহবায়ক কে ছিলেন তাহা আমি জানিনা। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিলাম এবং দেশ স্বাধীনের পর পালিয়ে এসেছি, ইহা সত্য নহে। আঃ হামিদ, পিতা আব্দুল কাহার ভূঁইয়ার প্ররোচনায় অর্থের প্রলোভনে আমি অত্র মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছি, ইহা সত্য নহে।
‘‘বর্তমানে আমি অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৬৩ সালে আমি পাকিস্তান আর্মিতে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি মুক্তিযোদ্ধার ইনটেলিজেন্স সার্ভিসে হাবিলদার ছিলাম। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে আমি ৪ মাসের ছুটি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাড়ীতে আসি” বা  ‘‘ বেতন নিতে এসে জানলাম যে, ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিবেন পল্টন ময়দানে” বা ‘‘ বাড়িতে যাওয়ার পর এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী আমি স্থানীয় ছেলে পেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ১লা এপ্রিল থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনিং প্রদান করি” বা ‘‘যুদ্ধে আমরা টিকতে না পারায় আমরা ভারতের আগরতলায় চলে যাই। আমি ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিতাম এবং ট্রেনিং দেওয়ার পর দলে দলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশে পাঠাতাম অপারেশনের জন্য। এপ্রিলের ২০ তারিখে আমি ভারত থেকে নিজ বাড়িতে আসি। ২১শে এপ্রিল তারিখ সকাল বেলা ই,পি,আর, এর ফেলে যাওয়া একটি লাইট মেশিনগান পাই। সেই মেশিনগান পাওয়ার পর আমি বাড়িতে আরও ৫/৬ জনকে যোগাড় করে তাদের নিয়ে পুনরায় ভারতে যাই এবং গোয়েন্দাগিরি করার জন্য মাঝে মধ্যে দেশে আসি” বা ‘‘ উল্লেখিত ব্যক্তিগণ সহ অন্যান্যরা রাজাকারের একটি দল গঠন করল” বা ‘‘২১শে আগষ্ট তারিখে জানতে পারি পাক সেনারা এবং রাজাকাররা এই মর্মে সন্দেহ করে যে, মান্দাইল গ্রামের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঐ ব্রীজটি ভেঙ্গেছে। পরদিন ২২শে আগষ্ট সকাল ৯-০০ টার দিকে গংগাসাগর পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে জামসেদ, মুক্তা মিয়া ও মোবারক মান্দাইল গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর দেয় হাজি নূর বক্স এর বাড়িতে মিটিং হবে সেখানে যাওয়ার জন্য তাদেরকে বলে” বা ‘‘ ঐ বাড়িতে জমায়েত লোকজনদেরকে পাক সেনা ও রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌকায় করে গংগাসাগর দীঘির পাড়ে পাক সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়” বা ‘‘সেখানে জমসেদ, মুক্তা মিয়া, মোবারক আলী, বজু মিয়া উপস্থিত থেকে উল্লেখিতভাবে মান্দাইল গ্রামের ২৬ জন এবং অন্যান্য গ্রামের ৭জন মোট ৩৩ জনকে বাছাই করে তাদেরকে দীঘির পশ্চিম পাড়ে নিয়ে যায়” বা ‘‘ দীঘির পশ্চিম পাড়ে উল্লেখিত ৩৩ জনকে দিয়ে গর্ত খোড়ায়” বা ‘‘ঐ সময় সেখানে মোবারক আলী, জমসেদ, মুক্তা মিয়া উপস্থিত ছিল। পরদিন ২৩শে আগষ্ট তারিখে ক্যাম্পে আটক রাখা বাকী লোকজনদেরকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। আর্মি ক্যাম্প থেকে যাদেরকে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন আবুল বাশার যিনি ঈমামতি করেন তিনি জীবিত আছেন, তার নিকট থেকে আমি ঘটনার বিষয় জানতে পারি এবং আমি নিজেও গোয়েন্দা সূত্রে ঘটনার বিষয় জানতে পারি” বা ‘‘ ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার অসুস্থ মাকে দেখার জন্য নিজ বাড়িতে গেলে মোবারক আলী ও তার সহযোগীরা তাকে ধৃত করে গুলি করে হত্যা করে”
তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলিনাই, ইহা সত্য নহে। ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় আমি সাক্ষী নাই। ইহা সত্য নহে যে, আমি তাবিজ কবজ করে জিন হাজির করে লোকজনকে প্রতারনা করে অর্থ উপার্জন করি। (সমাপ্ত) 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন