মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৭ তম সাক্ষী জামাল উদ্দিনের জেরা আজ শেষ হয়েছে। গতকাল তার জবানবন্দী শেষে জেরা শুরু করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
আজকের জেরা : ২৬/০৮/২০১৩
জেরায় আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর বলেন তা নিম্নরূপ:
ধূলাউড়িতে যেদিন যেই বাড়িতে থাকতাম সেই দিন ঐ বাড়িটি ক্যাম্প হিসাবে বিবেচিত হতো। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের পুরো সময়টাই ধূলাউড়িতে ছিলাম। আমার যতদূর মনে পড়ে আবুল হোসেন ফকির নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল এবং তিনিই ঐ এলাকার মেম্বার ছিলেন। নভেম্বর মাসে সর্বপ্রথম ধূলাউড়িতে কার বাড়িতে ছিলাম তাহা দীর্ঘদিন আগের ঘটনা হওয়ায় আমার স্মরন নাই। নভেম্বর মাসে যাদের বাড়িতে ছিলাম তাদের মধ্যে একজনের নাম আমার মনে আছে তিনি হলেন বিশ্বাস বাড়ির খন্দকার নূরুল ইসলাম, বর্তমানে তিনি মৃত। আমি ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর ধূলাউড়িতে ছিলাম না, ইছামতি নদীর ওপারে রামকান্তপুরে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই ঐদিন ভোর রাত্রে ধূলাউড়ি গ্রামে এসেছিলাম। ডা: আব্দুল আউয়ালের নাম আমি শুনেছি, তার বাড়ি ধূলাউড়ি গ্রামে স্কুলের পাশে। উনার বাড়িতেও আমরা গিয়েছিলাম, উনাকে গিয়ে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই এবং তার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের গ্রুপে ছিলেন সে আমাদের মধ্যে বয়সে ছোট ছিলেন। স্বাধীনতার অনেক পরে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। বিজয় অর্জনের পর পরই ডা: আব্দুল আউয়ালের হত্যাকান্ডের বিষয়ে কোন মামলা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। মাস্টার আয়নাল হক কোন মুক্তিযোদ্ধা নয়, তার বাড়ি বাউশগাড়ি। তার বাড়িতে আমাদের যাতায়াত ছিল। ঐ বাড়ির তার চাচাতো ভাই আমান উল্লাহকে আমি চিনি সে একজন কুখ্যাত রাজাকার, সে এখনো জীবিত আছে এবং বর্তমানে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। ধূলাউড়ি ঘটনার জন্য বিশেষত ডা: আউয়ালকে হত্যা করার দায়ে আমান উল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার জানা মতে আরেকজন রাজাকার হাবিবুর রহমান জীবিত আছে, মাজেদ মারা গেছে এবং অন্য রাজাকারদের নাম অনেকদিন আগের ঘটনা হওয়ায় আমার স্মরন নাই। ধূলাউড়ির ঘটনা যারা স্বচক্ষে দেখেছে তাদের অনেকে এখনো জীবিত আছে। স্থানীয় যে সমস্ত রাজাকার এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের অনেকে নাম প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে বলেছে। স্থানীয় রাজাকার যারা ধূলাউড়ি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল তাদেরকে বিচারের জন্য সোপর্দ করি নাই, কারণ এ ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্ব আমার ছিল না। আমরা স্বাধীনতার পর পরই আমাদের ক্যাম্প থেকে স্থানীয় রাজাকারদের ধরতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ধরতে পারিনি। কারণ তারা পলাতক ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আমার ইউনিয়নে কোন রাজাকার ধরা পড়েছিল কিনা তাহা আমার মনে নাই। সাথিয়া থানাধীন নন্দনপুরের লুৎফর রহমান রাজাকারকে আমি চিনি, তবে স্বাধীনতার পর তাকে আটক করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই।
যে সমস্ত রাজাকাররা ব্রীজ কালভার্ট পাহারা দিত, ঐ এলাকার লোক কিনা তাহা আমার জানা নাই। ভিটাপাড়া আমার এলাকা থেকে আনুমানিক ১০/১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোলাপাড়িয়া বাকচাদপুরও আমার বাড়ি থেকে ১০/১১ কিলোমিটার দূরে তবে ভিন্ন দিকে। এই দুই এলাকার স্বাধীনতার পূর্ব থেকে আমার কম বেশি যাতায়াত ছিল। ঐ দুই এলাকা থেকে যে ০৯ জন রাজাকারকে ধরা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুই জন রাজাকার জীবিত আছে, তাদের মধ্যে একজন মকবুল এবং আরেকজন জামাল। সম্ভবত ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে সোলাপাড়িয়ার বাকচাদপুর ব্রীজ অপারেশন করতে এই দুইজন রাজাকার সহ মোট চারজন আমাদের নিকট আত্মসমর্পন করেছিল। ভিটাপাড়া ব্রীজ অপারেশনে বর্ষাকালে গিয়েছিলাম। তবে মাস আমি বলতে পারব না। মূলত আমরা ভিটাপাড়া ব্রীজ অপারেশনে যাই নাই আমাদেরকে ব্রীজের নিচ দিয়ে যাওয়ায় বাধা দিলে আমরা কৌশলে তিন/চার জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যাই। ধৃত রাজাকাররা আমাদের কাকুতি মিনতি করে বলে যে, তারা পেটের দায়ে নিজামী সাহেব ও পিস কমিটির লোকদের নির্দেশে রাজাকারে নাম লিখেছে, তাদের অস্ত্র রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেই, তাদের নাম এ মূহুর্তে আমার মনে নাই এবং ঐ অস্ত্র নতুন তিন/চার জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রদান করি। এই নতুন তিন/চার জন মুক্তিযোদ্ধা ভিটাপাড়ার নয়, সাথিয়া এলাকার ছিল।
২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে করমজা গ্রাম থেকে হাড়গোড় উদ্ধারের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। যে সমস্ত লোক ঐ ঘটনা সম্পর্কে আমাদেরকে জানায় তাদের মধ্যে চতুর আলী চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা আবু সামা এবং আরো অনেকেই ছিলেন। এই চতুর আলী চেয়ারম্যান ঐ এলাকার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদা বক্সের ভাই কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি ঐ সময় সাথিয়া উপজেলা পরিষদ বা সাথিয়া উন্নয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলাম না। আমি ২০০৩ সালে সাথিয়া উপজেলার শান্তি শৃংখলা কমিটির সদস্য ছিলাম কিনা তাহা আমার মনে নাই, তবে আমি ঐ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। করমজা গ্রাম আমার ইউনিয়নের অন্তর্গত নয়। আমাদের গ্রাম থেকে করমজা গ্রাম আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরে। ঐস্থানে যাওয়ার জন্য তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাঈদ সাহেবই আমাকে খবর দিয়েছিল। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত আমাকে কেউ করমজা গ্রামের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে নাই, তবে আমি আগে থেকেই ঘটনাটি জানতাম। যেহেতু করমজা আমার ইউনিয়নের নয় তাই আমি প্রশাসনকে ঐ ঘটনাটি জানাইনি। ১৯৯১ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদকে পরাজিত করে নিজামী সাহেব এম.পি হয়েছিল। তবে ঐ সময় নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর সাধারন সম্পাদক নাকি আমীর ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব নিজামী সাহেবকে পরাজিত করে ঐ এলাকায় এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের হাড়গোড় উদ্ধারের ঘটনার ২/১ দিন আগে নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঐ সময় নির্বাচন সমাগত থাকলে নির্বাচনি আমেজ থাকার কথা। ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজামী সাহেব আবু সাঈদ সাহেবকে হারিয়ে আমাদের এলাকার এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হওয়ায় এবং ঐ এলাকায় আবু সাঈদ সাহেবের বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন এই আশংকায় অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের সাথে আমি এবং আওয়ামী ীগের অন্যান্য নেতারা নিজামী সাহেবের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য হাড়গোড় উদ্ধারের কল্প কাহিনী তৈরী করেছিলাম, ইহা সত্য নহে। মেঘা ঠাকুরের মেয়ে পাবনায় বসবাস করে কিনা তাহা আমি জানি না। মেঘা ঠাকুরের কোন আত্মীয় স্বজন ঐ এলাকায় বসবাস করেন কিনা তাহাও আমি জানি না। দাস এবং হালদার হিন্দু সম্প্রদায়ের নি¤œ গোত্র বা বর্ণের পদবী কিনা তাহা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান না থাকায় বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের জহরুল হক মাস্টারের বাড়িতে নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে রাজাকার আলবদর ও পাক বাহিনী জহুরুল হককে ধরতে যাওয়ার ঘটনা জহুরুল হক নিজেই এই ঘটনার ২/৩ দিন পর আমাকে বলেছিল। সাথিয়া থানা এলাকায়ই আমাকে ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলেছিল, তবে কোন স্থানে বলেছিল তাহা আমার স্মরন নাই।
রূপসী এলাকা আমাদের এলাকা থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে। আমার গ্রাম থেকে পাবনা শহর বা ধূলাউড়ি বাজারে যেতে রূপসী গ্রাম পড়ে না। আমরা সাধারনত ধূলাউড়ি বাজারে বাজার করতাম। আমি যে স্কুলে পড়তাম সে স্কুলে যাওয়ার পথে রূপসী গ্রাম পড়ে না। বাউশগাড়ী এবং ডেমরা রূপসী গ্রামের পাশাপাশি অবস্থিত। রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা গ্রামের ঐ সময়ের অধিবাসী কে কোন দল করতো তাহা আমি বলতে পারবো না। আমাদের স্কুলে যেহেতু চারজন শিক্ষক ছিল সেহেতু অনুমান করে বলছি রূপসী স্কুলেও চারজন শিক্ষক থাকতে পারে। আইনুল হক ছাড়া রূপসী স্কুলের অন্য শিক্ষকদের নাম আমি বলতে পারব না। আইনুল হক রূপসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কিনা আমার জানা নাই, তবে তিনি সেই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আমি আমার মূল জবানবন্দীতে আইনুল হক সাহেবকে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছিলাম অনুমান করে। মুক্তিযোদ্ধা শামসুল রহমান ওরফে নান্নুকে আমি ১৯৭১ সালে বা আগে থেকেই চিনতাম, তার বাড়ি সাথিয়া থানায়। উনার সাথে ভারতে ট্রেনিং নেওয়ার সময় দেখা হয় নাই। উনার পাবনা শহরের বাসা আমি চিনতাম না। নান্নু সাহেবের সম্বন্ধি এ্যাডভোকেট এ.কে.এম শামসুল হুদাকে আমি চিনি না।
ভারতে ইয়থ ক্যাম্প ট্রেনিং নেওয়ার সময় আমাদের এলাকার আনছার, লাল মোহন, আনন্দ গোপাল সহ আরো অনেকে সেই ক্যাম্পে ছিল। সেখানে ট্রেনিং নেওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সাহেবের (গলাকাটা) সাথে আমার দেখা হয় নাই। আমার সাথে মুখলেছুর রহমান ওরফে রঞ্জু, কুদ্দুস, সালাম, মাজেদ, মুকছেদ ও জলিল আমাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিল না।
রূপসী, বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বৎসরের বেশি ছিল তাদের অনেকেই এখনো জীবিত থাকতে পারেন। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসার ২দিন আগেও আমি রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা বাজারে গিয়েছি। রূপসী, বাউশগাড়ি, ডেমরা ও ধূলাউড়ি গ্রামে আমার থেকে বয়সে বড় লোক এখনও জীবিত আছেন। ধূলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয় রাত অনুমান ২.৩০/৩.০০ টার দিকে এবং ফজরের সময় পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ফজরের আযানের পর পরই আমরা ধূলাউড়ি গ্রামে পৌছাই। ঐ সময় আমি এবং তাদের সহযোগিরা চলে গিয়েছিল।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশে থাকতেন জানি, তবে কখন কোথায় থাকতেন তা জানি না। ১৯৭১ সালে সাথিয়ায় কোন কলেজ ছিল না। শাহজাহান সাহেবের আহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরই দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধা মুখলেছ ঐ যুদ্ধেই মারা গিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ ঐ যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন কিনা আমার স্মরন নাই। মুখলেছ নামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ পাক আর্মি কর্তৃক ধৃত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
১৯৭১ সালে করমজা গ্রামের ঘটনা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘটে মর্মে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
মেঘা ঠাকুরের মেয়ে এবং তার ছেলের বউকে ধর্ষণ করা হয়, এ কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাজাকার, আলবদর ও পাক বাহিনী নিজামী সাহেবের “নেতৃত্বে” ধরতে যায় একথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
“রূপসী, বাউসগাড়ী ও ডেমড়ায় মে মাসের প্রথম দিকে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্র শিবির নিয়া রূপসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিটিং করেন আলবদর রাজাকার গঠন করার জন্য। যাহা আমি ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনুল হক ও শামসুল রহমান ওরফে নান্নুর নিকট থেকে জানতে পারি।” বা “এছাড়া আরো প্রায় ২/৩শত বাড়ি ঘর বাজার সহ পুড়িয়ে দেয়। সেখানে হিন্দু লোকের বসবাস বেশি ছিল সেই হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে” বা “১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর ধূলাউড়ি গ্রামের আশে পাশে ৩/৪টি গ্রুপে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলাম। এই সংবাদ পেয়ে রাত্রি আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর জানা যায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘিরে ফেলে” বা “ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছে, তার নাম শাহজাহান আলী। সে গলা কাটা শাহজাহান আলী বলে পরিচিত। তার কাছে আরো জানা যায় যে, তাকে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে ছাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে, তার কাছে আরো জানা যায় যে, সেই সময় নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এবং নিজামী সাহেবের নির্দেশে সাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে শাহজাহান আলী বেঁচে যায়।” বা “এই হত্যা করেই খান্ত হয়নি, উপরোন্ত হত্যা করে তার লিঙ্গ কেটে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে যাহা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডাার নিজাম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও তৎকালীন হেডমাস্টার রমিছ উদ্দিন সাহেবের নিকট থেকে জানতে পারি। এদের কাছে আরো জানতে পারি যে, এই ঘটনার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও নাকি উপস্থিত ছিলেন।” একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালের ১৪ই মে ভোর বেলায় রূপসী, ডেমড়া ও বাউসগাড়ী গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের ‘নেতৃত্বে’ পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকার ও আলবদররা ঘেরাও করে গুলি করে নিরস্ত্র ৪৫০ জনকে হত্যা করে। একথাগুলির মধ্যে “নেতৃত্বে” কথাটি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
আমি বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার কারণে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের দমন পীড়নের অংশ হিসাবে নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেছি, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালে কোন সময় পাবনায় ছিলেন না, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)
মামলার কার্যক্রম আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পাঁচজন সাক্ষী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আজমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।
আজকের জেরা : ২৬/০৮/২০১৩
জেরায় আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী যে উত্তর বলেন তা নিম্নরূপ:
ধূলাউড়িতে যেদিন যেই বাড়িতে থাকতাম সেই দিন ঐ বাড়িটি ক্যাম্প হিসাবে বিবেচিত হতো। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের পুরো সময়টাই ধূলাউড়িতে ছিলাম। আমার যতদূর মনে পড়ে আবুল হোসেন ফকির নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল এবং তিনিই ঐ এলাকার মেম্বার ছিলেন। নভেম্বর মাসে সর্বপ্রথম ধূলাউড়িতে কার বাড়িতে ছিলাম তাহা দীর্ঘদিন আগের ঘটনা হওয়ায় আমার স্মরন নাই। নভেম্বর মাসে যাদের বাড়িতে ছিলাম তাদের মধ্যে একজনের নাম আমার মনে আছে তিনি হলেন বিশ্বাস বাড়ির খন্দকার নূরুল ইসলাম, বর্তমানে তিনি মৃত। আমি ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর ধূলাউড়িতে ছিলাম না, ইছামতি নদীর ওপারে রামকান্তপুরে ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই ঐদিন ভোর রাত্রে ধূলাউড়ি গ্রামে এসেছিলাম। ডা: আব্দুল আউয়ালের নাম আমি শুনেছি, তার বাড়ি ধূলাউড়ি গ্রামে স্কুলের পাশে। উনার বাড়িতেও আমরা গিয়েছিলাম, উনাকে গিয়ে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই এবং তার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের গ্রুপে ছিলেন সে আমাদের মধ্যে বয়সে ছোট ছিলেন। স্বাধীনতার অনেক পরে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। বিজয় অর্জনের পর পরই ডা: আব্দুল আউয়ালের হত্যাকান্ডের বিষয়ে কোন মামলা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। মাস্টার আয়নাল হক কোন মুক্তিযোদ্ধা নয়, তার বাড়ি বাউশগাড়ি। তার বাড়িতে আমাদের যাতায়াত ছিল। ঐ বাড়ির তার চাচাতো ভাই আমান উল্লাহকে আমি চিনি সে একজন কুখ্যাত রাজাকার, সে এখনো জীবিত আছে এবং বর্তমানে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। ধূলাউড়ি ঘটনার জন্য বিশেষত ডা: আউয়ালকে হত্যা করার দায়ে আমান উল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার জানা মতে আরেকজন রাজাকার হাবিবুর রহমান জীবিত আছে, মাজেদ মারা গেছে এবং অন্য রাজাকারদের নাম অনেকদিন আগের ঘটনা হওয়ায় আমার স্মরন নাই। ধূলাউড়ির ঘটনা যারা স্বচক্ষে দেখেছে তাদের অনেকে এখনো জীবিত আছে। স্থানীয় যে সমস্ত রাজাকার এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের অনেকে নাম প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে বলেছে। স্থানীয় রাজাকার যারা ধূলাউড়ি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল তাদেরকে বিচারের জন্য সোপর্দ করি নাই, কারণ এ ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্ব আমার ছিল না। আমরা স্বাধীনতার পর পরই আমাদের ক্যাম্প থেকে স্থানীয় রাজাকারদের ধরতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ধরতে পারিনি। কারণ তারা পলাতক ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আমার ইউনিয়নে কোন রাজাকার ধরা পড়েছিল কিনা তাহা আমার মনে নাই। সাথিয়া থানাধীন নন্দনপুরের লুৎফর রহমান রাজাকারকে আমি চিনি, তবে স্বাধীনতার পর তাকে আটক করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই।
যে সমস্ত রাজাকাররা ব্রীজ কালভার্ট পাহারা দিত, ঐ এলাকার লোক কিনা তাহা আমার জানা নাই। ভিটাপাড়া আমার এলাকা থেকে আনুমানিক ১০/১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোলাপাড়িয়া বাকচাদপুরও আমার বাড়ি থেকে ১০/১১ কিলোমিটার দূরে তবে ভিন্ন দিকে। এই দুই এলাকার স্বাধীনতার পূর্ব থেকে আমার কম বেশি যাতায়াত ছিল। ঐ দুই এলাকা থেকে যে ০৯ জন রাজাকারকে ধরা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুই জন রাজাকার জীবিত আছে, তাদের মধ্যে একজন মকবুল এবং আরেকজন জামাল। সম্ভবত ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে সোলাপাড়িয়ার বাকচাদপুর ব্রীজ অপারেশন করতে এই দুইজন রাজাকার সহ মোট চারজন আমাদের নিকট আত্মসমর্পন করেছিল। ভিটাপাড়া ব্রীজ অপারেশনে বর্ষাকালে গিয়েছিলাম। তবে মাস আমি বলতে পারব না। মূলত আমরা ভিটাপাড়া ব্রীজ অপারেশনে যাই নাই আমাদেরকে ব্রীজের নিচ দিয়ে যাওয়ায় বাধা দিলে আমরা কৌশলে তিন/চার জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যাই। ধৃত রাজাকাররা আমাদের কাকুতি মিনতি করে বলে যে, তারা পেটের দায়ে নিজামী সাহেব ও পিস কমিটির লোকদের নির্দেশে রাজাকারে নাম লিখেছে, তাদের অস্ত্র রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেই, তাদের নাম এ মূহুর্তে আমার মনে নাই এবং ঐ অস্ত্র নতুন তিন/চার জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রদান করি। এই নতুন তিন/চার জন মুক্তিযোদ্ধা ভিটাপাড়ার নয়, সাথিয়া এলাকার ছিল।
২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে করমজা গ্রাম থেকে হাড়গোড় উদ্ধারের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। যে সমস্ত লোক ঐ ঘটনা সম্পর্কে আমাদেরকে জানায় তাদের মধ্যে চতুর আলী চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা আবু সামা এবং আরো অনেকেই ছিলেন। এই চতুর আলী চেয়ারম্যান ঐ এলাকার পিস কমিটির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদা বক্সের ভাই কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। আমি ঐ সময় সাথিয়া উপজেলা পরিষদ বা সাথিয়া উন্নয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলাম না। আমি ২০০৩ সালে সাথিয়া উপজেলার শান্তি শৃংখলা কমিটির সদস্য ছিলাম কিনা তাহা আমার মনে নাই, তবে আমি ঐ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। করমজা গ্রাম আমার ইউনিয়নের অন্তর্গত নয়। আমাদের গ্রাম থেকে করমজা গ্রাম আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরে। ঐস্থানে যাওয়ার জন্য তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাঈদ সাহেবই আমাকে খবর দিয়েছিল। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত আমাকে কেউ করমজা গ্রামের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে নাই, তবে আমি আগে থেকেই ঘটনাটি জানতাম। যেহেতু করমজা আমার ইউনিয়নের নয় তাই আমি প্রশাসনকে ঐ ঘটনাটি জানাইনি। ১৯৯১ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদকে পরাজিত করে নিজামী সাহেব এম.পি হয়েছিল। তবে ঐ সময় নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর সাধারন সম্পাদক নাকি আমীর ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব নিজামী সাহেবকে পরাজিত করে ঐ এলাকায় এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের হাড়গোড় উদ্ধারের ঘটনার ২/১ দিন আগে নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঐ সময় নির্বাচন সমাগত থাকলে নির্বাচনি আমেজ থাকার কথা। ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজামী সাহেব আবু সাঈদ সাহেবকে হারিয়ে আমাদের এলাকার এম.পি নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হওয়ায় এবং ঐ এলাকায় আবু সাঈদ সাহেবের বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন এই আশংকায় অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের সাথে আমি এবং আওয়ামী ীগের অন্যান্য নেতারা নিজামী সাহেবের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য হাড়গোড় উদ্ধারের কল্প কাহিনী তৈরী করেছিলাম, ইহা সত্য নহে। মেঘা ঠাকুরের মেয়ে পাবনায় বসবাস করে কিনা তাহা আমি জানি না। মেঘা ঠাকুরের কোন আত্মীয় স্বজন ঐ এলাকায় বসবাস করেন কিনা তাহাও আমি জানি না। দাস এবং হালদার হিন্দু সম্প্রদায়ের নি¤œ গোত্র বা বর্ণের পদবী কিনা তাহা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান না থাকায় বলতে পারব না।
১৯৭১ সালের জহরুল হক মাস্টারের বাড়িতে নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে রাজাকার আলবদর ও পাক বাহিনী জহুরুল হককে ধরতে যাওয়ার ঘটনা জহুরুল হক নিজেই এই ঘটনার ২/৩ দিন পর আমাকে বলেছিল। সাথিয়া থানা এলাকায়ই আমাকে ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলেছিল, তবে কোন স্থানে বলেছিল তাহা আমার স্মরন নাই।
রূপসী এলাকা আমাদের এলাকা থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে। আমার গ্রাম থেকে পাবনা শহর বা ধূলাউড়ি বাজারে যেতে রূপসী গ্রাম পড়ে না। আমরা সাধারনত ধূলাউড়ি বাজারে বাজার করতাম। আমি যে স্কুলে পড়তাম সে স্কুলে যাওয়ার পথে রূপসী গ্রাম পড়ে না। বাউশগাড়ী এবং ডেমরা রূপসী গ্রামের পাশাপাশি অবস্থিত। রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা গ্রামের ঐ সময়ের অধিবাসী কে কোন দল করতো তাহা আমি বলতে পারবো না। আমাদের স্কুলে যেহেতু চারজন শিক্ষক ছিল সেহেতু অনুমান করে বলছি রূপসী স্কুলেও চারজন শিক্ষক থাকতে পারে। আইনুল হক ছাড়া রূপসী স্কুলের অন্য শিক্ষকদের নাম আমি বলতে পারব না। আইনুল হক রূপসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কিনা আমার জানা নাই, তবে তিনি সেই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আমি আমার মূল জবানবন্দীতে আইনুল হক সাহেবকে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছিলাম অনুমান করে। মুক্তিযোদ্ধা শামসুল রহমান ওরফে নান্নুকে আমি ১৯৭১ সালে বা আগে থেকেই চিনতাম, তার বাড়ি সাথিয়া থানায়। উনার সাথে ভারতে ট্রেনিং নেওয়ার সময় দেখা হয় নাই। উনার পাবনা শহরের বাসা আমি চিনতাম না। নান্নু সাহেবের সম্বন্ধি এ্যাডভোকেট এ.কে.এম শামসুল হুদাকে আমি চিনি না।
ভারতে ইয়থ ক্যাম্প ট্রেনিং নেওয়ার সময় আমাদের এলাকার আনছার, লাল মোহন, আনন্দ গোপাল সহ আরো অনেকে সেই ক্যাম্পে ছিল। সেখানে ট্রেনিং নেওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সাহেবের (গলাকাটা) সাথে আমার দেখা হয় নাই। আমার সাথে মুখলেছুর রহমান ওরফে রঞ্জু, কুদ্দুস, সালাম, মাজেদ, মুকছেদ ও জলিল আমাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিল না।
রূপসী, বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বৎসরের বেশি ছিল তাদের অনেকেই এখনো জীবিত থাকতে পারেন। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসার ২দিন আগেও আমি রূপসী, বাউশগাড়ী ও ডেমরা বাজারে গিয়েছি। রূপসী, বাউশগাড়ি, ডেমরা ও ধূলাউড়ি গ্রামে আমার থেকে বয়সে বড় লোক এখনও জীবিত আছেন। ধূলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয় রাত অনুমান ২.৩০/৩.০০ টার দিকে এবং ফজরের সময় পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ফজরের আযানের পর পরই আমরা ধূলাউড়ি গ্রামে পৌছাই। ঐ সময় আমি এবং তাদের সহযোগিরা চলে গিয়েছিল।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশে থাকতেন জানি, তবে কখন কোথায় থাকতেন তা জানি না। ১৯৭১ সালে সাথিয়ায় কোন কলেজ ছিল না। শাহজাহান সাহেবের আহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরই দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধা মুখলেছ ঐ যুদ্ধেই মারা গিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ ঐ যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন কিনা আমার স্মরন নাই। মুখলেছ নামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ পাক আর্মি কর্তৃক ধৃত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
১৯৭১ সালে করমজা গ্রামের ঘটনা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘটে মর্মে আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
মেঘা ঠাকুরের মেয়ে এবং তার ছেলের বউকে ধর্ষণ করা হয়, এ কথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হককে রাজাকার, আলবদর ও পাক বাহিনী নিজামী সাহেবের “নেতৃত্বে” ধরতে যায় একথা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
“রূপসী, বাউসগাড়ী ও ডেমড়ায় মে মাসের প্রথম দিকে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্র শিবির নিয়া রূপসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিটিং করেন আলবদর রাজাকার গঠন করার জন্য। যাহা আমি ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনুল হক ও শামসুল রহমান ওরফে নান্নুর নিকট থেকে জানতে পারি।” বা “এছাড়া আরো প্রায় ২/৩শত বাড়ি ঘর বাজার সহ পুড়িয়ে দেয়। সেখানে হিন্দু লোকের বসবাস বেশি ছিল সেই হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে” বা “১৯৭১ সালের ২৭ শে নভেম্বর ধূলাউড়ি গ্রামের আশে পাশে ৩/৪টি গ্রুপে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলাম। এই সংবাদ পেয়ে রাত্রি আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর জানা যায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নেতৃত্বে ঘিরে ফেলে” বা “ঐ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছে, তার নাম শাহজাহান আলী। সে গলা কাটা শাহজাহান আলী বলে পরিচিত। তার কাছে আরো জানা যায় যে, তাকে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে ছাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে, তার কাছে আরো জানা যায় যে, সেই সময় নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এবং নিজামী সাহেবের নির্দেশে সাত্তার রাজাকার তাকে জবাই করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে শাহজাহান আলী বেঁচে যায়।” বা “এই হত্যা করেই খান্ত হয়নি, উপরোন্ত হত্যা করে তার লিঙ্গ কেটে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে যাহা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডাার নিজাম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও তৎকালীন হেডমাস্টার রমিছ উদ্দিন সাহেবের নিকট থেকে জানতে পারি। এদের কাছে আরো জানতে পারি যে, এই ঘটনার সময় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও নাকি উপস্থিত ছিলেন।” একথাগুলি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
১৯৭১ সালের ১৪ই মে ভোর বেলায় রূপসী, ডেমড়া ও বাউসগাড়ী গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের ‘নেতৃত্বে’ পাক বাহিনী, স্থানীয় রাজাকার ও আলবদররা ঘেরাও করে গুলি করে নিরস্ত্র ৪৫০ জনকে হত্যা করে। একথাগুলির মধ্যে “নেতৃত্বে” কথাটি আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলি নাই, ইহা সত্য নহে।
আমি বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার কারণে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের দমন পীড়নের অংশ হিসাবে নিজামী সাহেবকে জড়িয়ে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেছি, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য, ইহা সত্য নহে। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সালে কোন সময় পাবনায় ছিলেন না, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)
মামলার কার্যক্রম আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পাঁচজন সাক্ষী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
জেরায় মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আজমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন