মেহেদী হাসান
আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল আইনের আপিলের ধারা সংশোধন করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চা শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করেছে। কিন্তু আইনের সংশোধনিটি আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে কোথাও কোন কিছু উল্লেখ নেই। এমনকি সংশোধনী পাশের সময় এ বিষয়ে সংসদের আলোচনায়ও কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার আপিল আবেদন শুনানীর সময় সংশোধনী আইনের এ অস্পষ্টতা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। আইনটি পাশের উদ্দেশ্য বিষয়ে সংসদের আলোচনায় এ বিষয়ে কোন কিছু না থাকায় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
রায় হয়ে যাবার পর আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা বিষয়েও রাষ্ট্রপক্ষকে নজির পেশ করতে বলেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীকে সাজা দেয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষ আর আপিল করতে পারবেনা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে যদি আসামীকে পুরোপুরি খালাস দেয়া হয় শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে সরকার পক্ষ বা অভিযোগকারী আপিল করার সুযোগ পাবে; অন্যথায় নয়। কিন্তু আব্দুল কাদের মোল্লাকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের পর তার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। সে প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনালের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয় সংসদে। সংশোধিত আইনে বলা হয় আসামী পক্ষের মত সরকার পক্ষও আপিলের সমান সুযোগ পাবে। অর্থাৎ শুধু খালাসের ক্ষেত্রে নয়, ট্রাইব্যুনালের যেকোন রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষও আপিল করতে পারবে ।
আইনের আপিল সংক্রন্তা ধারা সংশোধনের পর সরকার পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়ে আপিল আবেদন করে। এছাড়া কাদের মোল্লাকে যে একটি অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল খালাস দিয়েছে সেটিতেও সাজা দাবি করা হয়েছে সরকার পক্ষের আবেদনে।
আজ আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল আবেদন শুনানীর সময় যুক্তি পেশ করছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এসময় আদালত তাকে প্রশ্ন করেন আপনারা যে আইনের বলে আপিল আবেদন করেছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না। কোন বিধান বলে আপনারা এই মামলার ক্ষেত্রে এ দরখাস্ত করেছেন।
তখন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন এই মামলার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের সংশোধনী আইন প্রযোজ্য এবং আইনের সংশোধনীতে বলা আছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এ সংশোধনী কার্যকর বলে ধরে নেয়া হবে।
এসময় আদালত জানতে চান ১৮ ফেব্রুয়ারি সংশোধনী আইন পাশ যে আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কোথাও উল্লেখ আছে কি-না। এসময় আদালত আইনটি সংশোধনের উদ্দেশ্য পড়ে শোনাতে বলেন এটর্নি জেনারেলকে। আইন পাশের উদ্দেশ্য পড়ে শোনানো হলে তাতে দেখা যায় আইনে যেমন এ বিষয়ে কোন কিছু বলা হয়নি তেমনি সংশোধনী আইন পাশের বিষয়েও আব্দুল কাদের মোল্লার মামলা বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই। তখন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সংশোধনী পাশের সময় এর উদ্দেশ্য নিয়ে সংসদে কি আলোচনা হয়েছিল তা আছে আপনার কাছে? সংসদে এর উদ্দেশ্য নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছিল না শুধু হাত তুলে হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে বলে পাশ হয়েছিল? এটর্নি জেনারেল এসময় সংশোধনী আইন পাশের সময়কার সংসদীয় প্রসিডিংস উপস্থাপন করেন আদালতে।
কিন্তু তা পর্যালোচনা করে দেখা যায় তাতেও সংশোধনীটি পাশের ক্ষেত্রে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ নেই। আব্দুল কাদের মোল্লার রায় বের হবার পর সেক্ষেত্রে সংশোধনী প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে কেউ কোন আলোচনাও পেশ করেননি সংসদে। তখন এমপিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিলটি পাশের ক্ষেত্রে সংসদের যে প্রসিডিংস উত্থাপন করেন তাতে দেখা যায় মো : ফজলে রাব্বি মিয়া সংশোধনী প্রস্তাব বিল আকারে সংসদে উত্থোপন করেন। হুইপ আব্দুল ওয়াহাব এর ওপর আলোচনা করেন। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংশোধনী গ্রহনের জন্য স্পিকারের মাধ্যমে অনুরোধ জানান। এরপর কণ্ঠভোটে হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে মর্মে বিলটি পাশ হয়। এছাড়া রাশেদ খান মেনন সংশোধনীতে ‘অর্গানাইজেশন’ শব্দটি যোগ করার জন্য প্রস্তাব করেন এবং এ বিষয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন। তা এটর্নি জেনারেল পড়ে শোনান আদালতে। তাতে দেখা যায় রাশেদ খান মেনন জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে। আল বদর, আল শাসস, রাজাকার গঠন করে। আজো তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে চলেছে। তাই সংগঠন হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তিনি সংশোধনীতে ‘অর্গানাইজেশন’ শব্দ যোগ করার প্রস্তাব করেন। তার বক্তব্য পাঠ শেষ হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, এসবতো বেখাপ্পা কথাবার্তা। অস্পষ্ট। এর মধ্যেতো সংশোধনী পাশের উদ্দেশ্য বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়াও একই ধরননের মন্তব্য করেন এসময়।
এসময় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই যে, বলা হয় শুধু হাত তোলা ছাড়া কোন কাজ নেই.........। আজকের পত্রিকায় যে হেডলাইন আছে....।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধ আইনটি পাশের ক্ষেত্রে সংসদে আইনের উদ্দেশ্য নিয়ে কত সুন্দর আলোচনা এবং বিতর্ক হয়। অনেক এমপি আইনের ক্ষেত্রে তাদের মতামত তুলে ধরেছিলেন। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরসহ অন্যরা আইনটি বিষয়ে সংসদে কথা বলেছিলেন।
এসময় অপর বিচারপতি সুরেন্ত্র কুমার সিনহা আফসোস করে বলেন, সেই সংসদ আর আজকের সংসদ; কোথায় এসে দাড়িয়েছে।
আদালতের নির্দেশে আইনটি পাশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এর বক্তব্য পড়ে শোনান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সেখানে উল্লেখ আছে যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যানশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যক্ট প্রণয়ন করা হয়। .....উক্ত অ্যাক্টের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠনক্রমে যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধেল সাথে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য পড়ে শোনানোর পর বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, এখানে ‘বিচার কার্যক্রম চলামান রয়েছে’ বলে একটি কথা আছে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মারাত্মক। তিনি বলেন, মিস্টার এটর্নি জেনারেল, এ থেকে যেটি স্পষ্ট তাহল ১৮ ফেব্রুয়ারির সংশোধনী ট্রাইব্যুনালের যেসব বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এ মামলার ক্ষেত্রে নয়।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এটর্নি জেনারেলকে বারবার একটি প্রশ্ন করেন-রায় বের হবার পর আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা হয়েছে এমন একটি নজির দেখান। কিন্তু এটর্নি জেনারেল তা দেখাতে পারেননি।
আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আদালতের পক্ষ থেকে প্রশ্ন আসে আসামীর অধিকার ুন্ন হওয়া বিষয়ে। কারণ ট্রাইব্যুনালের আইনে ফাঁসির বিধান থাকলেও আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন। তাই ফাঁসির উদ্দেশে আইন সংশোধন করা হলে আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসে। বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া এটর্নি জেনারেলকে বলেন আপনার দরখাস্ত গ্রহণ করা হলে তো আসামীকে ফাঁসি দিতে হয়।
এটর্নি জেনারেল বলেন, আমাকে আপিলের একটা সুযোগ দেয়া হয়েছে আইন সংশোধন করে। সেখানে আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসবে কেন?
২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধনী আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে দুর্বলতা, অস্পষ্টতা বিষয়ে বিতর্ক চলাকালে আদালত বিরতিতে চলে যান গতকাল। দুপুর ১২টায় আবার কোর্ট বসে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন অনুপস্থিত থাকায় আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার শুনানী আজ আর হয়নি।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানী গ্রহণ করেন।
আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল আইনের আপিলের ধারা সংশোধন করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চা শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করেছে। কিন্তু আইনের সংশোধনিটি আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে কোথাও কোন কিছু উল্লেখ নেই। এমনকি সংশোধনী পাশের সময় এ বিষয়ে সংসদের আলোচনায়ও কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার আপিল আবেদন শুনানীর সময় সংশোধনী আইনের এ অস্পষ্টতা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। আইনটি পাশের উদ্দেশ্য বিষয়ে সংসদের আলোচনায় এ বিষয়ে কোন কিছু না থাকায় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
রায় হয়ে যাবার পর আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা বিষয়েও রাষ্ট্রপক্ষকে নজির পেশ করতে বলেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীকে সাজা দেয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষ আর আপিল করতে পারবেনা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে যদি আসামীকে পুরোপুরি খালাস দেয়া হয় শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে সরকার পক্ষ বা অভিযোগকারী আপিল করার সুযোগ পাবে; অন্যথায় নয়। কিন্তু আব্দুল কাদের মোল্লাকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের পর তার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। সে প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনালের আপিল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করা হয় সংসদে। সংশোধিত আইনে বলা হয় আসামী পক্ষের মত সরকার পক্ষও আপিলের সমান সুযোগ পাবে। অর্থাৎ শুধু খালাসের ক্ষেত্রে নয়, ট্রাইব্যুনালের যেকোন রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষও আপিল করতে পারবে ।
আইনের আপিল সংক্রন্তা ধারা সংশোধনের পর সরকার পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়ে আপিল আবেদন করে। এছাড়া কাদের মোল্লাকে যে একটি অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল খালাস দিয়েছে সেটিতেও সাজা দাবি করা হয়েছে সরকার পক্ষের আবেদনে।
আজ আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আপিল আবেদন শুনানীর সময় যুক্তি পেশ করছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এসময় আদালত তাকে প্রশ্ন করেন আপনারা যে আইনের বলে আপিল আবেদন করেছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না। কোন বিধান বলে আপনারা এই মামলার ক্ষেত্রে এ দরখাস্ত করেছেন।
তখন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন এই মামলার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের সংশোধনী আইন প্রযোজ্য এবং আইনের সংশোধনীতে বলা আছে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এ সংশোধনী কার্যকর বলে ধরে নেয়া হবে।
এসময় আদালত জানতে চান ১৮ ফেব্রুয়ারি সংশোধনী আইন পাশ যে আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কোথাও উল্লেখ আছে কি-না। এসময় আদালত আইনটি সংশোধনের উদ্দেশ্য পড়ে শোনাতে বলেন এটর্নি জেনারেলকে। আইন পাশের উদ্দেশ্য পড়ে শোনানো হলে তাতে দেখা যায় আইনে যেমন এ বিষয়ে কোন কিছু বলা হয়নি তেমনি সংশোধনী আইন পাশের বিষয়েও আব্দুল কাদের মোল্লার মামলা বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই। তখন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সংশোধনী পাশের সময় এর উদ্দেশ্য নিয়ে সংসদে কি আলোচনা হয়েছিল তা আছে আপনার কাছে? সংসদে এর উদ্দেশ্য নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছিল না শুধু হাত তুলে হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে বলে পাশ হয়েছিল? এটর্নি জেনারেল এসময় সংশোধনী আইন পাশের সময়কার সংসদীয় প্রসিডিংস উপস্থাপন করেন আদালতে।
কিন্তু তা পর্যালোচনা করে দেখা যায় তাতেও সংশোধনীটি পাশের ক্ষেত্রে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ নেই। আব্দুল কাদের মোল্লার রায় বের হবার পর সেক্ষেত্রে সংশোধনী প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে কেউ কোন আলোচনাও পেশ করেননি সংসদে। তখন এমপিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিলটি পাশের ক্ষেত্রে সংসদের যে প্রসিডিংস উত্থাপন করেন তাতে দেখা যায় মো : ফজলে রাব্বি মিয়া সংশোধনী প্রস্তাব বিল আকারে সংসদে উত্থোপন করেন। হুইপ আব্দুল ওয়াহাব এর ওপর আলোচনা করেন। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংশোধনী গ্রহনের জন্য স্পিকারের মাধ্যমে অনুরোধ জানান। এরপর কণ্ঠভোটে হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে মর্মে বিলটি পাশ হয়। এছাড়া রাশেদ খান মেনন সংশোধনীতে ‘অর্গানাইজেশন’ শব্দটি যোগ করার জন্য প্রস্তাব করেন এবং এ বিষয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন। তা এটর্নি জেনারেল পড়ে শোনান আদালতে। তাতে দেখা যায় রাশেদ খান মেনন জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে। আল বদর, আল শাসস, রাজাকার গঠন করে। আজো তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে চলেছে। তাই সংগঠন হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তিনি সংশোধনীতে ‘অর্গানাইজেশন’ শব্দ যোগ করার প্রস্তাব করেন। তার বক্তব্য পাঠ শেষ হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, এসবতো বেখাপ্পা কথাবার্তা। অস্পষ্ট। এর মধ্যেতো সংশোধনী পাশের উদ্দেশ্য বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়াও একই ধরননের মন্তব্য করেন এসময়।
এসময় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই যে, বলা হয় শুধু হাত তোলা ছাড়া কোন কাজ নেই.........। আজকের পত্রিকায় যে হেডলাইন আছে....।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধ আইনটি পাশের ক্ষেত্রে সংসদে আইনের উদ্দেশ্য নিয়ে কত সুন্দর আলোচনা এবং বিতর্ক হয়। অনেক এমপি আইনের ক্ষেত্রে তাদের মতামত তুলে ধরেছিলেন। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরসহ অন্যরা আইনটি বিষয়ে সংসদে কথা বলেছিলেন।
এসময় অপর বিচারপতি সুরেন্ত্র কুমার সিনহা আফসোস করে বলেন, সেই সংসদ আর আজকের সংসদ; কোথায় এসে দাড়িয়েছে।
আদালতের নির্দেশে আইনটি পাশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এর বক্তব্য পড়ে শোনান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সেখানে উল্লেখ আছে যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যানশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যক্ট প্রণয়ন করা হয়। .....উক্ত অ্যাক্টের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠনক্রমে যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধেল সাথে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য পড়ে শোনানোর পর বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, এখানে ‘বিচার কার্যক্রম চলামান রয়েছে’ বলে একটি কথা আছে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মারাত্মক। তিনি বলেন, মিস্টার এটর্নি জেনারেল, এ থেকে যেটি স্পষ্ট তাহল ১৮ ফেব্রুয়ারির সংশোধনী ট্রাইব্যুনালের যেসব বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এ মামলার ক্ষেত্রে নয়।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এটর্নি জেনারেলকে বারবার একটি প্রশ্ন করেন-রায় বের হবার পর আইন সংশোধন করে রিট্রোসপেকটিভ ইফেক্ট কার্যকর করা হয়েছে এমন একটি নজির দেখান। কিন্তু এটর্নি জেনারেল তা দেখাতে পারেননি।
আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আদালতের পক্ষ থেকে প্রশ্ন আসে আসামীর অধিকার ুন্ন হওয়া বিষয়ে। কারণ ট্রাইব্যুনালের আইনে ফাঁসির বিধান থাকলেও আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন। তাই ফাঁসির উদ্দেশে আইন সংশোধন করা হলে আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসে। বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া এটর্নি জেনারেলকে বলেন আপনার দরখাস্ত গ্রহণ করা হলে তো আসামীকে ফাঁসি দিতে হয়।
এটর্নি জেনারেল বলেন, আমাকে আপিলের একটা সুযোগ দেয়া হয়েছে আইন সংশোধন করে। সেখানে আসামীর অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসবে কেন?
২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধনী আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না সে বিষয়ে দুর্বলতা, অস্পষ্টতা বিষয়ে বিতর্ক চলাকালে আদালত বিরতিতে চলে যান গতকাল। দুপুর ১২টায় আবার কোর্ট বসে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন অনুপস্থিত থাকায় আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার শুনানী আজ আর হয়নি।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানী গ্রহণ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন