সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

কাদের মোল্লার মামলায় আপিল শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক/// ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের বিচারের জন্যই ১৯৭৩ সালের আইন করা হয়েছিল

Mehedy Hasan
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আপিল আবেদনের শুনানীতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,  ১৯৭৩ সালের যে আইনের মাধ্যমে আজ জামায়াতসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বিচার করা হচ্ছে  সে আইনটি করা হয়েছিল শুধুমাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য।।  বাংলাদেশীদের ঐ আইনের অধীনে বিচারের কোন উদ্দেশ্যই ছিলনা।
১৯৭৩ সালের আইনটি যে  শুধুমাত্র ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার বিচারের জন্যই পাশ করা হয়েছিল সে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আইন পাশের আগে বিলের ওপর তৎকালীন সংসদে যে আলোচনা হয়েছিল তা তুলে ধরেন আপিল বিভাগে। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলের ওপর এবং আইনটি পাশ বিষয়ে যে  বক্তব্য দিয়েছিলেন তা আদালতে পাঠ করে শোনান তিনি।  আইনমন্ত্রী  মনোরঞ্জন ধরের বক্তব্য উদ্ধৃতি করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, পাকিস্তানী  শসন্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাঙ্গালী জাতির বিরুদ্ধে বর্বর মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। তাদের বিচারের জন্য এই আইন প্রণয়ন করা হল।
এছাড়া আব্দুল্লাহ সরকার, এম সিরাজুল হক, আব্দুস সাত্তারসহ অন্য যারা ১৯৭৩ সালে সংসদে বিলের ওপর আলোচনা করেছিলেন তাদের বক্তব্যও পড়ে শোনানো হয়। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনের খসড়ায় ‘ইনকুডিং এনি পারসন’ বলে শব্দ  যুক্ত ছিল। এ  নিয়ে তখন সংসদ সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ সরকার সংসদে বলেছিলেন, এনি পারসন বলতে যেকোন ব্যক্তিকেই  এই আইনের আওতায় ফেলে দেয়া যাবে। এখানেই আমার আপত্তি।
আব্দুস সাত্তারসহ অন্যান্য অনেকে তখন প্রস্তাব করেন, যুদ্ধবন্দীসহ যেকোন ব্যক্তির পরিবর্তে শুধু যুদ্ধবন্দী শব্দ রাখা হোক।
আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর তখন সংসদে বলেন আমি এটা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি সংশোধনী  আনেন এবং ইনকডিং শব্দ বাদ দিয়ে বিলটি আইন আকারে পাশ করা হয়। মনোরঞ্জন ধর তখন বলেছিলেন আমাদের মহান নেতার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সম্মতিতে এ সংশোধনী আনা হয়েছে এবং এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হোক।
এসব রেফারেন্স পেশ করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন পাশের পূর্বে সংসদের তখনকার আলোচনা থেকে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে,  ১৯৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী ছাড়া অন্য কারো বিচার করা এ আইনের কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। কোন বাংলাদেশীযে যাতে এ আইনের অধীনে বিচার করা না হয় সেজন্য তারা  উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং সংসদে আলোচনা শেষে বিল থেকে  ‘যেকোন ব্যক্তি’ কথাটি বাদ  দিয়ে শুধু যুদ্ধবন্দী কথাটা রাখা হয়।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিন্তু আজ সেই পাকিস্তানীদের সেনা কর্মকর্তাদের জন্য প্রণীত আইনটিকেই ২০০৯ সালে সংশোধন করে দেশীয় লোকদের বিচার করা  হচ্ছে। সংসদে আলোচনার মাধ্যমে  ‘যেকোন ব্যক্তি’ কথাটি বাদ দেয়া হলেও ২০০৯ সালের আবার ‘ইন্ডিভিজুয়াল’ (একক ব্যক্তি) এবং গ্রুপ অব ইন্ডিভিজুয়ালস’ (ব্যক্তিগোষ্ঠী) শব্দ যোগ করা হল।

প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপীল বেঞ্চ আজ  শুনানী গ্রহণ করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  এ পর্যায়ে শুনানী পেশ করার সময় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এটর্নি জেনারেল মাহবুলে আলমকে উদ্দেশ করে বলেন আপনি ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন এর জবাব প্রদানের জন্য এবং কোর্টকে সহায়তা করবেন।

শুনানীতে  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইনটি পাশ করা হয়। আইনটি পাশের আগে ১৫ জুলাই বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা হয় আর এটিই ছিল সংবিধানের প্রথম সংশোধনী।  ১৯৭৩ সালের আইন পাশের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছিল  কারণ ১৯৭৩ সালের আইনে ১৯৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকারের বেশ কয়েকটি  ধারা রহিত করা হয়েছিল।
সেজন্য ৭৩ সালের আইনটিকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধনী আনতে হয়েছিল। ৪৭ (ক) ও ৪৭ (৩ ) নামে দুটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন