বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় নির্ধারন

মেহেদী হাসান, ২৯/৮/২০১৩
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (এমসি) জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য  মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হবে কি হবেনা সে বিষয়ে আদেশের তারিখ আগামী ৫ সেপ্টেম্বর  পুনরায় নির্ধারন করা হয়েছে।

আজ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ক আদেশের জন্য নির্ধারিত ছিল। আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে চার্জ গঠন বিষয়ক আদেশের তারিখ পুনরায় নির্ধারন করে ট্রাইব্যুনাল।

গত ২১ আগস্ট চার্জ গঠন বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে ২৯ আগস্ট চার্জ গঠনের  আদেশের জন্য ধার্য্য করা হয়। সেদিন শুনানী শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করেন চার্জ গঠন বিষয়ক আদেশ ৮ অথবা ৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারন করা হোক। কারণ  আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন এবং তিনি অনুরোধ করেছেন তিনি চার্জ শুনানীতে অংশ নিতে চান। তিনি ৮ তারিখ দেশে আসবেন। তাকে সে সুযোগ প্রদানের জন্য ৮ বা ৯ তারিখ  চার্জ গঠনের জন্য নির্ধারন করা হোক এবং তাকে চার্জ গঠনের দিন হলেও যেন আদেশের পূর্বে শুনানী পেশ করার সুযোগ দেয়া হয়।

কিন্তু এত লম্বা মুলতবি করতে তখন রাজি হয়নি ট্রাইব্যুনাল এবং ২৯ আগস্ট তারিখ নির্ধারন করে ট্রাইব্যুনাল। এরপর গত মঙ্গলবার আবারো আসামী পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় মীর কাসেম আলীর চার্জ গঠনের আদেশের তারিখ পেছানো হোক এবং ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে শুনানী পেশ করার সুযোগ দেয়া হোক। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিদেশ থেকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন আপনাদের কাছে এ আবেদন রাখার জন্য। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাকে সুযোগ দিতে আমাদের কোন  আপত্তি নেই। তিনি দেশে ফিরে আসুক আমরা তাকে সুযোগ দেব। তাকে বলেন তিনি যেন সফর সংক্ষেপ করে চলে আসেন। তাকে আমাদের পক্ষ থেকে এ কথা জানান। মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি আপনাদের এ কথা তাকে জানাব।
এরপর আজ মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি তাকে আপনাদের কথা ফোনে জানিয়েছি । কিন্তু তার পক্ষে এ মুহুর্তে দেশে ফেরা সম্ভব নয়। কারণ হল তিনি ইতোমধ্যে তার সফর সাত দিন কমিয়ে আট তারিখ দেশে ফেরার তারিখ ঠিক করেছেন। তাছাড়া এখন প্লেনের টিকিট পাওয়াও সম্ভব হয়নি। তাছাড়া তিনি যে কাজে গেছেন সে কারনেও সফর  দ্বিতীয়বার সংপেক্ষপ করা কঠিন তার পক্ষে। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অনুরোধ যদিও বিব্রতকর তবুও  ন্যায় বিচারের স্বার্থে এক সপ্তাহ পেছালে খুব একটা অসুবিধা হবেনা। আপনারা আগেও আমাদের অনুরোধ শুনেছেন। এ মামলার যখন শুনানী চলে তখন তার বা আমাদের কারোর নলেজে  ছিলনা তাকে বিদেশে এ লম্বা সফর রয়েছে। তাই আপনারাও বলেছেলেন তাকে আপনারা সুযোগ দেবেন।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এত লম্বা সময় মামলা মুলতবি রাখা  আসলে আইন আমাদের  অনুমিত দেয়না।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আইনে লম্বা মুলতবি বা সংক্ষিপ্ত মুলতবি বলতে কিছু নেই। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনাদের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আইনে দেয়া আছে।

রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন  আসামী পক্ষের আবেদনের তীব্র বিরোধীতা  করে বলেন, তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে।  তাদের আইনজীবীর কারনে মামলার তারিখ পেছানো কোন যৌক্তিক কারণ হতে পারেনা।
শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় তারিখ নির্ধারন করেন।
আজ ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির অনুপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহঙ্গীর হোসেন  ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক  শুনানী গ্রহণ করেন এবং আদেশ দেন।


মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, অপহরন লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ গত ১৬ মে। ১৪টি অভিযোগের মধ্যে  দুটি পৃথক অভিযোগে মোট সাতজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বাকী ১২টি অভিযোগ হল অপহরন এবং নির্যাতন সংক্রান্ত। এসব অভিযোগের সাথে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বা উর্দ্ধতন নেতৃত্বে দায় আনা হয়েছে। ২৬ মে ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার পর ২৫ জুলাই চার্জ গঠনের  শুনানী শুরু হয়।

গত বছর  ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন