মেহেদী হাসান ১২/৮/২০১৩
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় আজ আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার জন্য নির্দেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের। তবে আসামী পক্ষ সারা দিনেও যুক্তি উপস্থাপন শেষ করতে পারেনি এবং কাল মঙ্গলবার দুপুরের পূর্বে তাদের যুক্তি উপস্থান শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এরপর আর কোন অবস্থাতেই সময় বাড়ানো হবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
জীবিতকে মৃত বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ :
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ খন্ডন করে আজ তার পক্ষে যুক্তি উপস্থান করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুই নং অভিযোগ হল হাটহাজারিতে পাকিস্তান আর্মির সহায়তায় একই পরিবারের পাঁচজনকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন হত্যাকান্ডের সময় বেঁচে যাওয়া বলে দাবিদার পরিবারের সদস্য সুনির্মল চন্দ্র শর্মা ।
আহসানুল হক হেনা বলেন, সাক্ষী সুনির্মল চন্দ্র শর্মা বলেছেন দানু চাচা মারা গেছেন। কিন্তু বাস্তবে দানু চাচা জীবিত। তার জীবিত থাকার বিষয়ে এফিডেভিট জমা দিয়েছি আমরা। তার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়েছি। আমরা তাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আনতেও চেয়েছিলাম এবং তালিকায় তার নামও জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচ জন নির্ধারন করে দেয়ায় তাকে আমরা হাজির করিনি। জীবিত একজন লোককে সাক্ষী মৃত বলে চালিয়ে দিলেন। সুতরাং এই সাক্ষীকে কতটা বিশ্বাস করা যায় তা আপনারা বিবেচনা করবেন। কোর্টে দানু চাচার এফিডেভিট পড়ে শোনানো হয় আসামী পক্ষ থেকে।
আহসানুল হক হেনা বলেন, তাছাড়া সাক্ষী সুনির্মল শর্মা সরকারী সুবিধাপ্রাপ্ত একজন লোক। তিনি এ সরকারের আমলে এপিপি হয়েছেন। চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনে তার কোন চেম্বারও নেই।
আহসানুল হক হেনা বলেন, যে দানু চাচা তাদের টুপি পড়াল, কলমা পড়াল সেই দানু চাচাকে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করেনি। সুনির্মল বলল তাদের পরিবারের হত্যাকান্ড বিষয়ে তার ভাই বিমল সব জানে। কিন্তু বিমলকেও তারা সাক্ষী হিসেবে হাজির করেনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনা বিষয়ে আরেক সাক্ষী সুবল বলেছেন, ঘটনার আগে সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। দানু চাচাও বলেছে ঐ ঘটনার আগে প্রানের ভয়ে সবাই ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। এ দুজনের কথার মিল রয়েছে। আমরাও বলেছি ঘটনার দিন সুনির্মলরা কেউ সেখানে ছিলনা।
সুনির্মল বলেছেন, ঘটনার এক ঘন্টা পরে বিমল ঘটনাস্থলে গিয়েছে। সুবলও বলেছে ঘটনার এক ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছে। কিন্তু সবুল বিমলকে দেখেনি সেখানে। তাদের কারোর সাথে কারোর কোন সাক্ষাৎ হলনা। সুনির্মল ও বিমল তাহলে কোথায় ছিল?
বিমলকে তদন্ত কর্মকর্তা কেন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি? এটা রহস্যজনক।
তিনি বলেন, নূতন চন্দ্র সিংহ’র ছেলে প্রফুল্ল বাবুর অধীনস্ত বর্তমান কুন্ডেশ্বরীতে বসে এসব মিথ্যা গল্প রচনা করা হয়েছে।
সুনির্মল দাবি করেছেন লাইনে দাড়িয়ে ব্রাশ ফায়ার করার পূর্ব মুহুর্তে তাদের ডস দিয়ে তিনি কাত হয়ে পড়ে গেলেন এবং এভাবে তিনি বেঁচে গেলেন। অটোমেটিক ব্রাশ ফায়ারের হাত থেকে তার এই বেঁচে যাওয়ার কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? আসলে সে তখন ওখানে ছিলইনা।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আট নং অভিযোগ হল আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর এবং তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরন করে হত্যা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন শহীদ শেখ আলমগীরের স্ত্রী উম্মে হাবিবা। এ ঘটনা বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে আহসানুল হক হেনা বলেন, উম্মে হাবিবা বলেছেন অপহরনের সময় তার স্বামী যে গাড়িতে ছিলেন সেটি ছিল টয়োটা স্টারলেট। অথচ টয়োটা স্টারলেট গাড়ি উৎপাদন শুরু হয়েছে ১৯৭৩ সালে। তাহলে ১৯৭১ সালে তারা এ গাড়ি পেল কোথায়? উম্মে হাবিবা তার স্বামীর নাম লিখেছেন শহীদ শেখ আলমগীর। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার দেবর শেখ মোর্শেদকে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তার স্বামী শেখ মোর্শেদ। অথচ তিনি স্বামীর নাম লিখেছেন শহীদ শেখ আলমগীর। শেখ আলমগীর ১৮৭১ সালে তার স্বামী ছিলেন। উম্মে হাবিবা পরবর্তীতে তার বিয়ের বিষয়টি পুরোপুরি গোপন করে গেছেন।
উম্মে হাবিবার স্বামীরা আট ভাই। উম্মে হাবিবা জানিয়েছেন অপহরনের সময় গাড়িতে তাদের সাথে তার ভাইয়ের ছেলে, চাচিসহ আরো অনেকে ছিল। তার ভাইয়ের ছেলে জীবিত, চাচী জীবিত। তাদেরসহ অন্য কোন ভাইকে, পরিবারের অন্য কোন সদস্যকে সাক্ষী করা হলনা। উম্মে হাবিবা যে সাক্ষ্য এখানে দিয়েছেন তার সমর্থনে পরিবারের অন্য কাউকে আনা হয়নি। তিনি যা বলেছেন তা পুরোটাই আসলে একটা বানানো গল্প।
তিনি বলেছেন চেকপোস্টে গিয়ে তাদের গাড়িটি গিয়ে অচল হয়ে যায়। এরপর আর্মির একটি গাড়ি তাদের গাড়িটিকে পেছন দিয়ে ধাক্কা দিলে তা আবার সচল হয়ে যায়। এরপর অপর কিছু আর্মি পেছন থেকে তাদের গাড়িটি থামাতে বলে। আমার প্রশ্ন হল গাড়িতে যে তার শশুর শেখ মোজাফফর এবং স্বামী শেখ আলমগীর আছে তা আর্মি পেছন থেকে দেখল কেমন করে? অচল গাড়ি ধাক্কা দিলে যদি সচল হয়ে যায় তাহলে দুনিয়াতে আর কোন মেকানিক দরকার ছিলনা।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আনিসুজ্জামান বলেছেন, কুন্ডেশ্বরী ছাড়াও আশপাশের মুসলিম এবং বড়–য়া পাড়ায়ও গনহত্যা হয়েছে। কিন্তু তার কোন একটি ঘটনা বিষয়েও তদন্ত কর্মকর্তা কোন তদন্ত করলেননা কেন? আর এত বিশাল এলাকা নিয়ে এতবড় গণহত্যা করা হল আর আসামী করা হল শুধুমাত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে? অন্য আর কোন লোক এর সাথে জড়িত ছিলনা। তারা কোথায়? তাদের কাউকে কেন আসামী করা হলনা?
তিনি বলেন, কোতয়ালী থানায় ১৯৭২ সালে ২৪টি মামলা হয়েছিল। তাতে অনেক পাকিস্তান আর্মি অফিসার আসামী ছিল। ২৪টি মামলার একটিতেও ঘটনাস্থল হিসেবে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাড়ি গুড়স হিলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী সিরু বাঙ্গালী প্রসঙ্গে আহসানুল হক হেনা বলেন, সাক্ষী বলেছেন দুটি চাকমা মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তান আর্মি তাকে গ্রেফতার করেছিল। সুতরাং তার চরিত্র সম্পর্কে এখান থেকে ধারনা পাওয়া যায়। তাছাড়া সাক্ষী বলেছেন, স্বাধীনতার পর ভারতীয় আর্মিও তাকে গ্রেফতার করেছিল।
সিরু বাঙ্গালী স্বীকার করেছেন তিনি কখনো কুন্ডেশ্বরী, সুলতানপুর জগৎমল্লপাড়া যাননি। তিনি এখানে এসে যত গল্প বলেছেন তার সবই ক্যাপটেন করিমের কাছ থেকে শোনা বলে জানিয়েছেন। ক্যাপ্টেন করিম মৃত। সিরু বাঙ্গালী অনেককে হত্যার জন্য অনেকবার এম্বুশ করেছেন কিন্তু একবারও সফল হননি। প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হয়েছেন।
আহসানুল হক হেনা বলেন, পাঁচ নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষী অনিল বরন ১৯৭২ সালে মামলা করেছিলেন। কিন্তু তাতে ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কোন মুল আসামী ছিলনা। এ মামলায় আরো যে ১৪ জন আসামী ছিল তাদের কেউ আজ ট্রাইব্যুনালে নেই কেন?
সাত নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষী পরিতোষ পাল বলেছেন, তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। অথচ তিনি ৭১ সালের আগে কখনো সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেখেননি। তাহলে তিনি ঘটনার সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিনল কি করে?
জোছনা বালার ডায়েরি :
জোছনা বালা নামে রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী মারা যাওয়ায় তার জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। সে বিষয়ে আসামী পক্ষ জোছনা বালার একটি ডায়েরি জমা দিয়েছে ট্রাইব্যুনালে এবং আজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় তা পড়ে শোনানো হয়। ১৬/৪/২০১২ চট্টগ্রাম চিফ জুড়িশিয়াল মেজিস্ট্রেট এর কাছে তিনি ডায়েরি করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি মারা যান। তিনি তার ডায়েরিতে বলেছেন,
ল্লখিত দরখাস্তকারী তার পুত্রের মাধ্যমে জানতে পারে যে, ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকায় কে বা কারা মামলা করেছে এই ব্যাপারে মামলায় স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য অত্র দরখাস্তকারীর নামেও লেখা হয়েছে বলে জানতে পারেন। বেশ কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে কিছু লোক এসে তাকে সালাউদ্দিন চৌধুরীর ব্যাপারে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞোস করে। ঢাকা থেকে আসার লোকগুলো কি কি কথা খাতায় লিখে কিন্তু কি লিখেছে তা আমাকে বলেনি এবং পড়েও শুনায়নি পরে ঐ লোকজন বলে যে, তারা যা যা বলে সে মোতাবেক অত্র দরখাস্তকারীকে ঢাকায় গিয়ে বলতে হবে বলে জানায় এবং ঢাকায় গিয়ে কি বলতে হবে তাহা যথাসময়ে অত্র দরখাস্তকারীকে জানানো হবে বলে জানায়। ঐদিন ঢাকা থেকে আসা লোকদেরকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বা তার পরিবারের বরুদ্ধে অত্র দরখাস্তকারী কোন ধরনের কোন কথা বলেনি তবুও পরে জানতে পারে যে, তাকে দিয়ে বলানো হবে যে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ঘরবাড়ীতে এসে লোকজনদের বের করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তায় অত্র দরখাস্তকারীর স্বামীসহ অনেক লোককে মেরে ফেলে। আরো বলানো হবে যে, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ঘর বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ইত্যাদি প্রকৃতপক্ষে সালাহ উদ্দিন কাদোর চৌধুরী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কাউকে হত্যা করা বা ঘরবাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া বা কাউকে গুলি করা এসব বিষয় সম্পর্কে অত্র দরখাস্তকারী আদৌ কোন ভাবে অবগত নহে। এই ব্যাপারে স্থানীয় ভাবে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের মিথ্যা স্বাক্ষী দেব না বলে জানানোর কারনে কিছু ব্যক্তি অত্র দরখাস্তকারীর ছেলের নিউ মার্কেটে অবস্থিত দোকানে এসে এবং সর্ব শেষ গত ১০/০৪/২০১২ইং তারিখ গ্রামের বাড়ীতে এসে বিভিন্ন ধরনের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। অজ্ঞাত পরিচয় লোকজন হুমকী দিয়ে বলতেছে যে, তাদের কথা অনুযায়ী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকায় গিয়ে স্বাক্ষ্য প্রদান না করিলে তাকে এবং তার ছেলেকে চরম মূল্য দিতে হবে, ঘর বাড়ী লুট করা হবে এবং নাতি-নাতনীদেরকে এবং অপহরণ করা হবে। বর্তমানে আমি অজ্ঞাত পরিচয়ে সন্ত্রাসীদের হুমকীতে মারাত্মক ভাবে ভীত সন্তস্ত হইয়া পড়িয়াছি। আমি আশংঙ্কা করিতেছি যে, ঢাকায় গিয়ে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদান না করিলে আমি ও আমার পরিবারের চরম সর্বনাশ হইবে। অজ্ঞাত পরিচয় লোকেরা আরো বলে যে, ঢাকায় গিয়ে তাদের শিখানো মতে স্বাক্ষ্য দিলে অনেক লাভ হবে বিষয়টি অত্র ডায়রীর মাধ্যমে আপনাকে অবগত করিলাম।
অতএব, বিনীত নিবেদন উপরোক্ত বিষয়খানা ন্যায় বিচারের স্বার্থে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪ ধারা অনুসারে সাধারন ডায়রী আকারে লিপিবদ্ধ করতঃ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আপনার বিহিত মর্জি হয়।
তারিখ ঃ ১৬/০৪/২০১২
বিশ্বেশ্বরের ডায়েরি : বিশ্বেশ্বরও ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী। তবে তিনিও রাষ্ট্রপক্ষে হাজির হননি। তিনিও একটি ডায়েরি করেছেন চট্টগ্রাম চিফ জুড়িশিয়াল মেজিস্ট্রেট বরাবর এবং তাতে তিনিও একই অভিযোগ করেছেন। সেটিও আসামী পক্ষ জমা দিয়েছে ট্রাইব্যুনালে। ডায়েরিটি নিম্নরূপ।
দরখাস্তকারীর নিকট বেশ কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে কিছু লোক আসে তাহারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়ে অত্র দরখাস্তকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে বিভিন্ন খবরা-খবর জানার চেষ্টা করে। ঐ সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কিছু বর্বর কর্মকান্ডের কথা ঢাকা থেকে আসা লোকজনদেরকে বলি। ঢাকা থেকে আসা লোকজনেরা আমার কিছু কথা খাতায় লিখে নেয় কিন্তু কি লিখেছে আমি জানি না এবং আমাকে তারা বলেও নাই। পরবর্তীতে স্থানীয় ভাবে জানতে পারি যে, ঢাকায় সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকার মামলা করেছে এজন্য ঢাকা থেকে লোকজন এসেছিল। ঢাকায় থেকে আসা লোকদেরকে আমি সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোন হত্যাকান্ড, লুন্ঠন বা কোন অবৈধ কাজের সাথে জড়িত ছিল এ ধরনের কোন কথা অত্র দরখাস্তকারী বলেনি কারণ অত্র দরখাস্তাকরী যতদুর জানে এবং দেখেছে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পরিবার স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে এবং অনেককে আশ্রয় দিয়েছে। অত্র দরখাস্তকারী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে ঢাকায় গিয়ে স্বাক্ষ্য দিতে পারব না এটা প্রকাশ করায় কিছু অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসী অত্র দরখাস্তকারীকে বিভিন্ন সময় অনুসরণ করতঃ নানা ভাবে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে ঢাকায় গিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এলাকার লোকজনকে হত্যা করিয়াছে, ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে ইত্যাদি বলে স্বাক্ষী দিতে হবে বলে হুমকী দিতেছে। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা আরো হুমকী দিচ্ছে যে, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকায় গিয়ে তাদের শিখানো মতে সাক্ষ্য না দিলে অত্র দরখাস্তকারী ও তার পরিবারকে চরম পরিনতি এমনকি ছেলে মেয়েদেরকে অপহরন করে হত্যা করা হবে।
৪।উল্লেখিত দরখাস্তকারী ভীত সন্তস্ত হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করিতেছে এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও ফজলুল কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন আদালতে তাহার পক্ষে কোন ধরনের সাক্ষ্য প্রদান, বক্তব্য প্রদান সম্ভব নয় এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পাকিস্তান আমলে স্থানীয় লোকদেরকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করিয়াছে বিধায় প্রতিপক্ষগণের এসব ভীতিমূলক অবৈধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে অত্র ডায়েরী আকারে বিষয়টি আপনাকে অবগত করিলাম।
অতএব, বিনীত নিবেদন উপরোক্ত বিষয়খানা ন্যায় বিচারের স্বার্থে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪ ধারা অনুসারে সাধারন ডায়রী আকারে লিপিবদ্ধ করতঃ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আপনার বিহিত মর্জি হয়।
আহসানুল হক হেনাকে যুক্তি উপস্থানে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আল ফেসানী প্রমুখ।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় আজ আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার জন্য নির্দেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের। তবে আসামী পক্ষ সারা দিনেও যুক্তি উপস্থাপন শেষ করতে পারেনি এবং কাল মঙ্গলবার দুপুরের পূর্বে তাদের যুক্তি উপস্থান শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এরপর আর কোন অবস্থাতেই সময় বাড়ানো হবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
জীবিতকে মৃত বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ :
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ খন্ডন করে আজ তার পক্ষে যুক্তি উপস্থান করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুই নং অভিযোগ হল হাটহাজারিতে পাকিস্তান আর্মির সহায়তায় একই পরিবারের পাঁচজনকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন হত্যাকান্ডের সময় বেঁচে যাওয়া বলে দাবিদার পরিবারের সদস্য সুনির্মল চন্দ্র শর্মা ।
আহসানুল হক হেনা বলেন, সাক্ষী সুনির্মল চন্দ্র শর্মা বলেছেন দানু চাচা মারা গেছেন। কিন্তু বাস্তবে দানু চাচা জীবিত। তার জীবিত থাকার বিষয়ে এফিডেভিট জমা দিয়েছি আমরা। তার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়েছি। আমরা তাকে আসামী পক্ষের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আনতেও চেয়েছিলাম এবং তালিকায় তার নামও জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচ জন নির্ধারন করে দেয়ায় তাকে আমরা হাজির করিনি। জীবিত একজন লোককে সাক্ষী মৃত বলে চালিয়ে দিলেন। সুতরাং এই সাক্ষীকে কতটা বিশ্বাস করা যায় তা আপনারা বিবেচনা করবেন। কোর্টে দানু চাচার এফিডেভিট পড়ে শোনানো হয় আসামী পক্ষ থেকে।
আহসানুল হক হেনা বলেন, তাছাড়া সাক্ষী সুনির্মল শর্মা সরকারী সুবিধাপ্রাপ্ত একজন লোক। তিনি এ সরকারের আমলে এপিপি হয়েছেন। চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনে তার কোন চেম্বারও নেই।
আহসানুল হক হেনা বলেন, যে দানু চাচা তাদের টুপি পড়াল, কলমা পড়াল সেই দানু চাচাকে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করেনি। সুনির্মল বলল তাদের পরিবারের হত্যাকান্ড বিষয়ে তার ভাই বিমল সব জানে। কিন্তু বিমলকেও তারা সাক্ষী হিসেবে হাজির করেনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনা বিষয়ে আরেক সাক্ষী সুবল বলেছেন, ঘটনার আগে সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। দানু চাচাও বলেছে ঐ ঘটনার আগে প্রানের ভয়ে সবাই ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। এ দুজনের কথার মিল রয়েছে। আমরাও বলেছি ঘটনার দিন সুনির্মলরা কেউ সেখানে ছিলনা।
সুনির্মল বলেছেন, ঘটনার এক ঘন্টা পরে বিমল ঘটনাস্থলে গিয়েছে। সুবলও বলেছে ঘটনার এক ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছে। কিন্তু সবুল বিমলকে দেখেনি সেখানে। তাদের কারোর সাথে কারোর কোন সাক্ষাৎ হলনা। সুনির্মল ও বিমল তাহলে কোথায় ছিল?
বিমলকে তদন্ত কর্মকর্তা কেন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি? এটা রহস্যজনক।
তিনি বলেন, নূতন চন্দ্র সিংহ’র ছেলে প্রফুল্ল বাবুর অধীনস্ত বর্তমান কুন্ডেশ্বরীতে বসে এসব মিথ্যা গল্প রচনা করা হয়েছে।
সুনির্মল দাবি করেছেন লাইনে দাড়িয়ে ব্রাশ ফায়ার করার পূর্ব মুহুর্তে তাদের ডস দিয়ে তিনি কাত হয়ে পড়ে গেলেন এবং এভাবে তিনি বেঁচে গেলেন। অটোমেটিক ব্রাশ ফায়ারের হাত থেকে তার এই বেঁচে যাওয়ার কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? আসলে সে তখন ওখানে ছিলইনা।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আট নং অভিযোগ হল আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর এবং তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরন করে হত্যা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন শহীদ শেখ আলমগীরের স্ত্রী উম্মে হাবিবা। এ ঘটনা বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে আহসানুল হক হেনা বলেন, উম্মে হাবিবা বলেছেন অপহরনের সময় তার স্বামী যে গাড়িতে ছিলেন সেটি ছিল টয়োটা স্টারলেট। অথচ টয়োটা স্টারলেট গাড়ি উৎপাদন শুরু হয়েছে ১৯৭৩ সালে। তাহলে ১৯৭১ সালে তারা এ গাড়ি পেল কোথায়? উম্মে হাবিবা তার স্বামীর নাম লিখেছেন শহীদ শেখ আলমগীর। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার দেবর শেখ মোর্শেদকে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তার স্বামী শেখ মোর্শেদ। অথচ তিনি স্বামীর নাম লিখেছেন শহীদ শেখ আলমগীর। শেখ আলমগীর ১৮৭১ সালে তার স্বামী ছিলেন। উম্মে হাবিবা পরবর্তীতে তার বিয়ের বিষয়টি পুরোপুরি গোপন করে গেছেন।
উম্মে হাবিবার স্বামীরা আট ভাই। উম্মে হাবিবা জানিয়েছেন অপহরনের সময় গাড়িতে তাদের সাথে তার ভাইয়ের ছেলে, চাচিসহ আরো অনেকে ছিল। তার ভাইয়ের ছেলে জীবিত, চাচী জীবিত। তাদেরসহ অন্য কোন ভাইকে, পরিবারের অন্য কোন সদস্যকে সাক্ষী করা হলনা। উম্মে হাবিবা যে সাক্ষ্য এখানে দিয়েছেন তার সমর্থনে পরিবারের অন্য কাউকে আনা হয়নি। তিনি যা বলেছেন তা পুরোটাই আসলে একটা বানানো গল্প।
তিনি বলেছেন চেকপোস্টে গিয়ে তাদের গাড়িটি গিয়ে অচল হয়ে যায়। এরপর আর্মির একটি গাড়ি তাদের গাড়িটিকে পেছন দিয়ে ধাক্কা দিলে তা আবার সচল হয়ে যায়। এরপর অপর কিছু আর্মি পেছন থেকে তাদের গাড়িটি থামাতে বলে। আমার প্রশ্ন হল গাড়িতে যে তার শশুর শেখ মোজাফফর এবং স্বামী শেখ আলমগীর আছে তা আর্মি পেছন থেকে দেখল কেমন করে? অচল গাড়ি ধাক্কা দিলে যদি সচল হয়ে যায় তাহলে দুনিয়াতে আর কোন মেকানিক দরকার ছিলনা।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আনিসুজ্জামান বলেছেন, কুন্ডেশ্বরী ছাড়াও আশপাশের মুসলিম এবং বড়–য়া পাড়ায়ও গনহত্যা হয়েছে। কিন্তু তার কোন একটি ঘটনা বিষয়েও তদন্ত কর্মকর্তা কোন তদন্ত করলেননা কেন? আর এত বিশাল এলাকা নিয়ে এতবড় গণহত্যা করা হল আর আসামী করা হল শুধুমাত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে? অন্য আর কোন লোক এর সাথে জড়িত ছিলনা। তারা কোথায়? তাদের কাউকে কেন আসামী করা হলনা?
তিনি বলেন, কোতয়ালী থানায় ১৯৭২ সালে ২৪টি মামলা হয়েছিল। তাতে অনেক পাকিস্তান আর্মি অফিসার আসামী ছিল। ২৪টি মামলার একটিতেও ঘটনাস্থল হিসেবে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাড়ি গুড়স হিলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী সিরু বাঙ্গালী প্রসঙ্গে আহসানুল হক হেনা বলেন, সাক্ষী বলেছেন দুটি চাকমা মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তান আর্মি তাকে গ্রেফতার করেছিল। সুতরাং তার চরিত্র সম্পর্কে এখান থেকে ধারনা পাওয়া যায়। তাছাড়া সাক্ষী বলেছেন, স্বাধীনতার পর ভারতীয় আর্মিও তাকে গ্রেফতার করেছিল।
সিরু বাঙ্গালী স্বীকার করেছেন তিনি কখনো কুন্ডেশ্বরী, সুলতানপুর জগৎমল্লপাড়া যাননি। তিনি এখানে এসে যত গল্প বলেছেন তার সবই ক্যাপটেন করিমের কাছ থেকে শোনা বলে জানিয়েছেন। ক্যাপ্টেন করিম মৃত। সিরু বাঙ্গালী অনেককে হত্যার জন্য অনেকবার এম্বুশ করেছেন কিন্তু একবারও সফল হননি। প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হয়েছেন।
আহসানুল হক হেনা বলেন, পাঁচ নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষী অনিল বরন ১৯৭২ সালে মামলা করেছিলেন। কিন্তু তাতে ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কোন মুল আসামী ছিলনা। এ মামলায় আরো যে ১৪ জন আসামী ছিল তাদের কেউ আজ ট্রাইব্যুনালে নেই কেন?
সাত নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষী পরিতোষ পাল বলেছেন, তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। অথচ তিনি ৭১ সালের আগে কখনো সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেখেননি। তাহলে তিনি ঘটনার সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিনল কি করে?
জোছনা বালার ডায়েরি :
জোছনা বালা নামে রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী মারা যাওয়ায় তার জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। সে বিষয়ে আসামী পক্ষ জোছনা বালার একটি ডায়েরি জমা দিয়েছে ট্রাইব্যুনালে এবং আজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় তা পড়ে শোনানো হয়। ১৬/৪/২০১২ চট্টগ্রাম চিফ জুড়িশিয়াল মেজিস্ট্রেট এর কাছে তিনি ডায়েরি করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি মারা যান। তিনি তার ডায়েরিতে বলেছেন,
ল্লখিত দরখাস্তকারী তার পুত্রের মাধ্যমে জানতে পারে যে, ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকায় কে বা কারা মামলা করেছে এই ব্যাপারে মামলায় স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য অত্র দরখাস্তকারীর নামেও লেখা হয়েছে বলে জানতে পারেন। বেশ কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে কিছু লোক এসে তাকে সালাউদ্দিন চৌধুরীর ব্যাপারে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞোস করে। ঢাকা থেকে আসার লোকগুলো কি কি কথা খাতায় লিখে কিন্তু কি লিখেছে তা আমাকে বলেনি এবং পড়েও শুনায়নি পরে ঐ লোকজন বলে যে, তারা যা যা বলে সে মোতাবেক অত্র দরখাস্তকারীকে ঢাকায় গিয়ে বলতে হবে বলে জানায় এবং ঢাকায় গিয়ে কি বলতে হবে তাহা যথাসময়ে অত্র দরখাস্তকারীকে জানানো হবে বলে জানায়। ঐদিন ঢাকা থেকে আসা লোকদেরকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বা তার পরিবারের বরুদ্ধে অত্র দরখাস্তকারী কোন ধরনের কোন কথা বলেনি তবুও পরে জানতে পারে যে, তাকে দিয়ে বলানো হবে যে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ঘরবাড়ীতে এসে লোকজনদের বের করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তায় অত্র দরখাস্তকারীর স্বামীসহ অনেক লোককে মেরে ফেলে। আরো বলানো হবে যে, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ঘর বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ইত্যাদি প্রকৃতপক্ষে সালাহ উদ্দিন কাদোর চৌধুরী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কাউকে হত্যা করা বা ঘরবাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া বা কাউকে গুলি করা এসব বিষয় সম্পর্কে অত্র দরখাস্তকারী আদৌ কোন ভাবে অবগত নহে। এই ব্যাপারে স্থানীয় ভাবে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের মিথ্যা স্বাক্ষী দেব না বলে জানানোর কারনে কিছু ব্যক্তি অত্র দরখাস্তকারীর ছেলের নিউ মার্কেটে অবস্থিত দোকানে এসে এবং সর্ব শেষ গত ১০/০৪/২০১২ইং তারিখ গ্রামের বাড়ীতে এসে বিভিন্ন ধরনের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। অজ্ঞাত পরিচয় লোকজন হুমকী দিয়ে বলতেছে যে, তাদের কথা অনুযায়ী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকায় গিয়ে স্বাক্ষ্য প্রদান না করিলে তাকে এবং তার ছেলেকে চরম মূল্য দিতে হবে, ঘর বাড়ী লুট করা হবে এবং নাতি-নাতনীদেরকে এবং অপহরণ করা হবে। বর্তমানে আমি অজ্ঞাত পরিচয়ে সন্ত্রাসীদের হুমকীতে মারাত্মক ভাবে ভীত সন্তস্ত হইয়া পড়িয়াছি। আমি আশংঙ্কা করিতেছি যে, ঢাকায় গিয়ে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদান না করিলে আমি ও আমার পরিবারের চরম সর্বনাশ হইবে। অজ্ঞাত পরিচয় লোকেরা আরো বলে যে, ঢাকায় গিয়ে তাদের শিখানো মতে স্বাক্ষ্য দিলে অনেক লাভ হবে বিষয়টি অত্র ডায়রীর মাধ্যমে আপনাকে অবগত করিলাম।
অতএব, বিনীত নিবেদন উপরোক্ত বিষয়খানা ন্যায় বিচারের স্বার্থে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪ ধারা অনুসারে সাধারন ডায়রী আকারে লিপিবদ্ধ করতঃ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আপনার বিহিত মর্জি হয়।
তারিখ ঃ ১৬/০৪/২০১২
বিশ্বেশ্বরের ডায়েরি : বিশ্বেশ্বরও ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী। তবে তিনিও রাষ্ট্রপক্ষে হাজির হননি। তিনিও একটি ডায়েরি করেছেন চট্টগ্রাম চিফ জুড়িশিয়াল মেজিস্ট্রেট বরাবর এবং তাতে তিনিও একই অভিযোগ করেছেন। সেটিও আসামী পক্ষ জমা দিয়েছে ট্রাইব্যুনালে। ডায়েরিটি নিম্নরূপ।
দরখাস্তকারীর নিকট বেশ কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে কিছু লোক আসে তাহারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়ে অত্র দরখাস্তকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে বিভিন্ন খবরা-খবর জানার চেষ্টা করে। ঐ সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কিছু বর্বর কর্মকান্ডের কথা ঢাকা থেকে আসা লোকজনদেরকে বলি। ঢাকা থেকে আসা লোকজনেরা আমার কিছু কথা খাতায় লিখে নেয় কিন্তু কি লিখেছে আমি জানি না এবং আমাকে তারা বলেও নাই। পরবর্তীতে স্থানীয় ভাবে জানতে পারি যে, ঢাকায় সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকার মামলা করেছে এজন্য ঢাকা থেকে লোকজন এসেছিল। ঢাকায় থেকে আসা লোকদেরকে আমি সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোন হত্যাকান্ড, লুন্ঠন বা কোন অবৈধ কাজের সাথে জড়িত ছিল এ ধরনের কোন কথা অত্র দরখাস্তকারী বলেনি কারণ অত্র দরখাস্তাকরী যতদুর জানে এবং দেখেছে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পরিবার স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে এবং অনেককে আশ্রয় দিয়েছে। অত্র দরখাস্তকারী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে ঢাকায় গিয়ে স্বাক্ষ্য দিতে পারব না এটা প্রকাশ করায় কিছু অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসী অত্র দরখাস্তকারীকে বিভিন্ন সময় অনুসরণ করতঃ নানা ভাবে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে ঢাকায় গিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এলাকার লোকজনকে হত্যা করিয়াছে, ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে ইত্যাদি বলে স্বাক্ষী দিতে হবে বলে হুমকী দিতেছে। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা আরো হুমকী দিচ্ছে যে, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকায় গিয়ে তাদের শিখানো মতে সাক্ষ্য না দিলে অত্র দরখাস্তকারী ও তার পরিবারকে চরম পরিনতি এমনকি ছেলে মেয়েদেরকে অপহরন করে হত্যা করা হবে।
৪।উল্লেখিত দরখাস্তকারী ভীত সন্তস্ত হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করিতেছে এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও ফজলুল কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন আদালতে তাহার পক্ষে কোন ধরনের সাক্ষ্য প্রদান, বক্তব্য প্রদান সম্ভব নয় এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পাকিস্তান আমলে স্থানীয় লোকদেরকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করিয়াছে বিধায় প্রতিপক্ষগণের এসব ভীতিমূলক অবৈধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে অত্র ডায়েরী আকারে বিষয়টি আপনাকে অবগত করিলাম।
অতএব, বিনীত নিবেদন উপরোক্ত বিষয়খানা ন্যায় বিচারের স্বার্থে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪ ধারা অনুসারে সাধারন ডায়রী আকারে লিপিবদ্ধ করতঃ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আপনার বিহিত মর্জি হয়।
আহসানুল হক হেনাকে যুক্তি উপস্থানে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আল ফেসানী প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন