মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৩

ট্রাইব্যুনালে অঝোর ধারায় কাঁদলেন আলী আহসান মো : মুজাহিদ


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ  আজ অঝোর ধারায় কাঁদলেন ট্রাইব্যুনালে। 

আজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী  ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আলী আহসান মো :  মুজাহিদ ছাত্রজীবনে প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, পরে পিতার অনুরোধে ছাত্রসংঘে যোগ দেন। আর মুজাহিদ এই দরিদ্রতম দেশের একজন মন্ত্রী হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। জীবনের সকল েেত্রই তিনি মেধার স্বার রেখেছেন। এমনকি সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি তার সেই মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। দরিদ্র এই দেশে যেখানে রাষ্ট্র মতায় গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তিরাই অনিয়ম আর দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন সেখানে আজকের কাঠগড়াতে দাঁড়ানো এই মুজাহিদের বিরুদ্ধে বিরোধী প থেকেও সামান্যতম অনিয়মন কিংবা দুর্নীতির কোন অভিযোগ কেউ তুলতে পারেননি।
তিনি বলেন,  একজন সাক্ষী বলেছেন তিনি  তাকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মিদের সাথে  জীপে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এরকম ঘটনা হলে আরো অনেকের তা দেখার এবং জানার কথা। কিন্তু কই অন্য কেউতো এ ধরনের অভিযোগ করেনি আজ পর্যন্ত।

ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির আলী আহসান মুজাহিদের মন্ত্রীত্ব পরিচালনাকালে তার সততার পরিচয়  দিয়ে এভাবে যুক্তি উপস্থাপনের সময় কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান আলী আহসান মো : মুজাহিদ ফুপিয়ে কাঁন্না শুরু করেন। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়াতে থাকে। চোখ মুছতে থাকেন তিনি। এসময় কোর্টে উপস্থিত তার  পরিবারের সদস্যরাও ফুপিয়ে কান্না শুরু করেন। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তারাও । এসময় কোর্টে কিছূ সময়ের জন্য আবেগময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবিরের পর  যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামী পক্ষের অপর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ২৪ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামের একটি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাষ্ট্রপক্ষ ওই রিপোর্টের কপি আদালতে আনেনি।

যুক্তি উপস্থাপনের একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ৪২ বছর পর এই বিচার (মানবতাবিরোধী অপরাধের) হচ্ছে। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যদি প্রমাণ হয় তো হবে। আর না হলে আসামী খালাস পাবে।

যুক্তি উপস্থাপন কলে মুজাহিদের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আরেক সুখরঞ্জন বালী যাতে তৈরি না হয় সেজন্য আমরা ডিফেন্স সাক্ষী আনিনি। আমাদের সাক্ষীদের কি ধরণের হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়েছে।
এসময় বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, আপনার সাক্ষীরা যে চাঁপে তা কোর্টে বলেননি।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, কিভাবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের চাঁপ দিয়ে সাক্ষ্য দিতে আনা হয়েছে তা আজ হয় তো প্রমাণ করা সম্ভব নয়। দুই বা তিন বছর পরে এটা প্রমাণ হবে।
এরপর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আপনি যা বলছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়, মূল্যহীন কথা। মূল্যহীন কথা বলবেন না।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সাতটি অভিযোগের কোনটি নূন্যতমভাবে প্রমান করতে পারেনি। 
যুক্তি উপস্থাপন কালে ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৪ মাসে ২৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট তদন্ত করেছেন। তিনি ’৭১ সালে যারা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের কাছে যাননি। ফরিদপুরের তারাপদ এর পরিবারের ১৮ জন সদস্য মারা গেছেন তদন্ত কর্মকর্তা তার কাছে যাননি। আজকের আসামী হিরো হলে জিপ গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ালে মানুষ তা দেখতে পেত। কিন্তু কেউ তা বলছে না। আমি বলব ঘটনা যেখানে ঘটেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেখানে যাননি।
এরপর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আসামী ঘটনার সময় ছাত্র ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ’৭১ সালে ছাত্রসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার ও শান্তি বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এমন কোন তথ্য বা ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়নি। ’৭১ সালের কোন ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এই মামলায় কয়েকজন সাী  ঘরে ফিরে কমন সাক্ষী। শাহরিয়ার কবীর ও জহির উদ্দিন জালাল এই ট্রাইব্যুনালে  আরো আসামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। 
এই মামলায় অনেক সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়নি। কারণ তারা এই আদালতে সাক্ষ্য দিতে চায়নি এজন্য তাদের সাী করা হয়নি। মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মামলায় সাক্ষী মুজাহিদের মামলারও সাক্ষী। কিন্তু তিনি মুজাহিদের মামলায় সাক্ষ্য দেননি। এসব সাক্ষীদের কেন আদালতে আনা হয়নি সে ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন