রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক বৈরি ঘোষনা

মেহেদী হাসান, রোববার ১২/৫/২০১৩,:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের  একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক বৈরি ঘোষনা করা হয়েছে। এরপর আসামীর বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষীর জবানবন্দীকে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃকই মিথ্যা  আখ্যায়িত করে তাকে জেরা করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  কর্তৃক।

today মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে সপ্তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রদীব কুমার দেব। রাষ্ট্রপক্ষের এ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি; এমনকি তার  জবানবন্দীতে মাওলানা নিজামীর নামও উচ্চারন করেননি। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন আপনি কি  আসামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছিলেন? জবাবে সাক্ষী বলেন-মনে নেই।

সাক্ষীর এ জাতীয় জবাবে  বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাকে  জেরা করেন। জেরায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে বলেন, আপনি আসামী পক্ষ কর্তৃক আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সত্য গোপন করছেন। সাক্ষী তা অস্বীকার করেন।

আজ  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক কোন সাক্ষীকে  বৈরি ঘোষনার ঘটনা এটিই প্রথম ঘটল ট্রাইব্যুনালে।

এর আগে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী গণেশ  চন্দ্র পক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন ট্রাইব্যুনালে। এছাড়া মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আরো এক সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী রাষ্ট্রপক্ষ পক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরনের শিকার হন এবং আজ অবধি তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।


জবানবন্দী
সাক্ষী প্রদীপ কুমার তার জবানবন্দীতে বলেন,  বয়স আনুমানিক ৬২/৬৩ বৎসর  ।  ঠিকানা- গ্রাম করমজা, থানা সাথিয়া, জেলা পাবনা।

সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমার গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৮ই মে তারিখ ভোর রাত্রে মেঘা ঠাকুরের লিচু গাছে উঠি লিচু পাড়ার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পাকিস্তানি সেনারা মেঘা ঠাকুরের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তারপর পাকিস্তানি সেনারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির মধ্যে থেকে লোকজনকে ধরে মারধোর করে মন্দিরের পাশে নিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। যাদেরকে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে মেঘা ঠাকুর, দ্বিজু ঠাকুর, করু ঠাকুর, ষষ্টি হালদার, শান্তি হালদার, আদু হালদার, কার্তিক হালদার, সুরেশ হালদার এবং আমার কাকা মুরালী চন্দ্র প্রমুখ ছিল। লাইনে আরেকজনকে দাঁড় করানো হয়েছিল তার নাম তারা হালদার, তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। ঐ হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর উহা দেখে আমি পালিয়ে যাই। ঐ হত্যাকান্ডের সময় সেখানে শুকুর, আফজাল, আছাদ, মোসলেম গং উপস্থিত ছিল।
ঐ ঘটনার ১২/১৪ দিন আগে খোদা বক্স চেয়ারম্যানের বোর্ড অফিসে একটি মিটিং হয়েছিল। সেই মিটিংয়ে খোদাবক্স চেয়ারম্যান ও অন্যান্যরা ছিল;    সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, গ্রাম ছেড়ে কেউ বাইরে যাবে না। আমি এই পর্যন্ত জানি।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর ইকবাল করিম সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এই ঘটনা সম্পর্কে আপনাকে  জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল?
সাক্ষী জবাবে বলেন,  আমার মনে নাই।

এসময় মীর ইকবাল করিম বিব্রতক অবস্থায় পড়েন এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুমতি চান সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে জেরা করার জন্য। ট্রাইব্যুনাল বলেন, লিখিত দরখাস্ত দিতে হবে এজন্য। লিখিত দরখাস্ত দেয়ার বিষয়ে রাজি হওয়া সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে বৈরি ঘোষনা করে জেরার অনুমতি প্রদান করেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীকে জেরা করা হয়।

জেরা :
প্রশ্ন : আপনি  ০৬/১১/২০১১ ইং তারিখে  এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক সাহেবের নিকট জবানবন্দী দিয়েছিলেন।
উত্তর :  আমার স্মরন নাই।

প্রশ্ন : আপনি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদানের সময়  মতিউর রহমান নিজামী এবং রফিকুন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন।
উত্তর :  আমার খেয়াল নেই।
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে বলেছিলেন আলবদরের কমান্ডার রফিকুন নবী বাবলু মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের অনুগত লোক ছিল ।
উত্তর :  আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : মতিউর রহমান নিজামী সাহেব মেঘা ঠাকুরের বাড়িতে হত্যাকান্ডের সময় এবং খোদা বক্স চেয়ারম্যানের বোর্ড অফিসে মিটিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন তা  জানা সত্ত্বেও আপনি  আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে  গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
উত্তর :  সত্য নয়।
প্রশ্ন : আসামী পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন আপনি।
উত্তর : সত্য নয়।
হরতালেল কারনে গতকাল আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা অনুপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন