মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ রোববার শহীদ খন্দকার আবু তালেব হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। আব্দুল কাদের মোল্লাকে যে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল-২ তার মধ্যে একটি হল খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ।
এ ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে দুজন সাক্ষীর শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ যুক্তি উপস্থাপন করে সর্বোচ্চ আদালতে বলেছেন খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান ট্রাইব্যুনালে এসে বলেছেন তিনি শুনেছেন তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা করে। কিন্তু তিনি মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে তার পিতার হত্যার যে বিবরন দিয়েছেন এর আগে সেখানে তিনি তার পিতার হত্যার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। তার বোন সখিনাও মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে তার পিতা হত্যার ঘটনার বিবরন দিয়েছেন। তিনিও সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষও তাদের প্রতিবেদনে খন্দকার আবু তালে হত্যা বিষয়ে অবাঙ্গালী বিহারীদের নাম উল্লেখ করেছে।
এছাড়া দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের বিপরীতধর্মী বক্তব্য তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খন্দকার আবুল আহসান বলেছেন ড্রাইভার নিজামের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন আবু তালেবকে আব্দুল কাদের মোল্লার হাতে তুলে দিয়েছেন বিহারীরা। অপর দিকে ১০ নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম বলেছেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়ার কথা।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন আজ।
৩ নং অভিযোগ : তিন নং অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যা বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে -১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ডে পৌছার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্যা, রাজাকার এবং দৃষ্কৃতকার এবং বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে ফেলে। তারা খন্দকার আবু তালেবকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়। একজন বেসামরিক ব্যক্তির হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ এবং সহাতার কারনে তার বিরুদ্ধে আইনে বর্নিত মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে ।
সাক্ষী : রায়ে বলা হয় এ অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ দুই জন সাক্ষী হাজির করেছে। এদের মধ্যে একজন হলেন খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান (৫ নং সাক্ষী) এবং অপর আরেকজন সাক্ষী হলেন খন্দকার আবু তালেবের বন্ধু সৈয়দ আব্দুল কাইউম (১০ নং সাক্ষী)। তারা তখন মিরপুরে থাকতেন। তাদের দুজনেই এ হত্যাকান্ডের কথা শুনেছেন, দেখেননি।
ব্যারিস্টাার আব্দুর রাজ্জাক সাক্ষী সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা পড়ে শোনান শুনানীর সময়। খন্দকার আবুল আহাসন ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ২৫ মার্চ ইত্তেফাক অফিস গুড়িয়ে দেয়ার খবর শুনে তার পিতা খন্দকার আবু তালেব সেখানে যান তার সহকর্মীদের অবস্থা জানতে। তিনি সেখানে কিছু মৃতদেহ দেখতে পান। ২৯ মার্চ তিনি তাদের মিরপুর বাসায় আসছিলেন তার গাড়ি এবং টাকা নেয়ার জন্য। কিন্তু মিরপুর যাবার পথে ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা অবাঙ্গালী আব্দুল হালিমের সাথে দেখা হয় তার। আব্দুল হালিম তাকে পৌছে দেয়ার নাম করে তার গাড়িতে ওঠান এবং আব্দুল কাদের মোল্লার কাছে নিয়ে যান। এরপর মিরপুর ১০ জল্লাদ খানায় তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা করে। এসময় আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে আক্তার গুন্ডা এবং আরো অবাঙ্গালী দুস্কৃতকারীরা ছিল।
সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান জেরায় জানান, তিনি অ্যাডভোকেট খলিল এর কাছ থেকে শুনেছেন যে, ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুুল হালিম তার পিতাকে তার গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে কাদের মোল্লা এবং তার সহযোগীদের হাতে তুলে দিয়েছে। জেরায় তিনি আরো বলেন, তাদের অবঙ্গালী ড্রাইভার নিজাম তাকে বলেছেন যে, আব্দুল হালিম তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা এবং তার সঙ্গীদের হাতে তুলে দিয়েছে।
খন্দকার আবু তালেব হত্যা বিষয়ে জল্লাদখানা যাদুঘরের ডকুমেন্ট : শহীদ খন্দকার আবু তালেব, পল্লব হত্যাকান্ড এবং হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাতকার, লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে জল্লাদখানা যাদুঘরে। মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত পাম্প হাউজে এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে জল্লা খানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ। জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন সময়ে তাদের সাক্ষাতকার বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
সেখানে শহীদ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব সম্পর্কে তার ছেলে খন্দকার আবুল আহসানের বক্তব্য রেকর্ড করা আছে যিনি ট্রাইব্যুনালেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্ট এ ড দেখা যায় খন্দকার আবুল আহসান তার পিতার হত্যার ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার নামই উল্লেখ করেননি।
এই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে খন্দকার আবুল আহসান কর্তৃক আবু তালেব হত্যা ঘটনার যে বিবরন উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ।
‘আজ দীর্ঘ ছত্রিশ বছর ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করার সমস্ত পথ পাকিস্তানি হায়েনারা বন্ধ করে দিয়ে করেছে এতিম, মাকে করেছেন উন্মাদিনী, পাগল ও বিধবা। একজনের অনুপস্থিতি একটা পরিবারের সহায়-সম্বলহীন করে দেয় তার জ্বলন্ত সাক্ষী এই শহীদ খন্দকার আবু তালেবের পরিবার।
আমার বাবা ছিলেন কর্মমুখী, দায়িত্বশীল, পরোপকারী এবং স্বাধীনচেতা একজন মানুষ জ্ঞানচর্চা, তার পছন্দের বিষয় ছিল। আমাদের ভাই-বোনের সাথে তাঁর আচরণ ছিল বন্ধুসুলব। আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু বাবাকে হারানোর পর আমাদের সে রকম সুযোগ হয়নি ভালভাবে পড়ালেখা। আমাদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। যুদ্ধের সময় দেশে মা ও ভাই-বোনকে টাকা পাঠাতাম ঢাকায় চা বিক্রি করে। আমাদের পরনে কাপড় পর্যন্ত ছিল না। আর্থিক দৈন্যের কারণে গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে লেখা করতে হয়েছে। বড় ভাইও অনেক কষ্ট করেছেন। স্বাধীনতার পর পরই তিনি প্রথমে গণকণ্ঠ এবং ৭৪ সালে দৈনিক অবজারভারে চাকরি করে সংসারের ভরণ-পোষণ করেছেন। কষ্ট করতে করতে উন্মাদিনী মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। আর্থিক দৈন্য না কাটলেও আমরা বেঁচে আছি।
কারো কাছে আমাদের কিছু চাওয়ার নেই। সকল শহীদ পরিবারের মতো শহীদদের স্বপ্ন--- দেশই আমাদের একান্ত কাম্য।’
জল্লাদখানা যাদুগরের এ ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে এবং আপিল আদালতেও জমা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা বিষয়ে আসামী পক্ষের আপিল শুনানী অব্যাহত রয়েছে। আজ রোববার শহীদ খন্দকার আবু তালেব হত্যাকান্ডের অভিযোগ বিষয়ে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। আব্দুল কাদের মোল্লাকে যে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল-২ তার মধ্যে একটি হল খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ।
এ ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে দুজন সাক্ষীর শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ যুক্তি উপস্থাপন করে সর্বোচ্চ আদালতে বলেছেন খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান ট্রাইব্যুনালে এসে বলেছেন তিনি শুনেছেন তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা করে। কিন্তু তিনি মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে তার পিতার হত্যার যে বিবরন দিয়েছেন এর আগে সেখানে তিনি তার পিতার হত্যার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। তার বোন সখিনাও মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে তার পিতা হত্যার ঘটনার বিবরন দিয়েছেন। তিনিও সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জল্লাদখানা যাদুঘর কর্তৃপক্ষও তাদের প্রতিবেদনে খন্দকার আবু তালে হত্যা বিষয়ে অবাঙ্গালী বিহারীদের নাম উল্লেখ করেছে।
এছাড়া দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের বিপরীতধর্মী বক্তব্য তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খন্দকার আবুল আহসান বলেছেন ড্রাইভার নিজামের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন আবু তালেবকে আব্দুল কাদের মোল্লার হাতে তুলে দিয়েছেন বিহারীরা। অপর দিকে ১০ নং সাক্ষী আব্দুল কাইউম বলেছেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে বিহারীদের হাতে তুলে দেয়ার কথা।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহণ করেন আজ।
৩ নং অভিযোগ : তিন নং অভিযোগ খন্দকার আবু তালেব হত্যা বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে -১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ডে পৌছার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্যা, রাজাকার এবং দৃষ্কৃতকার এবং বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে ফেলে। তারা খন্দকার আবু তালেবকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়। একজন বেসামরিক ব্যক্তির হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ এবং সহাতার কারনে তার বিরুদ্ধে আইনে বর্নিত মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে ।
সাক্ষী : রায়ে বলা হয় এ অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ দুই জন সাক্ষী হাজির করেছে। এদের মধ্যে একজন হলেন খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান (৫ নং সাক্ষী) এবং অপর আরেকজন সাক্ষী হলেন খন্দকার আবু তালেবের বন্ধু সৈয়দ আব্দুল কাইউম (১০ নং সাক্ষী)। তারা তখন মিরপুরে থাকতেন। তাদের দুজনেই এ হত্যাকান্ডের কথা শুনেছেন, দেখেননি।
ব্যারিস্টাার আব্দুর রাজ্জাক সাক্ষী সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা পড়ে শোনান শুনানীর সময়। খন্দকার আবুল আহাসন ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ২৫ মার্চ ইত্তেফাক অফিস গুড়িয়ে দেয়ার খবর শুনে তার পিতা খন্দকার আবু তালেব সেখানে যান তার সহকর্মীদের অবস্থা জানতে। তিনি সেখানে কিছু মৃতদেহ দেখতে পান। ২৯ মার্চ তিনি তাদের মিরপুর বাসায় আসছিলেন তার গাড়ি এবং টাকা নেয়ার জন্য। কিন্তু মিরপুর যাবার পথে ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা অবাঙ্গালী আব্দুল হালিমের সাথে দেখা হয় তার। আব্দুল হালিম তাকে পৌছে দেয়ার নাম করে তার গাড়িতে ওঠান এবং আব্দুল কাদের মোল্লার কাছে নিয়ে যান। এরপর মিরপুর ১০ জল্লাদ খানায় তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা করে। এসময় আব্দুল কাদের মোল্লার সাথে আক্তার গুন্ডা এবং আরো অবাঙ্গালী দুস্কৃতকারীরা ছিল।
সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান জেরায় জানান, তিনি অ্যাডভোকেট খলিল এর কাছ থেকে শুনেছেন যে, ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুুল হালিম তার পিতাকে তার গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে কাদের মোল্লা এবং তার সহযোগীদের হাতে তুলে দিয়েছে। জেরায় তিনি আরো বলেন, তাদের অবঙ্গালী ড্রাইভার নিজাম তাকে বলেছেন যে, আব্দুল হালিম তার পিতাকে আব্দুল কাদের মোল্লা এবং তার সঙ্গীদের হাতে তুলে দিয়েছে।
খন্দকার আবু তালেব হত্যা বিষয়ে জল্লাদখানা যাদুঘরের ডকুমেন্ট : শহীদ খন্দকার আবু তালেব, পল্লব হত্যাকান্ড এবং হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাতকার, লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে জল্লাদখানা যাদুঘরে। মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত পাম্প হাউজে এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে জল্লা খানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ। জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন সময়ে তাদের সাক্ষাতকার বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
সেখানে শহীদ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব সম্পর্কে তার ছেলে খন্দকার আবুল আহসানের বক্তব্য রেকর্ড করা আছে যিনি ট্রাইব্যুনালেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্ট এ ড দেখা যায় খন্দকার আবুল আহসান তার পিতার হত্যার ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার নামই উল্লেখ করেননি।
এই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে খন্দকার আবুল আহসান কর্তৃক আবু তালেব হত্যা ঘটনার যে বিবরন উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ।
‘আজ দীর্ঘ ছত্রিশ বছর ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করার সমস্ত পথ পাকিস্তানি হায়েনারা বন্ধ করে দিয়ে করেছে এতিম, মাকে করেছেন উন্মাদিনী, পাগল ও বিধবা। একজনের অনুপস্থিতি একটা পরিবারের সহায়-সম্বলহীন করে দেয় তার জ্বলন্ত সাক্ষী এই শহীদ খন্দকার আবু তালেবের পরিবার।
আমার বাবা ছিলেন কর্মমুখী, দায়িত্বশীল, পরোপকারী এবং স্বাধীনচেতা একজন মানুষ জ্ঞানচর্চা, তার পছন্দের বিষয় ছিল। আমাদের ভাই-বোনের সাথে তাঁর আচরণ ছিল বন্ধুসুলব। আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু বাবাকে হারানোর পর আমাদের সে রকম সুযোগ হয়নি ভালভাবে পড়ালেখা। আমাদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। যুদ্ধের সময় দেশে মা ও ভাই-বোনকে টাকা পাঠাতাম ঢাকায় চা বিক্রি করে। আমাদের পরনে কাপড় পর্যন্ত ছিল না। আর্থিক দৈন্যের কারণে গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে লেখা করতে হয়েছে। বড় ভাইও অনেক কষ্ট করেছেন। স্বাধীনতার পর পরই তিনি প্রথমে গণকণ্ঠ এবং ৭৪ সালে দৈনিক অবজারভারে চাকরি করে সংসারের ভরণ-পোষণ করেছেন। কষ্ট করতে করতে উন্মাদিনী মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। আর্থিক দৈন্য না কাটলেও আমরা বেঁচে আছি।
কারো কাছে আমাদের কিছু চাওয়ার নেই। সকল শহীদ পরিবারের মতো শহীদদের স্বপ্ন--- দেশই আমাদের একান্ত কাম্য।’
জল্লাদখানা যাদুগরের এ ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে এবং আপিল আদালতেও জমা দিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন