শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

স্টিফেনকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক// বিদ্যামান আইনে অভিযুক্তদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে

১১/১/১১

ঢাকা সফররত যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে. র‌্যাপকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের  খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক  বিদ্যমান আইনে ন্যায় বিচার সম্ভব নয়।  এ আইনে অভিযুক্তদের অনেক মৌলিক অধিকার হরন করা হয়েছে । যেমন জামিনসহ আরো অনেক বিষয়   ট্রাইবিউনালের বিচারকদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া  হয়েছে। তারা ইচ্ছা করলে জামিন দেবে। ইচ্ছা না হলে দেবেনা। কিন্তু ছয় মাস হয়ে গেলেও আজ অবধি জামিন দেয়া হয়নি  গ্রেফতারকৃতদের। এমনকি তাদেরকে আজ পর্যন্ত জানানো হয়নি কি অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

স্টিফেন জে. র‌্যাপ  গতকাল রাতে  স্থানীয় একটি হোটেলে জামায়াতে ইসলামীর এসিট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বৃফিং দেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা  স্টিফিনকে  আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিভিন্ন দুর্বলতা এবং অসঙ্গতি বিষয়ে অবহিত করেছি। আমরা বলেছি এ আইনটি বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘষিক। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক যেসব আইন রয়েছে তার সাথেও সাংঘর্ষিক । আন্তর্জাতিক আইনের স্বীকৃত যেসব মানদণ্ড রয়েছে তার তুলনায় বাংলাদেশের আইনটির মান অনেক নিচে। তাই আইনটিকে সংশোধন না করলে এর মাধ্যমে স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচার সম্ভব নয়। নিরপরাধ ব্যক্তির সাজা পাওয়ার  সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্যারিস্টার   আব্দুর আজ্জাক বলেন, আমরা স্টিফেনকে আরো বলেছি ট্রাইবুনাল এবং সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের মাঝখানে একটি আপিল  আদালত থাকা দরকার। যাতে ট্রাইবুনালের অন্তবর্তীকালী আদেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে। ট্রাইবিউনালের বিচারক নিয়োগ, বিচারকদের  নিরপেক্ষতা নিয়ে  প্রশ্ন থাকলে, তাদের কেউ নিরপেক্ষতা হারালে, তাদের কেউ পক্ষপাতদুষ্টতা হারালে তার বিরুদ্ধে কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা নাই বর্তমান আইনে। তাই আমরা বলেছি আইনটির  এসব ধারা সংশোধন করতে হবে। ট্রাইবিউনালের যেকোন আদশেকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য জুড়িশিয়াল রিভিউর সুযোগ থাকতেই হবে।

আন্তর্জাতিক আইনের সাথে বাংলাদেশের আইনের অসঙ্গতির সমস্যার উদাহরণ তুলে ধরে ব্যারিস্টার  আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তদন্তকারী সংস্থা লম্বা সময় নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেস তৈরি  করলেও অভিযুক্তদের প্রস্তুতির জন্য মাত্র তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে।  এটি দুনিয়ার কোথাও নাই। যুগোস্লাভিয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর  ১২ মাস সময় দিয়েছে তাদের প্রস্তুতির জন্য। এমনকি বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত অভিযুক্তদের জানানো হয়নি তাদের বিরদ্ধে কি কি অভিযোগ আনা হয়েছে।

বর্তমান আইনে কোন স্বাক্ষী অভিযুক্তকে জাড়িয়ে অপরাধ করার কথা স্বীকার করলে এবং স্বাক্ষী নিজে সে অপরাধের সাথে জড়িত প্রমান হলেও স্বাক্ষীকে বিচারের আওতায় আনা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে যেকোন লোক অভিযুক্তকদের ফাসানোর জন্য তাদের  বিরুদ্ধে নির্বিচারে মিথ্যা স্বাক্ষ্য   দিয়ে বলবে






অমুকে অমুক অপরাধ  করার সময়  আমিও জড়িত ছিলাম। কারণ স্বাক্ষী তখন জানবে  নিজেকে অপরাধের সাথে জড়িয়ে অভিযক্তের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিলে তার কোন সমস্যা হবেনা।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন এসব বিষয় সংশোধন ছাড়া  বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার সম্ভব নয়। বাংলাদেশের আইনের দুর্বলতার প্রমান হিসেবে  যুগোশ্লাভিয়া, বসনিয়াসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ আদালতের উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

 ব্যারিস্টার আব্দুর রজাজ্জাকের সাথে বৈঠকে জামায়াতের অপরা এসিসট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন