বুধবার, ৮ মে, ২০১৩

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার রায় আগামীকাল//মাওলানা ইউসুফ’র বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল//এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে ৩০ জুনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ


মেহেদী হাসান, ৮/৫/২০১৩, বুধবার, ঢাকা :

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কিত মামলার রায় আগামীকাল প্রদান করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ রায়ের এ তারিখ ঘোষনা করেন।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাত অভিযোগ:
১. বদিউজ্জামান হত্যা: ১৯৭১ সালের ২৯ জুন সকালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে নির্যাতন করে পরদিন হত্যা করা হয়। এঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
২. প্রিন্সিপাল হান্নানকে নির্যাদন: মুক্তিযুদ্ধে সময় শেরপুর কলেজের অধ্য সৈয়দ আবদুল হান্নানকে মাথা ন্যাড়া করে চুনকালি মাখিয়ে পুরো শহর ঘোরানো হয়। এঘটনায়ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৩. সোহাগপুর গণহত্যা: ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং নারীদের ধর্ষণ করে। এঘটনায় জড়িত উল্লেখ করে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৪. গোলাম মোস্তফা হত্যা: ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৫. লিয়াকত-মুজিবুরসহ অজ্ঞাত ৮ জনকে হত্যা: মুক্তিযুদ্ধকালে রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। পরে দু’জনসহ ১৩ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। পাকিস্তান আর্মিরা লিয়াকত, মুজিবুরসহ ৮ জনকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায়ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
৬. টুনু হত্যা: ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এঘটনায় কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করা হয়।
৭. দারাসহ ছয় হত্যা: মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নেয়া হয়।  পরদিন ওই দু’জনসহ সাতজনকে আলবদররা গুলি করলে টেপা মিয়ার পায়ে লাগে। তিনি পালাতে সম হন। অন্য ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায়ও কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করা হয়।

মামলার বিবারণ: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পুনরায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১।
এরপর ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মামলাটি প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১৬ মে আসামিপ এবং ২০ মে রাষ্ট্রপরে আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন।
গত বছরের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ রাষ্ট্রপরে মোট ১৮ জন সাী স্যা দেন।
অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পে গত ৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫ জন ডিফেন্স সাী স্যা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মোঃ আরশেদ আলী, আশকর আলী, কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল, বড় ভাই কফিল উদ্দিন এবং আব্দুর রহিম। তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন রাষ্ট্রপ।
গত ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এবং ১৬ এপ্রিল ৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে ৩ থেকে ১৬ এপ্রিল ৪ কার্যদিবসে আসামিপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিকী।


মাওলানা ইউসুফ’র বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা একেএম ইউসুফ এর বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) থেকে today  ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এর কাছে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠ^ানিক অভিযোগ  জমা দেয়া হয়েছে।

ফরমাল চার্জে মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরন, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ১৫ ধরনের অভিযোগ  আনা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী ফরমাল চার্জ দাখিলের পর   এটি আমলে নেয়া হবে কি-না সে বিষয়ে আদেশ দিবেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ আমলে নেয়া হলে  চার্জ গঠনের জন্য শুনানীর দিন ধার্য্য করা হবে। এরপর চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হবে।

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে ৩০ জুনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে  চূড়ান্ত তদন্ত  প্রতিবেদন বা ফরমাল চার্জ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।   তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর আরো দুই মাস সময় চাওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ৩০ জুনের মধ্যে ফরমাল চার্জ দাখিলের নির্দেশ দেন।

ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল এ তারিখ নির্ধারন করে আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির  অনুপস্থিত ছিলেন।

গত বছর ২২ আগস্ট এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর  ওইদিনই তাকে  তাকে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন। গতকাল তাকে ট্রাইব্যুনালের হাজত খানায়  আনা হয় তবে বিচার কক্ষে হাজির করা হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন