২৮/১১/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ আইনী যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যেপ্রনোদিত আখ্যায়িত করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সভ্যতার ইতিহাসে এরকম সাজানো মামলার নাটক আমার মনে হয় আর কখনো মঞ্চস্ত হয়নি। কোন ঘটনার ৪০ বছর পর বিচার শুরুর এমন নজির আর বিশ্বে একটিও নেই। বিশেষ করে কোন ব্যক্তি’র ৪০ বছর ধরে নিজ দেশে প্রকাশ্যে বসবাস করার পর এই দীর্ঘ সময়ে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না এনে এভাবে ৪০ বছর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার নজির বিশ্বের ইতিহাসে নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বে দীর্ঘদিন পরে যেসব যুদ্ধাপরাধী বা বড় ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রকৃয়া শুরু হয়েছে সেসব অপরাধীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থেকেছে এবং ধরা পড়ার পরপরই তাদের বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু আল্লামা সাঈদী গত ৪০ বছর এ দেশে প্রকাশ্যে বাস করেছেন। দেশে বিদেশে ধর্মপ্রচার করেছেন। কোনদিন তার বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করেনি। ২০০১ সালে সর্বপ্রথম দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় তাকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ছিল অক্টোবর মাসের জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিকভাবে তাকে ঘায়েল করার জন্য তারা তখন এ প্রতিবেদন করেছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজো মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের কথা ছিল অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারনে তিনি গতকাল তিনি ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননি। এ প্রেক্ষিতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গতকাল আইনী যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় মে মাসে আর বিচার শুরু হয় নভেম্বর মাসে। সিয়েরালিওনের যুদ্ধ শেষ হয় ১৮ জানুয়ারি ২০০২ আর বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ওই বছরই ১৬ জানুয়ারি। রুয়ান্ডা যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আর বিচার শুরু হয় ওই বছরই নভেম্বর মাসে। যুদ্ধ শেষ হবার আগেই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর আর বিচার শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ২৬ মে। এভাবে বসনিয়সহ যত যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে তা ঘটনা শেষ হবার সাথে সাথেই তার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। আর আল্লামা সাঈদীকে ৪০ বছর পর গ্রেফতার করা হল ২০১০ সালের জুন মাসে। চার্জ আনা হল ২০১১ সালের অক্টোবরে। তার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ আনতে ৪০ বছর সময় নেয়া হল। এটা অস্বাভাবিক, অপ্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, ক্রিমানল কেসে কোন ঘটনার ২ ঘন্টা পরেও এফআইআর করা হলে দেরির একটা কারণ দেখাতে হয়। কিন্তু তাদের ৪০ বছর কেন দেরি হল তার কোন কারণ তারা ব্যাখ্যা করেনি। এ বিষয়ে একটি শব্দও রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেনি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ৪০ বছর কেন, ৬০ বছর পরও বিচার হতে পারে। আমি বলছিনা ৪০ বছর হয়েছে বলে আর বিচার হতে পারেনা। আমি বলতে চাই ৪০ বছর পর এই বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে রাজনৈতিক অসদুদ্দেশে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে যে আইনে সাঈদী সাহেবের বিচার চলছে সে আইনটি হয়েছিল ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য। কোন বেসামরিক ব্যক্তিকে এ আইনের অধীনে বিচারের কোন উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা কোনমতেই ছিলনা। এমনকি বেসমারিক ব্যক্তিকে যাতে এ আইনের অধীনে বিচার করা না হয় সেজন্য আইনটির বিল থেকে ইনকুডিং এনি পারসন শব্দ দুটি বাদ দেয়া হয়। বেসামরিক ব্যক্তিকে যাতে এ আইনের আওতায় আনা না হয় এবং শুধুমাত্র পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করাই যে এ আইনের লক্ষ্য ছিল সে বিষয়ে সংসদে তখন আইনটি পাশের পূর্বে যে আলোচনা হয়েছিল তা পড়ে শুনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরের সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য পড়ে শোনান। মনোরঞ্জন ধর তখন বলেছিলেন এই আইনের আওতায় যুদ্ধবন্দী ছাড়া অন্য কোন বেসামরিক ব্যক্তি যেন না পড়ে এবং এ বিষয়ে কোন রকম সন্দেহ সংসয় যাতে না থাকে সে জন্য আমাদের মহান নেতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ইচ্ছা প্রকাশ করায় সংশোধনী আনা হল।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, সংসদের আলোচনা পড়লে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের কোন উদ্দেশ্যই ছিলনা ১৯৭৩ সালের আইনের। কারণ বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালে দালাল আইন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, সেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের প্রধান চরিত্র হল প্রিন্স অব ডেনমার্ক। সে-ই হ্যামলেট । প্রিন্স অব ডেনমার্ক বাদ দিয়ে যেমন হ্যামলেট নাটক মঞ্চস্ত করা যায়না তেমনি ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা অফিসারকে বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারও করা যায়না।
মাওলানা সাঈদীকে বিদেশ যেতে বাঁধা দেয়া বিষয়ে হাইকোর্টের রায় সাঈদী সাহেবের পক্ষে যাবার পরই এটর্নি জেনারেল বললেন মামলা হতে কতক্ষন। এরপরপরই পিরোজপুরে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা হল । এই হল তার বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষাপট। এ থেকেই বোঝা যায় এ মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশে করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, মাহবুবুল আলম এবং মানিক পসারী নামে দুজন ব্যক্তি ২০০৯ সালে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করলেন । গত ৪০ বছরে তারা কোনদিন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে এ অভিযোগে মামলা করেননি, যদিও আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও ক্ষমতায় ছিল। মানিক পসারী ট্রাইব্যুনালে জেরায় বলেছেন, ২০০৯ সালের আগে তিনি কোনদিন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি, তার বিরুদ্ধে কোনদিন কোথাও কোন বক্তব্য দেননি।
সুতরাং ২০০৯ সালে হঠাৎ করে তাদের এ মামলার পেছনে যে রাজনৈতিক একটি উদ্দেশ্য ছিল তা পরিস্কার।
মূল আসামীদের বাদ দিয়ে সহযোগীদের বিচারের উদ্দেশ্য বিষয়ে ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের যুক্তি উপস্থাপন বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাম্প্রতিক একটি অপরহন ঘটনার (পরাগ) বিষয়ে তুলে ধরে বলেন, প্রথমে মূল আসামীকে পাওয়া গেলনা। সহযোগীদের ধরা হল। পরে মূল আসামীকে পাওয়া গেল। এখন যদি মূল আসামীকে পাওয়া না যেত তাহলে কি সহযোগীদের বিচার করা যাবেনা?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মূল আসামী ১৯৫ জন পাকিস্তানীদের তো ধরা হয়েছিল। তারা বন্দী ছিল। তাদের চিহ্নিত করা হল। তালিকা করা হল। তাদের বিচারের জন্য আইন করা হল। তারপর তিন দেশ মিলে চুক্তি করে তাদের ছেড়ে দেয়া হল বিচার না করে। এখন ৪০ বছর পর সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হল। আমি বলছিনা সহযোগীদের বিচার করা যাবেনা। আমি বলছি এ বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সম্পূর্ন রাজননৈতিক উদ্দেশে। এ আইনে সাঈদী সাহেবের বিচার হতে পারেনা। হতে পারে দালাল আইনে।
যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ আইনী যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যেপ্রনোদিত আখ্যায়িত করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সভ্যতার ইতিহাসে এরকম সাজানো মামলার নাটক আমার মনে হয় আর কখনো মঞ্চস্ত হয়নি। কোন ঘটনার ৪০ বছর পর বিচার শুরুর এমন নজির আর বিশ্বে একটিও নেই। বিশেষ করে কোন ব্যক্তি’র ৪০ বছর ধরে নিজ দেশে প্রকাশ্যে বসবাস করার পর এই দীর্ঘ সময়ে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না এনে এভাবে ৪০ বছর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার নজির বিশ্বের ইতিহাসে নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বে দীর্ঘদিন পরে যেসব যুদ্ধাপরাধী বা বড় ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রকৃয়া শুরু হয়েছে সেসব অপরাধীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থেকেছে এবং ধরা পড়ার পরপরই তাদের বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু আল্লামা সাঈদী গত ৪০ বছর এ দেশে প্রকাশ্যে বাস করেছেন। দেশে বিদেশে ধর্মপ্রচার করেছেন। কোনদিন তার বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করেনি। ২০০১ সালে সর্বপ্রথম দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় তাকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ছিল অক্টোবর মাসের জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিকভাবে তাকে ঘায়েল করার জন্য তারা তখন এ প্রতিবেদন করেছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজো মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের কথা ছিল অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারনে তিনি গতকাল তিনি ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননি। এ প্রেক্ষিতে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গতকাল আইনী যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় মে মাসে আর বিচার শুরু হয় নভেম্বর মাসে। সিয়েরালিওনের যুদ্ধ শেষ হয় ১৮ জানুয়ারি ২০০২ আর বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ওই বছরই ১৬ জানুয়ারি। রুয়ান্ডা যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আর বিচার শুরু হয় ওই বছরই নভেম্বর মাসে। যুদ্ধ শেষ হবার আগেই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর আর বিচার শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ২৬ মে। এভাবে বসনিয়সহ যত যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে তা ঘটনা শেষ হবার সাথে সাথেই তার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। আর আল্লামা সাঈদীকে ৪০ বছর পর গ্রেফতার করা হল ২০১০ সালের জুন মাসে। চার্জ আনা হল ২০১১ সালের অক্টোবরে। তার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ আনতে ৪০ বছর সময় নেয়া হল। এটা অস্বাভাবিক, অপ্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, ক্রিমানল কেসে কোন ঘটনার ২ ঘন্টা পরেও এফআইআর করা হলে দেরির একটা কারণ দেখাতে হয়। কিন্তু তাদের ৪০ বছর কেন দেরি হল তার কোন কারণ তারা ব্যাখ্যা করেনি। এ বিষয়ে একটি শব্দও রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেনি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ৪০ বছর কেন, ৬০ বছর পরও বিচার হতে পারে। আমি বলছিনা ৪০ বছর হয়েছে বলে আর বিচার হতে পারেনা। আমি বলতে চাই ৪০ বছর পর এই বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে রাজনৈতিক অসদুদ্দেশে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে যে আইনে সাঈদী সাহেবের বিচার চলছে সে আইনটি হয়েছিল ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য। কোন বেসামরিক ব্যক্তিকে এ আইনের অধীনে বিচারের কোন উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা কোনমতেই ছিলনা। এমনকি বেসমারিক ব্যক্তিকে যাতে এ আইনের অধীনে বিচার করা না হয় সেজন্য আইনটির বিল থেকে ইনকুডিং এনি পারসন শব্দ দুটি বাদ দেয়া হয়। বেসামরিক ব্যক্তিকে যাতে এ আইনের আওতায় আনা না হয় এবং শুধুমাত্র পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করাই যে এ আইনের লক্ষ্য ছিল সে বিষয়ে সংসদে তখন আইনটি পাশের পূর্বে যে আলোচনা হয়েছিল তা পড়ে শুনান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরের সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য পড়ে শোনান। মনোরঞ্জন ধর তখন বলেছিলেন এই আইনের আওতায় যুদ্ধবন্দী ছাড়া অন্য কোন বেসামরিক ব্যক্তি যেন না পড়ে এবং এ বিষয়ে কোন রকম সন্দেহ সংসয় যাতে না থাকে সে জন্য আমাদের মহান নেতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ইচ্ছা প্রকাশ করায় সংশোধনী আনা হল।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, সংসদের আলোচনা পড়লে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের কোন উদ্দেশ্যই ছিলনা ১৯৭৩ সালের আইনের। কারণ বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালে দালাল আইন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, সেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের প্রধান চরিত্র হল প্রিন্স অব ডেনমার্ক। সে-ই হ্যামলেট । প্রিন্স অব ডেনমার্ক বাদ দিয়ে যেমন হ্যামলেট নাটক মঞ্চস্ত করা যায়না তেমনি ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা অফিসারকে বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারও করা যায়না।
মাওলানা সাঈদীকে বিদেশ যেতে বাঁধা দেয়া বিষয়ে হাইকোর্টের রায় সাঈদী সাহেবের পক্ষে যাবার পরই এটর্নি জেনারেল বললেন মামলা হতে কতক্ষন। এরপরপরই পিরোজপুরে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা হল । এই হল তার বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষাপট। এ থেকেই বোঝা যায় এ মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশে করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, মাহবুবুল আলম এবং মানিক পসারী নামে দুজন ব্যক্তি ২০০৯ সালে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করলেন । গত ৪০ বছরে তারা কোনদিন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে এ অভিযোগে মামলা করেননি, যদিও আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও ক্ষমতায় ছিল। মানিক পসারী ট্রাইব্যুনালে জেরায় বলেছেন, ২০০৯ সালের আগে তিনি কোনদিন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি, তার বিরুদ্ধে কোনদিন কোথাও কোন বক্তব্য দেননি।
সুতরাং ২০০৯ সালে হঠাৎ করে তাদের এ মামলার পেছনে যে রাজনৈতিক একটি উদ্দেশ্য ছিল তা পরিস্কার।
মূল আসামীদের বাদ দিয়ে সহযোগীদের বিচারের উদ্দেশ্য বিষয়ে ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের যুক্তি উপস্থাপন বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাম্প্রতিক একটি অপরহন ঘটনার (পরাগ) বিষয়ে তুলে ধরে বলেন, প্রথমে মূল আসামীকে পাওয়া গেলনা। সহযোগীদের ধরা হল। পরে মূল আসামীকে পাওয়া গেল। এখন যদি মূল আসামীকে পাওয়া না যেত তাহলে কি সহযোগীদের বিচার করা যাবেনা?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মূল আসামী ১৯৫ জন পাকিস্তানীদের তো ধরা হয়েছিল। তারা বন্দী ছিল। তাদের চিহ্নিত করা হল। তালিকা করা হল। তাদের বিচারের জন্য আইন করা হল। তারপর তিন দেশ মিলে চুক্তি করে তাদের ছেড়ে দেয়া হল বিচার না করে। এখন ৪০ বছর পর সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হল। আমি বলছিনা সহযোগীদের বিচার করা যাবেনা। আমি বলছি এ বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সম্পূর্ন রাজননৈতিক উদ্দেশে। এ আইনে সাঈদী সাহেবের বিচার হতে পারেনা। হতে পারে দালাল আইনে।
যুক্তি উপস্থাপনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন