২৯/১২/১১
মেহেদী হাসান
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যে বিচার বর্তমানে চলছে তাতে একটি আলোচিত চরিত্র ভানু সাহা । ভানু সাহাকে জড়িয়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, পিস কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা এবং পাক আর্মির বিরুদ্ধে ধর্ষন বিষয়ে আদালতে পরষ্পর বিরোধী সাক্ষ্য দিয়েছেন সাক্ষীরা।
আদালতে সাক্ষীদের দেয়া তথ্য এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে ভানু সাহার পিতার নাম বিপদ সাহা। । ১৯৭১ সালে পিরোজপুর পারেরহাট বাজারে বিপদ সাহা তার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়ে বাস করতেন। পারেরহাট বাজারে তাদের একটি দোকান ছিল এবং দোকানের পেছনেই ছিল তাদের বসবাসের ঘর। ভানু সাহা দেখতে খুবই সুন্দরী এবং বয়সে তরুনী ছিল তখন ।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আদালতে সাতজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন সাক্ষী তাদের জবানবন্দীতে ভানু সাহাকে ধর্ষনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ধর্ষনের বিষয়ে তিনজন সম্পূর্ণ তিন রকম কথা বলেছেন। একজন সাক্ষী বলেছেন শান্তি কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা, যিনি এখন পিরোজপুর ওলামা লীগের নেতা, তিনি ভানু সাহাকে নিয়ে ভানু সাহার বাড়িতে বাস করতেন। অপর আরেক সাক্ষী বলেছেন, ভানু সাহাকে মাওলানা সাঈদী নিয়মিত ধষর্ন করতেন। আরেক সাক্ষী বলেছেন, পাক আর্মি তাকে আটকে রেখে মাসের পর মাস ধর্ষন করত। তিন সাক্ষীর এই পরষ্পর বিরোধী বক্তব্যের ফলে প্রশ্ন উঠেছে ভানু সাহা সত্যিকার অর্থে কার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন।
গত ২৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষী মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার জেরার সময় জানান, পারেরহাটে বিপদ সাহার মেয়েকে নিয়ে বিপদ সাহার বাড়িতেই বাস করতেন পিস কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেন, ভানু সাহাকে মোসলেম মাওলানা বিয়ে করে জামাই হিসেবে থাকতেন কি-না। তখন মাহতাব উদ্দিন বলেন, বিয়ে করেছিল কিনা বলতে পারবনা। তবে গন্ডগোলের সময় ভানু সাহাকে নিয়ে মোসলেম মওলানা থাকতেন বিপদ সাহার বাড়িতে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মোসলেম উদ্দিন মাওলানা বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তিনি পিরোজপুর ওলামা লীগের সভাপতি এ বিষয়টি জানেন কি-না? সাক্ষী ‘সত্য নয়’ বলে জবাব দেন।
এর আগে ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ভানু সাহা ও ছবি রায়সহ আরো অনেক মেয়েদের পাক আর্মি শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সাথে নিয়ে ধর্ষন করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। ভানু সাহাকে দীর্ঘ কয়েক মাস আটকে রেখে পাক আর্মি উপর্যপুরী ধর্ষন করে।
এ দুজন সাক্ষী ভানু সাহাকে ধর্ষন বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর নাম বলেননি। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ হাওলাদার আদালতে ভানু সাহা প্রসঙ্গে বলেন, মাওলানা সাঈদী ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষন করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে।
মোসলেম মাওলানার খপ্পরে ভানু সাহা
পারেরহাট সূত্র জানায় মোসলেম মাওলানা একটি লাঠি হাতে নিয়ে পারেরহাট বাজারে ঘোরাফেরা করত। বাজারে মাতব্বরী খবরদারী করত। উর্দু ভাষা ভাল জানায় তিনি পাক আর্মিদের সাথে সবরকম যোগাযোগ করতেন এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পারের হাটে পিস কমিটি গঠনে ভূমিক পালন এবং পাক আর্মির সাথে সম্পর্কের কারনে তখন পারেরহাটের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন তিনি।
পারেরহাট বাজারে নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে মোসলেম মাওলানার চোখ পড়ে বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহার ওপর। মোসলেম মাওলানা ভানুসাহাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় বিপদ সাহার ওপর। বিপদ সাহা তখন মোসলেম মাওলানাকে তার বাড়িতে ওঠাতে বাধ্য হন তার প্রভাবের কারনে। সেই সুযোগে মোসলেম মাওলানা ভানু সাহার সাথে একত্রে বসবাস করে। মোসলেম মাওলানার প্রভাবে এবং পাক আর্মিদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিপদ সাহা এবং তার ছেলেরা তখন মাথায় টুপি পরে বাজারে যাতায়াত করত। মাঝে মাঝে মসজিদে গিয়ে নামাজও পরত। বাজারের লোকজন তখন মনে করত মোসলেম মাওলানা ভানুসাহা এবং তার পরিবারের সবাইকে মুসলমান বানিয়েছে এবং ভানু সাহাকে বিয়ে করে তার সাথে বাস করছে। তবে বিয়ে হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা ভানু সাহাকে উদ্ধার করে। এরপর তারা সবাই আবার নিজ ধর্মে ফিরে যায় সবাই ভারতে চলে যায়।
মোসলেম মাওলানার একচ্ছত্র প্রভাবের কারনে এবং পারেরহাট বাজার তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় তখন ভানু সাহার সাথে বসবাস নিয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পায়নি। সবাই তখন তাকে ভয় করে চলত।
কে এই মোসলেম মাওলানা?
পিরোজপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বইয়ের ৪১২ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মোসলেম মাওলানার অপকর্মের বিষয়ে উল্লেখ আছে। মোসলেম মাওলানা ১৯৬৯ সালে ঢাকা রেসিডেন শিয়াল মডেল স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি এলাকায় চলে আসেন। তার গ্রাম বাদুরায়। পারেরহাটে পাক আর্মি আসার আগেই মোসলেম মাওলানার নেতৃত্বে সেখানে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পিস কমিটির সভাপতি করা হয় রাজলক্ষী স্কুলের সাবেক শিক্ষক এবং পরবর্তীতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দানেশ মোল্লাকে। সেক্রেটারি করা হয় সেকেন্দার শিকদারকে। তবে পিস কমিটি পরিচালনার কাজ করেন মোসলেম মাওলানা।
স্বাধীনতার পরপরই এলাকা থেকে পালিয়ে যায় মোসলেম মাওলানা। এরপর এরশাদের সময় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আশ্রয় নেন জমিয়তুল মোদাররেছীনের তলে। পরবর্তীতে জড়িত হন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সঙ্গঠন ওলামা লীগের সাথে।
মোসলেম মাওলানার অপকর্মের দায়ভার মাওলানা সাঈদীর?
যে ভানু সাহার সাথে বাস করত মোসলেম মাওলানা সেই ভানু সাহাকে জড়িয়েই মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছে সাক্ষীরা ।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পারেরহাট বাজারে লুটপাট অগ্নিসংযোগ বিষয়ে আদালতে এ পর্যন্ত যতজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের সকলেই বলেছেন, মাওলানা সাঈদী আরবী এবং উর্দু ভাল জানায় তিনি পারেরহাট বাজারে পাক সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন এজাজের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষার কাজ করতেন। তিনিসহ অন্যান্য পিস কমিটির নেতারা পারের হাট বাজারে পাক আর্মি আসার পর অভ্যর্থনা জানান। মাওলানা সাঈদীর নামের সাথে প্রায় সবগুলো ঘটনায় মোসলেম মাওলানার নাম উল্লেখ করেছে
সাক্ষীরা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তারা বলেছে মাওলানা সাঈদী উর্দু ভাষায় পাক সেনাদের সাথে কথাবার্তা বলছেন এবং সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করতেন। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে এবং নেতৃত্বে পাক আর্মি সেখানে সকল অপকর্ম পরিচালনা করত।
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে মোসলেম মাওলানা উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং তিনিই পাক আর্মিদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু মোসলেম মাওলানার বিরুদ্ধে অভিযোগের স্থলে এখন বসিয়ে দেয়া হয়েছে মাওলানা সাঈদীর নাম।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আরেকটি আলোচিত ঘটনা ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলা। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে ইব্রাহীম কুট্টিকে পারেরহাট বাজারে পাক আর্মি মে মাসে হত্যা করেছে বলে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। সে মামলায় আসামী করা হয় মোসলেম মাওলানাকে। মাওলানা সাঈদী নন। তাছাড়া স্ত্রীর দায়র করা মামলার এজহারে ইব্রাহীমকে হত্যার ঘটনা স্থল উল্লেখ করা হয়েছে ইব্রাহিমের শ্বশুর বাড়ি নলবুনিয়া গ্রাম। পারেরাট বাজার নয়। ঘটনার তারিখ অক্টোবর মাস, মে মাস নয়। মমতাজ বেগমের মামলায় মাওলানা সাঈদীর নাম আসামীর তালিকায় না থাকা সত্ত্বেও এবং ঘটনাস্থল ও ঘটনার তারিখ সম্পূর্ণ ভিন্ন হবার পরও ইব্রাহীম হত্যার জন্য মাওলানা সাঈদীকে জড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাক্ষীরা।
মোসলেম মাওলানার সাথে যোগাযোগের জন্য মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মেহেদী হাসান
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যে বিচার বর্তমানে চলছে তাতে একটি আলোচিত চরিত্র ভানু সাহা । ভানু সাহাকে জড়িয়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, পিস কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা এবং পাক আর্মির বিরুদ্ধে ধর্ষন বিষয়ে আদালতে পরষ্পর বিরোধী সাক্ষ্য দিয়েছেন সাক্ষীরা।
আদালতে সাক্ষীদের দেয়া তথ্য এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে ভানু সাহার পিতার নাম বিপদ সাহা। । ১৯৭১ সালে পিরোজপুর পারেরহাট বাজারে বিপদ সাহা তার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়ে বাস করতেন। পারেরহাট বাজারে তাদের একটি দোকান ছিল এবং দোকানের পেছনেই ছিল তাদের বসবাসের ঘর। ভানু সাহা দেখতে খুবই সুন্দরী এবং বয়সে তরুনী ছিল তখন ।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আদালতে সাতজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন সাক্ষী তাদের জবানবন্দীতে ভানু সাহাকে ধর্ষনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ধর্ষনের বিষয়ে তিনজন সম্পূর্ণ তিন রকম কথা বলেছেন। একজন সাক্ষী বলেছেন শান্তি কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা, যিনি এখন পিরোজপুর ওলামা লীগের নেতা, তিনি ভানু সাহাকে নিয়ে ভানু সাহার বাড়িতে বাস করতেন। অপর আরেক সাক্ষী বলেছেন, ভানু সাহাকে মাওলানা সাঈদী নিয়মিত ধষর্ন করতেন। আরেক সাক্ষী বলেছেন, পাক আর্মি তাকে আটকে রেখে মাসের পর মাস ধর্ষন করত। তিন সাক্ষীর এই পরষ্পর বিরোধী বক্তব্যের ফলে প্রশ্ন উঠেছে ভানু সাহা সত্যিকার অর্থে কার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন।
গত ২৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষী মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার জেরার সময় জানান, পারেরহাটে বিপদ সাহার মেয়েকে নিয়ে বিপদ সাহার বাড়িতেই বাস করতেন পিস কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেন, ভানু সাহাকে মোসলেম মাওলানা বিয়ে করে জামাই হিসেবে থাকতেন কি-না। তখন মাহতাব উদ্দিন বলেন, বিয়ে করেছিল কিনা বলতে পারবনা। তবে গন্ডগোলের সময় ভানু সাহাকে নিয়ে মোসলেম মওলানা থাকতেন বিপদ সাহার বাড়িতে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মোসলেম উদ্দিন মাওলানা বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তিনি পিরোজপুর ওলামা লীগের সভাপতি এ বিষয়টি জানেন কি-না? সাক্ষী ‘সত্য নয়’ বলে জবাব দেন।
এর আগে ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ভানু সাহা ও ছবি রায়সহ আরো অনেক মেয়েদের পাক আর্মি শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সাথে নিয়ে ধর্ষন করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। ভানু সাহাকে দীর্ঘ কয়েক মাস আটকে রেখে পাক আর্মি উপর্যপুরী ধর্ষন করে।
এ দুজন সাক্ষী ভানু সাহাকে ধর্ষন বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর নাম বলেননি। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ হাওলাদার আদালতে ভানু সাহা প্রসঙ্গে বলেন, মাওলানা সাঈদী ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষন করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে।
মোসলেম মাওলানার খপ্পরে ভানু সাহা
পারেরহাট সূত্র জানায় মোসলেম মাওলানা একটি লাঠি হাতে নিয়ে পারেরহাট বাজারে ঘোরাফেরা করত। বাজারে মাতব্বরী খবরদারী করত। উর্দু ভাষা ভাল জানায় তিনি পাক আর্মিদের সাথে সবরকম যোগাযোগ করতেন এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পারের হাটে পিস কমিটি গঠনে ভূমিক পালন এবং পাক আর্মির সাথে সম্পর্কের কারনে তখন পারেরহাটের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন তিনি।
পারেরহাট বাজারে নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে মোসলেম মাওলানার চোখ পড়ে বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহার ওপর। মোসলেম মাওলানা ভানুসাহাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় বিপদ সাহার ওপর। বিপদ সাহা তখন মোসলেম মাওলানাকে তার বাড়িতে ওঠাতে বাধ্য হন তার প্রভাবের কারনে। সেই সুযোগে মোসলেম মাওলানা ভানু সাহার সাথে একত্রে বসবাস করে। মোসলেম মাওলানার প্রভাবে এবং পাক আর্মিদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিপদ সাহা এবং তার ছেলেরা তখন মাথায় টুপি পরে বাজারে যাতায়াত করত। মাঝে মাঝে মসজিদে গিয়ে নামাজও পরত। বাজারের লোকজন তখন মনে করত মোসলেম মাওলানা ভানুসাহা এবং তার পরিবারের সবাইকে মুসলমান বানিয়েছে এবং ভানু সাহাকে বিয়ে করে তার সাথে বাস করছে। তবে বিয়ে হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা ভানু সাহাকে উদ্ধার করে। এরপর তারা সবাই আবার নিজ ধর্মে ফিরে যায় সবাই ভারতে চলে যায়।
মোসলেম মাওলানার একচ্ছত্র প্রভাবের কারনে এবং পারেরহাট বাজার তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় তখন ভানু সাহার সাথে বসবাস নিয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পায়নি। সবাই তখন তাকে ভয় করে চলত।
কে এই মোসলেম মাওলানা?
পিরোজপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বইয়ের ৪১২ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মোসলেম মাওলানার অপকর্মের বিষয়ে উল্লেখ আছে। মোসলেম মাওলানা ১৯৬৯ সালে ঢাকা রেসিডেন শিয়াল মডেল স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি এলাকায় চলে আসেন। তার গ্রাম বাদুরায়। পারেরহাটে পাক আর্মি আসার আগেই মোসলেম মাওলানার নেতৃত্বে সেখানে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পিস কমিটির সভাপতি করা হয় রাজলক্ষী স্কুলের সাবেক শিক্ষক এবং পরবর্তীতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দানেশ মোল্লাকে। সেক্রেটারি করা হয় সেকেন্দার শিকদারকে। তবে পিস কমিটি পরিচালনার কাজ করেন মোসলেম মাওলানা।
স্বাধীনতার পরপরই এলাকা থেকে পালিয়ে যায় মোসলেম মাওলানা। এরপর এরশাদের সময় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আশ্রয় নেন জমিয়তুল মোদাররেছীনের তলে। পরবর্তীতে জড়িত হন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সঙ্গঠন ওলামা লীগের সাথে।
মোসলেম মাওলানার অপকর্মের দায়ভার মাওলানা সাঈদীর?
যে ভানু সাহার সাথে বাস করত মোসলেম মাওলানা সেই ভানু সাহাকে জড়িয়েই মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছে সাক্ষীরা ।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পারেরহাট বাজারে লুটপাট অগ্নিসংযোগ বিষয়ে আদালতে এ পর্যন্ত যতজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের সকলেই বলেছেন, মাওলানা সাঈদী আরবী এবং উর্দু ভাল জানায় তিনি পারেরহাট বাজারে পাক সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন এজাজের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষার কাজ করতেন। তিনিসহ অন্যান্য পিস কমিটির নেতারা পারের হাট বাজারে পাক আর্মি আসার পর অভ্যর্থনা জানান। মাওলানা সাঈদীর নামের সাথে প্রায় সবগুলো ঘটনায় মোসলেম মাওলানার নাম উল্লেখ করেছে
সাক্ষীরা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তারা বলেছে মাওলানা সাঈদী উর্দু ভাষায় পাক সেনাদের সাথে কথাবার্তা বলছেন এবং সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করতেন। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে এবং নেতৃত্বে পাক আর্মি সেখানে সকল অপকর্ম পরিচালনা করত।
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে মোসলেম মাওলানা উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং তিনিই পাক আর্মিদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু মোসলেম মাওলানার বিরুদ্ধে অভিযোগের স্থলে এখন বসিয়ে দেয়া হয়েছে মাওলানা সাঈদীর নাম।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আরেকটি আলোচিত ঘটনা ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলা। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে ইব্রাহীম কুট্টিকে পারেরহাট বাজারে পাক আর্মি মে মাসে হত্যা করেছে বলে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। সে মামলায় আসামী করা হয় মোসলেম মাওলানাকে। মাওলানা সাঈদী নন। তাছাড়া স্ত্রীর দায়র করা মামলার এজহারে ইব্রাহীমকে হত্যার ঘটনা স্থল উল্লেখ করা হয়েছে ইব্রাহিমের শ্বশুর বাড়ি নলবুনিয়া গ্রাম। পারেরাট বাজার নয়। ঘটনার তারিখ অক্টোবর মাস, মে মাস নয়। মমতাজ বেগমের মামলায় মাওলানা সাঈদীর নাম আসামীর তালিকায় না থাকা সত্ত্বেও এবং ঘটনাস্থল ও ঘটনার তারিখ সম্পূর্ণ ভিন্ন হবার পরও ইব্রাহীম হত্যার জন্য মাওলানা সাঈদীকে জড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাক্ষীরা।
মোসলেম মাওলানার সাথে যোগাযোগের জন্য মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন