শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

হুমায়ূন আহমেদের মা যে কারনে আওয়ামী লীগকে মা করেননি কখনো




Mehedy Hasan
হুমায়ূন আহমেদের পিতাকে কারা কিভাবে কোথা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে তা তিনি লিখেছেন ‘জীবন যে রকম’ নামে বইয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সেই দু:সহ দিনগুলোতে কিভাবে তিনি তার ছয় সন্তান নিয়ে পিরোজপুরের নিভৃতি পল্লীতে একটুখানি আশ্রয়ের জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন এবং দুর্যোগ উপো করে সন্তানদের আগলে রেখেছেন তার স্মৃতিচারন করেছেন এ বইয়ে। দেশ স্বাধীনের পর আয়েশা ফয়েজ তার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। সে মামলায় তিনি আসামী করেছিলেন পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার আতিক রশিদ এবং ক্যপ্টেন এজাজকে। স্বামী হত্যার জন্য তিনি পাকিস্তান সেনাদের দায়ী করেছেন সম্পূর্ণভাবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে ভারত- পাকিস্তান- বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ হত্যা, লাখ লাখ মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠনকারী, গ্রামের পর গ্রাম, নগর জনপদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখারকারী সমস্ত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সৈন্যদের কোন বিচার ছাড়াই স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এ কারনে আয়েশা ফয়েজ তার বইয়ে মন্তব্য করেছেন “ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে আমি সেজন্য কখনো মা করিনি।”

আয়েশা ফয়েজ  তার বইয়ে লিখেছেন-কাজলের (হুমায়ূন আহমেদ) বাবার হত্যাকান্ডের সাী প্রমান রয়েছে। কে মেরেছে, কারা মেরেছে, কিভাবে মেরেছে তাও জানা আছে। সে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান অল্প কিছু মানুষের একজন যার মৃতদেহ শুকুনী, গৃধিনী ছিড়ে ছিড়ে খায়নি, যাকে মানুষেরা তুলে এনে দাফন করেছে ।

তার দেহাবশেষ তুলে এনে ময়না তদন্ত করা যাবে এবং হত্যাকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি পূর্নাঙ্গ খুনের মামলা দায়ের করা যাবে। খুনী আসামীর প্রধান নায়ক বিগ্রেডিয়ার আতিক রশীদ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ধরা পড়েছে। এখন যুদ্ধবন্দী হিসেবে আছে। সাধারন যুদ্ধবন্দীরা মুক্তি পেয়ে দেশে যেতে পারে কিন্তু যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাকে বিচার করে শাস্তি দেয়া যাবে।
সবাই মিলে নদী তীরে এক নির্জন জায়গায় আমরা হাজির হলাম। ইকবাল (ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল) আমাকে এক নির্জন জায়গায় বসিয়ে দিয়ে গেল। সে নিজেই আমানুল্লাহকে নিয়ে কবর খুড়ে তার বাবার দেহাবশেষ বের করেছিল। এই দীর্ঘদিন পরেও তার বাবার পায়ে নাকি ছিল একজোড়া অবিকৃত নাইলনের মোজা। ডাক্তার সাহেব ছিলেন । তিনি ময়নাতদন্ত করলেন। বেশ কয়েকটি গুলি লেগেছিল। একটি পায়ে একটি বুকে একটি মাথায়। যেটি মাথায় সেটি সম্ভবত তার প্রাণ কেড়ে নিল। ... কফিন নৌকায় তুলে শহরে আনা হল। .....যখন কফিন আনা হয়েছে ঠিক তখন আফজাল সাহেবকেও (খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজাল, পিরোজপুর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান) গ্রেফতার করে থানায় আনা হল। আমি তার কাছ থেকে একদিন কাজলের বাবার কথা জানতে চেয়েছিলাম। উত্তর না দিয়ে দেশ সম্পর্কে আমাকে জ্ঞান দান করেছিলেন। আমাকে দেখে তিনি শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
চিনতে পারলেন সেরকম ভাব করলেননা।
...যতদিন ছিলাম প্রতিদিন ভোরে কবরস্থানে যেতাম। মাথার কাছে বসে কোরআন শরীফ পড়তাম (পৃ ৭৮-৮১)।
...অনেক কষ্ট করে খুনের কেসটা দাড় করানো হয়েছিল। যারা দেখেছে তাদের সাী প্রমান। যারা কবর দিয়েছে তাদের সাী প্রমান। ময়না তদন্তের রিপোর্ট সবকিছু। প্রধান আসামী ব্রিগেডিয়ার আতিক রশিদ। সাথে মেজর এজাজ। দীর্ঘ সময় নিয়ে তৈরি করে সেই কেস ফাইল করা হল (পৃ ৮৩)।
আমি ঢাকা ফিরে এলাম। ছেলেমেয়েদের বললাম যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। তাদের বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের এদেশের মাটিতে বিচার করা হবে। এই স্বাধীন দেশের মানুষের সামনে দাড়িয়ে জবাবদিহি করতে হবে সেই হত্যাকারী খুনীদের। বলতে হবে কেন বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে এই মানুষদের। ... আমি অপো করে আছি। আমার ছেলে মেয়েরা অপো করে আছে। কিন্তু সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলনা। এদেশের ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানের নব্বই হাজার সৈন্য সসম্মানে তাদের দেশে ফিরে গেল। এদেশের সরকার একটি বার তার বিচারের কথা উচ্চারন পর্যন্ত করলনা। ত্রিশ ল প্রানের প্রতি অবমাননার এর থেকে বড় উদাহরন পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও নেই। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে আমি সেজন্য কখনো মা করিনি।
এরপর প্রত্যেক নতুন সরকার আসার পর দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আবেদন করে বলেছি, পাকিস্তান সরকারের কাছে আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফেরত চেয়ে এদেশে মাটিতে তাদের বিচার করা হোক। ত্রিশ ল প্রানের প্রতি যে অবমাননা দেখানো হয়েছে সেই অবমাননার অবসান করা হোক। কোন লাভ হয়নি। ...পাকিস্তান সরকারের কাছে সেই হত্যাকারিদের ফেরত চাওয়া হোক (পৃ ৮৩-৮৪)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন